আর্ক ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
আর্ক ওয়েল্ডিং কি? ইলেকট্রিক আর্ক ওয়েল্ডিংয়ের মূল তত্ত্ব কি?
আর্ক ওয়েন্ডিংঃ ওয়েল্ডিং করার যে পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড এবং কার্য বস্তুর মধ্যে আর্ক সৃষ্টি করে উৎপন্ন তাপের সাহায্যে ধাতুকে পূর্ণ গলিত বা অর্ধগলিত অবস্থায় চাপ প্রয়ােগে বা বিনা চাপে জোড়া দেওয়া হয় তাকে আর্ক ওয়েল্ডিং বলে।
আর্ক ওয়েন্ডিং এর মূলনীতি: একটি বর্তনীর দুইটি পরিবাহী প্রান্তের মধ্যে। যদি সামান্য ফাঁকা রাখা হয় যাতে এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার মত যথেষ্ঠ বৈদ্যুতিক চাপ থাকে তবে ঐ ফাঁকা স্থানে আর্কের সৃষ্টি হয়। আর্কের ফলে সেখানে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয়। আর্ক ওয়েল্ডিং পদ্ধতিতে এই তাপের সাহায্যে ধাতু গলিয়ে জোড়া দেওয়া হয়। এটিই আর্ক ওয়েল্ডিং এর মূল তত্ত্ব বা মূলনীতি।
আরও পড়ুনঃ ওয়েল্ডিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
কয়েক প্রকার আর্ক ওয়েল্ডিং এর নামঃ
আর্ক ওয়েল্ডিংকে প্রধানত নয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(১) কার্বন আর্ক ওয়েল্ডিং
(২) মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং
(৩) এটমিক হাইড্রোজেন আর্ক ওয়েল্ডিং
(8) টিগ (TIG) আর্ক ওয়েল্ডিং
(৫) মিগ (MIG) আর্ক ওয়েল্ডিং
(৬) সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং
(৭) ইলেকট্রো ম্লাগ ওয়েল্ডিং
(৮) প্লাজমা আর্ক ওয়েল্ডিং
(৯) মােনেল মেটালিক আর্ক ওয়েল্ডিং
আরও পড়ুনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং মেশিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কোন কোন ক্ষেত্রে আর্ক ওয়েল্ডিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়?
আর্ক ওয়েল্ডিং পদ্ধতি বেশ সচল এবং প্রায় সকল অবস্থায় এ পদ্ধতি প্রয়ােগ করা যায়। উন্নত মানের ওয়েল্ড, উচ্চ ডিপজিশন রেট, ব্যবহৃত অধিকাংশ সরঞ্জামের সহজপ্রাপ্যতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য এই পদ্ধতিকে। অন্যান্য সকল ওয়েল্ডিং পদ্ধতির চাইতে বেশি পরিমাণে ব্যবহারিক ক্ষেত্র। তৈরিতে সাহায্য করেছে। সাধারণত ট্যাংক, ব্রীজ, বয়লার, বিল্ডিং, পাইপ।মেশনারী, ফার্নিচার, যেমন- ইস্পাতের আলমারি, সিন্দুক, জাহাজ।মেরামত ও তৈরি ইত্যাদি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আর্ক ওয়েল্ডিং পদ্ধতির প্রয়ােগ দেখা যায় ।
ধাতুসমূহের মধ্যে কাস্ট স্টীল মাইল্ড স্টীল, টুল স্টীল, কার্বন ইস্পাত, শংকর ইস্পাত, এ্যালুমিনিয়াম, কপার ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি ধাতুকে ওয়েল্ডিং করা যায়।
আর্ক ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নামসমূহঃ
আর্ক ওয়েল্ডিং এ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নামসমূহ নিম্নে দেওয়া হল ।
যথা-
(ক) বৈদ্যুতিক উৎস ও ট্রান্সফরমার।
(খ) পরিবাহী তার বা ক্যাবল।
(গ) ইলেকট্রোড।
(ঘ) হেলমেট ও হ্যান্ড শীল্ড।
(ঙ) ওয়েল্ডিং জিগ, প্রভৃতি।
আর্ক ওয়েল্ডিং এর সতর্কতা সমূহঃ
আর্ক ওয়েল্ডিং এর সতর্কতা সমূহ নিম্নরূপঃ
(১) অতি উজ্জ্বল ও ক্ষতিকর আলােক রশি ও স্পার্ক হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য হ্যান্ডশীল্ড হেলমেট ব্যবহার করতে হবে।
(২) হাতের নিরাপত্তার জন্য হাত মােজা বা হ্যান্ড গ্লোভস্ ব্যবহার করতে হবে।
(৩) উত্তপ্ত ইলেকট্রোডের শেষাংশ নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
(৪) ওয়েল্ডিং করার পূর্বে আর্থ কানেকশন ঠিক করে নিতে হবে।
(৫) ওয়েল্ডিং শেষে প্রধান সুইচ (মেইন সুইচ) বন্ধ করতে হবে।
(৬) বৈদ্যুতিক সংযােগ পরীক্ষার জন্য একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা উচিৎ।
(৭) ওয়েল্ড হতে সৃষ্ট ক্ষতি কারক ধোয়া হতে প্রশ্বাস - যন্ত্রের নিরাপত্তারজন্য বাতাস পূর্ণ ওয়েল্ডিং স্থান নির্বাচন করা উচিৎ।
আর্ক ওয়েল্ডিং এ গলিত ধাতুকে দূষণ হতে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিঃ
সাধারণত তিন পদ্ধতিতে আর্ক ওয়েল্ডিং এ গলিত ধাতুকে দূষণ হইতে রক্ষা করা যায়। যথা:
(ক) ইলেকট্রোড়ের গায়ে কোটিং ব্যবহার করে: কতগুলাে জৈব পদার্থ যেমন: সেলুলােজ , ক্যালসিয়াম, কার্বনেট , ষ্টার্চ ইত্যাদি ইলেকট্রোডের। গায়ে কোটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরা ওয়েল্ডিং এর সময় ওয়েল্ডিং জোনের উপর গ্যাসীয় আবরন সৃষ্টি করে ফলে গলিত ধাতু বাতাসের অক্সিজেন হতে রক্ষা পায়। এছাড়াও কোটিং হিসেবে ব্যবহৃত অক্সিডাইজিং উপাদান ফেরােম্যাংগানিজ, ফেরােসিলিকন, গ্রাফাইট, এ্যালুমিনিয়াম, কাঠের গুড়া ইত্যাদি গলিত ধাতু পরিশােধনে ব্যবহৃত হয়।
(খ) ফ্লাক্স ব্যবহার করে: ফ্লাক্স গলিত ধাতু হতে অক্সাইডকে ধাতুমল হিসেবে অপসারণ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য অপদ্রব্য অপসারণ করে ফ্লাক্স গলিত ধাতুকে দূষন হতে রক্ষা করে। ফ্লাক্স হিসেবে রুটাইল, চুনাপাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
(গ) নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করে: হিলিয়াম, আর্গন, নিয়ন, নাইট্রোজেন, জেনন প্রভৃতি নিস্ক্রিয় গ্যাসের অবিরাম প্রবাহের ভিতর ওয়েল্ডিং করলে গলিত ধাতুকে দূষন থেকে রক্ষা করা যায়।
আরও পড়ুনঃ আর্ক ওয়েল্ডিং জোড়ার বিভিন্ন ত্রুটিসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা