সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প (Centrifugal Pump) :
এ জাতীয় পাম্পে সেন্ট্রিফিউগাল শক্তির প্রভাবে পানি 'ইম্পেলার আই' দ্বারা পাম্প কেসিং এর মধ্যে প্রবেশ করে এবং ইম্পেলার কেসিং এর মধ্যে চাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে এ পানি পাম্প কেসিং এর প্রান্তদেশ হতে নির্গমন পথে বের হয়ে যায়। সেহেতু ইম্পেলারের কেন্দ্র হতে পানি দূরীভূত হওয়ার ফলে ইম্পেলার আই’তে বায়ুশূন্যতা সৃষ্টি হয়, ফলে সাকশন পাইপ দ্বারা কেসিং এর মধ্যে পানি অবিরাম প্রবাহিত হতে থাকে।
যে পাম্প পানি অথবা তরলকে সেন্ট্রিফিউগ্যাল ফোর্স (Centrifugal Force) ক্রিয়ার মাধ্যমে নিম্ন উচ্চতা হতে অধিক উচ্চতায় উত্তোলন করে তাকে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প বলে।
আরও পড়ুনঃ সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্প এবং রেসিপ্রোকেটিং পাম্পের মধ্যে পার্থক্য
সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Centrifugal Pump) :
(১) এটি একটি অতি উচ্চ গতি সম্পন্ন পাম্প।
(২) সাধারণত এর ইম্পেলার প্রতি মিনিটে 1000 বার কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে 3500 বার ঘুরিয়ে থাকে।
(৩) এই পাম্পের জন্য অল্প বিদ্যুৎ-এর প্রয়ােজন।
(৪) এই পাম্পে সরাসরি বৈদুতিক মােটরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
(৫) এটি ডিসচার্জের হার পাম্পের ডিজাইন এবং ইম্পেলারের ঘূর্ণায়নের হারের উপর নির্ভরশীল।
(৬) এটি চালু করার সময় আকর্ষক নল সম্পূর্ণ দেহ হতে পানিপূর্ণ করা দরকার । নতুবা পানি উপরে উঠবে না।
সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পের শ্রেণিবিভাগঃ
ক্যাচিং অনুসারে সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(i) ভলিউট পাম্প (Volute pump)
(ii) ডিফিউজার বা টারবাইন পাম্প (Diffuser or turbine pump
ইম্পেলারের সংখ্যা অনুসারে নিম্ন লিখিতভাগে ভাগ করা যায়।
(i) সিঙ্গেল স্টেজ পাম্প (Single stage pump)
(ii) মাল্টিস্টেজ পাম্প (Multistage pump)
ইম্পেলারের ভেতর দিয়ে তরলের প্রবাহের দিক অনুসারে-
(i) রেডিয়াল ফ্লো পাম্প (Radial Flow pump)
(i) এক্সিয়াল ফ্লো পাম্প (Axial Flow pump)
(ii) মিক্সড ফ্লো পাম্প (Mixed Flow pump)
ইম্পেলারে তরলের এন্ট্রান্স সংখ্যা অনুসারে-
(i) সিঙ্গেল সাকশন পাম্প (Single suction pump)
(ii) ডাবল সাকশন পাম্প (Double suction pump)
আরও পড়ুনঃ রেসিপ্রােকেটিং পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্প-এর উপাদান (Components of a Centrifugal pump) :
(i) ইম্পেলার (Impeller)
(ii) ক্যাসিং (Casing)
(ii) সাকশন পাইপ (Suction pipe)
(iv) ডেলিভারি পাইপ (Delivery pipe)
সেন্ট্রিফিউগ্যাল এবং রেসিপ্রােকেটিং পাম্পের মধ্যে পার্থক্যঃ
সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পঃ
(1) সিম্পল কনস্ট্রাকশন।
(২) এর ডেলিভারি কন্টিনিউয়াস।
(৩) এটি অধিক ডিসচার্জ এবং কম হেডের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(৪) এটি অধিক স্পিডে চলে।
(৫) ওজন হালকা এবং ইনস্টলেশন সিম্পল।
(৬) ইনিশিয়াল এবং মেইনটেন্যান্স কস্ট কম।
(৭) প্রাইমিং এর প্রয়ােজন হয়।
(৮) অধিক হেড এবং কম ডিসচার্জে ইফিসিয়েন্সি কম।
(৯) সমপরিমাণ নির্গমনে পাম্পের ওজন কম।
(১০) এই পাম্প বসানাের জন্য কম জায়গা এবং সাধারণ ভিত-এর প্রয়ােজন।
(১১) এই পাম্প নষ্ট ও ক্ষয় কম হয়।
(১২) এই পাম্পের সরবরাহ সাধারণত ধারাবাহিক।
(১৩) এতে পাম্প এয়ার ভেসেলের প্রয়ােজন নাই।
(১৪) এটি চালানাে সহজ।
(১৫) এর কর্মদক্ষতা কম।
রেসিপ্রোকেটিং পাম্পঃ
(১) কমপ্লিকেটেড কনস্ট্রাকশন কারন এয়ার ভেসেল, নন রিটার্ন ভালভ থাকে।
(২) এর ডেলিভারি ফ্লাকচুয়েটিং।
(৩) এটি কম ডিসচার্জ এবং অধিক হেডের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(৪) এটি অধিক স্পিডে চলে না।
(৫) ওজন অধিক এবং ইনস্টলেশন কমপ্লিকেটেড ।
(৬) ইনিশিয়াল এবং মেইনটেন্যান্স কস্ট বেশি।
(৭) প্রাইমিং এর প্রয়ােজন হয় না।
(৮) অধিক হেড এবং কম ডিসচার্জে ইফিসিয়েন্সি বেশি।
(৯) সমপরিমাণ নির্গমনে পাম্পের ওজন বেশি।
(১০) এই পাম্প বসানাের জন্য বেশি জায়গা এবং মজবুত ভিত-এর প্রয়ােজন।
(১১) এই পাম্প নষ্ট এবং ক্ষয় বেশি হয়।
(১২) এই পাম্পের সরবরাহ সাধারণত ধারাবাহিক নয়।
(১৩) এই পাম্পে এয়ার ভেসেলের প্রয়ােজন আছে।
(১৪) এটি চালাতে সতর্কতার প্রয়ােজন হয়।
(১৫) এর কর্মদক্ষতা বেশি।
বিভিন্ন প্রকার সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের গঠনপ্রণালির বর্ণনাঃ
ভলিউট পাম্প (Volute Pump) : ভলিউট পাম্পে স্পাইরাল আকৃতির ক্যাসিং থাকে। এই ধরনের ক্যাসিংকে ভলিউট ক্যাসিং বলে। এছাড়া ইম্পেলার, শ্যাফট, সাকশন পাইপ ও ডেলিভারি নিয়ে এই পাম্প গঠিত। শ্যাফটের এক প্রান্ত ভলিউট ক্যাসিং এর মধ্যে থাকে যা ইম্পেলারের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অপর প্রান্ত কাপলিং এর মাধ্যমে ইঞ্জিন বা প্রাইম মােভারের সাথে যুক্ত থাকে।
ডিফিউজার বা টারবাইন পাম্প (Diffuser or Turbine Pump) : এই পাম্পের রিঅ্যাকশন টারবাইন এর মতাে ক্যাসিং এ গাইড ভেন ডিফিউজার রিং এর উপর বসানাে থাকে। এছাড়া, ইম্পেলার, শ্যাফট, ডিফিউজার, ফ্যাশন পাইপ ও ডেলিভারি পাইপ নিয়ে গঠিত ডিফিউজার রিং এবং গাইড ভেনগুলাে ফিক্সড থাকে। গাইড ভেনগুলাে গ্রাজুয়ালি এনলারজড প্যাসেজ সৃষ্টি করে যার মধ্য দিয়ে তরল প্রবাহিত হয়।
বিভিন্ন প্রকার সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের অপারেশনঃ
(১) ভলিউট পাম্প (volute Pump) : প্রথম স্টেপে সাকশন পাইপ এবং ইম্পেলার তরল দ্বারা পূর্ণ করতে হয় যাতে সমস্ত বাতাস এসব অংশ হতে দূরীভূত হয়। এই প্রসেসকে প্রাইমিং বলে। অতঃপর ইঞ্জিন এর সাহায্যে পাম্পের ইম্পেলারকে ঘুরালে তরল সেন্ট্রিফিউগ্যাল ফোর্সের সৃষ্টি হয়। ফলে ইম্পেলারের আউটলেট হতে ডেলিভারি পাইপ পর্যন্ত এরিয়া অব ফ্লো গ্রাজুয়ালি বৃদ্ধি পায়। এভাবে কাইনেটিক এনার্জি প্রেসার এনার্জিতে কনভার্ট হয় এবং তরল প্রয়ােজনীয় উচ্চতায় পৌছে যায়।
(২) ডিফিউজার বা টারবাইন পাম্প (Diffuser or Turbine Pump) : ভলিউট পাম্পের মতােই এই পাম্পেও প্রাইসিং করার পর ইম্পেলারকে ঘুরিয়ে সেন্ট্রিফিউগ্যাল ফোর্স উৎপন্ন করা হয়। ইম্পেলার হতে তরল গাইড ভেনের মধ্যেবর্তী প্যাসেজ (Passage) দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্যাসেজ এর ক্ষেত্রফল গ্রাজুয়ালি বৃদ্ধি করা থাকে। ভেলােসিটি অব ফ্লো কমে যায় এবং কাইনেটিক এনার্জি প্রেসার এনার্জিতে কনভার্ট হয়। ফলে তরল প্রয়ােজনীয় উচচতায় উঠে যায়।
সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের ক্যাভিটেশনঃ
সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পের সাকশন সাইডে প্রেসার তরলের ভেপার প্রেসারের চেয়ে কম হলে ভেপার বাবল (vapor bubbles) ফর্ম করে যা অধিক প্রেসারের স্থানে প্রবাহিত হলে হঠাৎ কলাপস করে এবং পাম্পের পারফরমান্সে ইফেক্ট করে একে ক্যাভিটেশন বলে।
ক্যাভিটেশন প্রতিরােধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে লক্ষণীয়-
(ক) সাকশন হেড যথাসম্ভব কম রাখতে হবে।
(খ) তরলের তাপমাত্রা কম হতে হবে।
(গ) উচ্চ হেডের জন্য নিম্নগতির পাম্প এবং নিম্নগতির ইম্পেলার ব্যবহার করতে হবে।
(ঘ) নিম্ন হেডের জন্য অধিক গতির পাম্প এবং অধিক গতির ইম্পেলার ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ রােটারি পাম্প কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা