ড্রিলিং ও ড্রিল বিট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ড্রিলিং ও ড্রিল বিট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ড্রিলিং (Drilling) কি?

ড্রিলিংঃ ড্রিল বিটের ঘূর্ণায়মান গতির সাহায্যে জবের উপর প্রয়ােজনীয় আকারের ছিদ্র বা হােল তৈরী করার পদ্ধতিকে ড্রিলিং বলে ।

ড্রিল বিটের কাজ কী?

ড্রিল মেশিনের সাথে যুক্ত থেকে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরে কাৰ্যবস্তু থেকে ধাতু কেটে ছিদ্র করাই ড্রিল বিটের কাজ।

স্ট্যান্ডার্ড টুইস্ট ড্রিলের বিভিন্ন অংশের নামঃ

ড্রিলিং মেশিন
টুইস্ট ড্রিল

নিম্নে একটি স্ট্যান্ডার্ড টুইস্ট ড্রিলের বিভিন্ন অংশ উল্লেখ করা হল:-

(১) শ্যাংক

(২) ফ্লুট 

(৩) ট্যাং

(8) মার্জিন

(৫) ওয়েব

(৬) ড্রিল পয়েন্ট

(৭) বডি ক্লিয়ারেন্স

(৯) কাটিং এজ

(৮) লিপ

(১০) ফুট

ড্রিল বিটের বিভন্ন অংশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনাঃ

নিম্নে টুইস্ট ড্রিলের বিভন্ন অংশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল:

(১) শ্যাংক (Shank): ড্রিল চাক বা মেশিন স্পিন্ডেলে আটকানাের জন্য ব্যবহৃত অংশকে শ্যাংক বলে । ছােট সাইজের ড্রিলের জন্য শ্যাংক সােজা এবং বড় সাইজের জন্য ড্রিলের শ্যাংক ট্যাপার থাকে ।

(২) ফ্লুট (Flute): ড্রিল বিটের গায়ে যে গ্রুভ কাটা থাকে তাকে ফ্লুট বলে। ড্রিলের বডিতে ফ্লুট থাকাতে কাটিং লিপ তৈরি হয়। ড্রিলের সমং সৃষ্ট চিপস ফ্লুটের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যায় এবং সহজে কুল্যান্ট চলাচল করতে পারে।

(৩) ট্যাং (Tang): ড্রিলের ট্যাপার শ্যাংকের চ্যাপটা প্রান্তকে ট্যাং বলে। ড্রিলকে সকেট থেকে বের করার সময় এটা ড্রিলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।

(৪) মার্জিন (Margin): ফ্লুটের প্রান্ত ঘেষে ফ্লুটের দৈর্ঘ্য বরাবর ড্রিলের মুখ হতে যে এক ফালি সরু পাত (Strip) দেখা যায়, তাকে মার্জিন (Margine) বলে। মার্জিনের জন্য ছিদ্র করার সময় ছিদ্রের গভীরে ড্রিল বিটের আবর্তনে কোন প্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না এবং ছিদ্রের মাপ সঠিক রাখে ।

(৫) ওয়েব (Web): ড্রিল বিটের গায়ে দুই দিকে দুটি ফ্লুট কেটে নেয়ার পর মাঝখানে যে অংশ বাকী থাকে তাকেই ওয়েব বলে । ওয়েভ পয়েন্টের দিক থেকে শ্যাংকের দিকে ক্রমশঃ মােটা থাকে। এতে ড্রিল বেশি রিজিড বা দৃঢ় এবং শক্তিশালী হয়। ওয়েভকে ট্যাপার করার জন্য ড্রিলের ফ্লুট দুটিকে একই গভীরতা পর্যন্ত কাটা হয় না।

(৬) ড্রিল পয়েন্ট বা Dead Center: ড্রিলের বিটের কাটিং এজ দুটি এক পয়েন্ট মিলিত হয়ে সূচালাে আকারে তৈরী হয় এই পয়েন্টকে ডেড সেন্টার বা ড্রিল পয়েন্ট বলে। একে কেন্দ্র করেই ড্রিল বিট ঘুরে এবং ড্রিল যত জোরে ঘুরুক না কেন ডেড সেন্টার স্থির থাকে। ছােট ড্রিলের ক্ষেত্রে এটা বিন্দুর মত দেখালেও বড় ড্রিলের ক্ষেত্রে এর দৈর্ঘ্য 3 মিমি বা 0.125 ইঞ্চির মত।

(৭) বডি ক্লিয়ারেন্স (Body Clearance): ড্রিলের মার্জিন ব্যাস থেকে বড়ির ব্যাস কিছুটা কম রাখা হয়। এই দুই মাপের পার্থক্যকে বডি ক্লিয়ারেন্স বলে। বডি ক্লিয়ারেন্স থাকাতে ড্রিলের সমস্ত সারফেসের সাথে ছিদ্রের সারফেসের ঘর্ষণ হয় না।

(৮) লিপ ক্লিয়ারেন্স (Lip Clearance): এমনভাবে কাটিং এজ এর পিছনের দিকে এ্যাঙ্গেল বা ঢাল দেয়া থাকে যাতে ছিদ্র করার সময় কেবল কাটিং এজই জবের সংস্পর্শে আসে এবং পিছনের দিকে জবকে স্পর্শ করে না। কাটিং এজ যে কোণে ক্লিয়ারেন্স পায় তাকে ক্লিয়ারেন্স কোণ বলে। স্টীল বা শক্ত ধাতুর ক্ষেত্রে কোণ কম থাকে এবং নরম ধাতুর ক্ষেত্রে এর মান একটু বেশি হয়।

(৯) কাটিং লিপ (Cutting Lip): ড্রিলের যে অংশ ধাতু কাটে তাকে কাটিং লিপ বা কাটিং এজ বলে। কাটিং এজদ্বয়ের দৈর্ঘ্য সমান হওয়া উচিৎ। ছােট বড় হলে ছিদ্র ওভার সাইজ হয়ে যায় ।

ড্রিল ফ্লুটের কাজ কী কী?

ড্রিল ফ্লুটের কাজগুলাে-

১. ফ্লুটস কাটিং এজ বা কর্তন প্রান্ত গঠনে সহায়তা করে।

২. কর্তন চূর্ণ বাইরে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে।

৩. কর্তন চূর্ণ কুঞ্চিত করে থাকে।

৪. কর্তন প্ৰবাহী কর্তন প্রান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করে ।

ড্রিলিং এর তিনটি প্রয়ােগক্ষেত্রঃ

ড্রিলিং এর প্রয়ােগক্ষেত্র হল-

১. বােল্ট, রিভেট ও পিন ঢুকানাের জন্য ছিদ্র করা;

২. ট্যাপিং, প্যাঁচ কাটার জন্য ছিদ্র করা;

৩. ভাঙা ড্রিল, পিন, স্ক্রু বের করতে ছিদ্র করা হয়।

সেন্টার ড্রিলিং বলতে কী বুঝায়?

সেন্টার ড্রিলিংঃ কোন বস্তু বা জবের অক্ষের সমান্তরালভাবে বা অক্ষ বরাবর সেন্টার ড্রিল বিট দিয়ে ড্রিলিং করাকে সেন্টার ড্রিলিং বলে। বড় জবকে সাপাের্ট করার জন্য বা বড় ব্যাসের ড্রিল চালানাের আগে সেন্টার ড্রিল করা হয়।

ড্রিলের কার্যকারিতা কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

ড্রিলের কার্যকারিতা নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা-

(১) কাৰ্যবস্তু

(২) ড্রিলের ব্যাস ও ফীড

(৩) ড্রিলের জ্যামিতিক আকার 

(৪) কাটিং ফ্লুইড

(৫) কাটিং স্পীড

(৬) ছিদ্রের গভীরতা

(৭) ড্রিলের ক্ষয় ইত্যাদি। 

ড্রিলিং, রিমিং ও বােরিং অপারেশনের মাঝে পার্থক্যঃ

নিম্নে ড্রিলিং, রিমিং ও বােরিং অপারেশনের মাঝে পার্থক্য দেয়া হল-

ড্রিলিংঃ

(১) ড্রিল মেশিনে ড্রিল বিট দিয়ে ছিদ্র করাকে ড্রিলিং বলে ।

(২) এটা ড্রিল বিট দিয়ে করা হয়।

(৩) এটা মেশিনে সম্পন্ন করা হয়।

(৪) সময় কম লাগে।

রিমিংঃ

(১) ড্রিলিং করা ছিদ্রকে মসৃণ করাকে রিমিং বলে।

 (২) এটা রিমার দিয়ে করা হয়।

(৩) এটা মেশিন ও হাত উভয় দিয়ে সম্পন্ন করা হয়।

 (৪) সময় বেশি লাগে।

বােরিংঃ

 (১) ড্রিলিং করা ছিদ্রকে পূর্বাপেক্ষা বড় করাকে বােরিং বলে।

(২) এটা বােরিং টুল দিয়ে করা হয়।

(৩) এটা মেশিন দিয়ে সম্পন্ন করা হয় ।

 (৪) সময় বেশি লাগে।

কাটিং টেম্পারেচার কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

কাটিং ম্যাটেরিয়্যাল, কাটিং টুলের তীক্ষ্ণতা এবং উভয়ের মধ্যে ঘর্মণর পরিমাণ।

কাউন্টার সিংকিং বলতে কী বুঝায়?

কাউন্টার সিংকিংঃ কাউন্টার শ্যাঙ্ক নামের স্ক্রুকে ছিদ্রের মধ্যে ব্যবহার করার জন্য ছিদ্রের প্রান্তে-র মুখকে কৌণিকভাবে (60°) সম্প্রসারিত করতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তাকে কাউন্টার সিংকিং বলে।

কাউন্টার বােরিং বলতে কী বুঝায়?

কাউন্টার বোরিংঃ জবের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছিদ্রের মধ্যে বােল্ট, স্ক্রু ইত্যাদির মাথাকে ভিতরে স্থান করে দিতে কাউন্টার বােরিং কাটার দিয়ে ছিদ্রের প্রান্তের ব্যাস বাড়িয়ে এর তলদেশকে সমতল করতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তাকে কাউন্টার বােরিং বলে।

বিভিন্ন প্রকার ড্রিলিং মেশিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url