ইঞ্জিন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
ইঞ্জিন |
হিট ইঞ্জিন: ইহা এমন একটি ডিভাইস যা ফুয়েলের রাসায়নিক শক্তিকে তাপীয় শক্তিতে রুপান্তরিত করে যান্ত্রিক কাজ উৎপন্নে ব্যবহার করে।
ইঞ্জিন প্রধানত দুই প্রকারঃ
(১) ইন্টারনাল কম্বাসন ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine)
(২) এক্সটারনাল কম্বাসন ইঞ্জিন (External Combustion Engine)
টু স্ট্রোক এবং ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের মধ্যে পার্থক্যঃ
টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনঃ
১। এই ইঞ্জিন ক্র্যাংক শ্যাফট একবার ঘুরে আসলে এবং পিষ্টন দুইবার উঠানামা করলে শক্তি লাভ করে।
২। কোন ভালভ ব্যবহার করা হয় না। যদি করা হয় তবে এগজষ্ট অথবা ইনলেট ভালভ।
৩। এই ইঞ্জিনে তিনটি পাের্ট থাকে যেমন ইনটেক, এগজষ্ট
এবং ট্রান্সফার পাের্ট।
৪। তুলনামূলকভাবে বেশী শক্তি উৎপন্ন হয়।
৫। এই ইঞ্জিনে কিছু বাতাস এবং জ্বালানির মিশ্রণ নষ্ট হয়।
৬। ইফিসিয়েন্সী কম।
৭। এই ইঞ্জিনের শব্দ এবং ক্ষয়ক্ষতি বেশী।
৮। এই ইঞ্জিনের অধিকাংশ এয়ার কুলিং পদ্ধতি হয়।
ফোর ষ্ট্রোক ইঞ্জিনঃ
১। এই ইঞ্জিন ক্র্যাংক শ্যাফট দুইবার (720°) ঘুরে আসলে এবং পিষ্টন চারবার উঠানামা করলে শক্তি লাভ করে।
২। এই ইঞ্জিনে এগজষ্ট এবং ইনটেক ভালভ ব্যবহার করা হয়।
৩। এই ইঞ্জিনের দুইটি ভালভ থাকে।
৪। তুলনামূলকভাবে কম শক্তি উৎপন্ন হয়।
৫। কোন প্রকার বাতাস এবং জ্বালানির মিশ্রণে নষ্ট হয় না।
৬। ইফিসিয়েন্সী বেশী।
৭। এই ইঞ্জিনের শব্দ এবং ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম।
৮। ইহা অধিকাংশ ওয়াটার কুলিং পদ্ধতি হয়।
ইগনিশন কয়েলের কাজঃ
ব্যাটারির লাে- ভােল্টেজ বিদ্যুৎ হাই ভােল্টেজে পরিণত করে যা স্পার্ক প্লাগ গ্যাপ লাফ দিয়ে অতিক্রম করার সময় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রদান করে।
পেট্রোল ইঞ্জিন এবং ডিজেল ইঞ্জিন এর মধ্যে পার্থক্যঃ
পেট্রোল ইঞ্জিনঃ
১। এই ইঞ্জিন অটো সাইকেলের উপর চলে।
২। ইহা স্থির ভলিউম সাইকেল।
৩। সাকশনের সময় বাতাস এবং জ্বালানি মিশ্রণ সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।
৪। দহন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যাটারী ইগনিশন কয়েল, সিবি পয়েন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর এবং স্পার্ক প্লাগ ইত্যাদির প্রয়ােজন।
৫। জ্বালানি পদ্ধতির জন্য এসি পাম্প এবং কার্বুরেটর অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।
৬। এই ইঞ্জিনের সংকোচন অনুপাত 6 হতে 10.5।
৭। এই ইঞ্জিনে উচ্চমানের তৈল ব্যবহার করা হয়।
৮। এই ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কম।
৯। এই ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল বেশী।
১০। সর্বোচ্চ RPM পাওয়া যায়।
১১। ওজনে হালকা,সমশক্তির জন্য।
ডিজেল ইঞ্জিনঃ
১। এই ইঞ্জিন ডিজেল সাইকেলের উপর চলে।
২।ইহা স্থির প্রেসার সাইকেল।
৩। সাকশনের সময় শুধুমাত্র বাতাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে ।
৪ | দহন কার্য সম্পাদনের জন্য কমপ্রেশন স্ট্রোকের শেষে হাই প্রেসার পাম্প ইনজেকটরের সাহায্যে ডিজেল স্প্রে করে।
৫। জ্বালানি পদ্ধতির জন্য হাইপ্রেসার পাম্প এবং ইনজেকটর অত্যন্ত প্রয়ােজন।
৬। এই ইঞ্জিনে সংকোচন অনুপাত 14 হতে 22।
৭। এই ইঞ্জিনে অপেক্ষাকৃত নিন্মমানের তৈল ব্যবহার করা হয়।
৮। এই ইঞ্জিনে কর্মক্ষমতা বেশী।
৯। এই ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল কম।
১০। অপেক্ষাকৃত কম RPM পাওয়া যায়।
১১। ওজনে ভারী, সমশক্তির জন্য।
ইঞ্জিন ফ্লাই হুইলের কাজঃ
ফ্লাই হুইল ঢালাই লােহার তৈরি একটি ভারী চাকতি বিশেষ , যা ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের পেছনের প্রান্তে সংযুক্ত থাকে এবং ক্র্যঙ্কশ্যাফটের সাথে ঘুরে । এটা ইঞ্জিনের পাওয়ার স্ট্রোক হতে শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং ইনার্শিয়াসহ ঐ শক্তি দিয়ে অন্যান্য স্ট্রোকগুলাে পরিচালনা করে। এটা ইঞ্জিনের গতির হ্রাস বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে ইঞ্জিনকে সুষম গতিতে পরিচালনা করে। ফ্লাই হইলের মাধ্যমে ইঞ্জিনের শক্তি প্রয়ােজনীয় কাজে স্থানান্তর করা হয়। ফ্লাই হুইলকে ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সাথে ফ্লেঞ্জ ও অনেকগুলাে বােল্ট দিয়ে যুক্ত করা হয়।
স্পার্ক প্লাগ এর কাজঃ
ইলেকট্রিক স্পার্ক সৃষ্টি করা।
স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনে কার্বুরেটরের কাজঃ
কার্বুরেটর ইঞ্জিনের চাহিদা অনুপাতে এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ তৈরি করে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে সরবরাহ করে। এ মিশ্রণ তৈরি করার জন্য কার্বুরেটর প্রথমে জ্বালানিকে ভেঙে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত করে এবং কার্বুরেটরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পরিষ্কার বাতাসের সাথে মিশ্রিত করে। জ্বালানি বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়ে দ্রুত বাস্পীভূত হয়ে দহন উপযােগী হয় এবং ইঞ্জিন সিলিন্ডারে চলে যায়।
ইঞ্জিনের অপরিহার্য সিস্টেমগুলাের নামঃ
ইঞ্জিনের অপরিহার্য সিস্টেমগুলাের নাম নিম্নে দেওয়া হল:
১। জ্বালানি পদ্ধতি
২। প্রজ্বলন পদ্ধতি
৩। পিচ্ছিলকরণ পদ্ধতি
৪ । ঠান্ডাকরণ পদ্ধতি
৫। স্টার্টিং পদ্ধতি
স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনের ফুয়েল সিস্টেম যেসব অংশ নিয়ে গঠিত?
নিম্নলিখিত কম্পােন্যান্ট বা অংশগুলাে নিয়ে এস. আই ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেম গঠিত:
১। ফুয়েল ট্যাঙ্ক
২। ফুয়েল ফিল্টার
৩। ফুয়েল পাম্প
৪। কার্বুরেটর
৫। ফুয়েল লাইন
৬। ইনটেক মেনিফোল্ড
৭। এয়ার ক্লিনার
ইঞ্জিন স্টার্ট করার পদ্ধতিগুলাের নামঃ
ইঞ্জিনের আকার, প্রকৃতি, ক্ষমতা ইত্যাদিও উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন। ধরনের স্টার্টিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিচে পাঁচটি স্টাটিং পদ্ধতির নাম।
উল্লেখ করা হলাে-
১। হস্তচালিত বা যান্ত্রিক স্টার্টিং পদ্ধতি।
২। ক্র্যাঙ্কিং মােটর স্টার্টিং পদ্ধতি।
৩। পাইলট ইঞ্জিন স্টার্টিং পদ্ধতি।
৪। কমপ্রেসড এয়ার স্টার্টিং পদ্ধতি।
৫। কার্টিজ স্টার্টিং পদ্ধতি।
ইনটেক সিস্টেমে যে সকল অ্যাকসেসরিসগুলাে সন্নিবেশিত থাকে তাদের নামঃ
নিম্নলিখিত অ্যাকসেসরিসগুলাে ইনটেক সিস্টেমে সন্নিবেশিত থাকে।
১। এয়ার ক্লিনার
২। ইনটেক মেনিফোল্ড
৩। সুপার চার্জার
৪। ইনটেক সাইলেন্সার
৫। দু স্ট্রোক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে স্ক্যাভেঞ্জিং পাম্প।
এয়ার ক্লিনারের কাজগুলােঃ
১। ইঞ্জিনে ব্যবহৃত বাতাসকে পরিষ্কার করে।
২। ইঞ্জিনে বাতাস ঢােকার সময় শব্দ কমায়।
৩। কার্বুরেটরের ইঞ্জিন ব্যাকফায়ারে এয়ার ক্লিনার ফ্রেম অ্যারেস্টার হিসেবে কাজ করে।
৪। ইঞ্জিনের বিভিন্ন চলমান অংশসমূহের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে।
ইঞ্জিনে সুপার চার্জার ব্যবহারের সুবিধাগুলােঃ
১। একই আউটপুটের ইঞ্জিনের সাইজ ছােট হয়।
২। ইঞ্জিনের আউটপুট 30% হতে 50% বৃদ্ধি করা যায়।
৩। সুপার চার্জ ইঞ্জিনের ফুয়েল খরচ কম হয়।
৪। সুপার চার্জ ইঞ্জিনের আয়তনিক দক্ষতা বেশি।
৫। ডিজেল ইঞ্জিনে সুপার চার্জার ব্যবহারে নক হ্রাস পায়।
সুপার চার্জার এবং টার্বোচার্জারের কাজ কী?
সুপার চার্জারঃ বায়ুমন্ডলের চাপের চেয়ে অধিক চাপে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে বাতাস বা বাতাস ও জ্বালানির মিশ্রণ প্রবেশ করানাের প্রয়ােজনে সুপার চার্জার ব্যবহৃত হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে অতি উচ্চ স্থানে যেখানে বায়ুর চাপ কম বা কিংবা পাহাড়, পর্বত বা বিমানের ইঞ্জিনে সাকশনের সময় যাতে বাতাস প্রবেশের পরিমাণ হ্রাস না পায় সেজন্য সুপার চার্জার ব্যবহৃত হয়।
টার্বোচার্জারঃ সেন্ট্রিফিউগাল সুপার চার্জারকে এগজস্ট টারবাইনের সাথে যুক্ত করে এগজস্ট গ্যাসের বেগে পরিচালনা করার জন্য টার্বোচার্জার ব্যবহার করা হয়।
ডিজেল ইঞ্জিনে ইনজেক্টরের কাজ কী? অথবা, অটোমাইজারএর কাজ কী?
ইনজেক্টর ডিজেল ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইনজেক্টর জ্বালানিকে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত করে দহন প্রকোষ্ঠে স্প্রে করে।
পেট্রোল ইঞ্জিনের তুলনায় ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধাগুলােঃ
পেট্রোল ইঞ্জিনের তুলনায় ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধাগুলাে নিচে দেয়া হল-
১। পার্ট লােড এবং ফুল লােডে জ্বালানি খরচ কম।
২। অপেক্ষাকৃত কমদামি জ্বালানি ব্যবহৃত হয়।
৩। আগুন লাগার ঝুঁকি কম।
৪। তাপীয় দক্ষতা বেশি।
৫। আয়ুষ্কাল দীর্ঘ।
৬। সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ গতিতে এর টর্কের পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত কম। সুতরাং মােটরযানে টপ গিয়ারে বেশি শক্তি পাওয়া যায় ।
ডিজেল ফুয়েল সিস্টেমের উদ্দেশ্যগুলােঃ
ডিজেল ফুয়েল সিস্টেমের উদ্দেশ্যগুলাে নিম্নরুপ:
১। জ্বালানিকে ফিল্টার দিয়ে পরিস্রুত করে।
২। ইঞ্জিনের স্পিড এবং লােড অনুসারে জ্বালানি সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করে।
৩। সাইকেলের নির্ধারিত সময়ে জ্বালানি ইনজেক্ট করে।
৪। ইনজেক্টর সঠিক হারে জ্বালানি ইনজেক্ট করে।
৫। কম্বাশন চেম্বারে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি ক্ষুদ্র কণার আকারে স্প্রে করে।
৬। ইনজেকসন অতি দ্রুত আরম্ভ ও শেষ হয় যাতে জ্বালানি ফোটা আকারে না পরে।
পাওয়ার এবং টর্কের মধ্যে পার্থক্যঃ
পাওয়ারঃ
১। কোন কাজ করিবার হারকে পাওয়ার বলে। ইহা কোন বস্তুকে রৈখিক বা ঘূর্ণন গতি দান করিতে পারে।
২। পাওয়ারের একক কেজি-মিটার/সেকেন্ড।
৩। কাজ বৃদ্ধির সংঙ্গে শক্তির ও বৃদ্ধি ঘটে।
৪। পাওয়ার=(সম্পাদিত কাজ/সময়)।
টর্কঃ
১। কোন নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত কোন বস্তুর উপর বল কাজ করিলে অথবা আদি অবস্থা হইতে কোন বস্তুর ঘূর্ণন প্রবনতাকে টর্ক বলে।
২। টর্কের একক কেজি মিটার।
৩। বস্তুর উপর আরােপিত বলের দূরত্ব বা প্রয়ােগকৃত বলের টর্ক বৃদ্ধি পায়।
৪। টর্ক, T=PR কেজি-মিটার।
P= প্রযুক্ত বল, কেজি।
R= লিবারের দৈর্ঘ্য।