এবার নিজেই বানিয়ে নিন আলোনির্ভর কলিং-বেল
এখন আপনাদের এমন একটি কলিং বেলের ডায়াগ্রাম দেব যার জন্য সুইচের কোন প্রয়োজন নেই। দরজার সামনে কেউ এসে দাঁড়ানো মাত্র কলিং বেলটি নিজে থেকেই বাজতে শুরু করবে। ডায়াগ্রামে যাওয়ার আগে দু'টি নতুন পার্টস্ সম্বন্ধে জেনে নিন।
ভেরিয়েবল রেজিস্টরঃ
নাম থেকেই বোঝা যায় এটি এমন একটি রেজিস্টর যার মান পরিবর্তনযোগ্য ।
এগুলো বাস্তবে দেখতে সাধারণত নিচের ছবির মত।
ডায়াগ্রামে এটিকে নিচের ছবির মত সাঙ্কেতিক চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
তীরচিহ্নটি মাঝখানের ভেরিয়েবল পা-টি নির্দেশ করে। একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টর বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
মনে করুন, একটি সার্কিটের মধ্যে X, Y ও Z প্রান্তের একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টর সংযুক্ত রয়েছে নিচের ছবির মত।
এখন রেজিস্টরটির ভেরিয়েবল পা-টি Y -প্রান্তের দিকে ঘোরানো শুরু করলে X - প্রান্তের সাথে Y প্রান্তের মধ্যকার রোধ কমতে শুরু করবে। পক্ষান্তরে Z-প্রান্তের সাথে X-প্রান্তের মধ্যকার রোধ বাড়তে শুরু করবে। এক্ষেত্রে সার্কিটের একটি অংশে বিদ্যুৎ প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই হারে অপর অংশে বিদ্যুৎ প্রবাহ হ্রাস পাবে। আবার কোন সার্কিটের সাথে X ও Y-প্রান্ত সংযুক্ত থাকলে এবং Z-প্রান্তটি ফাঁকা থাকলে রেজিস্টরটি সার্কিটের শুধু একটি নির্দিষ্ট অংশে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে রেজিস্টরটির মান 100kΩ হলে সেটি 0Ω থেকে 100KΩ -এর মাঝের যে কোন মান গ্রহণ করতে পারে। এমনকি যদি X ও Z -প্রান্তটি সংযুক্ত করে দেয়া হয় নিচের ছবির মত।
তবে সেক্ষেত্রেও তা 0Ω থেকে 100KΩ পর্যন্ত মান গ্রহণ করতে পারবে। একটু চিন্তা করলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন।
এল.ডি.আর.(LDR):
এল.ডি.আর (LDR-Light Dependent Resistor) হলো এক বিশেষ ধরনের রেজিস্টর যার মান পরিবর্তিত হয় সেটির উপর আপতিত আলোর পরিমাণের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, এর উপরের পৃষ্ঠে আপতিত আলোর পরিমাণ যত কমতে থাকে এর রোধের মান সেই সঙ্গে তত বাড়তে থাকে।
এটি বাস্তবে দেখতে নিচের ছবির মত।
এবং ডায়াগ্রামে দেখতে নিচের ছবির মত সাঙ্কেতিক চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রেই সাঙ্কেতিক চিহ্নে তীরচিহ্ন দু'টি (আপতিত আলোর চিহ্ন) দেয়া হয় না। সম্পূর্ণ অন্ধকারে LDR-এর রোধের মান 1MΩ -এরও বেশি হয়ে থাকে (1000KΩ=1MΩ)। আবার প্রচুর আলোতে তা 200Ω -এরও নিচে নেমে যায়। LDR-এর এই আলোক-সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগিয়েই আমাদের এই কলিং বেলের সার্কিটটি কাজ করবে।
ডায়াগ্রামঃ
ডায়াগ্রামটি ভাল করে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন শুধু আই.সি.(I.C), এল.ডি.আর.(LDR), ডায়োড, স্পিকার, ক্যাপাসিটর, রেজিস্ট্রর এবং ভেরিয়েবল রেজিস্টর সংযুক্ত করা হয়েছে। এই আই.সি.-টি যদি আপনার শহরের দোকানে সহজলভ্য না হয় তবে অনায়াসে UM3481, UM3482, UM3483, UM3484 এবং UM34811—এই আই.সি.গুলোর মধ্যে যেকোনটি ব্যবহার করতে পারেন। 10KΩ মানের যে ভেরিয়েবল রেজিস্টরটি সার্কিটে রয়েছে তার একটি পা ফাঁকা থাকবে এবং মাঝখানের ভেরিয়েবল পা-টি সংযুক্ত হবে 1KΩ রেজিস্টরটির একপ্রান্তে। অনেকদিন ধরে পড়ে থাকার বা অন্য কোন কারণে LDR-টির সংবেদনশীলতা কম-বেশি হলে এই 1KΩ রেজিস্টরটির মানও কিছুটা কম-বেশি করতে হতে পারে। তবে তার প্রয়োজন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
LDR-টির উপরে যথেষ্ট ছায়া পড়লে কলিং বেলটি বাজতে শুরু করবে। সুতরাং LDR-টি দরজার সাথে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন LDR-টির উপরের পৃষ্ঠে ক্রমাগত আলো পড়তে থাকে এবং দরজার বাইরে কেউ এসে দাঁড়ালে তা যেন গাঢ় ছায়ায় ঢেকে যায়, আর তাহলেই কলিং বেলটি বাজতে শুরু করবে। LDR-টির উপর আপতিত আলো একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে আগত (Directional light) হলে ভাল হয়। কেননা, বিভিন্ন দিক থেকে আলো আসলে তা সৃষ্ট ছায়াকে বেশ খানিকটা হালকা করে দেয়। এ কারণে 10KΩ রেজিস্টরটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মান পরিবর্তন করে সার্কিটের সংবেদনশীলতা কম-বেশি করার প্রয়োজন হবে।
আমরা প্রায় সবাই এ পর্যন্ত যত মিউজিক্যাল কলিং বেল দেখেছি তার অধিকাংশই সম্ভবত ইংরেজি ছড়াগানের মিউজিক সংবলিত যা আমাদের অনেকের কাছেই হয়তো একসময় একঘেয়ে মনে হয়। তাই আপনাদের জন্য এই সার্কিটের শেষ আকর্ষণ হলো—ডায়াগ্রামের অন্তর্গত আই.সি.-টি ব্যবহার করে সার্কিটটি তৈরি করলে যে মিউজিক শোনা যাবে তার সুরগুলো হবে এই উপমহাদেশীয় ঢঙের সুর।