আরডুইনোতে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়ার পদ্ধতি | Arduino Bangla
আমাদের কাজ করার জন্য শক্তি প্রয়োজন। আমরা মানুষেরা সেই শক্তি পাই খাবার থেকে। তেমনি ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের কাজ করার জন্য শক্তি প্রয়োজন। আর সেই শক্তি হলো বিদ্যুৎশক্তি।
আমাদের প্রিয় আরডুইনো চালানোর জন্যও প্রয়োজন বিদ্যুৎশক্তির। আরডুইনোর জন্য সবচেয়ে ভালো হলো ৭ থেকে ১২ ভোল্ট (Volt), আর ০.৫ থেকে ২ এম্পিয়ারের (Ampere) বিদ্যুৎপ্রবাহ।
একবার বললাম তোমার মাথায় এখন কি একটা প্রশ্ন ঘুরছে ভোল্টেজ (Voltage), আরেকবার বললাম কারেন্ট (Current) ভোল্টেজের একক হলো ভোল্ট, কারেন্টের একক হলো এম্পিয়ার।
তোমরা জানো, বিদ্যুৎপ্রবাহ আসলে ইলেকট্রনের (electron) প্রবাহ। বৈদ্যুতিক তারের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রন ছুটে চলে নিম্ন বিভবের দিক থেকে উচ্চ বিভবের দিকে। মানে, যেখানে ইলেকট্রন বেশি আছে সেদিক থেকে ইলেকট্রন ছুটে চলে যেদিকে ইলেকট্রন কম আছে সেই অঞ্চলে। এই যে একদিকে ইলেকট্রন বেশি পরিমাণে রয়েছে আরেক দিকে কম একে বলে বিভব পার্থক্য, আর এই বিভব পার্থক্যের ফলে ইলেকট্রনের ছুটে চলার জন্য একটা চাপ সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনের ছুটে চলার জন্য এই চাপকে আমরা সহজ ভাষায় বলব ভোল্টেজ।
তোমরা দেখেছ, যেকোনো ব্যাটারির দুইটি প্রান্ত থাকে— পজেটিভ প্রান্ত, আর গ্রাউন্ড / নেগেটিভ। এই দুই প্রান্তে কিন্তু ইলেকট্রনের পরিমাণের পার্থক্য থাকে। আমরা যদি একটি ব্যাটারির দুই প্রান্তের সাথে একটা ছোট্ট বাতি সংযুক্ত করি তখন সেটা জ্বলে ওঠে। এই বাতিটা জ্বলার শক্তি তাহলে কোথা থেকে পায়? ইলেকট্রনের ছুটে চলা থেকে।
ব্যাটারির দুই প্রান্তের সাথে বাতি যুক্ত করলে সার্কিট পূর্ণ হয়। তখন ইলেকট্রন বেশি চাপের অঞ্চল থেকে, যে অঞ্চলে ইলেকট্রন কম সেদিকে প্রবাহিত হতে থাকে। আর ইলেকট্রনের প্রবাহ থেকেই বাতি জ্বলার শক্তি পায়। তারের ভেতর দিয়ে কী পরিমাণ ইলেকট্রন প্রবাহ হচ্ছে তাকে আমরা বলি কারেন্ট (Current Flow)। এক কথায় বলতে গেলে ইলেকট্রনকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করা ভোল্টেজের কাজ এবং কারেন্ট হচ্ছে ইলেকট্রনের প্রবাহ।
তোমরা ওপরে যে ব্যাখ্যাটি পড়লে, সেটিকে আমি বলব একটি ‘Over Simplified Defination’ অর্থাৎ বোঝানোর সুবিধার্থে আমি অনেক কিছুকে অনেক বেশি সহজভাবে বলেছি।
আরডুইনোতে পাওয়ার সাপ্লাইঃ
চিত্রঃ একটি ৯ ভোল্ট ব্যাটারি। |
আমরা আরও সহজ ভাষায় ভোল্টেজ বলতে বুঝব ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্ত (+) আর নেগেটিভ/ গ্রাউন্ড প্রান্তের (-) মানের পার্থক্য। আর কারেন্ট বলতে বুঝব তারের মধ্য দিয়ে কতটুক বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে তা।
চিত্রঃ আরডুইনোতে পাওয়ার সাপ্লাই করার মতো বিভিন্ন পোর্ট। |
ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমেঃ
চিত্র: ইউএসবি প্লাগ। |
তুমি যখন কম্পিউটারের ইউএসবি পোর্টের সাথে আরডুইনোকে যুক্ত করো, সেখান থেকে আরডুইনো ৫ ভোল্ট - ০.৫ মিলিএম্পিয়ার (mA ) বিদ্যুৎপ্রবাহ পায়। ছোটখাটো প্রজেক্ট করার জন্য এই পরিমাণ কারেন্ট যথেষ্ট। কিন্তু তুমি যখন মোটর চালাবে বা এমন কোনো সেন্সর চালাবে যাতে বেশি ভোল্টেজ প্রয়োজন, তখন কিছুটা সমস্যা হয়।
তা ছাড়া, সব সময় আরডুইনো কম্পিউটারের সাথে লাগিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। তুমি যদি দেখানোর জন্য কোনো প্রজেক্ট বানাও সে ক্ষেত্রে ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ দিতে হবে।
শুরুর দিকের কাজগুলোর জন্য ইউএসবি পাওয়ারই যথেষ্ট।
আজকাল অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন চার্জারে ইউএসপি পোর্ট থাকে। তুমি চাইলে অ্যান্ড্রয়েড চার্জার থেকে তারটি খুলে, তোমার আরডুইনোর ইউএসবি সেখানে লাগিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই নিতে পারো। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবে- আরডুইনোর ইউএসবি পোর্ট দিয়ে ৫ ভোল্ট (5V) - ০.৫ এম্পিয়ারের (0.5A) বেশি বিদ্যুৎপ্রবাহ দেওয়া যাবে না। এই পথে অতিরিক্ত বিদ্যুৎপ্রবাহে আরডুইনো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ডিসি ব্যারেল প্লাগের মাধ্যমেঃ
চিত্র: ২১/৫৫ ডিসি ব্যারেল প্লাগ। |
বড় প্রজেক্ট করার সময় সবচেয়ে সুবিধা হয় এই প্লাগ দিয়ে কারেন্ট দিলে। তুমি চিত্রে খেয়াল করলে দেখতে পারবে ডিসি ব্যারেল প্লাগ চিহ্নিত করা রয়েছে। এই প্লাগ দিয়ে তুমি আরডুইনোকে ৯ থেকে ১২ ভোল্ট (9-12V) বিদ্যুৎপ্রবাহ দেবে। ৯-এর কম ভোল্টেজ বা ১২-এর বেশি ভোল্টেজেও আরডুইনো চলতে সক্ষম। কিন্তু কম ভোল্টেজে বিভিন্ন সেন্সর ঠিকমতো কাজ করে না। আবার বেশি ভোল্টেজে আরডুইনো অতিরিক্ত গরম হয়ে নষ্ট হতে পারে। তাই ৯ থেকে ১২ ভোল্টের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ দেওয়া শ্রেয়। এই প্লাগ দিয়ে ০.৫ থেকে ২ এম্পিয়ার (0.5-2A) কারেন্ট দেওয়া হয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি পাওয়া যায়। তুমি ছোটখাটো প্রজেক্টের জন্য ৯ ভোল্ট ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারো।
চিত্র: ডিসি ব্যারেল প্লাগের সাথে যুক্ত একটি ৯ ভোল্ট ব্যাটারি ক্লিপ। |
উপরের ছবিতে একটি ৯ ভোল্ট ব্যাটারির ক্লিপের সাথে ব্যারেল প্লাগ দেখানো হয়েছে। ৯ ভোল্ট ব্যাটারি কেনার সময় দোকানদার আংকেলকে বললেই তোমাকে এই ক্লিপটা দিয়ে দেবেন।
তুমি যদি নিয়মিত আরডুইনো নিয়ে কাজ করতে চাও, সে ক্ষেত্রে তোমার জন্য পাওয়ার অ্যাডাপটার সবচেয়ে সুবিধার হবে। কারণ ব্যাটারি কিনে কিনে কাজ করতে অনেক বেশি খরচ হয়। অবশ্য তুমি চাইলে রিচার্জেবল (Rechargeable) ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারো।
এসি টু ডিসি পাওয়ার অ্যাডাপটার (AC to DC Power Adapter):
চিত্র: পাওয়ার অ্যাডাপ্টার। |
এসি টু ডিসি পাওয়ার অ্যাডাপটার কেনার সময় যা খেয়াল করবে-
- ৯ থেকে ১২ ভোল্ট (9-12V)
- ১ থেকে ২ এম্পিয়ার (1-2A)
এই রেটিংয়ের মাঝে একটি অ্যাডাপটার কিনবে। আর দেখে নেবে যেন প্লাগের ভেতর দিকটা পজেটিভ হয়। ঠিক নিচের ছবির মত।
চিত্র: ডিসি ব্যারেল প্লাগের ভেতর দিকটা পজেটিভ। |
ইনপুট আউটপুট পিনের মাধ্যমে পাওয়ার সাপ্লাইঃ
আরডুইনোতে ‘Vin’ পিনের মাধ্যমেও তুমি পাওয়ার ইনপুট দিতে পারো। এই ‘Vin Pin' আসলে ব্যারেল প্লাগের পজেটিভের সাথে শর্ট করা। শর্ট করা মানে, ভেতরে ভেতরে যুক্ত। সহজ কথায়, ব্যারেল প্লাগের পজেটিভ অংশ আর ‘Vin Pin’ আসলে একই জিনিস।তার মানে ‘Vin’-এ তুমি ৯ থেকে ১২ ভোল্ট (9-12V) বিদ্যুৎপ্রবাহ দেবে। আর ০.৫ থেকে ২ এম্পিয়ার (0.5-2A) কারেন্ট প্রবাহ দেবে।
নিচের চিত্রে দেখো ‘5V’, ‘3.3V’ দুটি পিন আছে। এগুলো দিয়ে তুমি কিন্তু আরডুইনোতে পাওয়ার ইনপুট দেবে না। এখান থেকে তুমি আউটপুট নিয়ে কোনো সেন্সর চালাতে পারবে। আর ‘GND’ হলো গ্রাউন্ড বা নেগেটিভ প্রান্ত।
চিত্র: ফিউজ, ভোল্টেজ রেগুলেটর এবং পাওয়ার পিন। |
আরডুইনো বোর্ডে ভোল্টেজ রেগুলেটর (Voltage Regulator) নামের একটা জিনিস আছে। আমরা আরডুইনোকে ৫ থেকে ১২ বিভিন্ন ভোল্টেজে পাওয়ার সাপ্লাই দিলেও এর অভ্যন্তরের আইসি বা মাইক্রোকন্ট্রোলার একটা নির্দিষ্ট মানের বিদ্যুৎ চায়। আর এটাই হলো ভোল্টেজ রেগুলেটরের কাজ। অর্থাৎ অতিরিক্ত ভোল্টেজকে কমিয়ে মাইক্রোকন্ট্রোলার বা আইসির জন্য পরিমিত ৫ ভোল্টে রূপান্তর করা।
আর ফিউজ (Fuse) নামের আরেকটি উপাদান আছে, যার কাজ হলো অতিরিক্ত কারেন্ট ফ্লো থেকে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করা। উদাহরণ দিই, আমরা বলেছিলাম ইউএসবি দিয়ে আরডুইনোতে ০.৫ এম্পিয়ারের বেশি প্রবাহ দেওয়া ঠিক নয়। যদি কখনো আমরা ভুলে এর চেয়ে অনেক বেশি এম্পিয়ার কারেন্ট দিয়ে ফেলি তখন? ফিউজ তখন সাময়িকভাবে আরডুইনোকে ভেতর থেকে বন্ধ করে দেবে। অতিরিক্ত কারেন্ট সরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় এলে আবার ফিউজ চালু করে দেবে। আরডুইনোর এই ফিউজকে তাই বলে ‘Auto Resettable Fuse'.
আরও পড়ুনঃ আরডুইনো খুঁটিনাটি সহজ ভাষায় আলোচনা