একটি পকেট রেডিও তৈরি করুন খুব সহজেই
শহরবাসীদের কাছে রেডিওর ব্যবহার এখন অনেক কমে এলেও মাঝে মাঝে তা হয়ে ওঠে ভীষণ দরকারী একটি জিনিস। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলা টেলিভিশনে না দেখালে রেডিওর আশেপাশেই তখন ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় সবাইকে। এমনকি রাস্তাঘাটে অনেককেই তখন একটি পকেট রেডিও কানের কাছে নিয়ে চলতে দেখা যায়। আর গ্রামাঞ্চলে রেডিওই সভ্য জগতের সাথে যোগাযোগ এবং বিনোদনের একমাত্র অবলম্বন। আবার, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তো এটি সবার জন্য একটি অপরিহার্য যন্ত্র। যদিও এখন আধুনিক যুগ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই এখন সবকিছু দেখা বা শোনা যায়। তবু্ও পুড়োনো জিনিস কে তো ভুলা যায় না।
তাই এখন আমরা একটি পকেট রেডিও তৈরি করতে শিখব। এটি তৈরি করা খুবই সহজ এবং খরচও অত্যন্ত কম পড়ে। রেডিও তৈরি করতে একটি নতুন ধরনের পার্টসের প্রয়োজন পড়বে যা ‘গ্যাং’ (Gang) নামে পরিচিত। এটি আসলে একটি ‘ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটর'। ক্যাপাসিটরের সাঙ্কেতিক চিহ্নের উপর একটি তীরচিহ্ন (ডায়াগ্রামে লক্ষ করুন) যোগ করে ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটর বোঝানো হয়।
নিচে ‘গ্যাং’ (Gang) এর বাস্তব ছবি দেওয়া হলঃ
আমাদের এই রেডিওটি MW (Medium Wave) রেডিও। সুতরাং রেডিওটিতে যে ‘গ্যাং’ (Gang) টি ব্যবহার করতে হবে তা-ও হবে MW Gang। এর তিনটি পা থাকে, পা-গুলোর মধ্যে একটি পা-ব্যবহৃত হবে না।
ডায়াগ্রামঃ
এই সার্কিটে ব্যবহৃত আই.সি.-র তিনটি পা। পা-গুলোর নম্বর বাস্তবে কিভাবে সাজানো তা ডায়াগ্রামের পাশে উল্লেখ করা হলো। সার্কিটে 220nF মানের যে ক্যাপাসিটরটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সার্কিটে ঝালাই করার সময় অবশ্যই আই.সি-টির খুব কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করবেন, এতে করে noise-এর পরিমাণ কমে আসবে।
সার্কিটে যে কয়েলটি দেখতে পাচ্ছেন, তা হলো MW Antenna Coil যা থাকবে ফেরিট রডের উপর প্যাচানো। Ferrite Rod হলো এক বিশেষ ধরনের দণ্ড যা তড়িৎ-চৌম্বকীয় আবেশকে ঘনীভূত করতে সহায়তা করে। ফেরিট রড এবং অ্যান্টেনা কয়েল—দুটোই আলাদাভাবে কিনতে পাওয়া যায়। অবশ্য কয়েলটি ইচ্ছে করলে আপনি নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন। এই কয়েলটি তৈরি করতে আপনাকে যে তার ব্যবহার করতে হবে তা এক বিশেষ ধরনের তার। বিভিন্ন ধরনের কয়েল (যেমন: মটরের-কয়েল, ট্রান্সফরমারের কয়েল ইত্যাদি) তৈরির জন্যই এ ধরনের তার ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন নম্বরের সাহায্যে এগুলোর পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন: 24 S.W.G., 30 S.W.G. (সংক্ষেপে চব্বিশ গেজ, ত্রিশ গেজ) ইত্যাদি।S.W.G এটা হল তারের সাইজ মাপার একটা ব্রিটিশ পদ্ধতি এর পূর্ণ নাম ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড ওয়্যার গেজ (Standard Wire Gauge) । একে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড গেজ/ ইম্পেরিয়াল ওয়্যার গেজ নামেও ডাকা হয়। এর রেঞ্জ 7/0 থেকে 50 পর্যন্ত। 7/0 তার সবচেয়ে মোটা এবং 50 তার সবচেয়ে চিকন। গেজ নম্বর যত বাড়তে থাকে তারগুলোও তত সরু হতে থাকে এবং নম্বর যত কমতে থাকে তারগুলোও তত মোটা হয়। এ ধরনের তার সাধারণত ওজনের হিসেবে বিক্রি করা হয়।
এই সার্কিটের কয়েলটি তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন হবে 30 গেজ-এর তার। প্রথমে মোটা কাগজ দিয়ে একটি ফর্মা (সিলিণ্ডার আকৃতির) তৈরি করুন যার ব্যাস হবে ফেরিট রডের ব্যাসের সমান। এবার ফর্মাটির বাইরের দিকে সাদা আইকা আঠা লাগিয়ে নিন এবং 30 গেজের তার ১০০ বার পেঁচিয়ে সুন্দর করে একটি কয়েল বানিয়ে শুকোতে দিন। ব্যাস্, তৈরি হয়ে গেল আপনার প্রয়োজনীয় কয়েল।
যেহেতু তারগুলো আস্তরণ দেয়া অবস্থায় থাকে সেজন্য কয়েলের দুই প্রান্তের তারের মাথাদুটো ব্লেড দিয়ে ঘষে আস্তরণমুক্ত করে তবেই ঝালাই করবেন। সার্কিটে কয়েলটি লাগানো হয়ে গেলে সেটির মধ্য দিয়ে ফেরিট রডটি ঢুকিয়ে দিন এবং প্রয়োজনীয় Alignment-এর কাজ সম্পন্ন হলে আঠা বা মোম দিয়ে কয়েলটি ফেরিট রডের সাথে স্থায়ীভাবে লাগিয়ে দিন। এ প্রসঙ্গে একটি জরুরী তথ্য হলো, কয়েলসহ ফেরিট রডটি সার্কিটের স্পীকারটি থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে স্থাপন করবেন। কেননা, স্পীকারের পেছনে অবস্থিত চুম্বকটি কয়েলের খুব কাছে থাকলে Reception-এ বাধার সৃষ্টি হয়।
একটিমাত্র পেন্সিল ব্যাটারির সাহায্যে খুব সহজেই এটি চালানো যায় এবং সব মিলিয়ে এটি তৈরি করতে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।