নিজেই তৈরি করুন রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই

রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই

আমরা ইলেকট্রনিক্সের যে সমস্ত সার্কিট তৈরি করে থাকি সেগুলোর পাওয়ার-সোর্স হিসেবে আমরা সাধারণত ব্যাটারি কিংবা অ্যাডাপটর ব্যবহার করে থাকি। যেসব সার্কিট ব্যাটারি দিয়ে চালানো হয় সেগুলো বেশ নিরাপদেই চলে। কিন্তু যেসব সার্কিট ব্যাটারি দিয়ে চালানো সম্ভব নয় বা ব্যয়বহুল সেগুলোর জন্য অ্যাডাপটরই একমাত্র উপায়। অ্যাডাপটরের মূল শক্তিটি আসে বাড়ির MAIN AC SOURCE (220V) থেকে। সেখানে যদি ভোল্টেজ ওঠানামা করে তবে অ্যাডাপটরের ট্রান্সফরমারের সেকেণ্ডারি-কয়েলেও ভোল্টেজের ওঠানামা হয়। ভোল্টেজের এই ওঠানামা কিছু কিছু অতি-সংবেদনশীল সার্কিটের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এতে সার্কিটটি পূর্ণ-পারদর্শিতায় কাজও করতে পারে না। এ কারণে সার্কিটের পাওয়ার-সাপ্লাইকে 'রেগুলেটেড’ করবার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ, 220V AC-র শত ওঠানামাতেও সার্কিটের জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজের যেন কোন পরিবর্তন না হয় তার ব্যবস্থা করা। এ কাজে সাধারণত অ্যাডাপটর-সার্কিটের সঙ্গে তিন পিন বিশিষ্ট একটি আই.সি. (দেখতে অনেকটা ট্র্যানজিস্টরের মত) ব্যবহার করা হয়।

আই.সি.-টি কিভাবে সংযোগ করতে হয় তা নিচের ডায়াগ্রামে দেখুন।

ডায়াগ্রাম:

সার্কিট ডায়াগ্রাম

ডায়াগ্রামে দেখতে পাচ্ছেন, সাধারণ একটি অ্যাডাপটর সার্কিটের পজিটিভ প্রান্তকে রেগুলেটর আই.সি.-র ('78XX') মধ্য দিয়ে চালনা করে রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়া যায়। এবার আপনাদের আই.সি.-র নম্বরের ‘XX’-এর ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিচ্ছি। কোন আই.সি.-র নম্বরেই অবশ্য XX লেখা থাকবে না। আসলে ‘78’ দিয়ে শুরু হয়েছে এমন আই.সি. রয়েছে কয়েকটি। এখন XX-এর পরিবর্তে যে নম্বরগুলো থাকে সেগুলোই হচ্ছে ওই আই.সি.-র রেগুলেটেড ভোল্টেজ রেটিং। 

নিচের ছকটি একটু ভাল করে লক্ষ করলেই বিষয়টি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আই.সি.-র রেগুলেটেড ভোল্টেজ রেটিং

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনার যদি 9V রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই দরকার হয় তবে আপনি ব্যবহার করবেন 7809 নম্বরের আই.সি.। 12V রেগুলেটেড দরকার হলে করবেন 7812 ইত্যাদি। এই রেগুলেটর আই.সি.-র পিঠের সাথে রয়েছে Heat sink লাগানোর ব্যবস্থা। এর ইনপুটে (১ নম্বর পিন) প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ভোল্ট সাপ্লাই দিলে আউটপুটে ঠিক একই ভোল্ট (রেগুলেটেড) রাখার জন্য আই. সি.-টি বেশ গরম হয়। সেজন্য প্রয়োজন না হলে ইনপুটে বেশি ভোল্ট না দেয়ার জন্যই সবাইকে অনুরোধ করছি। আপনার 9V রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই প্রয়োজন হলে আপনি 9V-এর ট্রান্সফরমার ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডি.সি. হিসেবে আপনি পেয়ে যাবেন 12.6V (9VX1.4=12.6V)। তখন 7809 আই. সি.-টি ব্যবহার করলেই আপনি পেয়ে যাবেন 9V রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাই। আই.সি.-গুলোর সর্বোচ্চ ভোল্টেজ রেটিংও ছকে দেয়া রয়েছে। আই.সি.-র ইনপুটে ওই রেটিং-এর বেশি ভোল্ট প্রয়োগ করা মাত্রই তা নষ্ট হয়ে যাবে। এই আই.সি.গুলো সাধারণত Short-protected করে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, পজিটিভ-নেগেটিভ শর্ট হয়ে গেলেও আই.সি.গুলো দীর্ঘক্ষণ ভাল থাকতে সক্ষম। অবশ্য তখন Heat sink-টিকে প্রচুর তাপ শোষণ করতে হয় বলে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের Heat sink ব্যবহার করতে হয়। এই আই.সি.-গুলো LM, AN, MA ইত্যাদি বিভিন্ন ভারসনের হতে পারে।তবে নম্বরের আগে ভারসনের উল্লেখ ছাড়াও নম্বরের মাঝখানে বা শেষে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। সেটি হলো—আই.সি.-গুলোর নম্বরের ঠিক মাঝখানে অর্থাৎ ‘78’ এর’পরে L, C, M ইত্যাদি অক্ষর বসানো থাকে (নম্বরের শেষেও অনেক সময় থাকে) যেগুলো আই.সি.-র অ্যাম্পেয়ার-রেটিং নির্দেশ করে। এই অক্ষরগুলো থেকে বোঝা যায় ওই আই. সি.-টি সর্বোচ্চ কত অ্যাম্পেয়ার সরবরাহ করতে পারবে। সুতরাং, পাওয়ার সাপ্লাইয়ের অ্যাম্পেয়ারের দিকেও লক্ষ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ, আই.সি. কেনার সময় আপনি আপনার প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে নির্দিষ্ট ভোল্ট ও অ্যাম্পেয়ার-রেটিং বিশিষ্ট আই.সি. কিনবেন।

নিচে ছকের সাহায্যে অ্যাম্পেয়ার-রেটিং উল্লেখ করা হলো।

আই.সি.-র অ্যাম্পেয়ার-রেটিং

এখানে শুধু 7805 নম্বরের সাহায্যে ছকটি দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম ছকে উল্লেখিত প্রত্যেক নম্বরের আই. সি.-র ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ছকটি একইভাবে প্রযোজ্য। উল্লেখ্য যে, L এবং H লেখা আই.সি.-গুলোর প্যাকেজ (বাহ্যিক গঠন) ভিন্ন ধরনের। রেগুলেটর আই.সি. ব্যবহার করলে শুধু রেগুলেটেড পাওয়ার সাপ্লাইই পাওয়া যায় না বরং খুব ভাল মানের ডি. সি. সাপ্লাইও পাওয়া যায়। কেননা সাধারণ অ্যাডাপটরের সার্কিটে পুরোপুরি AC RIPPLE শেষ হয়ে যায় না; যতটুকু থেকে যায় তা এই আই.সি.-গুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। তারপর বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে 0.1 AF মানের ক্যাপাসিটরটি। এটি TANTALUM বা MYLAR জাতীয় ব্যবহার করাই উচিৎ এবং আই.সি.-র খুব কাছাকাছি এটি ঝালাই করা প্রয়োজন।

ইলেকট্রনিক্সের কাজ করার জন্য নিজেই বানিয়ে নিন একটি অ্যাডাপ্টার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url