চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

চুলকানি যখন সমস্যাঃ

অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্রতা ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে আমাদের দেশে এই চর্মরোগটি বেশি হয়ে থাকে। সাধারণ ভাষায় স্ক্যাবিসকে খুজলী পাঁচড়াও বলা হয়ে থাকে। এ রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সাধারণ সংস্পর্শে, কাপড় চোপড় ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাধ্যমেও এ রোগ একজন থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে, চুলকানিই হচ্ছে এ রোগের প্রধান উপসর্গ। পরিবারের মধ্যে একজন যদি এ রোগের জীবাণু বহন করে থাকে তবে অন্যান্যদেরও এ রোগ হয়ে থাকে। দিনের চেয়ে রাতেই এ রোগ বেশি বেড়ে যায়, বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। এ রোগের প্রাক্কালে গুঁড়ি গুঁড়ি লালচে দানা দেখা যায়।

চুলকানি বেশি হয়ে গেলে তা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশন হয়ে যখন পুঁজ দ্বারা ভর্তি হয়ে যায় তখন তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করানো উচিত, নচেৎ এ রোগ থেকে কিডনী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চুলকানি শরীরের যে কোনও স্থান হতে আরম্ভ হয়ে ধীরে ধীরে তা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে নির্দিষ্ট কিছু কিছু স্থানে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যেমন- আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে, কব্জিতে, কোমরের চারদিকে, কনুইয়ের পেছনে, বগলের ভাঁজে, নাভির চারধারে, পাছাতে, উরুতে, মেয়েদের স্তনে, পুরুষের লিঙ্গে ও অন্ডকোষে, ছোট ছেলেমেয়েদের মুখেও এ রোগ হয়ে থাকে। শরীরের অন্যান্য অংশে এ রোগ হলে ছোট ছোট ঘা দেখা যায়। কিন্তু মুখে কোনও দলা দেখা যায় না। দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগলে চুলকোতে চুলকোতে শরীরের ত্বক পুরু বা শক্ত হয়ে অস্বাভাবিক দেখায়।

স্ক্যাবিস হলে সাথে সাথে এর চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ সময় মতো যদি চিকিৎসা না হয় তবে ধীরে ধীরে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিকট আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কারও যদি এ রোগ থেকে থাকে তবে তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। নয়তো তাদের থেকে আরও দশজনের শরীরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে, এ রোগের চিকিৎসা করতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।

এ রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার খুব বেশি নয় কিন্তু কিছু নিয়ম কানুন না মানা অথবা না জানার জন্য চিকিৎসা অনেক সময় ব্যর্থ হয়। এ রোগের চিকিৎসা করতে হলে পরিবারের সকলেরই একসাথে চিকিৎসা করা উচিত। কারণ একজনের দেহে জীবাণু থেকে গেলে তা থেকে আবার অন্যদের দেহে প্রবেশ করবে। সব মানুষের দেহে রোগের বিকাশ একই রকম হয় না। তাই কার রোগ আছে কার নেই এটি খুঁজে বের না করে মিলেমিশে ওষুধ ব্যবহার করলে ধুয়ে মুছে জীবাণু ঘর থেকে চলে যায়।

চিকিৎসাঃ

১। কারও চুলকানি হলে বাড়ির সবারই চিকিৎসা করতে হবে।

২। যেহেতু পরিধেয় ও ব্যবহার্য কাপড় চোপড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় তাই যখন ওষুধ চলবে তখন কাপড় চোপড়, বিছানাপত্র সব পানিতে ফুটিয়ে রোদে শুকোতে হবে। নখের ভেতরে জীবাণু থেকে যায় বলে নখ অবশ্যই ছোট করে কাটতে হবে।

৩। নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা প্রথমেই দরকার। রোজ গোসল করে জামাকাপড় বদলে ফেলতে হবে।

৪। নিয়মিত জামাকাপড় ও বিছানা কেচে রোদে শুকোতে হবে।

৫। চুলকানির চিকিৎসায় খাওয়া দাওয়ায় কিংবা অন্য কিছুতে বাছ বিচার করা যাবে না। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। সবশেষে একটি কথা মনে রাখতে হবে শরীর চুলকালেই স্ক্যাবিস ধরা উচিত নয়। কারণ অধিকাংশ চর্মরোগেই শরীর চুলকায়। তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ফোড়াঃ

সংক্রমণ থেকে চামড়ার নিচে পুঁজের থলি তৈরি হলে তাকে ফোড়া বলে। ফোড়া হলে ব্যথা হয় এবং চামড়া লাল হয়ে গরম হয়ে যায়। ফোড়ার ব্যথা থেকে শরীরে জ্বরও হয়ে থাকে।

ফোড়ার জন্য চিকিৎসাঃ

১। ফোড়া হলে দিনে কয়েবার গরম পানির সেঁক দিতে হবে।

২। ফোড়া পেকে গেলে নিজ থেকেই ফেটে যায়। অযথা চাপাচাপি কিংবা টেপাটেপি করলে ইনফেশন শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

৩। ফোড়া থেকে যদি জ্বর হয় তবে ডাক্তার দেখিয়ে এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে।

দাদঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

শরীরের যে কোনও স্থানে এর সংক্রমণ হতে পারে। যেমন- মাথায়, হাতে বা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে, দু'পায়ের ফাঁকে, লোমহীন জায়গায়। এই ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ আংটির মতো গোল গোল হয়ে বেড়ে ওঠে।এগুলো প্রায়ই চুলকাতে থাকে। মাথায় যদি হয়ে থাকে তবে খোসা সমেত চুল পড়ে দাগ পড়ে যায়।

কিভাবে দাদের চিকিৎসা করবেন?

১। সংক্রমণের জায়গাটুকু প্রতিদিন সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ যুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন।

২। সংক্রমণের জায়গাটা শুকনো বাতাসে কিংবা রোদে খুলে রাখতে হবে। গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, মোজা ইত্যাদি অন্তর্বাসগুলো সব সময় পরিবর্তন করতে হবে।

৩। মাথায় যদি সংক্রমণ বড় বড় পুঁজ ভর্তি হয় তবে গরম পানির সেঁক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। সংক্রমণের জায়গাটুকুতে চুলগুলো তুলে ফেলতে হবে।

দাদের সংক্রমণ কিভাবে এড়াবেন?

১। যাদের একবার সংক্রমণ হয়েছে তাদের অন্যদের সাথে ঘুমোতে দেওয়া উচিত নয় ।

২। ভালভাবে না ধুয়ে একজনের ব্যবহার্য জিনিস অন্যজনকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।

৩। সংক্রমণ হলে সাথে সাথে চিকিৎসা করতে হবে।

এলার্জির চিকিৎসা ও প্রতিকারের উপায়ঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

‘এলার্জি’ শব্দটি আমাদের দেশে সকলের কাছেই অতি পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও এ নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। অনেকেই ভেবে থাকেন চর্মরোগ মানেই হলো এলার্জি। কিন্তু এলার্জি হচ্ছে অনেকগুলো চর্মরোগের মধ্যে মাত্র একটি চর্মরোগ। এলার্জির লক্ষণগুলো হঠাৎ করে শরীরে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশে হঠাৎ করে দানা উঠতে শুরু করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক লাল ও চাকা হয়ে ফুলে ওঠে এবং সেই সাথে প্রচণ্ড চুলকানি থাকতে পারে। এই চাকগুলো দেখতে মৌমাছির কামড়ের মতো মনে হয়, এলার্জির সাথে শ্বাসকষ্ট, বমি, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, অস্থিসন্ধির ব্যথা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় এলার্জির তীব্র রিয়েকশন হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও রকম ওষুধ ছাড়াও এলার্জি ভাল হয়ে যেতে পারে। তবে এলার্জি হলে প্রাথমিক অবস্থাতেই সতর্ক হয়ে যেতে হবে। যাদের বংশে হাঁপানি কিংবা একজিমা থাকে তাদের এলার্জি হবার প্রবণতা বেশি। একেক জনের দেহ ত্বকে একেক ধরনের জিনিসের প্রতি এলার্জি হতে পারে । এলার্জির উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে এলার্জিক জিনিসটি খুঁজে বের করা । বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয়, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, মশা মাছি ও পোকামাকড়ের কামড়, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আবহাওয়া, সূর্যালোক এমন কি নির্দিষ্ট কোনও ওষুধের কারণেও এলার্জি হতে পারে। আবার বিভিন্ন আঘাত পেলে, পেটে কৃমি হলে কিংবা দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হলেও এলার্জি হতে পারে।

এলার্জির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আজকাল বাজারে পাওয়া যায় যা খেলে অতি অল্প সময়েই কষ্ট ও চুলকানি থেকে রেহাই মেলে। তবে স্থায়ী চিকিৎসা পেতে হলে এলার্জির কারণ নির্ণয় করতে হবে। মনে রাখা উচিত যে, এলার্জি যে কোনও মানুষের যে কোনও সময়, যে কোনও বয়সে, বছরের যে কোনও সময়েই হতে পারে।

ত্বকের ফাংগাস (ছত্রাক) ইনফেকশনে করণীয়ঃ

ফাংগাস এক ধরনের জীবাণু যা মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাক জনিত চর্মরোগ শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এবং একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে, কেউ যদি আক্রান্ত রোগীর কাপড়, গামছা, তোয়ালে চিরুনী ইত্যাদি ব্যবহার করে তবুও একজন থেকে অন্যজনে রোগ ছড়াতে পারে। এক এক ধরনের ছত্রাক দেহে এক এক ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি করে। ছত্রাক জনিত চর্মরোগগুলো শীতের দিনের চাইতে গরমের দিনে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। ছত্রাক জনিত রোগ মানুষের যে কোনও সময়েই হতে পারে । তবে বিভিন্ন অবস্থায় ছত্রাক জনিত চর্মরোগ বেশি হয়।

কিছু কিছু ওষুধ আছে যেমন- টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রনের বড়ি ইত্যাদি খেলে, ডায়াবেটিস থাকলে, গর্ভাবস্থায়, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, পুষ্টির অভাব হলে, রক্তশূন্যতায়, মোটা ব্যক্তিদের, সিথেটিকস কিংবা আঁটোসাটো পোষাক যারা বেশি পরেন তাদের ক্ষেত্রে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে পানির সংস্পর্শে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয়। কারণ ছত্রাক গরমে ঘামে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বেশি সংক্রমিত হয়।

ফাংগাস (ছত্রাক) ইনফেকশন এড়াতে হলে কি করণীয়?

১। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে হবে।

২। ব্যবহার্য কাপড় চোপড় সূতি এবং ঢিলেঢালা হতে হবে।

৩। রোদে গরমে কম যাবেন।

৪। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

৫ । পুষ্টিহীনতা ও রক্তশূন্যতা থাকলে ঠিক করুন।

সউদঃ

সউদ এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত রোগ। গরমের দিনে এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে। প্রথমে সাধারণত গলায় ও মুখে শুরু হয়। পরবর্তীতে বুকে, পিঠে এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্থানগুলোতে ছিটা ছিটা দাগ দেখা যায়। যাদের ফর্সা ত্বক তাদের কালচে দেখায় এবং কালো ত্বক হলে সাদাটে দেখায়। রোদে গেলে সামান্য চুলকানি হয় কিংবা গা চিটটিট করে। এ রোগে তেমন কোনও সমস্যা নেই শুধু দৃষ্টিকটু লাগে।

নানা ধরনের ব্রণঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

কথায় বলে ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র।' আর এই সুন্দর মুখের জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক অপরিহার্য। মুখের ত্বক নিয়ে আমরা সকলেই কম বেশি সচেতন। আমাদের আকর্ষণীয় মুখের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেবার জন্যে ছোট একটি দাগই যথেষ্ট। মুখমণ্ডলে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ পড়তে পারে। তবে এর মধ্যে সৌন্দর্যহানির জন্য সবচাইতে বেশি দায়ী হচ্ছে ব্রণের দাগ। ব্রণ সম্পর্কে নানা জনে নানা ধরনের কথা বলে থাকে। ব্রণ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে আমাদের ত্বকের ভেতর থেকে প্রতিনিয়ত এক ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ বের হয়। যা লোমকূপের গোড়া দিয়ে ত্বকে এসে ত্বককে নরম মসৃন ও তৈলাক্ত রাখে। কোনও কারণে এই তৈলাক্ত পদার্থ উৎপাদনের হার বেড়ে গিয়ে এর নির্গমনের পথ বন্ধ হয়ে গেলে ব্রণের সৃষ্টি হয়। পরে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এর তীব্রতা আরও বেড়ে যায় তৈল গ্রন্থিগুলো মুখের ত্বকে বেশি থাকে তাই মুখের ত্বকেই ব্রণ বেশি হয়ে থাকে। তবে বুকে পিঠে এবং শরীরের অন্যান্য স্থানেও ব্রণ হতে পারে। 

‘এন্ড্রোজেন' নামক এক ধরনের হরমোনের প্রভাবে তৈল গ্রন্থির উৎপাদন ও নিঃসরণ বেড়ে যায়। বয়ঃসন্ধি ক্ষণে এই হরমোনের কার্যকারিতা বেড়ে যায় এজন্য উঠতি বয়সে ব্রণ বেড়ে যায়। আবার ৪০/৪৫ বৎসর বয়স পর্যন্তও এই ব্রণ হতে পারে। কার ব্রণ হবে কার হবে না এবং কতটা বয়স পর্যন্ত ব্রণ থাকবে এটি আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। তবে যাদের মুখ তেলতেলে বেশি এদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার বয়স থেকে বন্ধ হওয়ার বয়স পর্যন্ত যে কোনও সময় ব্রণ হতে পারে। আবার বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক প্রয়োজনের সাথে সাথে ব্রণের তীব্রতা বাড়ে কমে। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন কিংবা মেয়েদের মাসিকের পূর্বে, অতিরিক্ত কসমেটিকস্ সামগ্রী ব্যবহারের কারণেও ব্রণ বাড়তে পারে।

ব্রণ হলে বুঝবেন কিভাবে?

ব্রণ দেখতে বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন- গুড়ি দানাদার, লালচে গোটা। গোটা আবার ইনফেকশন হয়ে পুঁজসহ বড় বড় চাকাও হয়, এ অবস্থায় প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। ব্রণ হলে উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। অনেকে বলে থাকেন ‘ব্রণ বয়সের দোষে হয়, সময়ে ভাল হয়ে যাবে’, কথাটি ঠিক হলেও ব্রণ নিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়। কারণ এতে করে ত্বকে স্থায়ী কালো দাগ পড়ে যায়। ত্বক উঁচু-নিচু এবড়ো থেবড়ো হয়ে যায়। অনেক সময় ত্বক ফুটো ফুটো হয়ে যায়। তাই ত্বককে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এর চিকিৎসা করতে হবে।

ব্রণের চিকিৎসাঃ

ব্রণের চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী। ধৈর্য্য সহকারে এর চিকিৎসা করতে হবে। কারও কারও ব্রণ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়। যতদিন এমনি না ভাল হবে ততদিন চিকিৎসার মাধ্যমে উপদেশ ও ওষুধ দ্বারা তা আয়ত্বে রাখতে হবে। আজকাল বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং লাগানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ব্রণের তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থার ওপর বিবেচনা করে ওষুধ দেয়া হয়।

তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রণের চিকিৎসা হওয়া উচিত।

১। ব্রণের চিকিৎসায় খাওয়া দাওয়ায় তেমন কোনও বাছ বিচার নেই। সবই খাওয়া চলে।

২। কিছু কিছু চর্মরোগে সাবান লাগানো যায় না। তবে ব্রণের বেলায় তা উল্টো অর্থাৎ ব্রণ হলে দিনে দু'বার সাবান আর গরম পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে।

৩। অনেকের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রণ খুটাখুটি করার অভ্যাস আছে । যা

ইনফেকশন হয়ে পরবর্তীতে কালো দাগের সৃষ্টি করে, তাই নখ কেটে ছোট রাখতে হবে এবং খুটাখুটি বন্ধ রাখতে হবে।

৪। যথেষ্ট পরিমাণে ভাল খেতে হবে। প্রচুর পানি খেতে হবে এবং যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমোতে হবে।

৫। ব্রণ চিকিৎসার সময় চিকিৎসকের নিকট শারীরিক কিংবা মানসিক কোনও সমস্যা থেকে থাকলে তাও জানাতে হবে। বিভিন্ন কারণে ব্রণ বাড়তে কমতে পারে।

একজিমা সারানোর উপায়ঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

অনেকে মনে করে থাকেন ত্বকে যদি কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকেই থাকে তা হলো ‘একজিমা’। এটি একটি অতি পরিচিত রোগ। একজিমা ত্বকের একটি প্রদাহ। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। অনেক চর্মরোগের মধ্যে এটিও একটি রোগ।

একজিমার লক্ষণঃ

১। রোগের শুরুতে একজিমা কাঁচা থাকে, চুলকোয়, লালচে থাকে এবং রস ঝরতে থাকে।

২। অনেক দিন হয়ে গেলে পরে আক্রান্ত স্থানের ত্বক ধীরে ধীরে শুকনো ও শক্ত হয়ে যায়।

৩। ক্রমান্বয়ে ত্বক শক্ত ও বিবর্ণ হয়ে যায় ।

৪। ছোট ছেলেমেয়েদের বেলায় গালে কিংবা ওপর বা নিচের হাতে লাল দাগ বা র‍্যাশ হয়। র‍্যাশে ছোট ছোট ঘা বা ফোস্কা থাকে। এগুলো ফেটে রস বের হয়।

৫। বড়দের ক্ষেত্রে একজিমা সাধারণ শুকনো দেখা যায় এবং হাঁটুর পেছনে কিংবা কনুইয়ের ভেতর বেশি দেখা যায়।

৬। এ রোগ সংক্রমণের মতো নয়, এলার্জির মতো।

দীর্ঘস্থায়ী একজিমার ক্ষেত্রে ছত্রাক জাতীয় জীবাণুও সংক্রমিত হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে ছত্রাকের চিকিৎসা করতে হবে, পরে একজিমার চিকিৎসা করতে হবে। একজিমা প্রধানত দুটো কারণে হয়ে থাকে। শরীরের বাইরের কারণে একজিমা হয়, আবার ভেতরের কারণেও হয়ে থাকে। বাইরের কারণ হচ্ছে ইমিটেশনের গহনা, সাবান ইত্যাদি। আবার সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাবে ত্বকের প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। শরীরের ভেতরের কারণে সৃষ্ট একজিমা ভাল হতে চায় না। তাই উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে কন্ট্রোলে রাখতে হবে। একজিমা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। খুব ছোট অবস্থায় হলে মলম এবং তীব্র আকারের হলে খাবার ওষুধ পত্রের প্রয়োজন হতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

১। র‍্যাশের ওপর ঠাণ্ডা সেঁক দিতে হবে।

২। সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে পাঁচড়ার মতো চিকিৎসা করতে হবে।

৩। একজিমার দাগের ওপর রোদ লাগাতে হবে।

৪। ডাক্তারী পরামর্শ মতো মলম লাগাতে হবে।

মনে রাখা উচিত, দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ মানেই একজিমা নয়। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনও ওষুধ ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়।

মাথার ছত্রাক (ফাংগাস) রোগঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

ছত্রাক ইনফেক্শন শরীরের যে কোনও স্থানে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, গ্রীষ্ম প্রধান এলাকা, শরীর দুর্বলকারী রোগসমূহ, ছত্রাক আক্রান্ত পশু সংস্পৰ্শতা প্রভৃতি অন্যতম। যখন মাথায় ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে তখন প্রাথমিক অবস্থায় চুলে সংক্রমণ হয়। এটি সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। বড়দের বেলায় খুব কমই এ রকম দেখা যায়। কারণ বড়দের তৈলগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তেল ছত্রাকের আক্রমণ থেকে মাথার ত্বককে রক্ষা করে। এ রোগ এক শিশু থেকে আরেক শিশুর মাথায় সংক্রমিত হয়। ছত্রাকের জীবাণু বিভিন্ন রকম জিনিসের মধ্য থেকে থাকে যেমন— নাপিতদের যন্ত্রপাতি, চুলের ব্রাশ, মাথার টুপি ইত্যাদিতে।

কিভাবে মাথায় ছত্রাকের লক্ষণ বুঝতে পারবেন?

১। ধূসর রঙের মরা কোষের মতো সীমিত এলাকা জুড়ে অবস্থান। যেখানে চুলকানি থাকবে। আক্রান্ত এলাকায় হয়তো চুল থাকবে না। সমস্ত মাথা জুড়েও ছত্রাক হতে পারে, আবার নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায়ও হতে পারে।

২। আক্রান্ত এলাকার চুল ছড়িয়ে থাকবে এবং রুক্ষ, অনুজ্জল ও ভঙ্গুর হবে।

৩। অনেক সময় কালো ফোটার ন্যায় দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চুলকানি ও মরা কোষের পরিমাণ কম থাকে।

৪। শিশুর মাথায় অনেক সময় একটি তেলতেলে, হলদে রঙের ছাল হয়ে থাকে । চামড়াটা লাল রঙের হয়ে থাকে, আক্রান্ত এলাকায় গন্ধ থাকতে পারে।

চিকিৎসাঃ

১। যেহেতু ছত্রাকের বৃদ্ধি গরম, আদ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে হয়ে থাকে তাই ঐ সকল কারণ দূর করতে না পারলে ছত্রাক ভাল হবে না।

২। ওষুধ যুক্ত শ্যাম্পু সপ্তাহে দু'দিন মাথায় ব্যবহার করতে হবে।

৩। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক বিরোধী যে ক্রিম আছে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে মুখেও ওষুধ খেতে হবে।

৪। আজকাল বাজারে অনেক ছত্রাক নাশক ওষুধ রয়েছে। এগুলোর সঠিক ব্যবহার, মাত্রা, সময়কাল, চিকিৎসক থেকে জেনে তারপর ব্যবহার করা উচিত।

৫। শিশুর মাথা হাওয়ায় রোদে খুলে রাখতে হবে।

৬। রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করানোই ভাল।

৭। একই পরিবারের সমস্ত সদস্যকে পরীক্ষা করা উচিত যে, তাদের এ রোগ রয়েছে কি-না এবং থাকলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

চুলের খুশকিঃ

চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়

খুশকি সমস্যা সারা বিশ্বেই কম বেশি আছে। আমাদের দেশে খুশকির সমস্যা বেশ প্রকট। প্রতিটি মানুষই কখনও না কখনও খুশকির সমস্যায় ভুগে থাকে শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক ও সামাজিক বিড়ম্বনাই এ সমস্যায় বেশিI তাই উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। খুশকি হলো মাথার ত্বকের মৃত কোষ। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষই প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক নিয়মে ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া এত সূক্ষ্ম যে আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু আমাদের মাথার ত্বক পুরু হওয়াতে এ কনাগুলো বড় হয়ে থাকে এবং তা ঘাম, ধুলো ময়লা এবং তৈলগ্রন্থির গোড়ায় এসে আটকে যায়। কখনও মাথার ত্বকের ঝরে পড়ার গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে খুশকিও বেড়ে যায়। তৈলগ্রন্থি মাথার ত্বকেই বেশি থাকে। তাই তৈলগ্রন্থি হতে তৈলাক্ত পদার্থের উৎপাদন ও নিঃসরণ বেড়ে গেলেও বিপত্তি ঘটে থাকে। শীতের দিনে সাধারণত খুশকি বেশি হয়ে থাকে।

খুশকির সমস্যা বয়স্কদের তুলনায় কম বয়সীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। মাথায় খুশকি হলে চুলকানির মাত্রা বেড়ে যায় এবং চুল পড়তে থাকে। যদি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে পরবর্তীতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু মাথা চুলকালে, মাথার চুল উঠলে কিংবা আঁশ উঠলেই যে তা খুশকি হবে এরকম ভাবা ঠিক নয়। আমাদের শরীরের ত্বকে যেমন নানা ধরনের চর্মরোগ হয়ে থাকে, মাথার ত্বকেও তেমনি হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে খুশকি ছাড়াও একজিমা কিংবা ফাংগাস ইনফেক্শন ইত্যাদি হয়ে থাকে। তাই মাথার ত্বকে কোনও সমস্যা হলে খুশকি বলে ধরে না নিয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

খুশকির চিকিৎসাঃ

১। চুলকে খুশকিমুক্ত রাখতে হলে নিয়মিত ভাল শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে চুলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২। চিরুনী দিয়ে দিনে কয়েকবার চুল আঁচড়াতে হবে এবং নিজের জন্য পৃথক চিরুনী রাখতে হবে।

৩। চুল যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে ফেলতে হবে।

৪৷ মাথায় বেশি তেল ব্যবহার করা ঠিক নয়। অনেকে চুলে তেল দিয়ে খুশকি ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তেল দিলে খুশকি কমে এ ধারণা ভুল। বরঞ্চ তেল দিলে চুল ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে থাকায় চুলে ময়লা ও খুশকি আটকে গিয়ে সমস্যা বাড়ায়।

৫। মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করাই উত্তম। সাবানের চেয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পুই উত্তম।

৬। খুশকি যদি হয়েই যায় তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করতে হবে। অনেকে মনে করে থাকেন খুশকির কোনও চিকিৎসা নেই। আবার অনেকে ভেবে থাকেন যে, খুশকির চিকিৎসার কোনও প্রয়োজন নেই। এ দুটো ধারণাই ভুল।

৭। খুশকির জন্য আজকাল অনেক ওষুধ বের হয়েছে। তীব্রতা ও উপসর্গ লক্ষ্য রেখে একেকজনের বেলায় একেক ধরনের চিকিৎসা করতে হবে।

খুশকি প্রতিকারে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

১। দই, পাতিলেবুর রস, নিমপাতা বাটা এবং গোলমরিচ মাথায় ও চুলে লাগিলে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে, এভাবে সপ্তাহে একবার এটি করতে হবে।

২। কিছুটা আমলকী ও রিঠাফল রাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ঐ পানি দিয়ে মাথা ও চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে দু'দিন করতে হবে।

চুলের উকুনঃ

উকুন মাথার ত্বকের এবং চুলের আরেকটি বড় সমস্যা। এটি এক ধরনের পরজীবী জীবাণু । মাথায় উকুন হলে তা থেকে চুলকানির সৃষ্টি হয়। মাথার ত্বকে ছোট ইনফেকশন, ক্ষত এবং প্রদাহ হতে পারে। ছেলেদের চুল থেকে মেয়েদের চুল বড় থাকে বিধায় মেয়েদের চুলে বেশি উকুন দেখা যায়। বাড়িতে যদি কারও মাথায় উকুন থেকে থাকে, তবে একই বিছানায় শোবার কারণে উকুন হয়। আক্রান্তজনের চিরুনী যদি অন্যজন ব্যবহার করে থাকে তাহলেও উকুন হয়। এজন্য উকুন সারাতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। উকুন হলে ঘন ঘন চুল পরিষ্কার করতে হবে। যার উকুন হয়েছে তাকে অন্যদের সাথে ঘুমোতে দেওয়া যাবে না।

ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

১। কেরোসিন তেল ও মাথার তেল সম পরিমাণে মাথায় লাগাতে হবে।

২। সমস্ত মাথার চুলে যাতে তেল ভালভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

৩। তেল লাগানোর পর একটি কাপড় দিয়ে চুলগুলো জড়িয়ে রাখতে হবে।

৪ । এরপর রিঠা মিশ্রিত পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

৫। সরু চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হবে এবং উকুনগুলো বের করে মেরে ফেলতে হবে।

৬। উকুনের ডিম যদি থাকে তবে গরম পানি ও ভিনিগারে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে সরু চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে হবে।

৭। এভাবে প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর এটি করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ চোখের কতগুলো সাধারণ সমস্যা ও তার ঘরোয়া প্রতিকার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url