চোখের কতগুলো সাধারণ সমস্যা ও তার ঘরোয়া প্রতিকার

চোখের কতগুলো সাধারণ সমস্যা ও তার ঘরোয়া প্রতিকার

চোখ ওঠাঃ

চোখ সংক্রমণ হলে চোখ প্রচণ্ড লাল হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা জুড়ে থাকে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও সেই সাথে চোখে পুঁজ জমে। চোখ জ্বালা করে।

করণীয়ঃ

প্রথমেই এক গ্লাস পানিতে এক চিমটে লবণ দিয়ে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন। কয়েক টুকরো পরিষ্কার কাপড় বা তুলোর টুকরো একটি আলাদা পাত্রে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। পরিচর্যাকারীর হাত দুটি প্রথমে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। প্রথমে যে চোখ সুস্থ সেই চোখকে মাটি বরাবর কাত হয়ে শুতে বলতে হবে। ফোটানো পানি সুস্থ চোখটির নাকের দিকের কোণে ধীরে ধীরে ঢালতে হবে। চোখের তলায় একটি পাত্র রেখে ময়লা পানিটা ধরতে হবে। এরপর রোগীকে চোখ বন্ধ করতে বলতে হবে। ফোটানো কাপড়ের টুকরো থেকে এক টুকরো কাপড় দিয়ে নাকের দিক থেকে শুরু করে কানের দিকে চোখটা মুছে দিতে হবে। পরে সেই কাপড়ের টুকরো ও ময়লা পানি ফেলে দিতে হবে। এক চোখের কাপড় অন্য চোখে ব্যবহার করা যাবে না।

এরপর অসুস্থ চোখটি মুছতে হবে। অসুস্থ চোখটি মুছতে হলে চোখটি মাটির কাছে রাখতে হবে। প্রথমেই ফোটানো লবণের পানি দিয়ে চোখটা ভিজিয়ে নিতে হবে। চোখের পাতা দুটো জুড়ে গেলে জোরপূর্বক না খুলে আস্তে করে খুলে দিতে হবে। এবার সুস্থ চোখটির মতো করেই অসুস্থ চোখটিও মুছে দিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো চোখে ওষুধ দিয়ে দিতে হবে। যতক্ষণ চোখটি স্বাভাবিক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চোখে ওষুধ দিয়ে যেতে হবে। এছাড়া কিছুক্ষণ পর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুলে চোখের ভাইরাস ধুয়ে যাবে।

চোখ ওঠা না ছড়ানোর উপায়ঃ

১। চোখ উঠলে পরে ঠিকমত চোখের যত্ন নিতে হবে।

২। চোখে হাত দেবার পর হাত ধুতে হবে।

৩। রোগীর রুমাল কিংবা গামছা যাতে অন্য লোকে ব্যবহার না করে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

৪। ছেলেমেয়েদেরকে একজনকে অন্যজনের সাথে খেলতে কিংবা শুতে দেওয়া যাবে না।

৫। যতদূর সম্ভব ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে।

৬। রঙিন চশমা ব্যবহার করতে হবে।

চোখে অঞ্জনি ওঠাঃ

অঞ্জনি চোখের পাতার ওপরে হয়। চোখের কিনারার কাছে লাল হয়ে ফোড়ার মতো ফুলে থাকে। গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে সেঁক দিলে অঞ্জনি কমে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক মলম লাগাতে হবে।

দৃষ্টি শক্তির অক্ষমতাঃ

ছেলেমেয়েদের যদি পরিষ্কার দেখায় অসুবিধার সৃষ্টি হয় কিংবা পড়তে বসলে মাথাব্যথা করে তবে ডাক্তার দেখাতে হবে। মানুষের যত বয়স বাড়বে ততই স্বাভাবিক ভাবেই কাছের জিনিস দেখতে কষ্ট হয় এজন্য পড়ার সময় চশমা পরলে সুবিধা হয়। এমতাবস্থায় ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী চশমা ব্যবহার করতে হবে।

ভিটামিন ‘এ’-র অভাবজনিত রোগঃ

সাধারণত ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘এ’-র অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে শিশু অন্ধও হয়ে যেতে পারে।

ভিটামিন 'এ'-র অভাবজনিত রোগের লক্ষণঃ

১। ভিটামিন 'এ'-র অভাবে প্রথমে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। রাতকানা রোগে রোগী অন্ধকারে কম দেখতে পায় ।

২। চোখের সাদা অংশের চকচকে ভাব চলে যায় এবং চোখ কুঁচকে যায় সেই সাথে চোখ শুকিয়ে যায়।

৩। চোখে ছোট ছোট ছাইরঙের দাগ পড়ে।

৪। রোগ বেড়ে গেলে কর্নিয়া ঘোলাটে ভাব ধারণ করে ছোট ছোট গর্ত হয়ে যায়।

৫। কর্নিয়া নরম হয়ে যায় এবং মনে হয় ঠেলে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় কর্নিয়া ফেটেও যেতে পারে। কিন্তু এতে কোনও যন্ত্রণা থাকবে না। এসব ক্ষতচিহ্ন থেকে ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়।

৬। ডায়রিয়া, কাশি, যক্ষা ইত্যাদি রোগ হওয়ার পর ছেলেমেয়েদের চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

ভিটামিন ‘এ’ পেতে হলে কি করবেনঃ

১। দু’বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন।

২। হলুদ ও লাল রঙের ফল ও তরিতরকারীতে ভিটামিন ‘এ’ প্রচুর পরিমাণে থাকে।

৩। দুধ, ডিম ইত্যাদিতেও ভিটামিন ‘এ’ আছে।

৪। শিশুদের প্রতি ৬ মাস অন্তর একবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।

ট্র্যাকোমাঃ

ট্র্যাকোমা একটি পুরনো চোখের রোগ। এই রোগ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে হয়ে থাকে। এই রোগ ছোঁয়াচে এবং মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যেসব স্থানে অনেক লোক গাদাগাদি করে বাস করে সেসব স্থানে এ রোগ বেশি দেখা যায়। চিকিৎসা না করালে এসব রোগ সারে না। এগুলো কয়েক মাস যাবৎ এমন কি কয়েক বছর যাবৎ চলতে পারে। এসব রোগে লোক অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

ট্র্যাকোমার লক্ষণ বুঝবেন কি করেঃ

১। সাধারণ চোখ ওঠার মতোই মনে হয়।
২। চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ সর্বক্ষণ লাল হয়ে থাকে।
৩। চোখের সাদা অংশে জ্বালা যন্ত্রণা থাকে।
৪। কর্নিয়ার ওপরের কিনারায় ছোট ছোট রক্তনালী হওয়ার কারণে ওপরের কিনারাটা ছাই ছাই রঙের দেখায়।
৫। এই রোগ যখন এক মাস হয়ে যায় তখন ওপরের পাতার নিচে ছোট ছোট গোলাপী এবং ছাই রঙের গুটির মতো দেখা যায়।
৬। কয়েক বছর পর এই ক্ষতগুলো যখন ভাল হয়ে যায় তখন দাগগুলো থেকে যায় এবং এই দাগগুলোর জন্যই চোখ পুরোপুরি বন্ধ করতে অসুবিধা হয়।
৭। এগুলোর জন্যই চোখের পাতার চুলগুলো কর্নিয়ার ওপর আঁচড় দিয়ে অন্ধত্ব ঘটাতে পারে।

কিভাবে ট্র্যাকোমা এড়াবেনঃ

১। চোখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে।
২। ট্র্যাকোমা রোগীর সাথে যারা থাকবেন এদেরও ঘন ঘন চোখ পরীক্ষা করতে হবে।
৩। যথাসময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

চোখ দিয়ে পানি পড়াঃ

চোখের পানির থলিতে সংক্রমণ ঘটলে চোখ দিয়ে প্রচুর পানি পড়ে। চোখের নিচ বরাবর নাকের ঠিক পাশে ফুলে থাকে। ফোলার ওপর আস্তে করে চাপ দিলে পুঁজ বের হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

১। চোখে গরম সেঁক দিতে হবে।
২। ডাক্তারের পরামর্শমত এন্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম লাগাতে হবে।
৩। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেনিসিলিন খেতে হবে। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া হঠাৎ করে চোখে কোনও ধাক্কা লাগলে, জোরে কাশলে কিংবা ভারী জিনিস তুললে চোখ রক্তের মতো লাল হয়ে থাকে। এতে কোনও রূপ ব্যথা বেদনা হয় না এবং ক্ষতিও হয় না। চোখের ছোটখাটো রক্তনালী ফেটে গেলে এরকম হয় এজন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ধীরে ধীরে এটা ভাল হয়ে যায়।

কর্নিয়ার আলসারঃ

কর্নিয়া সংক্রমণ হলে কর্নিয়ার ওপরের নরম পর্দা ছিঁড়ে গিয়ে আলসার হতে পারে। কর্নিয়ার ওপর তখন ছাই ছাই রঙের কম চকচকে জায়গা দেখতে পাওয়া যায়। কর্নিয়ার আলসার থেকে লোকে অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্য অতি সত্বর ডাক্তার দেখাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখে এন্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে ওষুধ খেতে হবে।

টেরিজিয়ামঃ

রোদ, বাতাস ও ধুলো থেকে চোখে টেরিজিয়াম হয়ে থাকে। চোখের ওপরে পুরু হয়ে যাওয়া মাংস চোখের কোণ থেকে আরম্ভ করে কর্নিয়ার ওপরে চলে যায়। চোখের মণিতে প্রবেশ করার পূর্বেই অপারেশন করা প্রয়োজন। রাস্তায় বের হলে রঙিন চশমা পরলে টেরিজিয়ামটা অতটা বাড়ে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url