দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা এবং চিকিৎসক
দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঃ
মানব জীবন দুর্ঘটনাবহুল, প্রতিটি মানুষের জীবনে ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। এই ধরনের আকস্মিক দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার পাওয়া সব সময় সম্ভবপর হয় না। রোগীর জীবন রক্ষার্থে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যারা এগিয়ে আসেন তাদেরকেই বলা হয় প্রাথমিক চিকিৎসক এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার পূর্বমুহূর্তের পরিচর্যাকে বলা হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।
এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে দৌড় ঝাপ, কাটাছেঁড়া এবং রেল, সড়ক, নৌ ও প্লেন দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে। এছাড়া বন্যা, ভূমিকম্প, আগুন, পানি ইত্যাদির মাধ্যমেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসকঃ
যে কোনও সাধারণ লোকই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে শিক্ষা লাভ করতে পারেন। প্রতিটি মানুষেরই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান থাকা উচিত। যদিও প্রাথমিক চিকিৎসক একজন পূর্ণ চিকিৎসক নন তবুও তিনি তার কর্তব্যবোধ ও উপযুক্ত বিচার বিশ্লেষণ দ্বারা দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশ ও দশের উপকার করতে পারেন।
প্রাথমিক চিকিৎসকের গুণাবলীঃ
১। একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের যে কোনও পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
২। কোনও অবস্থায় মাথা গরম করা যাবে না। সকল পরিস্থিতিতে ধীর-স্থির, কুশলী, দক্ষ ও সাহসী হতে হবে।
৩। আহত ব্যক্তির বন্ধু বান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজনকে সহানুভূতির সঙ্গে আত্মবিশ্বাস যোগাতে হবে।
৪। আহত ব্যক্তিদেরকে উদ্ধারের সাথে সাথে নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫ । আইন শৃঙ্খলা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
৬। বড় কোনও দুর্ঘটনা হলে বিচলিত না হওয়া।
৭। আত্ম বিশ্বাসী হতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসকের কর্তব্যঃ
১। প্রথমেই কোন্ কোন্ বিষয়ে অগ্রগণ্য সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২। রোগীকে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে উদ্ধার করতে হবে।
৩ । রোগীর শ্বাসরুদ্ধ হলে কৃত্রিমভাবে শ্বাসক্রিয়া চালাতে হবে।
৪। রক্তপাত হতে থাকলে তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
৫। রোগীর আত্মীয় স্বজনকে খবর দেবার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬। এ্যাম্বুলেন্স কিংবা যে কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা নিকটে কোন ডাক্তার থাকলে অবিলম্বে ডাক্তার ডেকে আনতে হবে। অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
৭। আহতদের মনে সাহস যোগাতে হবে।
৮। আহতদের নিকট থেকে জনতার ভীড় কমাতে হবে। কারণ ভীড় বেশি হলে সেখানে অক্সিজেনের অভাব হয়, তাতে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
৯। সাহায্য প্রদানকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ যেমন- ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, আনসার ইত্যাদিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খবর দিতে হবে এবং তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে।
১০। রোগীর দেহের অভ্যন্তরে কোনও রূপ Internal হেমারেজ হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
১১। রোগীর মাথায় আঘাত লেগে কন্কাশন হয়েছে কি-না দেখতে হবে।
১২ । রোগী শক্ পেয়েছে কি-না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৩। রোগী সম্বন্ধে মোটামুটি একটি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যেমন- রোগীর নাম, ঠিকানা, সময়, তারিখ, যানবাহনের নম্বর, দুর্ঘটনার স্থান ইত্যাদি।
১৪ । রোগীর মৃগী কিংবা হিস্টিরিয়া প্রভৃতি রোগ আছে কি-না দেখতে হবে।
১৫। সবশেষে রোগীর মালামাল ও টাকা পয়সা হেফাজত করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসকের কাজের সীমাবদ্ধতাঃ
১। প্রাথমিক চিকিৎসককে সব সময় মনে রাখতে হবে যে, সে একজন ডাক্তার নয়, সুতরাং কোনও লোককে মৃত বলে ঘোষণা করার ক্ষমতা তার নেই।
২। জটিল চিকিৎসা করার ক্ষমতা তার নেই ।
৩। অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে রোগীকে বিরক্ত না করা।
৪। নিজের ক্ষমতার বাইরে কোনও রূপ ডাক্তারী বিদ্যা জাহির না করা।
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ
১। দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তির জীবন রক্ষা করা।
২। রোগীর অবস্থার যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য তাৎক্ষণিক শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
৩। শক্ প্রতিরোধ করা এবং যদি হয়েই যায় তার প্রতিবিধান করা।
৪। বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসাকে সহজতর করে তোলা এবং সেই সাথে ঠিক সময়মত চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫। দুর্ঘটনায় কবলিত কোনও ব্যক্তি যেন অবহেলা ও অচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে।
৬। রোগীকে হাসপাতালে অথবা ডাক্তারের কাছে শীঘ্র নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৭। যতক্ষণ পর্যন্ত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভাব্য চিকিৎসা প্রদান করা।
দুর্ঘটনার কারণঃ
মানুষের জীবনে বহু ধরনের দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে। যেমন-
১। সড়ক দুর্ঘটনা।
২৷ পুড়ে যাওয়া বা বাৰ্ণিং।
৩। পানিতে ডোবা।
৪। সান্ স্ট্রোক্ বা হিট্ স্ট্রোক।
৫। ভূমিকম্প।
৬। নৌকা বা লঞ্চ ডুবি।
৭। সাইক্লোন কিংবা টর্নেডো।
৮ । রেল দুর্ঘটনা।
৯ । খনি কিংবা কারখানায় অগ্নিকাণ্ড।
১০। জনতার মধ্যে সংঘর্ষ।
১১। বোমা বিস্ফোরণ।
১২। বিষক্রিয়া বা বিষ খাওয়া ।
১৩। ইলেকট্রিক শক্, মানসিক শক্ ইত্যাদি।
১৪। বড় দালান কোঠা ভেঙ্গে পড়া।