বিভিন্ন প্রকার গ্রাইন্ডিং মেশিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
হ্যান্ড গ্রাইন্ডিং মেশিন (Hand grinding machine):
এটি ওয়ার্কশপে বহুল ব্যবহৃত মেশিন। ওজনে হালকা বিধায় সহজে বহন করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ডিস্ক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্রাইন্ডিং/কাটিং করা যায়।
হ্যান্ড গ্রাইন্ডিং মেশিনের প্রধান অংশ (Main parts of hand grinding machine):
● টুল রেস্ট (Tool rest)
● সুইচ অন/অফ (Switch on/off)
● সুইচ লক (Switch lock)
● বৈদ্যুতিক তার (Electric cord)
● কর্ড স্ট্রেইন রিলিভার (Cord strain reliever)
● হাতল (Handle)
● গার্ড (Guard)
● গ্রাইন্ডিং ডিস্ক (Grinding disk)
● লকিং নাট (Locking nut)
● স্পিন্ডল (Spindle)
হ্যান্ড গ্রাইন্ডিং মেশিনের ব্যবহার (Use of hand grinding machine):
কোন ধাতব পদার্থ কাটা বা মসৃণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
হ্যান্ড গ্রাইন্ডিং মেশিন চালনা কৌশল (Operational procedure of hand grinding machine):
নাট ও বোল্ট ঢিলা থাকলে টাইট দিতে হবে। মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। সুইচ অন করার পর ডিস্ক ঘুরে কিনা দেখতে হবে। কোনো ত্রুটি থাকলে ত্রুটি মুক্ত করতে হবে। এই ডিস্ক দিয়ে ধাতব পদার্থ কাটা ও ফিনিশিং দেয়া যায়। কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডিস্ক ব্যবহার করা যায়। মেটাল কাটতে হলে কাটিং ডিস্ক সংযোজন করে শক্ত করে টাইট দিতে হবে যেন ঘূর্ণনে খুলে না যায়। ডিস্ক বৃত্তের পয়েন্টে টাইট দিতে হবে। টাইট দেওয়ার পর দেখতে হবে ডিস্কটি ঘুরছে কিনা বা ঢিলা আছে কিনা।
যেখানে কাটতে হবে সেই জায়গা মার্কিং করতে হবে। জবকে ভাইসের সাথে শক্তভাবে বাঁধতে হবে। মেশিনে সুইচ দিয়ে ঘূর্ণায়মান ডিস্ককে দাগের উপর ধরতে হবে। ধাতব পদার্থের উপর ধীরে ধীরে কিছুটা চাপ দিতে হবে এবং ধাতব পদার্থ কাটতে থাকবে। মেশিনকে শক্ত করে ধরতে হবে। মেশিন ধরার সময় নিজের উপর ভারসাম্য রাখতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে ভাইসে রেখে কাজ করতে হবে। ধাতব পদার্থ পরিমাপকৃত দাগে কাটতে হবে। মেশিন চালনাকারীকে অবশ্যই নিজের ও ওয়ার্কপিচের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করবে। কাটা শেষ হলে মেশিনের সুইচ বন্ধ করতে হবে। এই মেশিন দিয়ে গ্রাইন্ডিং করতে হলে গ্রাইন্ডিং ডিস্ক ব্যবহার করতে হবে।
হ্যান্ড গ্রাইন্ডিং মেশিন চালনায় নিরাপত্তা ও সতর্কতা (Safety and precaution of hand grinding machine):
● নিরাপত্তা চশমা পরতে হবে কারণ চিপ্স উড়ে এসে চোখে লাগতে পারে।
● বেশি শব্দ হলে কানে প্লাগ দিতে হবে লম্বা চুল বেঁধে কাজ করতে হবে।
● মেটাল কাটার সময় প্রচণ্ড ঘর্ষণে স্পার্ক সৃষ্টি হয়। তাই বডি প্রটেকশন কাপড় পরিধান করে কাটিং/গ্রাইন্ডিং করতে হবে।
● জবকে শক্ত করে ঘূর্ণায়মান পাথরের উপর স্পর্শ করতে হবে। ঘূর্ণায়মান চাকা হাত, আঙ্গুল ও কাপড়কে টেনে নিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
● নির্দিষ্ট এ্যাঙ্গেলে জবটি ধরতে হবে নতুবা গ্রাইন্ডিং স্থানে বেশি ক্ষয় হওয়ার আশংকা থাকবে।
● ঘর্ষণে ওয়ার্কপিচ গরম হতে পারে। খালি হাতে গরম ওয়ার্কপিচে হাত দেয়া যাবে না।
● গ্রাইন্ডিং চাকার ফেস দিয়ে গ্রাইন্ড করা যাবে না।
● আঙ্গুলকে ঘূর্ণায়মান চাকা থেকে দূরে রাখতে হবে।
● ক্ষুদ্র পার্টস হাত দিয়ে না ধরে হোল্ডার দিয়ে ধরতে হবে।
● ওয়ার্কপিচের উপর বেশি জোরে চাপ দেয়া যাবে না।
বেঞ্চ গ্রাইন্ডার মেশিন (Bench grinder machine):
শক্ত টেবিল/বেঞ্চ/উঁচু ফাউন্ডেশনের উপর বসিয়ে গ্রাইন্ডিংয়ের কাজ করা হয়। মেশিনের দু’পাশে দু'ধরনের গ্রাইন্ডিং চাকা থাকে। এক পাশের গ্রাইন্ডিং চাকা দিয়ে কাটিং টুল ধার দেয়া এবং অন্য পাশের গ্রাইন্ডিং চাকা দিয়ে রাফ গ্রাইন্ডিং এর কাজ করা হয়।
বেঞ্চ গ্রাইন্ডার মেশিনের প্রধান অংশ (Main parts of bench grinder machine):
● বডি (Body)
● গ্রাইন্ডিং চাক (Grinding chuck)
● টুল রেস্ট (Tool rest)
● গার্ড (Guard)
বেঞ্চ গ্রাইন্ডার মেশিনের ব্যবহার (Use of bench grinder machine):
টুল বিট, ড্রিল বিট এবং বাটালিকে ধার দেয়া হয়। ওয়ার ব্রাশ চাকার মাধ্যমে ওয়ার্কপিচকে পরিষ্কার ও পলিশ করা হয়।
বেঞ্চ গ্রাইন্ডার মেশিন চালনা কৌশল (Operation procedure of bench grinder machine):
গ্রাইন্ডিং এর পাথর ঠিকঠাক আছে কিনা ইত্যাদি দেখে ইলেকট্রিক লাইন দিতে হবে। মেশিনের সুইচ অন করার পর পাথর চাকাটি ঘুরে কিনা দেখতে হবে। পাথর চাকাটি অস্বাভাবিক শব্দ করলে লাইন/পাওয়ার অফ করে ত্রুটি মুক্ত করতে হবে। অফ করার পর আবার চালু করে দেখতে হবে ঠিক আছে কিনা। রাফ এবং স্মুথ দুই ধরনের গ্রাইন্ডার থাকে। কাজের ফিনিশিংয়ের উপর ভিত্তি করে গ্রাইন্ডিং পাথর নির্বাচন করতে হবে। নির্দিষ্ট গ্রাইন্ডারে জবটি পাথরের নিকট সঠিকভাবে ধরতে হবে। পাথরটি ঘুরন্ত অবস্থায় কাজটি সম্পাদন হতে থাকবে। খুবই সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। জব যদি ছুটে যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা থাকে।
বেঞ্চ গ্রাইন্ডার মেশিন চালনায় নিরাপত্তা ও সতর্কতা (Safety and precaution of bench grinder machine):
● জবকে শক্ত করে ঘূর্ণায়মান পাথরের উপর স্পর্শ করতে হবে।
● নির্দিষ্ট এ্যাঙ্গেলে জবটি ধরতে হবে নতুবা গ্রাইন্ডিং স্থানে বেশি ক্ষয় হওয়ার আশংকা থাকবে।
● চশমাসহ বডি প্রটেকশন কাপড় পরিধান করে কাজ করতে হবে।
● বারবার লোহা/ধাতব পদার্থকে পানিতে ডুবাতে হবে, কারণ হাতে তাপ লাগবে।
সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিন (Surface grinding machine):
টেবিলটি গ্রাইন্ডিং চাকার নিচে সামনে পিছনে চলাচল করতে পারে। স্পিন্ডল আনুভূমিক ও উল্লম্ব দুই প্রকারের হতে পারে। আনুভূমিক ধরনের স্পিন্ডল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। ওয়ার্কপিচকে সামনে, পিছেনে এবং কোণাকুণি বসানো যায়।
সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিনের প্রধান অংশ (Main parts of surface grinding machine):
● বেড (Bed)
● সেডেল (Saddle)
● টেবিল (Table)
● ভার্টিক্যাল কলাম (Vertical column)
● হুইল হেড (Wheel head)
● ভার্টিক্যাল এডজাস্টমেন্ট
● মেকানিজম (Vertical adjustment mechanism)
● ড্রাইভিং মেকানিজম (Driving mechanism)
● ফিড মেকানিজম (Feed mechanism)
সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিনের ব্যবহার (Use of surface grinding machine):
ফ্লাট সারফেসের স্পাইরাল গ্রাইন্ড মার্কস ফিনিশিং করে। মেটাল স্ট্যাম্পিং ডাই সেট, ফ্লাট শেয়ার ব্লেড, ফিকচার বেজ (fixture base) অথবা যে কোনো ফ্লাট এবং প্যারালাল সারফেসকে মসৃণ করে।
সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিন চালনা কৌশল (Operation procedure of surface grinding machine):
জবকে টেবিলে শক্ত করে বেঁধে সামনে পিছনে নিয়ে গ্রাইন্ডিং চাকার নিচে নিতে হবে। ম্যাগনেটিক চাকের সাহায্যেও জবকে বাঁধা যায়। সার্কিট ব্রেকারের সুইচ অন করতে হবে। সুইচ দিয়ে মেশিন চালু করলে গ্রাইন্ডিং পাথরটি খুব জোরে ঘুরতে থাকবে। গ্রাইন্ডিং চাকার গতি সমন্বয় করতে হবে। সারফেস গ্রাইন্ডিং হতে থাকবে। হাতে অথবা পাওয়ার দিয়ে ফিড দেয়া যায়। অটোমেটিক কুল্যান্ট সরবারাহ লাইনের মাধ্যমে ওয়ার্কপিচকে ঠাণ্ডা রাখে। কাজ শেষে প্রথমে মেশিন সুইচ এরপর সার্কিট ব্রেকারের সুইচ বন্ধ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিন চালনায় নিরাপত্তা ও সতর্কতা (Safety and precaution of surface grinding machine):
● গ্রাইন্ডিং পাথর ভাঙ্গা আছে কিনা দেখতে হবে।
● চশমাসহ বডি প্রটেকশন কাপড় পরিধান করে কাজ করতে হবে।
● মেশিন চলার সময় কোনো কিছু এডজাস্ট করা যাবে না।
● ওয়ার্কপিচকে সরানোর আগে মেশিনের সুইচ বন্ধ করতে হবে।
● বেশি গতিতে গ্রাইন্ডিং চাকা ঘুরানো যাবে না।