কিছু মহামারী রোগ এবং তা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
ম্যালেরিয়াঃ
ম্যালেরিয়া হলো রক্তের সংক্রমণ জনিত জ্বর। ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায় মশা। কোনও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে যদি মশা কামড়ের পরে সুস্থ কোনও মানুষকে কামড়ায় তবে সেই ব্যক্তিও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
ম্যালেরিয়ার লক্ষণ বুঝবেন কি করে?
১। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত কাঁপতে থাকে। সেই সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা থাকে।
২। রোগীর প্রচণ্ড জ্বর হয়। জ্বরের সাথে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। কখনও কখনও রোগী বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে জ্বর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে ।
৩। পরবর্তী পর্যায়ে রোগী অত্যধিক ঘামতে থাকে এবং এক পর্যায়ে জ্বর ছেড়ে যায়। ঐ সময়টাতে রোগী অত্যন্ত পিপাসার্ত হয়ে যায়, সেই সাথে দুর্বলতাও বোধ করে।
৪ । বর্ষাকালে কারও যদি জ্বর হয় তবে ম্যালেরিয়া আছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
কিভাবে চিকিৎসা করবেন?
১। ম্যালেরিয়া বলে সন্দেহ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে।
২। যার ম্যালেরিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার যদি ফিটের লক্ষণ থাকে তবে তার মগজে ম্যালেরিয়া হয়েছে ধরে নিতে হবে। তখন সাথে সাথে ডাক্তারী সাহায্য নিতে হবে। কারণ এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ম্যালেরিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
১। মশা এড়িয়ে চলতে হবে। সব সময় মশারী টাঙিয়ে শুতে হবে। মশারী না থাকলে চাদরের নিচে ঘুমোতে হবে।
২। শিশুর দোলনাতে মশারী কিংবা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৩। যদি বাড়িতে কারও জ্বর থেকে থাকে তবে তার রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
৪। যদি কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে বলে মনে হয়, তবে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করাতে হবে। নতুবা তার থেকে অন্যদের মাঝেও এ রোগ ছড়াবে।
৫। মশা এবং তাদের শুক্রকীট ধ্বংস করতে হবে। মশা সাধারণত বদ্ধ পানিতে জন্মায়। এজন্য আশেপাশের ডোবা, গর্ত, পুরনো টিন কিংবা ভাঙ্গা পাত্রে পানি জমে থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। খাবার পানির পাত্র ঢেকে রাখতে হবে।
টাইফয়েড জ্বরঃ
টাইফয়েড হলো অন্ত্রের একটি সংক্রমণ, দুষিত খাবার এবং পানি থেকে এ রোগ ছড়ায় এবং একসময় মহামারীর রূপ ধারণ করে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণঃ
প্রথমে সর্দি জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতোই মনে হয়। সামান্য মাথা এবং গলায় ব্যথা হয়।
১ম সপ্তাহেঃ
১ । প্রতিদিন একটু একটু করে জ্বর বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ১০৫º পর্যন্তও জ্বর উঠতে পারে ৷
২। নাড়ীর গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে যায়।
৩। কখনও কখনও রোগীর বমি হতে পারে, কখনওবা পাতলা পায়খানা হয়। আবার কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
২য় সপ্তাহেঃ
১। জ্বর খুব বেশি বেড়ে যায়। নাড়ীর গতি অত্যন্ত কমে যায়।
২। রোগীর শরীরে গোলাপী রঙের দানা দানা দেখা যায়।
৩। রোগী বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
৪ । রোগীর শরীরের ওজন কমে যায় এবং পানিশূন্যতাও দেখা দেয়।
তৃতীয় সপ্তাহঃ
১। রোগী কোমাতে চলে যায়।
২। রোগী মৃত্যুবরণও করতে পারে।
টাইফয়েডের চিকিৎসাঃ
১। টাইফয়েড হয়েছে এটি বুঝতে পারলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
২। জ্বর বেশি হলে শরীর স্পঞ্জ করে এবং মাথায় আইস ব্যাগ দিয়ে জ্বর কমাতে হবে।
৩। রোগীকে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, তবে সেই খাদ্য তরল হতে হবে।
৪। শরীরে পানির অভাব যাতে পূরণ হয় এজন্য প্রচুর তরল খাবার যেমন- ডাবের পানি, ফলের রস, স্যূপ, খাবার স্যালাইন এবং সেই সাথে প্রচুর পানি পান করাতে হবে।
৫। জ্বর সেরে যাবার পরও রোগীকে বেশ কিছুদিন পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়ঃ
১। টাইফয়েড এড়াতে হলে প্রথমেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। মানুষের মল দিয়ে যাতে খাবার এবং পানি দূষিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২। রাস্তার খোলা খাবার খাওয়া কখনও উচিত নয়।
৩। সাধারণত বন্যা কিংবা অন্যান্য দুর্যোগের পর টাইফয়েড রোগ দেখা দেয়। তাই বন্যা দুর্গত এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। এ সময় পানি ফুটানো ছাড়া পান করা যাবে না।
৪। ঘরের মধ্যে যার টাইফয়েড হবে তাকে আলাদা পাত্রে খাবার দিতে হবে এবং সেই পাত্রে আর কেউ খেতে পারবে না। রোগীর মল মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। পরিচর্যাকারী সেবা করার পর হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫। টাইফয়েড ভাল হয়ে গেলেও কেউ কেউ রোগের জীবাণু বহন করে থাকে। এরা অন্যদের মধ্যেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এজন্য যে টাইফয়েডের জীবাণুর বাহক তার নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। খাবার তৈরির ব্যাপারে এদের সতর্ক থাকতে হবে।
৬। যারা টাইফয়েড রোগের বাহক তাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
কলেরাঃ
কলেরা একটি মহামারী রোগ। কলেরা অত্যন্ত সংক্রামক ও বিপজ্জনক রোগ। এ রোগও একটি পানিবাহিত রোগ। খাদ্য দ্রব্যের মাধ্যমেও কলেরা রোগ ছড়ায়।
কলেরার লক্ষণঃ
১। কলেরা হলে রোগী চাল ধোয়া পানির মতো অনবরত পাতলা পায়খানা করতে থাকে।
২। কলেরা হলে গায়ে জ্বরও হয়।
৩। শরীরে পানির অভাব হয়ে রোগী মৃত্যুবরণ করে।
কলেরার চিকিৎসাঃ
১। কলেরা হলে রোগীকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
২। রোগীকে তরল এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
৩। অতি সত্ত্বর ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে তা না হলে রোগী মৃত্যুবরণও করতে পারে।
কলেরা প্রতিরোধ করবেন কিভাবে?
১। কলেরা রোগীকে আলাদা ঘরে শোয়াতে হবে। অন্য কেউ যাতে সে ঘরে প্রবেশ না করে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
২। রোগীর ব্যবহার করা থালা বাসন, কাপড় চোপড় আলাদা করে রাখতে হবে। অন্য কেউ যাতে সেগুলো ব্যবহার না করে ।
৩। গ্রামে কলেরা হলে সমস্ত খাবার পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।
৪। সব সময় খাবার এবং খাবার পানি ঢেকে রাখতে হবে যাতে মাছি না বসতে পারে ।
৫। রাস্তার ধারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ খোলা খাবারে রোগ জীবাণু পড়ে এবং এগুলো থেকেই কলেরা হতে পারে।