প্রশান্তিময় ঘুমের কয়েকটি উপায়

 

প্রশান্তিময় ঘুমের কয়েকটি উপায়

দুপুর বেলা আপনি যদি দুর্বল বোধ করেন, তবে ধরে নিতে হবে আপনার আরও বেশি পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম জরুরী এবং সুখনিদ্রা হচ্ছে চূড়ান্ত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি যদি মনে করেন আরও খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারলে ভাল হতো, তবে বুঝে নিতে হবে আপনার ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ আছে। আজকাল মানুষের অনেক কাজের চাপ বেড়েছে। এছাড়াও সাংসারিক ঝঞ্ঝাট এবং অন্যের বেগার খাটাতেও ঘুমের নির্ধারিত সময় টুকুতে টান পড়ছে।

এ ধরনের ঘুমের ব্যাঘাতজনিত অবসাদের জন্য আপনার শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিবে। শরীর ম্যাজম্যাজ করবে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। কোনও ব্যাপারে মনযোগ দিতে ব্যর্থ হবেন। সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্নতায় ভুগবেন। অবশেষে মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হবার উপক্রম হয়। বিশ্বের অসংখ্য লোক এ রোগে ভুগছে। খোদ আমেরিকাতে ১০ কোটি লোক বিশ্রাম নেবার সময় পাচ্ছে না।

সুখনিদ্রার পরিমাণঃ

ঘুমের গভীরতা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। তাই প্রতিটি ধাপে কোনও রকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। গণ্ডগোলের মধ্যে আট ঘণ্টা ঘুমোনোর চাইতে আপনার নিরিবিলি ছ'ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। গবেষকদের মতে সুখনিদ্রা চারটি পৃথক পর্বের সমন্বয়ে গঠিত। এবং এ পর্বগুলো ধীরে ধীরে গভীরতর পর্যায়ে প্রবেশ করে । পর্বগুলো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলে আপনার ঘুম ভাল হবে না। শরীর ম্যাজম্যাজ করবে। তাই আপনি যদি ঘুমের সময় নাও বাড়াতে পারেন তবুও ঘুমের মানের উন্নয়ন ঘটান। 

সবচাইতে ভাল বিশ্রামের জন্য ঘুমের কয়েকটি কৌশল জানিয়ে দেওয়া হলোঃ

ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুনঃ

প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা ছাড়ুন। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে গেলে এবং ঘুম থেকে জেগে উঠলে অল্প কয়দিনেই দেখবেন আপনার চমৎকার ঘুমের অভ্যাস গড়ে উঠছে। যারা সাধারণত ঘুমের ব্যাপারে অনিয়ম করে থাকেন তাদেরই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। দেখা যায় এরা কখনও ৫ ঘণ্টা ঘুমোচ্ছেন আবার কখনও ৮/৯ ঘণ্টাও ঘুমোচ্ছেন। ঘুমোনোর সময় আগপিছ করে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কতক্ষণের সুখনিদ্রায় আপনার অবসাদ দূর হবে।

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুনঃ

যারা প্রতিরাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন তারা ঘুমের ওষুধের অভ্যাস ত্যাগ করুন। এগুলো নেশার সৃষ্টি করে। এবং ধীরে ধীরে ঘুমের ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে।

ঘুম আসছে না কেন, ভেবে ঘাবড়াবেন নাঃ

অনেক সময় হয়তো দীর্ঘক্ষণ যাবৎ এপাশ ওপাশ করলেও ঘুম আসতে চায় না। রাতে ঘুমোতে গেলে যদি বিভিন্ন ধরনের বাজে চিন্তা মাথায় এসে মন বিক্ষিপ্ত হয়, তবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন। এই সময়টা আপনি উপভোগ করতে পারেন এবং আরামপ্রদ কিছু করতে পারেন, যেমন- আপনি কোনও একটি বই পড়তে পারেন। এভাবে মনযোগ যদি অন্য খাতে বইয়ে দিতে পারেন তবে অল্প সময় পরেই আপনি দেখবেন উদ্বেগ কাটিয়ে উঠে ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করছেন।

যদি খাদ্যের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকেঃ

অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার খাবেন না অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার আমাদের বদহজম ঘটায় এবং বুক জ্বালার উপসর্গ ঘটিয়ে থাকে। এ কারণে অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই উচিত। রাতের বেলা ভারী খাদ্য পরিত্যাগ করুন। যেমন- রাতে যদি চাইনীজ খান তবে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। আবার শশা, মটরশুটি, ফুলকপি ইত্যাদি খাদ্যও অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

রাতের বেলা কম খাবার গ্রহণঃ

কথায় বলে ‘সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো এবং রাতে ফকিরের মতো।' গবেষণায় দেখা গেছে দিনের বেলা মানুষ বেশি কর্মক্ষম থাকে এবং শরীরের সমস্ত ক্রিয়া চালু থাকে। তাই দিনের খাদ্যের ক্যালরি রাতের চাইতে বেশি পাওয়া যায়। অনেকে মনে করে থাকেন যে, বেশি খেলে ঘুম ঘুম ভাব আসবে, তাই রাতে বেশি মাত্রায় খেয়ে থাকেন। এতে হিতে বিপরীত ঘটে থাকে দেখা যায় যে, তখন পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। আবার যদি স্বল্পাহারের জন্য ঠিকমত ঘুম না আসে তবে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ও সব্জি বেশি করে খাবেন।

খাদ্যের এলার্জিঃ

যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনার এই নির্ঘুম অবস্থার জন্য খাদ্যের এলার্জি দায়ী, তবে সে ব্যবস্থা আপনাকেই গ্রহণ করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন জনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের প্রতি এলার্জি হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যদি দুধে এলার্জি হয়, তবে পেটের ব্যথায় সমস্ত রাত শিশু কাঁদতে থাকে । এজন্য প্রথমেই আপনাকে নজর দিতে হবে কোন্ খাদ্য থেকে আপনার এলার্জি হচ্ছে। ঐ সকল খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন এবং ঘুম পর্যবেক্ষণ করুন। দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার ঐ খাদ্যটিই খেয়ে দেখুন আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কি-না। যদি ঘটে থাকে তবেই বুঝতে পারবেন যে, ঐ খাদ্য থেকেই আপনার এলার্জির উৎপত্তি।

মাঝরাতে ক্ষুধার্ত বোধ করাঃ

এমন অনেক লোক দেখা যায় যারা হঠাৎ করে মাঝরাতে ক্ষুধার্ত বোধ করেন এবং জেগে উঠেন। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না খাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি পাবেন না। প্রকৃত পক্ষে এটি একটি অভ্যাস। এ অভ্যাস দূরীকরণে আপনার সদিচ্ছাই একমাত্র উপায় হতে পারে। কারণ এ অবস্থা বেশ ক্ষতিকারক। যারা সাধারণত একবেলা খান কিংবা আলসারের কারণে বার বার খেয়ে থাকেন, এদের মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। মধ্যরাতে যখনই আপনি ক্ষুধা অনুভব করবেন, তখনই এ অবস্থা কিছুক্ষণ ধরে চলতে দিন এবং পুনরায় কিছু না খেয়ে যদি শুধুমাত্র এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

ভালো ঘুমের জন্য ১২ টি টিপস

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url