ভ্রমণে দরকারি কিছু টিপস যা ভ্রমণ প্রেমীদের যেনে রাখা উচিত
ভ্রমণে শারীরিক বিড়ম্বনা এড়ানোর উপায়ঃ
কোথাও বেড়াতে গেলে কিংবা ভ্রমণে গেলে অনেকেই আছেন যারা অসুস্থতা বোধ করে থাকেন। এদের জন্য অন্য আরও যারা ভ্রমণে আসনে কিংবা সহযাত্রীরা বিরক্তি বোধ করে থাকেন। বেড়াতে গেলে সব সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। এজন্য বেড়াতে যাবার সময় কিছু কিছু ওষুধ পত্র সঙ্গে নেওয়া ভাল।
ভ্রমণে বা বেড়াতে গেলে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন?
হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়াঃ
কোথাও বেড়াতে গেলে আবহাওয়ার পরিবর্তন, নতুন পরিবেশ এবং তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য যে কোনও মানুষই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
শরীরের কোনও অংশ হঠাৎ কেটে বা ছিঁড়ে যাওয়াঃ
শিশুরা বেড়াতে গেলে এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করে। নগর জীবনের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে তারা যেন এক অফুরন্ত আনন্দে মেতে ওঠে। লাফালাফি ছোটাছুটি করে থাকে যখন তখন যে কোনও মুহূর্তে পড়ে গিয়ে হাত পা ছিঁড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এজন্য সাথে একটি ফাস্ট-এড বক্স থাকলে ভাল হয়। বাসে বা ট্রেনে যখন ভ্রমণ করবেন তখন শিশুদেরকে জানালা দিয়ে সামনের দিকে তাকাতে দেবেন না এবং নিজেরাও তাকাবেন না।
পেটের বিভিন্ন সমস্যাঃ
ডায়রিয়াঃ
বাইরের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হয় না, তাই বাইরের খোলা খাবার খেয়ে অধিকাংশ লোকের ডায়রিয়া বা ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে।
বদহজমঃ
কোথাও ভ্রমণে গেলে কিংবা ছুটি ছাটার সময় অধিকাংশ লোক বেশি খাবার খেয়ে থাকেন। আর যদি সে খাবার ভাজাভুজি এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত হয় তবেই বদহজমের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ফুড এলার্জি কিংবা স্কিন এলার্জিঃ
বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি কারও কারও এলার্জি থাকে। আবার খুব বেশি রোদের জন্যও এলার্জি হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
বেড়াতে গেলে খাওয়ার সময়ের পরিবর্তন হয়ে যায়, খাবারের পরিবর্তন হয় এবং টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাসের পরিবর্তন হয়। যার জন্য অনেকের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
পেটের বিভিন্ন রোগ চিকিৎসা ও করণীয়
কারও যদি নির্দিষ্ট রোগ থেকে থাকে তা বেড়ে যাওয়াঃ
যাদের কিছু নির্দিষ্ট রোগ আছে যেমন-ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার, অ্যাজমা, মাথাব্যথা, আরথারাইটিস ইত্যাদি। এরা যদি বেড়াতে যাওয়ার সময় ওষুধগুলো সঙ্গে না নেন কিংবা খাওয়ার অনিয়ম করেন, তবে তাদের রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনিদ্রাঃ
নিজের বিছানা ছাড়া অনেকেই ঘুমোতে পারেন না। আর ঘুম পুরোপুরি না হলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আবার ভ্রমণের সময় যদি রাস্তাঘাট ভাল না থাকে কিংবা অনেক দূরের ভ্রমণ হয় তাহলেও শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
রোদে পোড়াঃ
সাধারণত যাদের রঙ ফর্সা এরা রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিতে ত্বক পুড়ে যেতে পারে, সাধারণত বেলা ১১ থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত এরূপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং এ সময় টুকু টুপি কিংবা ছাতা ব্যবহার করা ভাল।
ফাংগাস ইনফেকশনঃ
গরমের দিনে বেড়াতে বেরোলে খুব বেশি ঘাম হয়। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন— কুঁচকি, নিতম্ব ইত্যাদি স্থানে ফুসকুড়ি ও চুলকানি হতে পারে।
বমি হওয়াঃ
বেড়াতে গেলে অনেকেরই বমির ভাব কিংবা বমিও হয়। একে মোশন সিকনেস বলা হয়।
শিশুদের সঙ্গে নিয়ে যখন বেড়াতে যাবেনঃ
শিশুদের নিয়ে বেড়াতে বের হলে নানারকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়। কারণ শিশুরা সহজে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। শিশুদের যদি খাওয়া এবং ঘুমের সমস্যা হয় তবে শিশুরা খুবই কান্নাকাটি করে থাকে। এজন্য বেড়াতে বের হলে শিশুদেরই বেশি সমস্যা হয়। কিছু কিছু শিশু আছে যারা বেড়াতে গেলে বমি করে কিংবা জ্বর হয়। তাই বেড়াতে গেলে শিশুদের খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
যদি খুব বেশি মশা থাকে কিংবা ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত এলাকা হয়ে থাকেঃ
আপনি যে জায়গায় বেড়াতে যাবেন সে জায়গায় যদি মশা বেশি থেকে থাকে তবে সাথে করে মশারী এবং মশার ওষুধ নিয়ে যাবেন। যদি ম্যালেরিয়া অধ্যুসিত এলাকা হয় তবে সপ্তাহে দুটো ক্লোরোকুইন খেয়ে নেবেন (চিকিৎসকের পরামর্শ মতো)।
যদি কোনও রকম পোকামাকড় কামড়ায়ঃ
ছুটি ছাটায় কোথাও বেড়াতে গেলে পোকামাকড় কামড়াতে পারে। যদি পোকামাকড় কামড় দেয় তবে তৎক্ষণাৎ ক্ষত স্থানটি কলের নিচে ধরবেন। পরিষ্কার করে যখন ধোয়া হয়ে যাবে অর্থাৎ ক্ষতস্থান থেকে যখন পোকার বিষ ধুয়ে যাবে তখন ঐ ক্ষতস্থানে স্পিরিট জাতীয় কোনও লোশন লাগিয়ে দেবেন। যেমন— আফটার শেভ লোশন। এতে করে বিষক্রিয়া হবে না। ভিনিগারও ঐ ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন। ক্ষতস্থান যদি ফুলে গিয়ে লাল হয়ে যায় তবে এন্টিহিস্টামিন খাইয়ে দেবেন। আর যদি ব্যথা থাকে তবে প্যারাসিটামল দিতে পারেন। এজন্য বেড়াতে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
ঘামাচি হলে কি করবেন?
যদি গরমের দিনে কোথাও বেড়াতে যান তবে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বের না হওয়াই ভাল। গরম আবহাওয়ায় বের হলে হাতে, মুখে, বুকে, পিঠে, লাল লাল দানার মতো ঘামাচি বের হতে পারে। অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার ফলে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘামাচি নামক র্যাশ শরীরে বের হয়। তাই যদি রোদে বের হতেই হয় তখন ঐ ধরনের পোষাক পরে সঙ্গে ছাতা কিংবা সানগ্লাস নিলে ভাল হয়। শরীরে ঘামাচি হলে বার বার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন সম্ভব হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকতে চেষ্টা করুন।
বেড়াতে যাবার পূর্বে আপনার যা করা উচিতঃ
আপনার বেড়ানোর প্রোগ্রাম যদি কিছুদিনের জন্য হয় তবে আপনাকে সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ সঙ্গে নিতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তিরই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া ভাল, কারণ যার যে রোগ রয়েছে যেমন- আলসার, হাঁপানী ইত্যাদি রোগ থাকলে তার সেই অনুযায়ী ওষুধ পত্র সঙ্গে নিয়ে নেওয়া উচিত। আর এজন্য পারিবারিক চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ নেবেন।
সেই সাথে নিম্নবর্ণিত ওষুধগুলো নিতে ভুলবেন না-
১। মাথা ধরা, মাথা ব্যথা কিংবা অল্প জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় টেবলেট সঙ্গে নিন।
২। কেটে বা ছিঁড়ে গেলে তার জন্য একটি বক্সে ব্যান্ডেজ, কাঁচি, ফরসেপ, লিউকোপ্লাস্টার, এন্টিসেপটিক লোশন অথবা ক্রীম সঙ্গে নেবেন।
৩। পোকা মাকড়ের কামড় এবং র্যাশ যদি বেরোয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এন্টিহিসটামিন অথবা এন্টিএলার্জির টেবলেট সঙ্গে নেবেন। এসব ওষুধ ঠাণ্ডা কিংবা ফ্লুতেও কাজে লাগবে।
৪। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেটে ব্যথার ওষুধ সঙ্গে নেবেন।
৫ । আমাশয়ের জন্য কিছু ওষুধ সঙ্গে নেবেন, যা আপনার পেটে সহ্য হবে।
৬। দূরে কোথাও যদি ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকে, তবে সঙ্গে পাউডার নিয়ে নেবেন।
৭। রোদের হাত থেকে আপনার চোখ ও চোখের চারপাশ রক্ষার জন্য সান গ্লাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এগুলো ছাড়াও আপনার যদি বিশেষ কোনও রোগ থেকে থাকে, তবে সে রোগের ওষুধগুলো মনে করে সঙ্গে নেবেন। বেড়াতে গেলে দেখা যায় ৭৫ ভাগ রোগই হয় খাবার কিংবা পানি থেকে। ডায়রিয়া এবং বিভিন্ন প্রকার পেটের অসুখে পানিই একমাত্র দায়ী। তাই যথাসম্ভব বাড়ি থেকে পানি নিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে ‘মিনারেল ওয়াটার' কিনে খাবেন।
ভ্রমণের জন্য কিছু টুকিটাকি উপদেশঃ
১। কখনও রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না। খোসা ছাড়ানো কিংবা কাটা ফল কিনবেন না।
২। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কোনও জিনিস খাবেন না। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত কোনও খাবার কিংবা ভাজাভুজি খাবেন না।
৩। শিশুদের জন্য কখনও খোলা দুধ কিনবেন না। কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে করে কৌটোর দুধ, কনডেনস্ মিল্ক এবং ফ্লাঙ্কে করে গরম পানি নিয়ে যাবেন।
৪। শিশুদের জন্য বিস্কুটের প্যাকেট, বাদাম, আস্ত বা গোটা ফল কিনবেন।
৫। জায়গা ও খাবারের পরিবর্তন ঘটলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এজন্য প্রচুর পানি পান করুন এবং বেশি বেশি ফল খান।
৬। রান্না করা খাবার অনেকক্ষণ রেখে খেলে খাবারে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এজন্য খাবার সময় পুনরায় গরম করে খেতে হবে।
৭। ভ্রমণে বের হলে যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন। রোদ যাতে করে না লাগে সে ব্যবস্থা করবেন। এবং বার বার অল্প লবণ, চিনি ও লেবুর সরবত খাবেন।
৮। ভ্রমণে বের হলে অনেকের কেটে ছিঁড়ে গিয়ে থাকে। যদি বেশি রকম কেটে যায় তবে ডাক্তার দেখিয়ে টিটেনাসের ব্যবস্থা করবেন।
৯। অনেকের ভ্রমণে গেলে ঘুম আসতে চায় না। ঘুম না এলে ঘুমের ওষুধ না খেয়ে কোনও বই বা ম্যাগাজিন পড়তে থাকুন। দেখবেন, একসময় এমনিতেই ঘুম এসে যাবে।
১০। যাদের খুব বেশি ঘাম হয় তারা খাবারের সাথে লবণ খাবেন প্রয়োজনে ওরাল স্যালাইন খেতে পারেন।