গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

গিয়ার কাকে বলে? 

গিয়ার হচ্ছে দাঁতযুক্ত এক ধরণের চাকা যা একস্থান হতে অন্যস্থানে ঘূর্ণন শক্তি স্থানান্তর করে।

অথবা 

পরিধিতে নির্দিষ্ট মাপ এবং আকৃতির দাঁতযুক্ত চাকা, যা অনুরূপ আর একটি চাকার সাথে মিশে থেকে এক শ্যাফট থেকে অপর শ্যাফটে শক্তি পরিবহন করে তাকে গিয়ার বলে।

আরও পড়ুনঃ গিয়ার ও পিনিয়নের মধ্যে পার্থক্য কি?

গিয়ার কত প্রকার ও কি কি?

সচারাচর ব্যবহার করা হয় এরকম ৬ প্রকার গিয়ার রয়েছে। যথাঃ

১। স্পার গিয়ার (Spur Gear)

২। বিভেল গিয়ার (Bevel Gear)

৩। হেলিক্যাল গিয়ার (Helical Gear)

৪। র‍্যাক এন্ড পিনিয়ন গিয়ার (Rack and Pinion Gear)

৫। স্পাইরাল গিয়ার (Spiral Gear)

৬। ওয়ার্ম গিয়ার (Worm Gear)

বিভিন্ন প্রকার গিয়ার পরিচিতি

১। স্পার গিয়ার (Spur Gear): ঘূর্ণন অক্ষের সাথে সমান্তরাল করে এটার দাঁতগুলো কাটা থাকে। একই তলে এবং সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত দুটি শ্যাফটে এটা ব্যবহার হয়ে থাকে।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

২। বিভেল গিয়ার (Bevel Gear): এই গিয়ার সব সময় এ্যাঙ্গেলে অবস্থিত ও অক্ষরেখাদ্বয়ের পরস্পর ছেদ করে এবং সমকোণে অবস্থিত শ্যাফটের মধ্যে গতি স্থানান্তর করতে ব্যবহার করা হয়।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

৩। হেলিক্যাল গিয়ার (Helical Gear): হেলিক্যাল গিয়ার স্পার গিয়ারের ন্যায় দেখতে, কেবল পার্থক্য এই যে, স্পার গিয়ারের দাঁত গুলো অক্ষের সমান্তরাল হয়, আর হেলিক্যাল গিয়ারের দাঁতগুলো গিয়ারের পৃষ্ঠে স্পাইরেল আকারে ঘুরে যায়। এই প্রকার গিয়ার সাধারনত সমান্তরাল শ্যাফটকে সংযুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

৪। রেক এন্ড পিনিয়ন গিয়ার(Rack and Pinion Gear): এটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দাঁত যুক্ত সরল অংশটিকে রেক বলে। উক্ত গিয়ারের সাহায্যে সরল গতি হতে ঘূর্ণন গতি ও ঘূর্ণন গতি হতে সরল গতি পাওয়া যায়।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

৫। স্পাইরাল গিয়ার (Spiral Gear): অক্ষদ্বয় পরস্পর সমান্তরাল নয় এবং একই বিন্দুতে ছেদ করে না এরূপ দুটি শ্যাফটের মধ্যে শক্তি পরিবহন করতে স্পাইরাল গীয়ার ব্যবহার করা হয়। স্পাইরাল গীয়ার অল্প শক্তি পরিবহনের উপযােগী। কারণ দাঁতগুলাে লাইন কনট্রাক্ট না হয়ে পয়েন্টে কন্ট্রাক্ট হয়।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

৬। ওয়ার্ম গিয়ার (Worm Gear): যে গীয়ারের অক্ষদ্বয় পরস্পর ছেদ করে না অথচ সমকোণে অবস্থান করিয়ে এক শ্যাফট হতে অন্য শ্যাফটে ঘূর্ণন গতি কমিয়ে শক্তি সঞ্চালনে ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়ার্ম গীয়ার বলে। এটা দেখতে স্ক্র থেডের মত দেখা যায়। ডিভাইভিং হেড, চেইন ড্রাইভ ইত্যাদিতে এ গীয়ার ব্যবহৃত হয়।

গিয়ার কাকে বলে? গিয়ার কত প্রকার ও কি কি? গিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

গিয়ার তৈরির পদার্থ সমূহ

গিয়ার তৈরিতে অনেক ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ- ইস্পাত, পিতল, ব্রোঞ্জ, ঢালাই লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, গুঁড়ো ধাতু, কার্বন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম খাদ, Ss400 এবং প্লাস্টিক।

গিয়ার পদার্থ নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

একটি গিয়ার পদার্থ বা উপাদান নির্বাচন করার সময় তিনটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি হল শক্তি, স্থায়িত্ব এবং খরচ, যার মধ্যে উপাদানের খরচ এবং উৎপাদন খরচ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

গিয়ারের দাঁত ব্যর্থ হওয়ার
কারণ

✓ Moderate wear
✓ Excessive wear
✓ Abrasive wear
✓ Corrosive Wear
✓ Frosting
✓ Spalling
✓ Pitting
✓ Breakag
✓ Scoring
পিটিং গিয়ার ব্যর্থতার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি।

কয়েকটি গিয়ার এলিমেন্ট এর নাম

(1) Base circle 

(2) Pitch circle

(3) Adendum circle

(4) Dedendum circle

(5) Module

(6) Pressure angle

(7) Volute Profile

গিয়ার এর বিভিন্ন অংশের নাম

সার্কুলার পিচ (Circular Pitch):

গিয়ারের একটি দাঁতের কেন্দ্র- রেখা হতে ঠিক পরবর্তী দাঁতের কেন্দ্র- রেখা প্রর্যন্ত যে দূরত্ব, তাকে দাঁতের সার্কুলার পিচ বলে। এটাকে সংক্ষেপে “ পিচ” বলা হয়ে থাকে।

সার্কুলার পিচ (Circular Pitch) = π * সার্কেলের ডায়মিটার / দাঁতের সংখ্যা

=π * মডিউল পিচ

ডায়ামেট্রাল পিচ (Diametral Pitch):

দাঁতের সংখ্যাকে পিচ সার্কেলের ডায়ামিটার (ইঞ্চি) দ্বারা অথবা T - কে “সার্কুলার পিচ” দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকে ডায়ামেট্রাল পিচ (Diametral Pitch) বলে।

ডায়ামেট্রাল পিচ = দাঁতের সংখ্যা / পিচ সার্কেলের ডায়ামিটার (ইঞ্চি) 

বা

ডায়মেট্রাল পিচ = π / সার্কুলার পিচ (ইঞ্চি)

মডিউল বা মডিউল পিচ (Module or Module Pitch):

পিচ সার্কেলের ডায়ামিটারকে দাঁতের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকে মডিউল পিচ বলে।আসলে এটা ডায়ামেট্রাল পিচ এর বিপরীত। এটা মিলিমিটারে প্রকাশিত হয়।

মডিউল বা মডিউল পিচ = পিচ সার্কেলের ডায়ামিটার (মি.মি.) / দাঁতের সংখ্যা

এডেন্ডাম (Addendum) = পিচ সার্কেলের উপরের দিকে দাঁত যে পরিমান বর্ধিত থাকে, তাকে এডেন্ডাম বলে।

ডিডেন্ডাম (Dedendum) = পিচ সার্কেলের নিচের দিকে দাঁত যে পরিমান গভীর থাকে, তাকে ডিডেন্ডাম বলে।

ক্লিয়ারেন্স (Clearance) = দুইটি গিয়ার যখন পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, তখন দুইটির অন্তবর্তী স্থানে যে ফাঁকা থাকে, তাকে ক্লিয়ারেন্স বলে।

দাঁতের প্রস্থ (Width of teeth) = পিচ সার্কেলের উপর গৃহীত দাঁতের যে প্রস্থ, তাকে দাঁতের প্রস্থ বলে।

গিয়ার বক্স কত প্রকার ও কি কি? 

গিয়ার বক্স প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ-

১। ম্যানুয়াল গিয়ার বক্স। 

২। অটোমেটিক গিয়ার বক্স।

আরও পড়ুনঃ গিয়ার বক্স কাকে বলে? গিয়ার বক্স কত প্রকার ও কি কি? ও গিয়ার বক্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

গিয়ার ড্রাইভের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

গিয়ার ড্রাইভের সুবিধাসমূহঃ

১। উচ্চ ক্ষমতা স্থানান্তর করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

২। গিয়ার ড্রাইভের দক্ষতা বেশি।

 ৩। গিয়ার ড্রাইভের বেগ ধ্রুবক। তাই ভালো মানের জব প্রস্তুত করা যায়। গিয়ার ড্রাইভ উচ্চ টর্ক মান প্রেরণ করে।

 ৪। গিয়ার ড্রাইভগুলি আকারে কমপ্যাক্ট এবং তাদের স্থায়িত্ব বেশি।

 ৫। এটিতে তৈলাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাই কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

৬। গিয়ার ড্রাইভে কোন স্লিপ নেই, তাই সঠিক বেগ পাওয়া যায়।

৭। গিয়ার ড্রাইভ কম গতির জন্যও ব্যবহার করা হয়।

গিয়ার ড্রাইভের অসুবিধাসমূহঃ

১। যখন গিয়ার ড্রাইভগুলি উচ্চ গতিতে চলতে থাকে, তখন অনেক শব্দ হয়।

২। গিয়ার ড্রাইভের জন্য তৈলাক্তকরণ প্রয়োজন।

৩। গিয়ার ড্রাইভের জন্য উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।

৪। গিয়ার তৈরির জন্য বিশেষ পারটিকুলার সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয়।

৫।এই প্রক্রিয়াটি অন্যান্য ড্রাইভের তুলনায় ব্যয়বহুল।

৬। বেল্ট ড্রাইভের তুলনায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি।

গিয়ারের সার্কুলার পিচ বলতে কি বুঝায়?

গিয়ারের একটি দাঁতের কেন্দ্র হতে পরবর্তী দাঁতের কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্বকে গিয়ারের পিচ সার্কুলার বলে।

র‍্যাক ও পিনিয়নের মধ্যে পার্থক্যঃ

সরলাকার ও বৃত্তাকার দুইটি সমন্বিত গিয়ারের ক্ষেত্রে সরলাকারটিকে র‍্যাক ও বৃত্তাকারটিকে পিনিয়ন বলে। এদের সাহায্যে সরল গতি হতে ঘূর্ণন গতি অথবা বিপরীতভাবে ঘূর্ণন গতি হতে সরল গতি পাওয়া যায়।

গিয়ার ট্রেইন (Gear Train) কি?

গিয়ার ট্রেইন (Gear Train): একাধিক গিয়ার হুইল অথবা গিয়ার ও পিনিয়ন হুইল একত্রে সংযুক্তির মাধ্যমে এক শ্যাফট হতে অন্য শ্যাফটে আবর্তন গতি সঞ্চালনের ব্যবস্থাকে গিয়ার ট্রেইন (Gear Train) বলা হয়।

চালক ও চালিত গিয়ার বলতে কি বুঝায়?

শক্তি স্থানান্তরের জন্য শক্তির উৎসের শ্যাফটের সাথে সংযোজিত গিয়ারকে চালক গিয়ার এবং যে গিয়ারকে অন্য একটি শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত করে ঘুরানো হয় তাকে চালিত গিয়ার বলে।

আইডল গিয়ার কেন ব্যবহৃত হয়?

দুটি গিয়ারের মধ্যে চালিত গিয়ারের গতির দিক পরিবর্তন করতে। এবং চালক ও চালিত গিয়ারদ্বয়ের মাঝে সংযোগ রক্ষা করতে আইডল গিয়ার ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ মিলিং মেশিন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url