সংকর ধাতু কী? সংকর ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
সংকর ধাতু সূচনা (Introduction):
সাধারণ কথায় অ্যালয় (Alloy) বলতে দুই বা ততোধিক ধাতুর সংমিশ্রণকে বুঝায়। কারিগরি ক্ষেত্রে সাধারণত যে সকল মৌলিক ধাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলির গুণ বা শক্তি, সাধারণ সকল কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয় বলে বিশেষ গুণ বা শক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক লৌহজাত বা অলৌহজাত ধাতুকে মূল ধাতুর সাথে রাসায়নিকভাবে মিশ্রতি করে এক নতুন ধাতু উৎপন্ন করা হয়। একে সংকর ধাতু (Alloy Metal) বলে।
প্রধানত ক্ষয় রোধ গুণ ও হার্ডেনিং গুণ বৃদ্ধি, গ্রেইন সাইজ নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ শক্তি, মেশিনিং করার ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন ধাতুর মধ্যে সংকরায়ণ করা হয়।
সংকর ধাতু (Alloy Metal):
ধাতুর মূল উপাদানের সাথে অ্যালয়িং এলিমেন্ট যোগ করে অধিকতর উন্নত গুণসম্পন্ন যেসব নতুন ধাতু উৎপাদন করা হয় তাই সংকর ধাতু নামে পরিচিত।
সংকর ধাতুকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১। ফেরাস অ্যালয় বা লৌহজাত সংকর ধাতু এবং
২। অলৌহজাত সংকর ধাতু।
সংকর ধাতুর প্রয়োজনীয়তা (Needs of Alloy Metal):
ধাতুর যে সমস্ত গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য অ্যালয় করা হয়। তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
ক) হার্ডেনেবিলিট বৃদ্ধির জন্য।
খ) সাধারণ তাপমাত্রায় শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
গ) উচ্চ অথবা নিম্ন তাপমাত্রায় যান্ত্রিক গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য।
ঘ) ক্ষয়রোধক শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
ঙ) মরিচারোধক শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
চ) চুম্বকীয় শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
জ) ইম্প্যাক্ট লোড, শক্ লোড বহন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
সচরাচর ব্যবহৃত সংকর ধাতুসমূহ (General Useable Alloy Metals):
নিম্নে সচরাচর ব্যবহৃত সংকর ধাতুসমূহের নাম লিপিবদ্ধ করা হলোঃ
১। হাইস্পিড স্টিল (High Speed Steel): সাধারণত এটা খুব শক্ত ধাতু। এতে মিশ্রণের হার টাংস্টেন (Tungsten) শতকরা ১৮ ভাগ, ক্রোমিয়াম (Cromium) শতকরা ৬ ভাগ, সিলিকন শতকরা ০.৫ ভাগ, ভ্যানাডিয়াম (Vanadium) শতকরা ০.৩ ভাগ, ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) শতকরা ০.১ ভাগ ও কার্বন শতকরা, ০.৭ ভাগ।
কামারশালায় একে ফোর্জিং এবং শক্ত করা ও টেম্পার দেওয়া যায়। কিন্তু ওয়েল্ডিং করা যায় না। হাইস্পিড স্টিল দ্বারা তৈরি যন্ত্র এর তীক্ষ্ণতাকে অব্যাহত রেখে অন্য ধাতুকে কাটতে সক্ষম হয়।
২। স্টেইনলেস স্টিল (Stainless Steel): এ প্রকার মিশ্র ধাতুর ক্ষয়রোধী শক্তি খুবই বেশি এবং উপরিভাগে কখনো মরিচা পড়ে না। এর মধ্যে ক্রোমিয়াম শতকরা ১২ ভাগ হতে ২০ ভাগ, নিকেল শতকরা ৪ ভাগ থেকে ১২ ভাগ, ম্যাঙ্গানিজ শতকরা ১ ভাগ, কার্বন শতকরা ০.২ ভাগ মিশ্রিত থাকে। এটা এসিড (Acid) দ্বারা আক্রান্ত হয় না বা চুম্বক দ্বারাও আকৃষ্ট হয় না। এটা তাপের কুপরিবাহী।
৩। টাংস্টেন স্টিল (Tungsten Steel): এটা মরিচারোধী, খুব শক্ত ও সহজে স্থায়ী চুম্বকে পরিণত করা যায়। এতে শতকরা ২ ভাগ হতে ১৮ ভাগ পর্যন্ত টাংস্টেন ও শতকরা ০.২ ভাগ থেকে ১.৫ ভাগ পর্যন্ত কার্বন স্টিলের সাথে মিশ্রিত করে এটা তৈরি হয়ে থাকে।
৪। নিকেল স্টিল (Nickel Steel): এটা খুব শক্তিসম্পন্ন, দুচ্ছেদ্য, আকস্মিক আঘাত সহনশীল ও স্থিতিস্থাপকতা গুণবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এতে মরিচা পড়ে না বা ক্ষার দ্রব্য দ্বারা এটা আক্রান্ত হয় না। এর ভেতর শতকরা ৫ ভাগ নিকেল ও শতকরা ০.২ ভাগ হতে ০.৪ পর্যন্ত কার্বন থাকে।
৫। ম্যাঙ্গানিজ স্টিল (Manganese Steel): এটা এক প্রকার মিশ্র স্টিল। নিকেল স্টিল হতে এটা অধিকতর শক্ত এবং শক্তিসম্পন্ন।
৬। ক্রোমিয়াম স্টিল (Cromium Steel): এটার অপর নাম ক্রোস স্টিল। নিকেল স্টিল থেকে এটা অধিকতর শক্ত এবং শক্তিসম্পন্ন।
৭। ক্রোম নিকেল স্টিল (Chrome Nickel Steel): একে নাইক্রোম স্টিল বা নিকেল ক্রোমিয়াম স্টিল বলে। এর শক্তি ক্রোমিয়াম স্টিল হতে ও অধিক।
৮। ভ্যানাডিয়াম স্টিল (Vanadium Steel): এটা বেশ শক্তিসম্পন্ন ও শক্ত ধাতু।
৯। ক্রোম ভ্যানায়িাম স্টিল (Chrom Vanadium Steel): এটা উচ্চ শ্রেণীর স্প্রীং স্টিল শ্রেণিভুক্ত। এটা তাপক্রিয়ার সময় সমভাবে শক্ত হয়। এবং ভিতরে কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। এটা স্থিতিস্থাপকতা (Elastisity) গুণ অনেক বেশি।
১০। মলিবডেনাম স্টিল (Molybdenum Steel): এটা টাংস্টেন স্টিল এর ন্যায় শক্ত। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম ভঙ্গুর। এর আকস্মিক আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি।
১১। স্প্রীং স্টিল (Spring Steel): একপ্রকার মিশ্র স্টিল। ক্রোমভ্যালাডিয়াম স্টিল সিলিকা ম্যাগনিজ স্টিল, ক্রোম স্টিল, ইত্যাদি স্প্রীং স্টিলের উদাহরণ।
১২। ফোর্জড স্টিল (Forged Steel): কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সাধারণ ফোর্জিং (Forging) প্রণালিতে ভিতরের দানাগুলিকে সুসংবদ্ধ করিয়ে একে অধিকতর শক্তিসম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এই প্রণালিতে তৈরি করা স্টিলকেই সাধারণত ফোর্জড স্টিল বলে।
১৩। রোল্ড স্টিল (Rolled Steel): রোলিং (Rolling) প্রণালিতে এটা তৈরি করা হয়।
১৪। ম্যাগনেট স্টিল (Magnet Steel): এটা অধিক পরিমাণ কোবাল্ট (Cobalt) ধাতু মিশ্রিত এবং চুম্বক ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী এক বিশেষ শ্রেণির স্টিল।
সংকর ধাতুসমূহের ব্যবহার (Use of Alloy Metals):
১। স্টেইনলেস স্টিল (Stainless Steel): ছুরি, কাঁচি, গৃহস্থালির বাসনপত্র (Domestic Utensiles), ঘড়ির কেস (Watch Case), রাসায়নিক সরঞ্জাম (Chemical Equipments), অস্ত্র, বয়লারের সুপার হিটার, তেল শোধনাগারের টারটাইন রেইলিং, গৃহস্থালি আসবাবপত্র প্রভৃতি এটা দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে।
২। টাংস্টেন স্টিল ( Tungsten Steel): ড্রইং (Drawing) প্রণালিতে একে সরুতারে পরিণত করা যায় বলে ইলেক্ট্রিক বাতির ফিলামেন্ট (Filament), মেশিনের কাটার যন্ত্র (Cutting Tools) ইত্যাদি তৈরি করতে এটা ব্যবহার হয়ে থাকে।
৩। হাইস্পীড স্টিল (High Speed Steel): ডাক্তারি যন্ত্রপাতি (Surgical instruments), ক্ষুর (Ragor), টুইস্ট ড্রিল বিট (Twist drill bit), ট্যাপ (Tap), ডাই (Die), মিলিং মেশিনের কাটার, লেদ প্লেনিং ও শেপিং মেশিনের কাটার যন্ত্র বা কাটিং টুল প্রভৃতি যন্ত্র তৈরি করতে এটা প্রচুর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৪। নিকেল স্টিল (Nickel Steel): এটা দ্বারা ওয়্যার রোপ (Wire Rope), আর্মার প্লেট (Armour Plate) পিস্টন রড (Piston Rod), ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। এর ভিতর ২২ ভাগ নিকেল মিশ্রিত থাকলে এটা দ্বারা বৈদ্যুতিক রেজিস্ট্যান্স তার (Electric Registance Wire), হিটারের তার (Heater Element) স্পার্ক প্লাগ (Spark Plug), সাইকেলের ফ্রেমের টিউব (Pipe) ও স্পোক (Spoke) ইত্যাদি তৈরি হয়।
৫। ম্যাঙ্গানিজ স্টিল (Managanese Steel): সাধারণত শতকরা ১.৫ ভাগ ম্যাঙ্গানিজ যুক্ত মিশ্র স্টিলে শ্যাফট (Shaft), স্পিন্ডল (Spindle), কানেকটিং রড (Connecting Rod) ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু শতকরা ১৬ ভাগ ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত স্টিল রোলার ( Roller), গুলিরোধক শিরস্ত্রাণ (Bullet Proof Helmets) ক্র্যাশার ‘জ’ (Crusher Jaw), ইত্যাদি তৈরি করতে প্রয়োজন হয়।
৬। ক্রোমিয়াম স্টিল (Chromium Steel): এটা দ্বারা বল বিয়ারিং-এর বল এবং রোলার (Balls and Rollers in Ball Bearing), আর্মার প্লেট (Armour plate), শেল (Shell), সিন্ধুক (Safe) ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে।
৭। ক্রোম নিকেল স্টিল (Chrome Nickle Steel): ক্রাংক শ্যাফট, (Crank Shaft), মোটরগাড়ির এবং অ্যারোপ্লেনের এক্সেল (Axel), কানেকটিং রড (Connecting Rod) ইত্যাদি এবং উচ্চ শ্রেণির গীয়ার হুইল (Gear Wheel) তৈরি করতে এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৮। ভ্যানাডিয়াম স্টিল ( Vanadium Steel): ক্র্যাংক শ্যাফট (Crank Shaft) এক্সেল (Axel) মোটরগাড়ির গীয়ার হুইল (Gear Wheels) এবং গীয়ার বক্স (Gear Box) ইত্যাদি গঠনে এটা ব্যবহৃত হয়।
৯। ক্রোম ভ্যানাডিয়াম স্টিল (Chrome Vanadium Steel): এটা দ্বারা অধিকাংশ গাড়ির স্প্রীং তৈরি করা হয়ে থাকে। এই প্রকার স্টিলকে মেশিনে সহজে ক্ষয় করা যায় এবং মেশিনিং ক্রিয়ার সময় যন্ত্রের উপরে বিশেষ দাগ (Tool marks) পড়ে না বলে উপরিভাগ মসৃণ হয়।
১০। মলিবডেনাম স্টিল (Molybdenum Steel): বন্দুকের ব্যারেল (Barrel), প্রপেলার শ্যাফট (Prpeller Shaft) ইত্যাদি গঠনে এটা ব্যবহৃত হয়।
১১। স্প্রীং স্টিল (Spring Steel): এটা কোনো বিশেষ শ্রেণির স্টিল নয়। যে সকল মিশ্র স্টিল দ্বারা স্প্রীং তৈরি হয় এদেরকেই সাধারণভাবে এই নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ প্রকার মিশ্র স্টিলগুলির নাম ক্রোম ভ্যানাডিয়াম স্টিল, সিলিকো-ম্যাঙ্গানিজ ক্রোম স্টিল ইত্যাদি ।
১২। ফোর্জড স্টিল (Forged Steel): স্লাইড রেঞ্চ (Slide Wrench) স্প্যানার (Spanner) স্ক্রু ড্রাইভার
(Screw Driver) ইত্যাদি স্টিল দ্বারা তৈরি হয়।
১৩। রোল্ড স্টিল (Rolled Steel): এঙ্গেল, জায়েস্ট, টী, চ্যানেল, রড, প্লেট এবং শীট ইত্যাদি এর দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে।
১৪। ম্যাগনেট স্টিল (Magnet Steel): ম্যাগনেট (Magneto), লাউড স্পীকার (Loud Speaker) এবং অনেক বৈদ্যুতিক মেশিন ও যন্ত্রাদিতে যে সকল স্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয় এটা প্রধানত এই শ্রেণির স্টিল দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে।
সংকর ধাতুসমূহের গুণগত মান (Characteristics of Alloy Metals):
স্টিলকে বিশেষ গুণধর্মী করতে বিভিন্ন প্রকার মিশ্র ধাতু বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেমনঃ
১। ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত করলে স্টিল শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২। স্টিলের মধ্যে নিকেল মিশ্রিত করলে এটা খুব শক্তিসম্পন্ন, মরিচারোধী, কাঠিন্যতা (Toughness) স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) গুণবিশিষ্ট হয়ে থাকে ।
৩। ক্রোমিয়াম মিশ্রিত করলে স্টিলের কাঠিণ্যতা (Hardness) বৃদ্ধি পায় এ স্টিলকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ও ক্ষয়রোধী করতে সাহায্য করে।
৪। টাংস্টেন মিশ্রিত করলে স্টিল খুবই শক্ত ও স্থায়ী চুম্বকত্ব (Permanent magnet) লাভ করে। এছাড়া অধিক তাপে কাঠিন্যতা (Hardness)-কে ধরে রাখতে সমর্থ হয়।
সচরাচর ব্যবহৃত অলৌহ সংকর ধাতুসমূহ (Commonly used non Ferrous alloy metals):
সচরাচর ব্যবহৃত অলৌহজ সংকর ধাতুসমূহ সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখিত হলোঃ-
ব্রাস (Brass): ব্রাসকে বাংলায় পিতল বলে। এটি কপার (তাম্র) এবং জিঙ্ক (দস্তা)-এর মিশ্রণ ধাতু। যে শ্রেণির ব্রাস সাধারণত ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৬৭ ভাগ কপার এবং ৩৩ ভাগ জিঙ্ক ও সামান্য পরিমাণ টিন মিশ্রিত থাকে। এটি দেখতে উজ্জ্বল হরিদ্রা বর্ণ।
মেশিনিং করার সময় সাধারণত ব্রাস কাটার যন্ত্রের (Cutter Tools) সাথে আঠালোভাবে লেগে থাকতে চায়। কিন্তু এটার সাথে অল্প পরিমাণ লেড (lead) অর্থাৎ সীসা মিশানো থাকলে আর এ ত্রুটি হয় না।
মাঞ্জ মেটাল (Muntz Metal): এটা এক বিশেষ শ্রেণির ব্রাস। শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ কপার এবং ৪০ ভাগ জিঙ্ক মিশিয়ে এটা তৈরি হয়। কোনো কোনো সময় অল্প পরিমাণে লিড মিশানো হয়ে থাকে। এটা সাধারণ ব্রাস অপেক্ষা অধিক শক্ত ও শক্তিসম্পন্ন এবং সহনীয়। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্বারা এটা আক্রান্ত হয় না।
ম্যাঙ্গানিজ ব্রোঞ্জ (Manganese Bronze): ব্রাস (Brass)-এর সাথে ফেরোম্যাঙ্গানিজ যোগ করে এটা তৈরি করা হয়। নামে এটা ব্রোঞ্জ হলেও এর মধ্যে প্রায়ই টিন থাকে না। সুতরাং কার্যত এটা ব্রাসই । শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ কপার, ৩৬ ভাগ জিঙ্ক ১ ভাগ আয়রন ০.৫ ভাগ ম্যাঙ্গানিজ এবং অল্প পরিমাণ কার্বন ও অ্যালুমিনিয়াম মিশিয়ে যে ম্যাঙ্গানিজ ব্রোঞ্জ তৈরি করা হয়, তা প্রপেলার (Propeller) তৈরিতে উপযোগী হয় এটাকে ফোর্জিং এবং ঢালাই উভয়ই করা যায়।
অ্যালুমিনিয়াম ব্রোঞ্জ (Aluminium Bronze): এটা সাধারণত কপারের সাথে শতকরা ৯ থেকে ১০ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম মিশিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এর বর্ণ স্বর্ণের ন্যায় সুন্দর ও উজ্জ্বল। এ কারণে নকল স্বর্ণের অলংঙ্কারাদি তৈরি করতে এটা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্বারা এটা আক্রান্ত হয় না।অ্যালুমিনিয়াম ব্রোঞ্জের স্থিতিস্থাপকতা এবং ক্ষয়রোধী শক্তি বেশি। এজন্য এটা দ্বারা বিয়ারিং, ভাল্ভ, প্রপেলার ইত্যাদি তৈরি হয়।
মনেল মেটাল (Monel Metal): শতকরা ৬৮ ভাগ নিকেল, ৩০ ভাগ তামা এবং ২ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি মিশিয়ে এই ধাতু সংকর তৈরি হয়, আর মূলত এটা নিকেল ব্রোঞ্জ (Bronze) এই ধাতু সংকর ক্ষয়রোধকারী ও ইস্পাতের ন্যায় শক্তিশালী। মরিচা পড়ে না বিধায় জাহাজের প্রপেলার শ্যাফট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
হোয়াইট মেটাল (White Metal): বিয়ারিংথ এর ঘর্ষণ রোধকারী এটা একপ্রকার মিশ্র ধাতু। এটার বর্ণ হরিদ্রা আভাযুক্ত সাদা। সাধারণত লীড কিংবা টিন ধাতুকে মূল উপাদানরূপে রেখে টিন, অ্যান্টিমনি ও কপার অথবা লীড, অ্যান্টিমনি ও কপার মিশিয়ে এটা তৈরি করা হয়। যে হোয়াইট মেটালের মধ্যে টিন মূল ধাতু উপাদানরূপে থাকে, তা অধিকতর কার্যকর হয়।
এ প্রকার মিশ্র ধাতুকে সাধারণত ডুরালমিন বলে। ডুরালমিনে সচরাচর প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ টিন, ১০ ভাগ অ্যান্টিমনি এবং ১০ ভাগ কপার থাকে। এটা নরম ধাতু এবং অনেক কম তাপমাত্রায় (প্রায় ১০০০ সেন্টিগ্রেড বা সেলসিয়াসে) গলে।
ডুরালমিনাম (Duraluminum): শতকরা ৮৫ ভাগ অ্যালুমিনিয়ামের সাথে প্রায় ১৫ ভাগ টিন, লেড, ক্যাডমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি মিশিয়ে এই ধাতু সংকর উৎপন্ন হয়। এটা খুবই শক্ত অ্যালুমিনিয়াম সংকর যা বিমানের বডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ডাক্তারি ছুরি, কাঁচি প্রভৃতি তৈরিতেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি? ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
সংকর ধাতুসমূহের মূল উপাদান (Basic elements of alloy metals):
নিম্নে সচরাচর ব্যবহৃত সংকর ধাতুসমূহের মূল উপাদানের নাম লিপিবদ্ধ করা হলোঃ
সাধারণ রকমের স্টিল যেরকম কার্বনের প্রাধান্য বজায় রাখা হয়, মিশ্র স্টীলে কিন্তু মিশ্রিত ধাতুসমূহের প্রাধান্যকে বাড়িয়ে কার্বনের প্রাধান্যকে হ্রাস করা হয়ে থাকে। সাধারণ মিশ্র ধাতুসমূহের মূল উপাদানগুলি নিম্নরূপঃ
১। ক্রোমিয়াম (Chromium)
২। টাংস্টেন (Tungsten)
৩। ভ্যানাডিয়াম (Venadium)
৪। তামা (Copper)
৫। টিন (Tin)
৬। নিকেল (Nickel)
৭। ম্যাগানিজ (Manganese)
৮। কোবাল্ট (Cobalt)
৯। মলিবডেনাম (Molybdenum)
১০। দস্তা (Zine)
ইত্যাদি ধাতুর মিশ্রণ স্টিল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ হার্ডেনিং কি? হার্ডেনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা