চুম্বক বা ম্যাগনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চুম্বক বা ম্যাগনেট কাকে বলে?
যে বস্তুর মধ্যে দিকদর্শী ও আকর্ষণী শক্তি বিদ্যমান থাকে, তাকে চুম্বক বলা হয়।
চুম্বক বা ম্যাগনেটের ধর্মঃ
একটি চুম্বকের দুটি ধর্ম আছে। যথাঃ
(ক) আকর্ষণী ধর্মঃ চুম্বক বিপরীত পোলকে আকর্ষণ করে অর্থাৎ একটি চুম্বকের নর্থ পোল অপর একটি চুম্বকের সাউথ পোলকে আকর্ষণ করে।
(খ) বিকর্ষণী ধর্মঃ আবার একটি চুম্বকের নর্থ পোল অপর একটি চুম্বকের নর্থ পোলকে বিকর্ষণ করে। ঠিক একই নিয়মে একটি চুম্বকের সাউথ পোল অপর একটি চুম্বকের সাউথ পোলকে বিকর্ষণ করে।
চুম্বক বা ম্যাগনেটের প্রকারভেদঃ
চুম্বক প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
১। প্রাকৃতিক চুম্বক এবং
২। কৃত্রিম চুম্বক।
কৃত্রিম চুম্বক আবার দুই প্রকার। যথাঃ
১। স্থায়ী চুম্বক এবং
২। অস্থায়ী চুম্বক।
আকৃতি ও প্রস্তুতপ্রণালি অনুসারে কৃত্রিম চুম্বক আবার বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথাঃ
১। বার ম্যাগনেট
২ । হর্স-সু ম্যাগনেট
৩। রিং ম্যাগনেট
৪ । সিলিন্ড্রিক্যাল ম্যাগনেট
৫ । শলাকা চুম্বক
৬। শেল চুম্বক ইত্যাদি।
চুম্বক বা ম্যাগনেটের প্রয়োজনীয়তাঃ
স্থায়ী অথবা ইলেকট্রো-ম্যাগনেট, বৈদ্যুতিক ঘণ্টা, মোটর জেনারেটর, লাউড স্পিকার, বৈদ্যুতিক পিক-আপ, ম্যাগনেটিক রেকর্ডার, ম্যাগনেটিক মেমোরি, ম্যাগনেটিক অ্যামপ্লিফায়ার, টেলিভিশন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাপায়েন্সে চুম্বকের ভূমিকা অপরিসীম।
ইলেকট্রো-ম্যাগনেটঃ
বিদ্যুৎপ্রবাহের সাহায্যে একটি লৌহচুম্বককে চুম্বকে পরিণত করা হলে, সে রূপান্তরিত ইস্পাত বা লৌহচুম্বককে বলা হয় ইলেকট্রো-ম্যাগনেট। ইলেকট্রো-ম্যাগনেট বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা যায়।
চিত্রঃ ইলেকট্রো-ম্যাগনেট তৈরির প্রক্রিয়া। |
চিত্রটি লক্ষ করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে, কন্ডাক্টরকে ঘিরে চুম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। চুম্বক শক্তির প্রবাহ সে ক্ষেত্রটির মধ্যে কন্ডাক্টরের চারদিকে আবর্তিত হয়, কিন্তু কন্ডাক্টরে কোনো মেরু সৃষ্টি হয়নি। আরও দেখা যায় যে, চুম্বক শক্তির প্রবাহ বিদ্যুৎশক্তি প্রবাহের সঙ্গে একই দিকে রয়েছে।
ইলেকট্রো-ম্যাগনেট কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
ইলেকট্রো-ম্যাগনেট নিম্নোক্ত কাজে ব্যবহার করা হয়। যথাঃ
১। বৈদ্যুতিক ঘণ্টা,
২। বৈদ্যুতিক মোটর,
৩। জেনারেটর,
৪। ম্যাগনেটিক অ্যামপ্লিফায়ার,
৫। টেলিভিশন,
৬। ম্যাগনেটিক রেকর্ডিং যন্ত্র ইত্যাদিতে।
ইলেকট্রো-ম্যাগনেট বা চুম্বক তৈরির প্রক্রিয়াঃ
দুই রকম প্রণালিতে চুম্বক তৈরি করা যায়। যথাঃ
১। ঘর্ষণ দ্বারা এবং
২। বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে।
ঘর্ষণ দ্বারা চুম্বকত্ব প্রদানঃ একটি লোহার রডকে কিংবা ইস্পাতের রডকে একটি শক্তিশালী বার চুম্বকের এক মেরু দ্বারা কিছুক্ষণ ঘর্ষণ করলে উক্ত লোহার রড চুম্বকে পরিণত হবে। তবে ঘর্ষণ করার সময় একই মেরু দ্বারা একই দিকে বারবার ঘর্ষণ করতে হবে।এলোমেলোভাবে কিংবা যেখানে সেখানে ঘর্ষণ করলে কাজ হবে না।
চিত্রঃ স্থায়ী চুম্বক তৈরি। |
কীভাবে ঘর্ষণ করতে হবে, তা বোঝার জন্য উপরে একটি চিত্র দেওয়া হলো। চিত্রে লোহার রডের উপরে বার চুম্বক কীভাবে ঘর্ষণ করতে হবে, তা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎশক্তির দ্বারা চুম্বকত্ব প্রদানঃ একটি সোজা আকারের কিংবা অশ্বক্ষুরাকৃতি লোহা অথবা ইস্পাতের খণ্ডকে রেশম সুতা দ্বারা আবেষ্টিত তামার তার দ্বারা জড়িয়ে সে তারের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালিত করে দিলে উক্ত লোহা বা ইস্পাতের খণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয়। এ রকম কৃত্রিম চুম্বককে বলা হয় ইলেকট্রো-ম্যাগনেট।
চুম্বক বা ম্যাগনেটের ব্যবহারঃ
চুম্বক বা ম্যাগনেটের ব্যবহার নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১ । বৈদ্যুতিক ঘণ্টায়।
২। মোটর জেনারেটরে।
৩ । লাউড স্পিকারে।
৪ । বৈদ্যুতিক পিক-আপে।
৫। ম্যাগনেটিক রেকর্ডারে।
৭। ম্যাগনেটিক অ্যামপ্লিফায়ারে।
৬। ম্যাগনেটিক মেমোরিতে।
৮। টেলিভিশন ইত্যাদিতে।
আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা