মাইক্রোফোন ও স্পিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ট্রান্সডিউসারের সংজ্ঞাঃ
যে সকল ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে এক ধরনের শক্তিকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করা হয়, তাকে ট্রান্সডিউসার বলে। ট্রান্সডিউসারের সাহায্যে সাধারণত ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিকে মেকানিক্যাল অথবা মেকানিক্যাল এনার্জিকে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে রূপান্তর করা হয়। যেমনঃ-মাইক্রোফোন, লাউড স্পিকার, হেডফোন ইত্যাদি।
ট্রান্সডিউসারের শ্রেণিবিভাগঃ
ট্রান্সডিউসারকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১ । মেকানিক্যাল ট্রান্সডিউসার
২। ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সডিউসার
৩ । ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ট্রান্সডিউসার
প্রয়োজনীয় পাওয়ার উৎপাদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সডিউসারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১ । অ্যাকটিভ ট্রান্সডিউসার
২। প্যাসিভ ট্রান্সডিউসার
আউটপুট সিগন্যালের উপর ভিত্তি করে ট্রান্সডিউসারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১ । অ্যানালগ ট্রান্সডিউসার
২ । ডিজিটাল ট্রান্সডিউসার
কার্যভেদের উপর ভিত্তি করে ট্রান্সডিউসারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১ । প্রাইমারি ট্রান্সডিউসার
২। সেকেন্ডারি ট্রান্সডিউসার
ইলেকট্রিক্যাল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তিকরে ট্রান্সডিউসারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১। রেজিস্টিভ ট্রান্সডিউসার
২। ক্যাপাসিটিভ ট্রান্সডিউসার
৩ । ইনডাকটিভ ট্রান্সডিউসার
৪ । ইলেকট্রনিক ট্রান্সডিউসার
ট্রান্সডিউসারের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহারঃ
মাইক্রোফোন এমন একটি যান্ত্রিক কৌশল, যার সাহায্যে শব্দ শক্তিকে অডিও ফ্রিকোয়েন্সির সমতুল্য বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
মাইক্রোফোনের গঠন ও কার্যপ্রণালিঃ
মাইক্রোফোন এমন একটি যান্ত্রিক কৌশল, যার সাহায্যে শব্দ শক্তিকে অডিও ফ্রিকুয়েন্সির সমতুল্য বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করে। নিচে একটি মাইক্রোফোনের চিত্র অঙ্কন করে কার্যপ্রণালি বর্ণনা করা হলোঃ-
চিত্রঃ মাইক্রোফোন। |
মাইক্রোফোন মূলত ডায়াফ্রাম, কয়েল, চুম্বক নিয়ে গঠিত। ডায়াফ্রামটি একটি কাগজের শিটের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর সামনে একটি রক্ষাকারী গ্রিড থাকে। যখন ডায়াফ্রামের সামনে কথা বলা হয়, তখন ডায়াফ্রামটি সামনে এবং পিছনের দিকে অগ্রসর হয়। ডায়াফ্রামটি যখন ভিতরে ঢুকে যায় তখন কার্বন দানাগুলোর উপর একটি চাপের সৃষ্টি হয়। এ চাপের ফলে দানাগুলোর রেজিস্ট্যান্স কমে যায়।
আবার যখন ডায়াফ্রামটি বাইরের দিকে আসে তখন দানাগুলোর উপর চাপ কমে যায়, ফলে রেজিস্ট্যান্স-এর মান বেড়ে যায়। এভাবে কথা বলার সময় দানাগুলোর উপর চাপের তারতম্য ঘটে। ফলে ইহার রেজিস্ট্যান্স-এর মানেরও তারতম্য ঘটে। এই তারতম্যের ফলে লোডে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য কার্বন গুঁড়াগুলোতে কিছু ভোল্টেজ ড্রপ হয়। এই ভোল্টেজ ড্রপই অডিও সিগনাল হিসাবে কাজ করে।
মাইক্রোফোনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
(ক) এটির সাহায্যে উৎপন্ন ইলেকট্রিক্যাল ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি মূল শব্দতরঙ্গের ফ্রিকুয়েন্সির সমান হয় এবং অ্যামপ্লিচিউড সমানুপাতিক হয়।
(খ) যে কোনো দিক হতে আগত শব্দতরঙ্গকে পিক-আপ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
(গ) ইম্পিড্যান্স ম্যাচিং করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
মাইক্রোফোনের ব্যবহারঃ
নিচে মাইক্রোফোনের ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ-
কার্বন মাইক্রোফোনঃ এ প্রকার মাইক্রোফোন রেডিও কমিউনিকেশনের কাজে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
ক্রিস্টাল মাইক্রোফোনঃ এ প্রকার মাইক্রোফোন উচ্চমানের ইনপুট ইম্পিড্যান্স বৈশিষ্ট্য অ্যামপ্লিফায়ারের সাথে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত টেলিফোন বিভাগ, রেকর্ডিং ইকুইপমেন্ট ও ব্রডকাস্টিং স্টেশনে ব্যবহৃত হয়।
ডাইনামিক বা মুভিং কয়েল মাইক্রোফোনঃ সাধারণত ওয়াকিটকিতে ব্যবহৃত হয়।
রিবন বা ভেলোসিটি মাইক্রোফোনঃ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দিকের শব্দ বর্জন করে কেবল একটি দিকের শব্দকে পিক-আপ করতে এ মাইক্রোফোন ব্যবহৃত হয়।
ট্রানজিস্টর মাইক্রোফোনঃ শৌখিন অপারেটর, পুলিশ, ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার, মেরিন এবং মোবাইল রেডিওতে ব্যবহৃত হয়।
কন্ডেন্সার মাইক্রোফোনঃ প্রায় সব ধরনের ক্যাসেট টেপরেকর্ডারে এ মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়।
স্পিকারঃ
স্পিকার এমন একটি ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক মেকানিক্যাল কৌশল বিশেষ, যার সাহায্যে অডিও সিগন্যাল ফ্রিকুয়েন্সির যান্ত্রিক আলোড়ন দ্বারা শব্দ শক্তি হিসাবে শব্দতরঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়। স্পিকার সাধারণত রেডিও রিসিভার বা সাউন্ড সিস্টেম অ্যামপ্লিফায়ারের সর্বশেষ স্টেজের সাথে যুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের আউটপুটকে সমতুল্য শব্দ শক্তিতে পরিণত করা হয়।
স্পিকারের গঠন ও কার্যপ্রণালিঃ
স্পিকার বিভিন্ন ধরনের হয়। এটি স্থায়ী চুম্বক, পেপারফোন, ভয়েস কয়েল, স্পাইডার ও ধাতব ফ্রেম অংশ নিয়ে গঠিত। নিচে একটি স্পিকারের চিত্র অঙ্কন করে গঠনপ্রণালি বর্ণনা করা হলোঃ-
চিত্রঃ লাউড স্পিকার। |
এখানে ফ্রেমের মাঝখানে একটি ইয়ক কয়েল বসানো থাকে। এই ইয়ক কয়েলে স্থায়ী চুম্বক বসানো হয়। ইয়ক কয়েলের মধ্যে চুম্বকটা এমনভাবে বসানো থাকে যে, পেপার কোনের সাথে ভয়েস কয়েল উঠানামা করলে ইয়ক কয়েলের সাথে স্থায়ী চুম্বকের কোনো রকম ঘষা না লাগে। স্পিকার এমন একটি যান্ত্রিক কৌশল, যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক আলোড়ন দ্বারা শব্দ শক্তিতে রূপান্তর করে।
স্পিকারের ভয়েস কয়েলের মাধ্যমে অডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োগ করা হয়। এই ভয়েস কয়েলটি স্থায়ী চুম্বকের ভেতরে বসানো থাকে ফলে বাইরে থেকে কয়েলের ভিতর একটি পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই চুম্বক ক্ষেত্রের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ কার্যকলাপে স্পাইডার ও পেপার কোনসহ ভয়েস কয়েলের এয়ার গ্যাপে অডিও ফ্রিকোয়েন্সি অনুপাতে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পন অনুযায়ী মুল শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
স্পিকারের ব্যবহারঃ
স্পিকার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যথাঃ
(ক) বিবর্ধিত ইলেকট্রিক্যাল শক্তিকে মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।
(খ) রেডিও, টেলিভিশনে শব্দ তরঙ্গ উৎপাদনের জন্য।
(গ) পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, টেপ রেকর্ডার, কম্পিউটার অ্যামপ্লিফায়ারে মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দ উৎপাদন।
(ঘ) টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়।