ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ

ধাতব পদার্থের তৈরি বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রাংশ নিয়ে ইঞ্জিন গঠিত। ইঞ্জিনের প্রতিটি যন্ত্রাংশের আলাদা আলাদা নাম ও নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। তেমনিভাবে ডিজেল ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পৃথক নাম ও সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

একটি ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশগুলোর পরিচিতি -

সিলিন্ডার (Cylinder):

সিলিন্ডার ইঞ্জিনের শক্তির কেন্দ্রস্থল। এর ভেতরের যে অংশে দহন ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে প্রজ্জ্বলন প্রকোষ্ঠ বলে। এর ভেতরই পিস্টনের উঠা নামার ফলে জ্বালানির দহন ক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়।

সিলিন্ডার সাধারণত ঢালাই লোহার হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তি ও রেজিস্ট্যান্সের জন্য ঢালাই লোহার সাথে কম ওজনের ক্রোমিয়াম, নিকেল এবং মলিবডেনাম যোগ করা হয়।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ সিলিন্ডার ব্লক।

পিস্টন (Piston):

পিস্টনের ওঠা নামার ফলে জ্বালানি দহনে শক্তি উৎপন হয় এবং ক্র্যাংক শ্যাফটে স্থানান্তর হয়। পিস্টনের এক প্রান্ত আবদ্ধ এবং অপর প্রান্ত কানেকটিং রড়ের সাথে যুক্ত থাকে যা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে। পিস্টন সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম, ঢালাই লোহা ও ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। পিস্টনের ওপরের অংশকে ক্রাউন (Crown) এবং নিচের অংশকে স্কিরট বলে।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ একটি পিস্টন।

পিস্টন রিং (Piston ring):

পিস্টনের ব্যাস সিলিন্ডারের ব্যাসের চেয়ে কম থাকে। যাতে সিলিন্ডারের মধ্যে পিস্টন সহজে ওঠা-নামা করতে পারে। পিস্টন ও সিলিন্ডার ব্যাসের এ পার্থক্যকে কি য়ারেন্স বলে। পিস্টন ও সিলিন্ডারের মধ্যে সঠিক সংযোগ স্থাপন, গ্যাসীয় চাপ সংরক্ষণ, পিস্টনের ও সিলিন্ডারে দেয়াল হতে তাপ স্থানান্তর এবং সিলিন্ডারের দেয়াল (Cylinder Wall) তৈলাক্তকরণ করতে পিস্টনের গায়ে খাঁচের ভেতর রিং বসানো থাকে।

 সাধারণত দু'ধরনের পিস্টন রিং ব্যবহার করা হয়। ওপরের (Nearest the Piston Head) রিং দু’টো সর্বদা সিলিন্ডারের দেয়ালে অবিরত চাপ প্রয়োগ করে। তাই এগুলোকে সংকোচন রিং (Compression Control Ring) বলে। নিচের রিংগুলোকে অয়েল রিং (Oil control Ring) বলে। এটা সিলিন্ডারের দেয়ালকে তৈলাক্ত রাখে এবং অতিরিক্ত অয়েলকে ক্র্যাংককেইসে নিয়ে আসে। পিস্টনে ৩ হতে ৭টি রিং থাকতে পারে।

প্রতি ২০০ মিঃমিঃ পিস্টন ব্যাসের জন্য পিস্টন রিং এর ফাঁকের পরিমান ১ মিঃমিঃ। পিস্টন রিং সাধারণত ঢালাই লোহা ও ইস্পাত এলয় দিয়ে তৈরি করা হয়। অয়েল রিং ক্ষয় হলে মবিলের খরচ বেড়ে যায় এবং সাদা ধোঁয়া বের হয়।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ পিস্টন রিং।

পিস্টন পিন (Piston Pin):

পিস্টন পিন কানেকটিং রড এবং পিস্টনকে সংযোগ করে। 

এটা তিনভাবে কাজ করে। যেমনঃ-

১। পিন পিস্টনে স্থায়ী এবং কানেকটিং রডে মুক্ত থেকে।

২ । পিন কানেকটিং রডে স্থায়ী এবং পিস্টনে মুক্ত থেকে।

৩। পিন পিস্টনে এবং কানেকটিং রডে দু'টোতেই মুক্ত থেকে।

আধুনিক ইঞ্জিনে শেষেরটি অধিকতর ব্যবহার করা হয়। একে ফুটিং ডিজাইন (Floating design) বলে।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ পিস্টন পিন।

কানেকটিং রড (Connecting Rod):

এটা পিস্টনের ওপর প্রদত্ত গ্যাসের চাপ পিস্টন পিনের মাধ্যমে ক্র্যাংক শ্যাফটে সঞ্চারিত করে। এর ওপরের ছোট অংশ (Small end bearing) পিস্টনের সাথে এবং নিচের বড় অংশ (Big end bearing) ক্র্যাংক শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত থাকে। কানেকটিং রডের মাধ্যমে পিস্টনের ওঠা-নামার গতি ক্র্যাংকশ্যাফটের ঘূর্ণন গতিতে রূপান্তরিত হয়।

৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনে কানেকটিং রড পর পর (Alternately) সংকোচন ও টানের বিষয় কিন্তু ২-স্ট্রোক ইঞ্জিনে এটা মাত্র সংকোচনের বিষয়। কানেকটিং রড ডিম্বাকার, গোলাকার, বর্গাকার, আয়তাকার বা বিম টাইপ হতে পারে। এটা ড্রপ ফরজড স্টিলের (Drop forrged steel) তৈরি।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ কানেকটিং রড (বিযুক্ত অবস্থায়)।

ক্র্যাংকশ্যাফট (Crank shaft):

ক্র্যাংকশ্যাফট কানেকটিং রডের মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তি ঘ ণর্নের মাধ্যমে ফ্লাইহুইলে বেল্ট পুলিতে (Belt-Pully) এবং শক্তি সঞ্চারনশীল দন্ডে (P.T.O.) গতি প্রদান করে। ক্র্যাংকের যে অংশে মেইন বিয়ারিং সংযুক্ত থাকে একে ক্র্যাংক জার্নাল এবং যে অংশ বিগ এন্ড বিয়ারিং সংযুক্ত থাকে, তাকে ক্র্যাংক পিন বলে । ক্র্যাংক জার্নাল ও ক্র্যাংক পিনের মাঝের লম্বা লৌহ দন্ডকে ক্র্যাংক ওয়েব (ঈৎধহশবিন) বা ব্যালেন্স ওয়েট (Balance Weight) বলে।

ক্র্যাংকের এক প্রান্তে টাইমিং পিনিয়ন এবং অপর প্রান্তে ফ্লাইহুইল সংযুক্ত থাকে। এটা ফোর্জড ও কাস্ট ইস্পাত দিয়ে তৈরি। একে ইঞ্জিনের মেরুদন্ড বলা হয়। ক্র্যাংক শ্যাফটে ২-৫টি মেইন বিয়ারিং থাকে।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ ক্র্যাংকশ্যাফট।

ফ্লাইহুইল (Fly wheel):

ফ্লাইহুইলের শব্দগত অর্থ হলো উড়ন্ত চাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা ঢালাই লোহার তৈরি একটি ভারী চাকা বিশেষ যা ক্র্যাংকশ্যাফটের পেছনের প্রান্তে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থেকে ক্র্যাংকশ্যাফটের সাথে ঘুরে। ইঞ্জিনের শুধুমাত্র শক্তি ধাপে শক্তি উৎপন্ন হয় এবং বাকী তিনটি নিষ্ক্রিয় ধাপকে চালাতে ফ্লাইহুইলে শক্তিসঞ্চয় করে রাখে এবং সময়মত এটা প্রয়োগ করে। ইঞ্জিনের আকৃতি- প্রকৃতি এবং সিলিন্ডারের সংখ্যার উপর ফ্লাইহুইলের আকৃতি নির্ভর করে।

ফ্লাইহইল ইঞ্জিনের বোঝা বহন এবং গতি বাড়াতে সাহায্য করে। কম সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের ফ্লাইহুইল আকারে বড় এবং বেশি সংখ্যক সিলিন্ডার ইঞ্জিনের ফ্লাইহুইলের আকার ছোট হয়। কারণ ঐ ইঞ্জিনে কম ডিগ্রীর তফাতে শক্তি উৎপন্ন হয়।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ ফ্লাইহুইল।

ফ্লাই হুইল এর কাজগুলো হচ্ছে -

১। ইঞ্জিনের নিষ্ক্রিয় স্ট্রোকগুলোকে চালাতে সাহায্য করা।

২। অতিরিক্ত কম্পন রোধ করে ইঞ্জিনের গতির সামঞ্জস্য রক্ষা করা।

৩। এর গতি জড়তায় (Inertia of motion) ইঞ্জিনকে চালু ও বন্ধ করতে সাহায্য করা।

৪ । ক্লাচ পরিচালনায় সাহায্য করা।

ক্যামশ্যাফট (Cam Shaft):

৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্লকে ক্যামশ্যাফট ক্র্যাংকশ্যাফটের সাথে গিয়ার বা চেইন স্প্রোকেট এর সংযোগে সমান্তরাল ভাবে যুক্ত থাকে। এটা ঘূর্ণন গতিকে রৈখিক গতিতে রূপান্তরিত করে। এর গায়ে কতকগুলো স্বতন্ত ক্যাম লোব থাকে যা ইনলেট ও এগজস্ট ভাল্‌ল্ভ, ফুয়েল পাম্প,লুব্রিকেটিং অয়েল পাম্প এবং ইগনিশন সিস্টেম পরিচালনা করে। ক্যামশ্যাফটের ডিম্বাকৃতি অংশকে ক্যাম বলে। প্রত্যেক ভালভের জন্য একটি অর্থাৎ প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য ২টি করে ক্যাম থাকে।

৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ক্যামশ্যাফট ক্র্যাংকশ্যাফটের অর্ধ গতিতে ঘুরে অর্থাৎ একটি চক্র সমাপ্ত করতে ক্র্যাংকশ্যাফট ঘুরবে দু’বার কিন্তু ক্যাম শ্যাফট ঘুরবে একবার। ক্যামের সরু অংশকে টো (Toe) এবং বিস্তৃত নিচু অংশকে হেল (Heal) বলে। ক্যামশ্যাফটের ঘূর্ণনের ফলে ভাল্ভ পুশ রডের ধাক্কায় উঠা-নামা করে। ক্যামশ্যাফট পেটা ও ঢালাই ইস্পাত এবং ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ ক্যামশ্যাফ্‌ট।

ক্যামশ্যাফট (Cam Shaft) বিভিন্ন অংশের নামঃ

১. পুশ রড

২. টেপেট

৩. রকার আর্ম

৪. কাটার

৫. স্প্রিং রিটেনার

৬. ভাল্ভ স্প্রিং

৭. এগজস্ট ভাল্ভ

৮. ইনটেক ভাল্ভ

৯. ক্যাম

১০. ক্যাম শ্যাফ্ট

ভাল্ভ সমূহ (Valves):

৪-স্টোক ইঞ্জিনের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য দুটো করে ভাল্ভ থাকে। এর একটিকে প্রবেশ ভাল্ভ বলে যা বায়ুকে সিলিন্ডারে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। আর অপরটিকে নির্গমন ভাল্ভ বলে, যার সাহায্যে সিলিন্ডারের ভেতরের দগ্ধ গ্যাস বের হয়ে যায়। ট্রাক্টর ও অটোমোবাইল ইঞ্জিনে ট্যাপেট জাতীয় ভাল্ভ ব্যবহৃত হয়। সাধারণত প্রবেশ ভাল্ভ নির্গমন ভাল্‌ল্ভের চেয়ে আকারে বড় হয়।

ভাল্ভ সাধারণত ইঞ্জিনের মাথায় আবার কখনো ইঞ্জিন ব্লকে সিলিন্ডারের পাশে লাগানো থাকে। ভাল্ভ পরিচালনার জন্য রকার আর্ম, রকার শ্যাফট, পুশরু, ট্যাপেট ও ক্যামশ্যাফটের প্রয়োজন হয়। ক্র্যাংকশ্যাফটের আইডিয়াল পিনিয়ন দিয়ে ক্যামশ্যাফটকে ঘুরিয়ে চক্রানুসারে নির্দিষ্ট সময়ে ভাল্ভ খুলে এবং বন্ধ করে ইঞ্জিনের কর্ম পদ্ধতি সম্পন্ন করে।

একে ভাল্ভ টাইমিং বলে। ক্র্যাংক শ্যাফট ও ক্যামশ্যাফটের মধ্যে আবর্তন সমতার জন্য পিনিয়নের সাথে পিনিয়নের সংযোগ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

টাইমিং গিয়ার (Timing gear):

কাম-শ্যাফটের গিয়ারে ক্র্যাংক শ্যাফটের গিয়ারের চেয়ে দুই গুণ দাঁত থাকে। সুতরাং ক্র্যাংক শ্যাফটের এক ঘূর্ণনের ফলে ক্যাম-শ্যাফট অর্ধ ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনে ক্র্যাংক শ্যাফটের দুই ঘূর্ণনের ফলে পিস্টন চার বার ওঠা-নামা করে এবং ক্র্যাংকশ্যাফট একবার আবর্তন সম্পন্ন করে।

টাইমিং গিয়ার কাম-শ্যাফট ও ক্র্যাংক শ্যাফটের সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্যাম-শ্যাফট প্রবেশ ও নির্গমন ভাল্ভ খুলতে ও বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটা ঢালাই লোহা ও পেটা ইস্পাতের তৈরি।

বিয়ারিং সমূহ (Bearings):

ইঞ্জিনের সবগুলো ঘূর্ণায়মান শ্যাফট এর ঘর্ষণস্থলে বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়। এ বিয়ারিংগুলো নরম ধাতুর তৈরি বলে বিয়ারিং এর শ্যাফট ঘূর্ণনকালে বিয়ারিং নিজে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে শ্যাফটকে রক্ষা করে। তামা, সীসা, ব্রোঞ্চ, হোয়াইট মেটাল প্রভৃতি দিয়ে বিয়ারিং তৈরি করা হয়।

বিয়ারিং ব্যবহারের উদ্দেশ্যঃ

১। ঘূর্ণনশীল অংশগুলোকে ধারণ করে যথাস্থানে রাখা।

২। ঘূর্ণনশীল অংশগুলোর উপর প্রযুক্ত চাপ ও ধাক্কা বহন করা।

৩। ঘর্ষণজনিত বাধা ও তাপের মাত্রা কমানো।

ডিজেল ইঞ্জিনে সাধারণত নিম্নবর্ণিত বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ-

(১) মেইন বিয়ারিং- মেইন বিয়ারিংকে কখন কখনও ক্র্যাংক শ্যাফট বিয়ারিং, জার্নার্ল বিয়ারিং অথবা প্যারেন্ট বিয়ারিং বলা হয়। ক্র্যাংক শ্যাফটের ক্র্যাংকে জার্নালে এ বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়। মেইন বিয়ারিং দুটো অংশে বিভক্ত থাকে এবং বিয়ারিং কাপের মাধ্যমে এগুলোকে ক্র্যাংকে জার্নালের উপর স্থাপন করা হয়।

(২) কানেকটিং রড বিয়ারিং - একে বিগ এন্ড বিয়ারিং ও বলা হয়। কানেকটিং রডের বৃহৎ প্রান্তে এ বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়। মেইন বিয়ারিং এর মত এ বিয়ারিং দুটো অংশে বিভক্ত। ক্র্যাংক পিনের উপর কানেকটিং রড বিয়ারিং স্থাপন করে কানেকটিং রডের বৃহৎ প্রান্তকে ক্র্যাংক পিনের সাথে যুক্ত করা হয়।

(৩) স্মল এন্ড বিয়ারিং - স্মল এন্ড বিয়ারিং কানেকটিং রডের ক্ষুদ্রপ্রান্ত বা স্মল এন্ডে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত কানেকটিং রডের ক্ষুদ্রপ্রান্তে বুশ ব্যবহার করা হয়। পিস্টন পিনকে বুশের ভেতর ঢুকিয়ে একে কানেকটিং রডের ক্ষুদ্রপ্রান্তে স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

(৪) ক্যাম শ্যাফ্ট - বিয়ারিং ক্যাম-শ্যাফটি বিয়ারিং এর মাধ্যমে ক্যাম শ্যাফটকে সিলিন্ডার ব্লকের মধ্যে স্থাপন করা হয়। সাধারণত ক্যাম শ্যাফটে রোলার বা বল বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।

ইনজেক্টর (Injector):

সিলিন্ডারের ভেতর অতি উচ্চ চাপে সংকুচিত ও খুব উত্তপ্ত বায়ুতে ইনজেক্টর জ্বালানি সরবরাহ করে, যা সংগে সংগে প্রজ্জ্বলিত ও বিস্ফোরিত হয়। এ বিস্ফোরণ পিস্টনকে প্রবল শক্তিতে ধাক্কা দেয়।

ডিজেল ইঞ্জিন ও ডিজেল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
চিত্রঃ ইনজেক্টরের

একটি ইনজেক্টরের মূল অংশগুলো হচ্ছে -

১. নজল (Nozzle)

২. ক্যাপ নাট (Cap nut)

৩. স্পন্ডল (Spindle)

৪. কমপ্রেসন স্প্রিং (Compression spring)

৫. এডজাস্টিং স্ক্রু এন্ড নাট বা এডজাস্টিং সিম (Adjusting screw and nut or adjusting

shims)

৬. লিক অফ পাইপ (Leak off pipe)

৭. ফুয়েল ইনলেট (Fuel inlet)

ইনজেক্টরের বিভিন্ন অংশের নামঃ

১. ফুয়েল ইনলেট কানেকশন

২. কম্প্রেশন স্ক্রু

৩. ভাল্ভ স্প্রিং

৪. ভাল্ভ স্পিল

৫. নজেল ভাল্‌ভ।

ইনজেক্টরের কাজ নিম্নরূপঃ

(১) নির্দিষ্ট মুহুতে অর্থাৎ সংকোচন স্ট্রোকের ঠিক শেষ পর্যায়ে কম্বাশন চেম্বারে জ্বালানি ইনজেক্ট বা নিক্ষেপ করা।

(২) জ্বালানিকে এমনভাবে নিক্ষেপ করা যেন এর কণাগুলো ভেংগে বাষ্পীয় আকার ধারণ করে এবং জ্বালানি সহজে দাহ্য হয়।

(৩) বাষ্পীয় আকারের জ্বালানিকে কম্বাশন চেম্বারের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া এবং বায়ুর সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দেয়া।

(৪) ইনজেকশন শেষ হবার সাথে সাথে জ্বালানি প্রবাহকে সম্পূর্ণ বন্ধ করা।

জ্বালানি পাম্প (Fuel pump):

ডিজেল ইঞ্জিনে অতি উচ্চ চাপে ইনজেক্টরে জ্বালানি সরবরাহ করতে জ্বালানি পাম্প ব্যবহৃত হয়। এ পাম্প ক্যামের সাহায্যে পরিচালিত হয়।

উচ্চ চাপের জ্বালানি পাম্পের বিভিন্ন অংশের নামঃ

১. সরবরাহকারী ভাল্‌ভ।

২. সরবরাহকারী চেম্বার।

৩. জ্বালানি চেম্বার।

৪. নিয়ন্ত্রক গর্ত।

৫. ফিড হোল।

৬. প্লঞ্জার।

৭. নিয়ন্ত্রক র‍্যাক।

৮. নিয়ন্ত্রক পিনিয়ন।

৯. নিয়ন্ত্রক পীভ।

জ্বালানি পাম্পের কাজ হচ্ছেঃ

● অতি উচ্চ চাপে ইনজেক্টরে জ্বালানি সরবরাহ করা।

● ইঞ্জিন সাইকেলের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইনজেক্টর জ্বালানি সরবরাহ ও চাপ প্রয়োগ করে। কম্প্রেশন স্ট্রোকের ঠিক শেষ পর্যায়ে উত্তপ্ত ও সংকুচিত বায়ুতে জ্বালানি নিক্ষেপ করতে হয়। ঠিক এ মুহুর্তেই সরবরাহ লাইনে উচ্চচাপে জ্বালানি সরবরাহ করা।

● ইঞ্জিনের উপর প্রযুক্ত বোঝা অনুয়ায়ী গভর্ণরের সাহায্যে ইনজকটরে সরবরাহকৃত জ্বালানির পরিমাণকে কমবেশি করে ইঞ্জিনের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা।

আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিন শীতলীকরণ বা ইঞ্জিন কুলিং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ডিজেল ইঞ্জিনের কার্যপদ্ধতিঃ

অতি উচ্চ চাপে ইনজেকটর জ্বালানি সরবরাহ করে। ইনজেকঢর যখন কম্বাশন চেম্বারে জ্বালানি নিক্ষেপ করে তখন কম্বাশন চেম্বারে বায়ু অতি উচ্চচাপে (প্রায় ৪০ হতে ৪৫ কেজি/বর্গ সেঃমিঃ) সংকোচিত থাকে। এ অবস্থায় ইনজেকটারে সরবরাহকৃত জ্বালানির উপর ৪০ হতে ৪৫ কেজি/বর্গ সেঃ মিঃ অপেক্ষা কম হলে ইনজেক্টর কম্বাশন চেম্বারে জ্বালানি নিক্ষেপ করতে পারে না। তাই পাম্পকে ৪০ হতে ৪৫ কেজি/বর্গ সেঃমিঃ এর চেয়ে বেশি চাপে ইনজেকটরকে জ্বালানি সরবরাহ করতে হয়। এ পাম্বের প্রধান অংশগুলো হলো প্লাঞ্জার ও ব্যারেল।

প্লাঞ্জারের কেন্দ্র বরাবর নিচের দিকে স্বল্প দৈর্ঘ্য একটি ছিদ্র থাকে। এর বাইরের চারদিকে খাঁজ কাটা থাকে। এ খাঁজ ও কেন্দ্রের ছিদ্র আর একটি ছিদ্রের সাহায্যে যুক্ত থাকে। ব্যারেলের গায়েও দুটো দ্বার আছে। বাম হাতের দিকের দ্বারটি ডান হাতের দ্বারটির সামান্য ওপরে স্থাপন করা থাকে। বাম হাতের দ্বারটিই প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী পথ এবং ডান হাতের দ্বারটি হলো স্পিল ওয়ে।

শ্যাফটের ঘূর্ণনের ফলে জ্বালানি সরবরাহের সময় প্লাঞ্জারটি ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ব্যারেলের ভেতর প্লাঞ্জারের খাজের অবস্থান নির্ণয় করে কি পরিমাণ জ্বালানি প্রতি ধাপে সরবরাহ হবে। প্লাঞ্জারটি নিচ থেকে ওপরে উঠবার পূর্বে প্রবেশ দ্বার ও বাইপাস পথ খোলা থাকে এবং জ্বালানি এর ওপরের জায়গা পূর্ণ করে। পূাঞ্জার ওপরে ওঠবার সময় দুটো দ্বারই বন্ধ হতে থাকে এবং ব্যারেলের ভেতরের চাপ বাড়তে থাকে।

এ চাপের ফলে ডেলিভারী ভাল্ভ খুলে যায় এবং জ্বালানি নজলে প্রবেশ করে। অতঃপর প্লাঞ্জার নিচের দিকে নামতে থাকে এবং এর খাঁজ বাইপাসের এবং কেন্দ্রের দিকের সংগে সংযুক্ত হয়ে যায়। জ্বালানি বাইপাস দিয়ে বের হবার ফলে ভেতরের চাপ কমে যায় ও ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিনে কি পরিমাণ জ্বালানি সরবরাহ হবে তা নির্ভর করে কত সময় পর প্লাঞ্জারের কৌণিক খাঁজ বাইপাসের সাথে যুক্ত থাকে।

একটি নিয়ন্ত্রক রডের সাহয্যে প্লাঞ্জারের নিচের ব্যাক ও পিনিয়ন ঘুরায়ে জ্বালানি সরবরাহের সময় ও পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। নিয়ন্ত্রক রডের সবচেয়ে বামের এবং সবচেয়ে ডানের অবস্থান পাম্পের বেশি এবং কম জ্বালানি সরবরাহের নির্দেশক।

আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিনের মূল কর্মপদ্ধতি বা ইঞ্জিনের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সারমর্মঃ একটি ডিজেল ইঞ্জিন সিলিন্ডার, পিস্টন, পিস্টন রিং, পিস্টন পিন, কানেকটিং রড, ক্র্যাংকশ্যাফ্‌ট্ট, ক্যামশ্যাফ্ট ফ্লাইহুইল, বিভিন্ন ধরনের ভাল্, টাইমিং গিয়ার, বিয়ারিং, ইনজেক্টর, জ্বালানি পাম্প ইত্যাদি বিভিন্ন অংশে গঠিত। এগুলোর প্রতিটির আবার পৃথক পৃথক কাজ ও গুরুত্ব রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ পেট্রোল ইঞ্জিনের প্রধান কার্যকরী অংশসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলো

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url