ট্রান্সফরমার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
ট্রান্সফরমারঃ
যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক্তিকে এক সার্কিট হতে অন্য সার্কিটে স্থানান্তর করা হয়, তাকেট্রান্সফরমার বলে।
ট্রান্সফরমারের কার্যপ্রণালিঃ
ট্রান্সফরমার কীভাবে এক সার্কিট হতে অন্য সার্কিটে বৈদ্যুতিক শক্তি স্থানান্তর করে, তা নিচের চিত্রের মাধ্যমেদেখানো হলোঃ
চিত্রঃ ট্রান্সফরমার। |
এতে দুটি ওয়াইন্ডিং ব্যবহৃত হয়েছে এবং ওয়াইন্ডিং দুটি একটি অভিন্ন ইস্পাত নির্মিত কোরে বসানো আছে।
সুতরাং ওয়াইন্ডিং দুইটির মধ্যে কোনোরূপ ইলেকট্রিক্যাল সংযোগ নাই, কিন্তু চুম্বকীয় সংযোগ আছে।
এ সার্কিটেঃ-
Vp = প্রাইমারি সরবরাহ ভোল্টেজ
Vs = সেকেন্ডারি ভোল্টেজ
Ep = প্রাইমারি আবিষ্ট ভোল্টেজ
Es = সেকেন্ডারিতে আবিষ্ট ভোল্টেজ
Ip = প্রাইমারি কারেন্ট
Is = সেকেন্ডারি কারেন্ট
φ = মিউচুয়াল ফ্লাক্স
যে ওয়াইন্ডিংয়ে যে ভোল্টেজ সরবরাহ দেওয়া হয়, তাকে প্রাইমারি এবং যে ওয়াইন্ডিং এর সাথে লোড সংযোগ
করা হয়, তাকে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং বলে। প্রাইমারিতে এসি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হলে সেখানে অল্পমানের
কারেন্ট প্রবাহিত হয়, একে ট্রান্সফরমারের নো-লোড কারেন্ট বলে।
এ কারেন্টের জন্য প্রাইমারি কণ্ডলীতে অল্টারনেটিং ফ্লাক্স উৎপন্ন হয় এবং তা সেকেন্ডারিতে ফ্লাক্স উৎপন্ন করে। এজন্য একে মিউচুয়াল ফ্লাক্স বলে।
তাকে φm দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ফ্যারাডের সূত্রানুযায়ী তা উভয় সার্কিটে এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
আরও পড়ুনঃ পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ভোল্টেজ, কারেন্ট এবং টার্নস রেশিও নির্ণয় এবং এদের মধ্যে সম্পর্কঃ
ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ভোল্টেজ (Ep) ও সেকেন্ডারি ভোল্টেজ (Es) এর অনুপাতকে ভোল্টেজ রেশিও (a)
বলে। অর্থাৎ, a = Ep / Es ----------- (i)
আবার কারেন্ট রেশিও ভোল্টেজ রেশিও-এর উল্টানুপাতিক। সুতরাং ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি কারেন্ট (Ip) এবং সেকেন্ডারি কারেন্ট (Is) এর অনুপাতকে কারেন্ট রেশিও (a) বলে। অর্থাৎ, a = Is / Ip ------- (ii)
আবার, ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি টার্ন (Np) এবং সেকেন্ডারি টার্ন (Ns) এর অনুপাতকে টার্ন রেশিও (a)
বলে।
অর্থাৎ, a = Np / Ns ------------ (iii)
(i) নং, (ii) নং এবং (iii) নং সমীকরণ বিশ্লেষণ করে পাই,
a = Ep / Es = Is / Ip = Np / Ns ---------- (iv)
(iv) নং সমীকরণই ট্রান্সফরমারের ভোল্টেজ, কারেন্ট এবং টার্ন রেশিওর মধ্যে নির্ণেয় সম্পর্ক।
আরও পড়ুনঃ কন্ডাক্টর, সেমিকন্ডাক্টর ও ইনসুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ট্রান্সফরমারের প্রকারভেদঃ
ট্রান্সফরমার সাধারণত বিভিন্ন আকার এবং সাইজের তৈরি হয়ে থাকে। এদের প্রকারভেদ নিচে প্রদত্ত হলোঃ-১। কোরের গঠন প্রকৃতি অনুযায়ীঃ
(i) কোর টাইপ ট্রান্সফরমার
(ii) শেল টাইপ ট্রান্সফরমার
(iii) স্পাইরাল কোর টাইপ ট্রান্সফরমার।
২। উদ্দেশ্যভিত্তিকঃ
(i) পাওয়ার ট্রান্সফরমার
(ii) ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার
(iii) অটো-ট্রান্সফরমার
(iv) ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার।
৩। স্থাপনভিত্তিকঃ
(i) ইনডোর টাইপ ট্রান্সফরমার।
(ii) আউটডোর টাইপ ট্রান্সফরমার।
(iii) পোল মাউনটিং টাইপ ট্রান্সফরমার।
৪। ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ীঃ
(i) অডিও ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সফরমার।
(ii) রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সফরমার।
৫। কুলিং পদ্ধতি অনুযায়ীঃ
(i) ন্যাচারাল কুলিং।
(ii) অয়েল ফিল্ড সেলফ্-কুল্ড।
(iii) অয়েল ফিল্ড অয়েল সারকুলেশন।
(iv) অয়েল ফিল্ড ওয়াটার সারকুলেশন।
(v) এয়ার ব্যাস্ট টাইপ
৬। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ভোল্টেজের সম্পর্ক অনুযায়ী ট্রান্সফরমার তিন প্রকার। যথাঃ
(i) স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার।
(ii) স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার।
(iii) অটোট্রান্সফরমার।
আরও পড়ুনঃ রেকটিফায়ার কি? রেকটিফায়ার কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
ট্রান্সফরমার এর ব্যবহারঃ
ধরুন পাওয়ার স্টেশন থেকে আপনার বাসা অনেক অনেক দূরে। তখন আপনি যদি আপনার প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পেতে চান তাহলে সেখানে একটি স্টেপআপ ট্রান্সফরমার দিয়ে বাড়িয়ে তা দূরবর্তী স্থানে যেখানে আপনার বাসা অবস্থিত, সেখানে প্রেরণ করা হয়।
আবার, আপনার বাসায় এসি (AC) লাইন দিয়ে সরাসরি শখের প্রজেক্ট কিংবা সার্কিট কিংবা জরুরী ব্যবহার্য্য টিভি, ডিভিডি, টর্চ, চার্জ লাইট, কম্পিউটার ইত্যাদি কে কখনই চালাতে পারবেন না।
প্রথমে আপনাকে অবশ্যই মেইন লাইনের ভোল্টেজ কে কমিয়ে উক্ত সাকিট বা যন্ত্রের উপযুক্ত করে নিতে হবে। আর এই কাজটিই করে থাকে ট্রান্সফরমার।
অটো ট্রান্সফরমারঃ
ভোল্টেজ এবং কারেন্ট হ্রাস ও বৃদ্ধি করার কাজে ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা