কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি?
যে সকল যন্ত্রাংশ দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করা হয় এদেরকে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বলে। অর্থাৎ হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটারের ইলেকট্রনিক (Electronic), বৈদ্যুতিক (Electrical), যান্ত্রিক (Mechanical) ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতিকে (Peripherial Devices) বোঝায়। যেমনঃ কীবোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার, মাদারবোর্ড, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি।
কম্পিউটার সফটওয়্যারঃ
কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই। তাই কোনো কাজ সম্পাদনের পূর্বে এটি প্রয়োজনীয় নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে। কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় লিখিত এ ধরনের নির্দেশকে প্রোগ্রাম বলে। অর্থাৎ প্রোগ্রাম হলো কাজ ম্পন্ন করার পর্যায়ক্রমিক নির্দেশের তালিকা। আর সফটওয়্যার হলো কতকগুলো নির্দেশকৃত প্রোগ্রামের সমষ্টি যা কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য হার্ডওয়্যারকে সক্রিয় বা কর্মক্ষম করে।
এটি কম্পিউটার ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে সংযোগ ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে। কম্পিউটার থেকে ফলপ্রসূ কোনো আউটপুট পেতে হলে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উভয়েরই পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর পার্থক্যঃ
নং | কম্পিউটার হার্ডওয়্যার | কম্পিউটার সফটওয়্যার |
---|---|---|
১ | যে সকল যন্ত্রাংশ দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করা হয় এদেরকে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বলে। | কম্পিউটারের প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টিকে সফটওয়্যার বলে। |
২ | এটা কম্পিউটারের ফিজিক্যাল কম্পোনেন্ট। | এটা কম্পিউটারের লজিক্যাল কম্পোনেন্ট। |
৩ | হার্ডওয়্যার তৈরির সময় সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। | সফটওয়্যার তৈরির সময় হার্ডওয়্যার সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও চলে। |
৪ | হার্ডওয়্যার নষ্ট হতে পারে। | সফওয়্যার মুছা যায় বা Delete করা যায়। |
৫ | উদাহরণঃ কীবোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার, মাদারবোর্ড, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি। | উদাহরণঃ উইন্ডোজ, এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, ফটোশপ ইত্যাদি। |
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার প্রকারভেদঃ
কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারসমূহকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। ইনপুট ডিভাইস
২। প্রসেসিং ডিভাইস (CPU)
৩। আউটপুট ডিভাইস।
আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইসসমূহঃ
কীবোর্ড, মাউস, মাইক্রোফোন, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, কার্ড রিডার, জয়স্টিক ইত্যাদি।
কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইসসমূহঃ
মনিটর, প্রিন্টার, প্লটার, স্পিকার, ডিস্ক ড্রাইভ, শব্দ সংশ্লেষক, মাইক্রোফিল্ম, মাইক্রোচিপ ইত্যাদি।
সিস্টেম ইউনিটের মধ্যে অবস্থিত ডিভাইসসমূহঃ
মাদারবোর্ড, মাইক্রোপ্রসেসর, র্যাম ও রম, হার্ডডিস্ক, এজিপি কার্ড, ল্যান কার্ড, ভিডিও ক্যাপচার কার্ড,
টিভি কার্ড, পাওয়ার সাপাই ইউনিট, সিডি/ডিভিডি রম ড্রাইভ ইত্যাদি।
ডিজিটাল কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের কাজঃ
CPU হচ্ছে Central Processing Unit এর সংক্ষিপ্ত নাম। মানুষের ব্রেইন যেমন মানুষকে পরিচালিত করে তেমনি CPU কম্পিউটারকে পরিচালিত করে। CPU বা প্রসেসরের প্রকৃতি ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে কম্পিউটারের প্রকৃতি ও ক্ষমতা। কম্পিউটারের অভ্যস্তরীণ সমস্ত কাজ এই প্রসেসর দ্বারাই সমাধান করা যায়। CPU মেমোরি থেকে নির্দেশ পড়ে এবং নির্দেশ অনুসারে কাজ সম্পন্ন করে।
এটি ডাটা গ্রহণ বা প্রদানের জন্য ইনপুট/আউটপুট যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ রাখে । CPU এ নিয়ন্ত্রণ অংশ থাকে যা বিভিন্ন কাজের সমন্বয় সাধন করে, গাণিতিক যুক্তি অংশ থাকে যা গাণিতিক যুক্তি অপারেশন সম্পাদন করে। এছাড়াও এতে থাকে রেজিস্টার যা ডাটা সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
প্রসেসর বা CPU এর সংগঠনঃ
এর প্রধানত তিনটি অংশ থাকে-
১। নিয়ন্ত্রণ অংশ
২। অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট/গাণিতিক যুক্তি অংশ
৩। রেজিস্টার বা মেমোরি/স্মৃতি
চিত্রঃ কম্পিউটারের সংগঠন। |
নিয়ন্ত্রণ অংশঃ
কম্পিউটারে সম্পাদিত সমস্ত কাজের নিয়ন্ত্রণ সংকেত প্রদান করে এই নিয়ন্ত্রণ অংশ। এই অংশ সিপিইউ, মেমোরি এবং ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে ডাটা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। কন্ট্রোল একক ROM ও RAM এ সঞ্চিত নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে কম্পিউটারের অন্য সব অংশকে আদেশ দেয়। তাছাড়া বাইনারি কোডের ইন্সট্রাকশনকে স্মৃতি থেকে গ্রহণ করে এবং এগুলোকে ডিকোড করে।
অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট/গাণিতিক যুক্তি অংশঃ
এটা CPU এর সেই অংশ যেখানে বিভিন্ন ধরনের অপারেশন যেমনঃ- যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, OR, AND, NOR, XOR ইত্যাদি ডাটার উপর সম্পাদিত হয়। এতে একটি প্রোগ্রাম কাউন্টার আছে যাতে পূর্বের ইন্সট্রাকশনের ঠিকানা থাকে । কোন ইন্সট্রাকশন কখন সম্পাদিত হবে তা এ ঠিকানা থেকে স্মৃতি হিসেবে পাঠ করা যায়।
রেজিস্টার বা মেমোরি/স্মৃতিঃ
রেজিস্টার হচ্ছে CPU এর একটি অংশ। এসব রেজিস্টারে দ্রুত লিখন ও পঠন সম্ভব। গাণিতিক যুক্তি অংশে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে এসব রেজিস্টার সাহায্য করে। কোনো একটি কাজ সম্পাদনের সময় এ সমস্ত রেজিস্টার সাময়িকভাবে ডাটা সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন রেজিস্টার ব্যবহৃত হয়। অপারেশনের ফল এখানে সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে।
সঞ্চয় রেজিস্টারঃ
সঞ্চয় রেজিস্টার ALU এর অন্তর্গত বিশেষ ধরনের রেজিস্টার যা ডাটা সংরক্ষণ করতে এবং গাণিতিক যুক্তি অংশের কাজ সম্পাদন করতে ব্যবহৃত হয়। অপারেশনের ফল এখানে সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে।
প্রোগ্রাম কাউন্টারঃ
প্রোগ্রাম কাউন্টারকে অনেক সময় ইন্সট্রাকশন পয়েন্টারও বলা হয়। এটি কোনো একটি নির্দেশের ঠিক পরের নির্দেশের ঠিকানা ধারণ করে। কোনো একটি ইনস্ট্রাকশন সম্পাদনের সময় নিয়ন্ত্রণ একক প্রোগ্রাম কাউন্টারের তথ্য বা ঠিকানা অ্যাড্রেস বাসে পাঠায় এবং মেমোরি থেকে এই ঠিকানার তথ্য পড়ে। এরপর প্রোগ্রাম কাউন্টারের সংখ্যা (ঠিকানা) CPU এর অভ্যন্তরীণ যুক্তি দ্বারা অটোমেটিক বৃদ্ধি পায়।
ইনপুট/আউটপুট রেজিস্টারঃ
সঞ্চয়ক বা Accumulator থেকে ফলাফল সরাসরি আউটপুটে পাঠানো হয় না। এই ফলাফল সাময়িকভাবে আউটপুট রেজিস্টারে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে আউটপুটে পাঠানো হয়। এ না হলে সঞ্চায়কে ফলাফল পড়ে থাকলে পরের গণনা শুরু করতে বিলম্ব হতো। একইভাবে ইনপুেেটর প্রোগ্রামও ইনপুট রেজিস্টারে জমা রেখে তারপর সঞ্চায়কে পাঠানো হয়।
এতে কম্পিউটার দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে। কারণ যে সময় একদিকে ইনপুট আউটপুট অপারেশন সম্পন্ন হয় সেসময়ই কম্পিউটার অন্যদিকে গণনা কাজ করতে পারে।
স্মৃতি ইনফরমেশন রেজিস্টার বা MIR :
স্মৃতি ইনফরমেশন রেজিস্টারকে স্মৃতি তথ্য রেজিস্টার ও স্মৃতি বাফার রেজিস্টার বলে। প্রধান স্মৃতি বা Main Memory ও ইনপুট রেজিস্টার থেকে তথ্য ও নির্দেশ স্মৃতি ইনফরমেশন রেজিস্টারে জমা রাখা হয়। অন্য স্মৃতি রেজিস্টার থেকে যে তথ্য বা নির্দেশ আনতে বা রাখতে হবে তার ঠিকানা যেখানে থাকে তাকে স্মৃতি ঠিকানা রেজিস্টার বা MAR (Memory Address Register) বলে। কম্পিউটারের স্মৃতিতে সাধারণত ২১০ থেকে ২২০ টি পর্যন্ত শব্দ থাকে। সুতরাং MAR এর সংখ্যা ১০বিট থেকে ২০বিট।
আরও পড়ুনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতিঃ
ইনপুট যন্ত্রপাতিঃ
কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য ঐ সমস্যা সম্পর্কিত প্রাথমিক উপাত্তসমূহ কম্পিউটারকে আগে থেকেই জানিয়ে দিতে হয়। কম্পিউটারে উপাত্ত পাঠানোর জন্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে ইনপুট যন্ত্রপাতি বলা হয়। নিম্নে বহুল প্রচলিত কিছু ইনপুট যন্ত্রপাতির পরিচিতি তুলে ধরা হলো। যথাঃ-
কিবোর্ড (Keyboard): Input Device এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক ব্যবহৃত ডিভাইস হচ্ছে Keyboard, এটি ছাড়া কম্পিউটার অপারেট করা প্রায় অসম্ভব। Keyboarb প্রধানত দুই ধরনের। যেমনঃ
1. Standard Keyboard (84 keys)
2. Enhanced keyboard (101/102/104 keys).
চিত্রঃ Keyboard. |
Keyboard এর পোর্ট হয় মোট তিন রকম। যথাঃ PS/2 Port, USB Port এবং Serial Port.
চিত্রঃ Keyboard Port. |
মাউস (Mouse): Mouse হচ্ছে কীবোর্ডের পাশাপাশি আরেকটি বহুল ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। মাউস দিয়ে কীবোর্ডের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করা যায়। মাউস দুই ধরনের হয়। যেমনঃ Mechanical ও Optical.
মেকানিক্যাল (Mechanical): মাউসের নিচের দিকে একটি বল থাকে এজন্য মাউস মুভ করলে ডেস্কটপে কার্সরও উপর/নিচ/ডান/বাম মুভ করে।
অপটিক্যাল (Optical): মাউসের নিচের দিকে বলের পরিবর্তে একটি Ray দ্বারা মুভ হয়। এই মাউস ক্যাবলসহ হতে পারে আবার Wirelessও হতে পারে।
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার Mouse. |
জয়স্টিক (Joystick): এই ডিভাইসটি গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দ্বারা সিগন্যালকে বিভিন্ন দিকে মুভ করা হয়।
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার Joystick. |
স্ক্যানার (Scanner): কোনো ইমেজকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে কম্পিউটারে নেওয়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এনিমেটর এদের জন্য এটি একটি অপরিহার্য ডিভাইস।
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার Scanner. |
ডিজিটাল ক্যামেরা (Digital Camera): এটি নরম্যাল এনালগ কম্পিউটারের মতো ছবি তুললেও, সাথে সাথেই ছবিটিকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করে মেমোরি চিপে জমা রাখে। এতে একটি LCD মনিটর থাকে, কাজেই ছবি তোলা মাত্র দেখা যায় এবং অপ্রয়োজনীয় ছবি সাথে সাথে মুছে ফেলা যায়।
চিত্রঃ Digital Camera. |
ওয়েব ক্যামেরা (Web Camera): এটি একটি মুভি/স্টিল ক্যামেরা যাকে সরাসরি কম্পিউটারে জুড়ে দেওয়া হয় এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো স্থানে ছবি পাঠানো যায়। এটি দ্বারা ভিডিও চ্যাট করা যায়।
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার Web Camera (Cam). |
ডিজিটাইজার (Digitizer): এটিকে ড্রয়িং বোর্ডও বলা হয়, এর মাধ্যমে বড় বড় Drawing, Mapping, Drafting ইত্যাদির কাজ করা হয়। এখানে একটি আয়তাকার চ্যাপ্টা ব্লক (Block) থাকে যাকে বলে ডিজিটাইজার বোর্ড ( Baord ), ডিজিটাইজিং টেবিল (Digitizing table) বা গ্রাফিক টেবিল (Graphic table) এর আকার ৯″× ১২'' থেকে ৪৮″ × ৭২″ পর্যন্ত হতে পারে। বোর্ডের ভিতরে উপযুক্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থাকে। একটি স্টাইলাসের (Stylus কলমের মতো) সাহায্যে বোর্ডে যা কিছু লেখা বা আঁকা যায় তাই মনিটরের পর্দায় ভেসে ওঠে।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে স্টাইলাসের অবস্থানের x ও y স্থানাঙ্ক (Co-ordinates) কম্পিউটার মেমোরিতে চলে যায়। কাগজে কোনো গ্রাফ বা ছবি এঁকে তা ডিজিটাইজার বোর্ডে রেখে সেই গ্রাফ বা ছবির উপর স্টাইলাস বুলিয়ে তাকে VDU এর পর্দায় দেখানো যায় এবং তার স্থানাঙ্ক কম্পিউটারে ইনপুট করা যায়। এভাবে ডিজিটাইজারের সাহায্যে বিভিন্ন গ্রাফ, ম্যাপ, বাড়ি ইত্যাদি প্ল্যান সহজেই কম্পিউটারে ইনপুট করা যায়।
চিত্রঃ ডিজিটাইজার। |
অপটিক্যাল মার্ক রিডার (OMR): যে যন্ত্রের সাহায্যে পেন্সিল বা কালির দাগ পাঠ করার ব্যবস্থা করা হয় সে যন্ত্রকে অপটিক্যাল মার্ক রিডার (OMR) বলে। OMR এক ধরনের পঠনযন্ত্র। যা কালো কালির দাগ বা পেন্সিলের দাগ বুঝতে পারে। বিশেষ কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে দাগগুলো তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটায় । যার ফলে কম্পিউটার OMR এর মাধ্যমে ভরাটকৃত বৃত্ত বা দাগ বুঝে নেয়। এই পদ্ধতিতে উত্তরপত্র যাচাই করলে কোনো ভুলের আশঙ্কা থাকে না।
যখন উত্তর পত্রটি OMR মেশিনে দেওয়া হয় তখন OMR সব কালো কালির দাগগুলো পড়ে নেয় পরে পূর্বে কম্পিউটারের স্মৃতিতে রক্ষিত উত্তরের সাথে তুলনা করে সঠিক উত্তর নির্ণয় করে। OMR দিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়।
চিত্রঃ ও. এম. আর মেশিন। |
আউটপুট যন্ত্রপাতিঃ
প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফলকে মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করতে হয়। কম্পিউটারের যে অংশ এ কাজটি করে থাকে তাকে আউটপুট ডিভাইস বলে। নিম্নে ডিজিটাল কম্পিউটারের কিছু আউটপুট ডিভাইসের পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ-
মনিটর (MONITOR): মনিটর একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস । এটি হচ্ছে তথ্য প্রদর্শনের একটি মাধ্যম যা ভিডিও কন্ট্রোলার কার্ড বা অ্যাডাপ্টার থেকে প্রাপ্ত সংকেতকে যথাযথ রূপান্তরের পর নিজস্ব স্ক্রীন বা পর্দায় দেখায়।
প্রচলিত সকল মনিটরকে রংয়ের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১। রঙিন (Color) মনিটরে পর্দায় সকল রং ফুটে ওঠে।
২। একরঙা বা মনোক্রম (Monochrome) মনিটরে কালো পদায় সাদা বা অন্য রঙের অক্ষর ফুটে ওঠে।
৩। গ্রে স্কেল (Grey scale) মনিটরে পদায় সকল রং সাদা-কলোতে ফুটে ওঠে।
প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে মনিটরকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
১। ক্যাথোড রশ্মি টিউব (Cathode Ray Tube- CRT) মনিটর ও
২। ফ্ল্যাট প্যানেল (Flat Panel) মনিটার/LCD মনিটর।
চিত্রঃ মনিটর। |
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর (Multimedia Projector): বর্তমান যুগে মানুষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার উপকরণ বা প্রোডাক্টসমূহের ভূমিকা তুলনাহীন। অনেক আগেই মানুষ লক্ষ করেছে যে, কোনো তথ্য বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় তা বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য বিভিন্ন মিডিয়ার সাহায্যে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়।
কম্পিউটারের সাহায্যে আমরা একসাথে বিভিন্ন মিডিয়া ব্যবহার করে একটি তথ্যকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে পারি। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে কম্পিউটারের কোনো তথ্য, টিভি প্রোগ্রাম কিংবা কোনো মুভি বড় স্ক্রীনে উপস্থাপন করা যায়।
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ার সাহায্যে তথ্য উপস্থাপন করা, উপস্থাপকের রেকর্ড করা উপস্থাপনাটাও প্রদর্শন করা যায়। এভাবে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে কোনো ম্যাসেজ বা তথ্যকে উপস্থাপন করা হলে তা দর্শকদের মনে সহজেই দাগ কাটে এবং তা মনে রাখতে সাহায্য করে।
চিত্রঃ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। |
প্রিন্টার (Printer): প্রিন্টার হচ্ছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস। সাধারণত প্রিন্ট বা হার্ডকপি নেওয়ার জন্য এটি ব্যবহৃত। সাধারণত তিন ধরনের প্রিন্টার ব্যবহৃত হয়। যথাঃ-
1. Dot matrix,
2. Inkjet বা Bubble jet ও
3. Laser jet
চিত্রঃ বিভিন্ন প্রকার প্রিন্টার। |
স্পিকার (Speaker): মনিটর দিয়ে যেমন চোখে দেখা যায়। Speaker দিয়ে তেমনি কানে শোনা যায়। অডিও শোনার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
চিত্রঃ Speaker. |
প্লটার (Plotter): প্লটার বিশেষ ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র। খুব সূক্ষ্ম রেখা বিশিষ্ট নক্সা বা চিত্রের মুদ্রণ নেয়ার জন্য এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। প্রস্থে কয়েক ফুট এবং দৈর্ঘ্যে যতটা প্রয়োজন ততটা দীর্ঘ কাগজে প্লটার যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ নেয়া যায়। এর সাহায্যে সাদা-কালো এবং রঙিন উভয় ধরনের প্রিন্ট করা সম্ভর। এটি দিয়ে বড় বড় গ্রাফিক্সের কাজ যেমনঃ আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, পলি সাইন, বিল বোর্ড ইত্যাদি প্রিন্ট করা হয়। কাপড়, কাগজ ইত্যাদি বিভিন্ন মিডিয়াতে এটি দিয়ে প্রিন্ট করা যায়।
চিত্রঃ প্লটার। |
আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার