তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি- তথ্যের আদান-প্রদান, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন এক অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে যার অনুপস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্যময় আধুনিক জীবন চিন্তাই করা যায় না। ব্যক্তি জীবনের উৎকর্ষ সাধন, জাতীয় জীবনের উন্নতি ও প্রগতি এবং বিশ্বের জাতিসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ এক অভিন্ন পরিবারের সোনালি স্বপ্ন দেখিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্বের জ্ঞান ও তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশের অসীম সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে, যোগাযোগে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, মেধাচর্চা ও সৃজনশীলতার বিকাশ, বিনোদন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এটি মানসম্পন্ন কর্মসম্পাদনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
নিচে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার দেওয়া হলোঃ-
১। ব্যবসা-বাণিজ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ব্যতীত আধুনিক ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানিতে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া আজকাল ব্যাংক, বীমা, ক্রেডিট কোম্পানি, পরিবহন এবং উন্নত বিশ্বের সাধারণ কেনাকাটাসহ অনেক কর্মকাণ্ড অচল। ব্যবসা-বাণিজ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সহজে কম সময়ে সংবাদ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ, ই-মেইল, ওয়েব সাইট এবং ইন্টারনেট বাণিজ্যিক যোগাযোগসহ সব রকম যোগাযোগের আধুনিক মাধ্যম।
বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনকে ই-কমার্স বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের বিষয়টি সকলের দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। এর মাধ্যমে শুধু যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন ধরনের সেবাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আমরা ব্যাংকে না গিয়ে নির্দিষ্ট হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে পারি।
বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন এটিএম বুথ এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন ও জমাদানের সুবিধা দিচ্ছে। এর ফলে অতি সহজে কম খরচে এবং কম সময়ে টাকা উত্তোলন ও জমা দেয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
২। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। এখন ইচ্ছা করলে কেউ বাংলাদেশে বসে আমেরিকার কোনো লাইব্রেরি থেকে বই পড়তে পারেন।আজকাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কিংবা গবেষণা কর্ম সাথে সাথে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর যে কোনো দেশের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। আজকাল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেয়ার জন্য কম্পিউটার এবং প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক শ্রেণির উপযোগী করে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করা হয়।
যুক্ত করা হয় সুন্দর, আকর্ষণীয় চিত্র এবং বর্ণনা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে পাঠের বিষয়বস্তু বুঝতে এরং আয়ত্ত করতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে না বুঝে বই দেখে শুধু মুখস্থ করার দিন শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া শিক্ষকরা ক্লাস শুরুর আগেই লেকচার শিট অনলাইনে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে দিতে পারেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী এবং উন্নত মানের পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারে। জ্ঞান অর্জন এখন আর শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
বর্তমানে Distance learning এর সাহায্যে ঘরে বসে পড়া এমনকি ডিগ্রি নেয়াও সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিপ্লব এনেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া সিডি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো বিষয় সম্বন্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা ছাত্রদের বিভিন্ন ওয়েব সাইটের নাম ও ঠিকানা দিয়ে দেন। এর ফলে তাদের বিশ্লেষণ দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যাস বৃদ্ধি পায় যা বর্তমান বিশ্বে জ্ঞানের প্রধান ভাণ্ডার হিসাবে বিবেচিত।
বিভিন্ন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। প্রশ্ন-উত্তর এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা (যেমনঃ এসএসসি ও এইচএসসি) খাতা মূল্যায়ন করে এবং ফলাফল প্রদান করে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
৩। অফিস-আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
অফিস আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। অফিসে যেখানে আগে প্রচুর পরিমাণে কাগজপত্র স্তূপ দেয়া থাকত আজ সেখানে কাগজপত্র দেখা যায় না বললেই চলে। এতসব ফাইলের পরিবর্তে রয়েছে একটি মাত্র কম্পিউটার এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগ। কম্পিউটারেই সংরক্ষিত আছে অফিসের সকল কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য। কম্পিউটারের মাধ্যমেই করা হয় বেতন, পাওনা ইত্যাদির হিসাব। দপ্তরে দপ্তরে ফাইল নিয়ে পিয়নদের দৌড়ঝাপ চোখে পড়ে না, কারণ ই-মেইলের মাধ্যমেই এ কাজগুলো সেরে নেয়া হয়।
বিচারক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন। বিচার প্রার্থীরা অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি এবং বিচার দায়ের করতে পারেন। সাধারণ জনগণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। সাধারণ মানুষ আইন মান্য করতে উৎসাহী হবেন। সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের সকল আইনকে বিনামূল্যে জনগণের জন্য অনলাইনে প্রকাশ করতে পারে।
বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে সমন্বিতভাবে করা সম্ভব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে আদালত তথা বিচার ব্যবস্থার সকল কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করাই হলো ই-কোর্ট। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ই-কোর্ট চালু হয়েছে এবং সাফল্যজনকভাবে কাজ করছে। আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার (ভিডিও কনফারেন্সিং)
৪। বিজ্ঞান, চিকিৎসায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
পূর্বে কোনো একজন বিজ্ঞানী কোনো গবেষণা কার্য অসমাপ্ত রেখে মারা গেলে অথবা অন্য কোনো কারণে চালিয়ে যেতে না পারলে, গবেষণা কাজটি সেখানেই সমাপ্ত হয়ে যেত কোনো ফলাফল ছাড়া। হয়তো পরবর্তীতে আবার কোনো বিজ্ঞানী ঐ একই বিষয়ের উপর গবেষণা শুরু করছেন। অথবা এমনও দেখা যায় যে, একই বিষয়ের উপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একযোগে প্যারালালভাবে গবেষণা করে, কারণ বিজ্ঞানীরা নিজেদের মধ্যে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারতেন না বা সুযোগ ছিল না। একজন অন্যজনের গবেষণার অগ্রগতি বা ফলাফল সম্পর্কে জানতে পারতেন না।
বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ধারায় তথ্য প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা কর্ম নতুনভাবে প্রকাশিত চিকিৎসায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ হওয়ার ফলে টেলিফোন, টেলিভিশন, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এবং গবেষণা কর্ম উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করছে। ফলে বিজ্ঞান সামনের দিকে এগিয়ে চলছে রকেটের গতিতে। বিজ্ঞান নিত্য-নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের দ্বারে হাজির হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ ঘরে বসে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
নতুন নতুন ঔষধের উদ্ভাবন এবং রোগ নিরাময়ের সর্বশেষ পদ্ধতি আজ সবাই জেনে যাচ্ছেন। রোগীরা ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নত হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পারেন এবং পরামর্শ নিতে পারেন। বিভিন্ন প্যাথলজিক পরীক্ষার রিপোর্ট ইন্টারনেটের মধ্যমে দূর দেশে থাকা ডাক্তারকে দেখাতে পারেন। বর্তমানে আমাদের দেশেও টেলিমেডিসিন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। এর ফলে দুর্গম এলাকা থেকেও জনগণ টেলিফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে।
৫। শিল্প-সাহিত্যে এবং বিনোদনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
সারা বিশ্বের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান আজ ঘরে বসে উপভোগ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের থ্রিডি গেম এবং এনিমেটেড বিভিন্ন সিনেমা বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ডিজিটাল প্রজেকশনের ফলে দর্শক সিনেমা, নাটক ও ঐতিহাসিক বর্ণনা আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে আজ শিল্প সাহিত্যের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি।
সাহিত্য ও শিল্প কর্মের ফলাফল আজ মুহূর্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এবং মানুষের কল্যাণে সেসব কর্ম অবদান রেখে যাচ্ছে।বিনোদনের কথাতো বলাই বাহুল্য। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। ফলে তথ্য প্রযুক্তি আমাদের বিনোদনের সকল চাহিদাকে পূরণ করে যাচ্ছে।
৬। কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের ৮০% লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষি শিল্পের উন্নতির সাথে সারা দেশের উন্নতি নির্ভর করে। আর এই কৃষির উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। আজ-কাল জমির মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাটির বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করতে পারেন, কোনো মাটিতে কোনো ফসল ভালো উৎপাদন হবে। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কৌশল কৃষকরা জানতে পারে, পূর্বে তারা শুধু অভিজ্ঞতার আলোকে চাষাবাদ করত।
রোগ বালাইর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কার্যকরী ঔষধ, প্যাকেজিং ব্যবস্থা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে পেয়ে থাকে। অনলাইন কৃষি বাজারও চালু হয়েছে-যার ফলে কৃষকরা সহজে বেশি দামে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারে। কৃষকরা গ্রামে থেকেই মুহূর্তের মধ্যে বড় বড় শহরের পাইকারি বাজারের দাম জানতে পারে।
ফলে কম দামে ফসল বিক্রি করে লোকসান দিতে হয় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন গবেষণা ও প্রয়োগের ফলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে উন্নত, অধিক ফলনশীল, প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল খাদ্যশস্য আবিষ্কার করছে যা কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
৭। মহাকাশ অভিযানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
একুশ শতকে মহাকাশ অভিযান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া অসম্ভব। চাঁদে অবতরণ, মহাকাশে স্টেশন স্থাপন, অন্যান্য গ্রহে অভিযান এবং পৃথিবীর উপর লেখাপড়া করার জন্য ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, ডেটা স্থানান্তর, সংরক্ষণ এবং বণ্টন ইত্যাদিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। মহাকাশ অভিযানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অভিযানে অংশগ্রহণকারি সকল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজ করা।
কোনো কারণে কোনো একটি অংশ বিকল হলে বা কাজ না করলে সম্পন্ন অভিযান বাতিল হয়ে যায়। এতে প্রচুর সময় এবং অর্থের অপচয় হয়। বর্তমানে মহাকাশ কেন্দ্রে পাঁচটি সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকটি কম্পিউটার বিভিন্ন অংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সহজ এবং জটিল কাজগুলো সম্পন্ন করে। জটিল কাজ করার জন্য চারটি কম্পিউটার প্রয়োজন হয় এবং পঞ্চমটি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সমস্যা সমাধানের জন্য রাখা হয় অতিরিক্ত হিসেবে।
নাসা (NASA) সেন্সর ওয়েব সিস্টেমের কথা চিন্তা করছে। এর ফলে বিশাল আকারের স্যাটেলাইটের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের স্যাটেলাইট তৈরি। প্রেরণ করা হবে নির্দিষ্ট টার্গেট করে। এরা প্রয়োজনে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে এবং পরিবর্তিত নির্দিষ্ট এরিয়া কভার করতে পারবে। স্যাটেলাইটের কম্পিউটারগুলোকে সুপার কম্পিউটার দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হবে।
ছোট ছোট স্যাটেলাইটগুলোকে পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। স্যাটেলাইটের কোনো একটি অংশ বিকল হলে বা কার্যক্ষমতা কমে গেলে সম্পূর্ণ স্যাটেলাইট ধ্বংস না করে ঐ নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তন করা বা আপডেট করা সম্ভব হবে। এই পদ্ধতিতে মহাকাশ অভিযান ব্যয় অনেক কমবে। মহাকাশ অভিযান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে হাতে হাত রেখে সকল সমস্যা সমাধান করে পৃথিবী জুড়ে উন্নয়ন বয়ে আনবে।
আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
৮। যোগাযোগ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন সাধন করেছে। বর্তমানে যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যমগুলো হলো মোবাইল ফোন, ই-মেইল, টেলি কনফারেন্সিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি। আগে মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি/পত্র। ডাক বিভাগের উপর আমাদের নির্ভর করতে হতো। তখন একটি চিঠি পৌছতে দেশের অভ্যন্তরে ৩ থেকে ৪ দিন এবং দেশের বাইরে চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ দিন বা তার চেয়েও বেশিদিন লাগতো।
বিদেশে চিঠি পাঠানোর সময় নির্ভর করত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিডিউলের উপর। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কাগজ, কলম ব্যবহার করে চিঠি লেখা অনেকেই ভুলে গেছে। ডাক বিভাগ অনেকটা অলসভাবেই সময় কাটাচ্ছে। এখন তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ই-মেইল। ই-মেইলের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে অল্প খরচে অতি দ্রুত যে কোনো সংবাদ একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণ করতে পারি। এক্ষেত্রে দেশ বা বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই সমান সময় লাগে। অপেক্ষা করতে হয় না কোনো ফ্লাইট সিডিউলের।
এক্ষেত্রে সময় এবং খরচ বাঁচে এবং পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ, এর জন্য দরকার শুধু একটি ইন্টারনেট সংযোগ। তাছাড়া মোবাইল টেকনোলজির ফলে আমরা খুব সহজে, অল্প খরচে সরাসরি কারো সাথে কথা বলতে পারি। ভিডিও কনফারেন্সিং এর সাহায্যে আমরা যার সাথে কথা বলি তাকে সরাসরি দেখতেও পারি। তাছাড়া রেডিও বা টেলিভিশনের মাধ্যমে যেকোনো সংবাদ সহজে দেশ এবং বিশ্বের সকল মানুষের নিকট পৌছে দেয়া যায়।
তাছাড়াও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আইসিটির একটি বড় ব্যবহার হলো বিভিন্ন যানবাহন যেমন-রেল, বিমান ইত্যাদির টিকেট রিজার্ভেশন এর ফলে আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে রেলওয়ে এবং বিমানের টিকেট বুকিং করতে পারি। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, আইসিটি যোগাযোগ ক্ষেত্রে গতি এনেছে এবং খরচ অনেক কমিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
৯। গবেষণা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
গবেষণা কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিসীম। পূর্বে দেখা যেত, একই বিষয়ের উপর একাধিক বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন। একজন অন্য জনের খবর জানতেন না অথবা কোনো বিজ্ঞানী তাঁর গবেষণা কার্য অসমাপ্ত রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর গবেষণার অগ্রগতি, ফলাফল অন্যকে জানাতে পারতেন না। তিনি কোনো রেকর্ড রাখতে পারতেন না অথবা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেউ জানতো না। এ অবস্থায় ঐ আংশিক গবেষণা কোনো কাজে আসতো না।
ঐ একই বিষয়ে অন্যজনকে আবার প্রথম থেকে কাজ শুরু করতে হতো। এভাবে হয়তো দিনের পর দিন চলতে থাকতো। কিন্তু বর্তমান এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে বিজ্ঞানীরা তাদের চিন্তাধারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা শুরু করলে ইন্টারনেটের সাহায্যে সবাই অবগত হয়। গবেষণার প্রতিটি ধাপের ফলাফল সকলের নিকট ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। এর ফলে একজনের গবেষণার ফলাফল কাজে লাগিয়ে অন্যজন গবেষণা চালিয়ে যেতে পারে। ফলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয় না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্ত যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং উপাত্তগুলোকে প্রক্রিয়াকরণের সময় সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব-নিকাস করার জন্য এবং যুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কম্পিউটার/আইসিটি ব্যবহার করা হয়। প্রাণীর ডিএনএ তথা জীন নিয়ে গবেষণার জন্য আইসিটি ব্যবহার করা হয়। মানব দেহের বিভিন্ন গবেষণায় ত্রিমাত্রিক এনিমেশন ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে গবেষণায় ত্রিমাত্রিক চিত্র ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিভিন্ন প্রকার বিপদজ্জনক পদার্থ তৈরিতে যা ব্যবহারের পূর্বে পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে পরীক্ষা করা যায়, সঠিক পরিমাপ এবং সূক্ষ্ম হিসাব গবেষণায় সঠিক ফলাফল পেতে সাহায্য করে । আর এ দুটিই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব শুধুমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
১০। অফিস-আদালতে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
অফিস-আদালত অনেকটাই এখন তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ। অফিস বলতে এখন আর কক্ষের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে স্তূপ করা গুছানো বা অগুছানো কাগজ ফাইল, রেজিস্টার-এর উপর ধূলাবালি পড়ে আছে এমন একটি পরিচিত দৃশ্য চোখে পড়ে না। টেবিলের উপর একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ইত্যাদি প্রযুক্তির সব যন্ত্রপাতি প্রায় সকল অফিসেই রয়েছে।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা অফিসের সকল ধরনের তথ্য, রিপোর্ট ইত্যাদি সবকিছুই এখন কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিদের হাজিরা এখন আর রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে দিতে হয় না। বেশিরভাগ তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অফিসে পাঞ্চ কার্ড, ফিঙ্গার প্রিন্ট এর মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিত করা হয়। অফিসের সকলের বেতনের হিসাব এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে করে থাকে। অনেক অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ইলেকট্রনিক উপায়ে কর্মচারিদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে জমা হয়ে যায়।
এখন আর পিয়নকে অফিসের বিভিন্ন রুমে বিভিন্ন নোটিস নিয়ে ছুটা ছুটি করতে দেখা যায় না, কারণ এখন ই-মেইলের মাধ্যমে সকলের নিকট একযোগে যেকোনো নোটিস বা সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে পৌছে যায়। বর্তমানে অফিসে কাগজের ব্যবহার নেই বললেই চলে। অফিসের নতুন কর্মচারিদের প্রশিক্ষণেও ব্যবহার করা হয় আইসিটি। সুন্দর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের কাজটি সম্পন্ন করা হয়।
যেখানে ই-মেইলে সংবাদ পাঠানো যায় না সেখানে মোবাইল ফোন তো আছেই। তাছাড়া প্রত্যেক অফিসেরই রয়েছে নিজস্ব ওয়েব সাইট। এর মাধ্যমে জনগণ ইচ্ছা করলেই যেকোনো সময় ঐ অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে সর্বশেষ সংবাদ জানতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন অফিসের কাজের দরপত্রও আহবান করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। জমাও নেয়া হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এর ফলে অফিসে পাবলিক গেদারিং নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা