কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
সভ্যতার বিকাশে কম্পিউটার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক সভ্যতা ও কম্পিউটারকে আলাদাভাবে চিন্তা করা যায় না। যে সব বৈশিষ্ট্যের জন্য কম্পিউটার আধুনিক সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা কম্পিউটারের নির্ভুল কর্ম সম্পাদন, দ্রুতগতি, স্মৃতি, স্বয়ংক্রিয় কর্মদক্ষতা, সহনশীলতা, ইত্যাদি। এ সকল বৈশিষ্ট্যই কম্পিউটারের প্রয়োগ ক্ষেত্রকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে কম্পিউটারকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য প্যাকেজ প্রোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ফলে কিছু, কিছু কাজের জন্য ব্যবহারকারীকে প্রোগ্রাম তৈরী করতে হচ্ছে না কষ্ট করে। অর্থাৎ যতই দিন যাচ্ছে কম্পিউটারের ব্যবহার ততই সহজ হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, যাতায়াত ব্যবস্থা, গবেষণা, চিত্ত-বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণায় কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ
বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। পরীক্ষার খাতা দেখা থেকে শুরু করে ক্লাশের নির্দেশনা ও পাঠ প্রদান, গাণিতিক সমস্যার সমাধান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, প্রশাসনিক কাজ, পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ, লাইব্রেরির বই এর হিসাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের বাস্তব ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
১। শিক্ষা দান বা পাঠ প্রদানঃ শিক্ষাদানের জন্য কম্পিউটার বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রাথমিক শ্রেণীগুলিকে কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে বর্ণ পরিচয়, গল্পের মাধ্যমে পাঠ দান, উচ্চারণ শেখা, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সিডি ব্যবহার করে, স্থির ও চলমান চিত্রের সাহায্যে পাটীগণিত, বীজগণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই কম্পিউটার ব্যবহার করে সাধারণ জ্ঞানের অনেক কিছু শিখতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে এখন ব্যাপকভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার হচ্ছে। এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের একটি সহজ ও সার্বক্ষণিক মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে। শিক্ষার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করলে একই বিষয় যতবার খুশি ও যখন খুশি শেখা সম্ভব।
২। শিক্ষা প্রশাসনে কম্পিউটারঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দিকটাও কম্পিউটার দিয়ে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমনঃ- কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া, ক্লাস অনুযায়ী ছাত্রদের রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা, পরীক্ষার খাতা দেখা, পরীক্ষার ফলাফল তৈরী করা, ক্লাসের রুটিন তৈরী করা, ছাত্রদের বেতনের হিসাব রাখা, সাধারণ শিক্ষক ও কর্মচারীদের নাম, ছাত্রদের শ্রেণী পরীক্ষার উন্নতি-অবনতির বিবরণ এবং সর্বশেষ তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এতে করে কোন ছাত্রের অভিভাবক যদি কোন সময় এসে তার সন্তানের সম্পূর্ণ তথ্য জানতে চায় তবে দু' এক মিনিটের মধ্যেই তা কম্পিউটার থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
৩। পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণঃ প্রতি বছর শিক্ষা ক্ষেত্রে থেকে কতজন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের প্রতি বছরের ফলাফল কি, কতজন পাশ করেছে, কতজন ফেল করেছে, কতজন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ পেয়েছে, কতজন এ প্লাস পেয়েছে, এসব প্রত্যেকটি বিষয়ের হিসাব কম্পিউটারের স্মৃতিতে রাখা সম্ভব। এমন কি ১০০ বৎসরের ফলাফলও সংরক্ষণ করা সম্ভব। প্রয়োজন হলে যে কোন বছরের ফলাফল সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারের সাহায্যে দেখা সম্ভব।
৪। শিক্ষাক্ষেত্রে যোগাযোগঃ স্কুল পরিচালনার জন্য নানা প্রকার পত্র যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। যেমনঃ- শিক্ষা অধিদপ্তর, থানা শিক্ষা কর্মকর্তা অফিস, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসের সঙ্গে কোন না কোন রকম চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। এই সব চিঠিপত্র লিখার সময় অনেক সময় ভুল হয়ে থাকে যা পরিবর্তন করার দরকার পড়ে। আগে টাইপ মেশিনের সাহায্যে করা হত বলে চিঠিটি আবার সম্পূর্ণভাবে টাইপ করতে হত। কিন্তু আজকাল কম্পিউটারের স্মৃতিতে রেখে দেওয়া যায় এবং প্রয়োজন হলে তা আবার সংশোধন করে কপি করা যায়। এখন কম্পিউটারের সঙ্গে মডেম নামে একটি যন্ত্র সংযুক্ত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন অফিসের মধ্যে সরাসরি কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
৫। প্রশংসাপত্রঃ প্রত্যেক বছরে স্কুল থেকে ছাত্রদের প্রশংসাপত্র দিতে হয়। প্রশংসাপত্রগুলিতে নাম, পিতার নাম- সাল, তারিখ ইত্যাদি ফাঁকা রেখে ছাপানো হয় এবং দেওয়ার সময় ঐ ফাঁকা জায়গায় কলম দিয়ে লিখে প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। এই প্রশংসাপত্র কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কম্পিউটারের স্মৃতিতে যদি এরকম একটি প্রশংসাপত্র রাখা যায় তবে সেটা দেওয়ার সময় ফাঁকা জায়গাতে নাম, তারিখ, সাল, দেওয়া যায়। এভাবে পুরো প্রশংসাপত্র ছাপানো হলে আর এটা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
৬। গাণিতিক সমস্যাঃ বিজ্ঞানের কঠিন সমীকরণের সমাধান ও হিসাব, পরিসংখ্যান এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার দ্রুত ও সহজ সমাধান দেয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাদান বা পাঠদান, পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও সংরক্ষণ, প্রশংসাপত্র তৈরি, গাণিতিক সমস্যার সমাধান, প্রশাসনিক কাজ ইত্যাদি কম্পিউটারের ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজে সম্পন্ন করা যায়।
গবেষণায় কম্পিউটারঃ
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে অজানাকে জানা এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করা। এর জন্য মানুষ বিভিন্ন উপকরণকে সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করে।এ সকল সাহায্যকারীর মধ্যে বর্তমানে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণে পরিণত হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক প্রতিটি বিষয়ের গবেষণার জন্য চুলচেরা বিশ্লেষণের দরকার হয়। আর এসব বিশ্লেষণের সহজ সমাধান কম্পিউটার দিতে পারে। তাই গবেষণার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের গরুত্ব অপরিসীম। যেমনঃ- একজন সমাজ বিজ্ঞানী গবেষণা করবেন কী করে সমাজের উন্নয়ন করা যায়।
এজন্য তাঁর প্রয়োজন হবে, সমাজের নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ, ভালমন্দ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং যে সব তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার বিশ্লেষণ করা। সঠিকভাবে ও দ্রুত গতিতে এসব তথ্য বিশ্লেষণের জন্য কম্পিউটার প্রয়োজন। তেমনি রাজনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভোটের হার নির্ণয় করা সম্ভব।
তাছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা, বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজেট তৈরী করা একান্ত প্রয়োজন। এই বিশ্লেষণ ও বাজেট তৈরীর কাজ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হলে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন পরিবর্তনের ফল পাওয়া যায়।
কম্পিউটার শিক্ষাঃ
বর্তমানে যুগে কম্পিউটার ছাড়া কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চিন্তাই করা যায় না। পদার্থ, রসায়ন, গণিত, পরিসংখ্যান গবেষণায়ও কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানের কঠিন, জটিল ও দীর্ঘসূত্র ও তথ্যের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশ নিভূলভাবে সম্পূর্ণ করে থাকে এই কম্পিউটার। কারণ কম্পিউটারের কোন ক্লান্তি নেই। সে অনায়াসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে পারে। তাছাড়া গবেষণার জন্য তথ্য-আদান-প্রদানের সুবিধার্থে, বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাকার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক (Network) স্থাপন করা যেতে পারে।
এ ধরনের কম্পিউটার যোগাযোগকে ই-মেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল (Electronic mail) বলা হয়। ই-মেইল এর সাহায্যে সব প্রকার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য গ্রহণ করা যায় এবং প্রয়োজনে গবেষণার কাজে লাগানো যায়।
সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি সকল গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিল্পক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
শিল্পক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ কম্পিউটার সমগ্র শিল্পক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বড় বড় শিল্প কারখানা হতে শুরু করে কারখানার যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ী, জাহাজ, বিমান ইত্যাদির কাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায় কম্পিউটার দ্বারা। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটারের ভূমিকা রয়েছে। রাসায়নিক কারখানা, তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর কাঁচামালের পরিমাণ, চাপ, তাপমাত্রা, তরল পদার্থের প্রবাহ, মোটরের গতি ইত্যাদি মেপে যাচাই করতে হয় যে পদ্ধতি সঠিকভাবে চলছে কিনা। পদ্ধতি সঠিকভাবে না চললে সঠিক পথে চালাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়।
আর এ ধরনের কাজ কম্পিউটার দ্বারা করাই সম্ভব। আবার কল কারখানার বিভিন্ন ধরনের বিপদজনক বা পরিশ্রমের কাজগুলো। যেমনঃ- ওয়েলডিং, ঢালাই, মাল উঠানো বা নামানো, স্প্রে করে রং লাগানো ইত্যাদি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে করা যায়। বেশী ঠান্ড বা বেশী গরম, এমন প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এ ধরনের পরিবেশে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবট ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে পারে, যা অনেকটা মানুষের বিকল্প।
কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সাহায্যে পণ্য উৎপাদনের সুবিধাগুলো হচ্ছে, কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়; উৎপাদনের মান উন্নততর হয়, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কম, শক্তির অপচয় হয় না, কাঁচামালের অপচয় কম হয়, তৈরী পণ্যের মান নিখুঁত হয়। এক কথায় বলা যায় সামগ্রিকভাবে উৎপাদনের খরচ কমে, পণ্যের চাহিদা বাড়ে এবং মুনাফা বেশী হয়।
ছোট থেকে বড় শিল্প কারখানায় অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক কাজ করে থাকে। এদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, পদবী, বেতন, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, বোনাস, ওভারটাইম, পেনশন, অন্যান্য হিসাবপত্র; যেমন প্রতি মাসের আয়, ব্যয় ইত্যাদির কাজ নির্ভুল ভাবে সংরক্ষণ করা যায় কম্পিউটারের সাহায্যে।
চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিদ্যায় কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঔষধ নির্বাচন, হাসপাতালের যাবতীয় হিসাব নিকাশ, ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎকার নিয়ন্ত্রণ, রোগীকে ঔষুধ গ্রহণের সময় ইত্যাদি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণে খুব সহজে সমাধা করা যায়।
প্রকৌশল বিদ্যায় কম্পিউটারের ভূমিকা অন্যতম। বিভিন্ন স্থাপনার নকশা অতি সূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে তৈরি, নকশা তৈরি থেকে কাজ শেষ হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সমস্ত কাজই কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে অতি সহজে সম্পন্ন করা যায়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা বাণিজ্যে কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
ব্যাংক-বীমাঃ ব্যাংক বীমা এবং অন্যান্য অর্থ-লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণের হিসাব-নিকাশের কাজে এবং গ্রাহক সেবা প্রদানের কাজে কম্পিউটারে জুড়ি নাই। এইসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক টাকা তোলেন, জমা দেন, বিভিন্ন হিসাব খাতে লেনদেন হয়। এতসব হিসাবে কাজ যার যার মত করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাতেও প্রতিদিন সামগ্রিক হিসাব করা হয় না। বছরের শেষে সামগ্রিক হিসাব দাঁড় করাতে হয়। কিন্তু কম্পিউটার যেসব প্রতিষ্ঠানে আছে এবং কম্পিউটারের সাহায্যে হিসাব গ্রহণ করা হয় সেখানে সর্বশেষ পর্যায়ে আপ-টু-ডেট থাকা যায়।
বর্তমানে ব্যাংকের চেক, চেক নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম চৌম্বক কালিতে চেকের নীচে লেখা থাকে। এ্যাকাউন্ট নম্বর ও চেকের পরিমাণ চৌম্বক কালিতে পরে লেখা হয়। এরপর MICR (Magnetic Ink Character Reader) এর সাহায্যে চেকের সব ডাটা কম্পিউটারে তোলা হয়। এতে নির্ভুলভাবে কম্পিউটারে ডাটা তোলা হয়। ব্যাংকের সুদের হিসাব কম্পিউটারের সাহয্যে সঠিকভাবে দ্রুতগতিতে করা যায়। অনেক দেশে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দ্বারা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়।
আমাদের দেশে দু'একটি ব্যাংকে পুরোপুরি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় টাকা লেনদেনের পদ্ধতি চালু হয়েছে। টাকা তোলার জন্য একটি বিশেষ কার্ড দেওয়া হয় যাতে গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট নম্বর লেখা থাকে। এই কার্ড ব্যাংকের কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দিলে কম্পিউটার জানতে চাইবে কত টাকা চাই। গ্রাহক তখন সংখ্যা গণনার বোতামগুলোতে চাপ দিয়ে টাকার পরিমাণ জানালে সঙ্গে সঙ্গে বন্ডের ভিতর থেকে টাকা বেরিয়ে আসবে।
কম্পিউটারের সাহায্যে আমদানী-রপ্তানী, বাণিজ্য, অর্থ স্থানান্তর ইত্যাদি কাজ তাৎক্ষণিকভাবে করা হচ্ছে। আমাদের দেশের কোন কোন ব্যাংক এ ধরনের সেবা এখনি প্রদান করছে। আগামীতে সকল ব্যাংকই এ ধরনের সেবা প্রদান করবে।
বর্তমানের ব্যাংকের চেক, চেক নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম চৌম্বক কালিতে চেকের নীচে লেখা থাকে। এ্যাকাউন্ট নম্বর ও চেকের পরিমাণ চৌম্বক কালিতে পরে লেখা হয়। এরপর MICR (Magnetic Ink Character Reader) এর সাহায্যে চেকের সব ডাটা কম্পিউটারে তোলা হয়। এতে নির্ভুলভাবে কম্পিউটারে ডাটা তোলা হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যে কম্পিউটারঃ বর্তমান বিশ্বে জীবন যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপেই কম্পিউটার জড়িয়ে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কম্পিউটার পালন করছে। দোকানপাট, অফিস, ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটার দিয়ে অতি সহজেই দোকানের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়, বিক্রয় ও মজুদ দ্রব্যের সঠিক হিসাব সুসম্পন্ন করা যায়। কোন জিনিস কি পরিমাণে বিক্রয় হল এবং দিনের শেষে কোন জিনিস কি পরিমাণ থাকল তার হিসাবও কম্পিউটার রাখতে পারবে।
কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনের হিসাব করা যায়। এটি ব্যবহার করে কর্মীদের মূল বেতন, বিভিন্ন প্রকার ভাতা, ওভারটাইম, আয়কর ফান্ড ইত্যাদি যোগ-বিয়োগ করে মোট বেতনের হিসাব তৈরী করা যায়। এভাবে প্রতিটি কর্মীর মাসিক ও বাৎসরিক বেতনের হিসাব তথ্য আকারে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়। ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে প্রিমিয়াম, বোনাস ইত্যাদির হিসাব করা এবং প্রিমিয়াম নোটিশ ছাপাতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
অনেক দেশে অনলাইন ব্যবস্থায় যে কোন সময় শেয়ারের অবস্থা সম্বন্ধে জানা যায়। কম্পিউটারে সাহায্যে শেয়ারের দাম ও কমিশন হিসাব করা সম্ভব হয়।কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক বা আন্তসংযোগ থাকলে দেশের মধ্যে বা বিদেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে আধুনিক ধারণা নিয়ে এসেছে তা হলো ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স।
ভবিষ্যতে ই-কমার্সের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে ব্যবসা বাণিজ্য চলবে বলে আশা করা যায়। এখনই উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট তৈরি করে পণ্য বেচাকেনা করছে। আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এ ধরনের ব্যবসা শুরু করেছে।
ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কম্পিউটার যে আধুনিক ধারণা নিয়ে এসেছে তা হলো ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স। ভবিষ্যতে ই-কমার্সের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে ব্যবসা বাণিজ্য চলবে বলে আশা করা যায়।
মুদ্রণ শিল্প ও প্রকাশনায় কম্পিউটারের ব্যবহারঃ
মূদ্রণ শিল্প ও প্রকাশনাঃ কম্পিউটার ছাড়া এখন আর উন্নতমানের প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পের কথা চিন্তা করা যায় না। মুদ্রণ যন্ত্রের কাজ হচ্ছে কোন বিষয় বা সাজানো লেখা ছাপিয়ে দেয়া। মুদ্রণ করার আগে অক্ষর বসিয়ে লেখা সাজিয়ে নিতে হয়। এই সাজানোর কাজকে মুদ্রণ জগতে বলা হয় কম্পোজ (Compose)। আমাদের দেশে আগে কম্পোজ করা হত সীসার অক্ষর দিয়ে। এখানে সীসার অক্ষরগুলো একের পর এক বসিয়ে লেখা সাজিয়ে নিতে হতো। সীমার অক্ষর দিয়ে কম্পোজ করা ছাপাখানাকে বলা হত লেটার প্রেস।
লেটার প্রেসে আবার পোস্টার জাতীয় কাজে বড় অক্ষর ব্যবহার করার জন্য কাঠের তৈরী অক্ষর ব্যবহার করা হত। বেশ কয়েকবার ব্যবহার করার ফলে সীসার অক্ষরগুলো কাজের অনুপযোগী হয়ে যেত। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ছাপার মান ভাল হতো না। আশির দশকের শেষের দিকে আমাদের দেশে কম্পিউটারের সাহায্যে কম্পোজের কাজ শুরু হয়। লেটার প্রেসের চেয়ে কম্পিউটার কম্পোজ করা ছাপার কাজ অনেক উন্নত। কম্পিউটারের কম্পোজ করার সুবিধাগুলো হচ্ছে, দ্রুত কম্পোজ করা যায়, একই কম্পিউটারে বাংলা, ইংরেজী এবং অন্যান্য ভাষায় কম্পোজ করা যায়।
অক্ষরের আকার ইচ্ছামত বড় এবং ছোট করা যায়। অক্ষর কখনও ভাঙ্গে না এবং লাইন আকা বাঁকা হয় না। লাইনের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা প্রয়োজনমত কম বেশি করা যায়। ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন প্যারা সেটিং করা যায় এবং লেখাকে ইচ্ছানুযায়ী সাজান যায়। কম্পোজ করা বিষয় কম্পিউটারের স্মৃতিতে রাখা যায় এবং প্রয়োজন হলে আবার ব্যবহার করা যায়। প্রকাশনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করে শুধুমাত্র কম্পোজ নয়, এখন ছবি বা চিত্র সম্পাদনা, কালার সেপারেশন ইত্যাদি কাজ করার সুযোগও কম্পিউটার তৈরী করে দিয়েছে।
বই, সংবাদপত্র ইত্যাদিসহ মুদ্রণ শিল্পে কাগজে মুদ্রিত সকল বিষয়বস্তুর জন্য এখন কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র কাগজে মুদ্রিত প্রকাশনার ক্ষেত্রেই নয় বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশনা বা অর্থাৎ ডিজিটাল প্রকাশনার কাজও করা হচ্ছে।
কম্পিউটার ছাড়া উন্নতমানের প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পের কথা এখন চিন্তা করা যায় না। আগে লেটার প্রেসে সিসার অক্ষর দিয়ে কম্পোজের কাজ করা হতো। আশির দশকের দিকে আমাদের দেশে কম্পিউটারের সাহায্যে কম্পোজের কাজ শুরু হয়। প্রকাশনার জগতে ডিজিটাল প্রকাশনা এক নতুন সংযোজন।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা