কোয়াশিয়রকর রোগের প্রতিকার
কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগঃ
এক থেকে তিন বৎসর বয়সী শিশুদের মধ্যেই কোয়াশিয়রকর রোগটি বেশী দেখা যায়। শিশুর যখন মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অন্য খাবার খেতে শুরু করে তখনই সাধারণত এ রোগটি বেশী হয়। একটি শিশু মায়ের দুধ খাওয়া অবস্থায় আরেকটি শিশুর জন্ম হলে প্রথম শিশুটি স্বভাবতই মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে একদিকে মায়ের দুধের উৎকৃষ্ট আমিষ থেকে বঞ্চিত হয়, অপরদিকে দারিদ্রতার কারণে নিম্ন মানের অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ এবং শিশুর ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের দরুণ ঐ শিশুর খাদ্যে মারাত্মক আমিষের ঘাটতি হয়। এরকম অবস্থাতেই শিশুটি কোয়াশিয়রকর রোগে আক্রান্ত হয়।
কোয়াশিয়রকর রোগের লক্ষণঃ
১। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
২। সমস্ত শরীর বিশেষতঃ হাত,পা এবং মুখমন্ডলে পানি বা রস জমা হয়ে ফুলে যায়, মুখমন্ডল দেখতে গোলাকার এবং ফ্যাকাশে দেখায়।
৩। মাথায় চুল খুব পাতলা ও বাদামী হয়ে যায় এবং চুল উঠে যায়।
৪। মাংশ পেশী শুকিয়ে ওজন কমে যায়।
৫। শিশুর মানসিক বৈকল্য দেখা দেয়, শিশু সর্বদাই বিসন্ন, নিস্পৃহ এবং উদাসীন থাকে, কোন কিছুতেই তার আগ্রহ থাকে না বরং বিরক্ত হয়।
৬। স্থানে স্থানে লালচে ( ফ্লাকী পেইন্ট) চর্মরোগের সৃষ্টি হয়।
৭। রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
৮। যকৃত বা কলিজা কিছুটা বড় হয়ে যায়। এবং
৯। প্রায়ই ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয় এবং মলে খুব দুর্গন্ধ হয়।
কোয়াশিয়রকর রোগের কারণঃ
শিশুর খাবারে শুধুমাত্র শরীর গঠন ও বৃদ্ধিকারী অর্থাৎ আমিষ জাতীয় খাদ্যের মারাত্মক ঘাটতি হল কোয়াশিয়রকর রোগের মূল কারণ।
কোয়াশিয়রকর রোগের প্রতিকারঃ
কোয়াশিয়রকর রোগে আক্রান্ত শিশুকে আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য উৎকৃষ্ট আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- দুধ, ডিম, ননী তোলা গুড়াদুধ ইত্যাদি অধিক পরিমানে উপযোগী করে খাওয়াতে হবে। তবে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার এমন হতে হবে যেন শিশু প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য তা থেকে ৩০২ গ্রাম আমিষ উপাদান পেতে পারে। শিশুর ডায়রিয়া থাকলে খাবার স্যালাইন এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ থাকলে ডাক্তারের তত্বাবধানে বা হাসপাতালে ভর্তি করে জরুরী চিকিৎসা করাতে হবে।
ম্যারাসমিক-কোয়াশিয়রকর পর্যায়ের রোগীকে প্রচুর পরিমাণে শক্তিদায়ক এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য উপযোগী করে খাওয়াতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শমত চিকিৎসা করাতে হবে। ম্যারাসমাস, কোয়াশিয়রকর এবং ম্যারাসমিক- কোয়াশিয়রকর ইত্যাদি রোগ থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করতে হলে প্রথম থেকেই প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য জন্ম থেকেই দুই বৎসর বয়স পর্যন্ত অবশ্যই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং শিশুর ৫ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শক্তি ও আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে উপযোগী করে খাওয়াতে হবে।