রাডার কি? রাডার কিভাবে কাজ করে? রাডার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
রাডার কি?
রাডার (Radio Detection and Ranging) হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ, বিশেষ করে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে বস্তুর অবস্থান, দূরত্ব, উচ্চতা, দিক, এবং গতি নির্ধারণের একটি পদ্ধতি।
রাডার কীভাবে কাজ করে?
রাডার মূলত চারটি ধাপে কাজ করে:
1. প্রেরণ:
রাডার অ্যান্টেনা একটি নির্দিষ্ট দিকে একটি শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গের পালস প্রেরণ করে। এই তরঙ্গগুলি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ হিসেবে বের হয়।
2. প্রতিফলন:
প্রেরিত তরঙ্গগুলি যখন কোনো বস্তুর সাথে ধাক্কা লাগে, তখন সেগুলি প্রতিফলিত হয় এবং রাডার অ্যান্টেনার দিকে ফিরে আসে। প্রতিফলিত তরঙ্গের পরিমাণ বস্তুর আকার, গঠন এবং উপাদানের উপর নির্ভর করে।
3. গ্রহণ:
রাডার অ্যান্টেনা প্রতিফলিত তরঙ্গ গ্রহণ করে। এই প্রতিফলিত তরঙ্গগুলি রিসিভার দ্বারা ধরা হয় এবং বিদ্যুৎ সংকেতে রূপান্তরিত হয়।
4. মাপন:
প্রেরিত এবং প্রাপ্ত তরঙ্গের মধ্যে সময়ের পার্থক্য দূরত্ব নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু তরঙ্গের গতি নির্দিষ্ট, তাই সময়ের পার্থক্য দিয়ে আমরা সহজেই বের করতে পারি যে তরঙ্গ কতটা দূর ভ্রমণ করেছে এবং ফিরে এসেছে। ডপলার প্রভাব বস্তুর দিক এবং গতি নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
ডপলার প্রভাব অনুসারে, যখন কোনো তরঙ্গ উৎস এবং পর্যবেক্ষকের মধ্যে আপেক্ষিক গতি থাকে, তখন তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তিত হয়। বস্তুর গতি এবং রাডারের দিকের উপর নির্ভর করে প্রতিফলিত তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। এই ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তনটি বিশ্লেষণ করে বস্তুর দিক এবং গতি নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ সেন্সর কি? সেন্সর কত প্রকার ও কি কি? সেন্সর এর কাজ কি? সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
রাডারের ব্যবহার:
রাডারের ব্যবহার ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন:
1. বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ:
বিমানবন্দরে বিমানের অবস্থান ট্র্যাক করতে এবং বিমান সংঘর্ষ রোধ করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। বিমান নিয়ন্ত্রণকারীরা রাডার ব্যবহার করে বিমানের উচ্চতা, গতি এবং দিক নির্ধারণ করতে পারেন।
এটি বিমানবন্দরের কর্মীদের নিরাপদে বিমান পরিচালনা করতে এবং বিমান সংঘর্ষ এড়াতে সাহায্য করে।
2. আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ:
বৃষ্টি, তুষার, ঝড় এবং অন্যান্য আবহাওয়ার ঘটনা সনাক্ত করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়াবিদরা রাডার ব্যবহার করে ঝড়ের তীব্রতা এবং গতিপথ নির্ধারণ করতে পারেন। এটি তাদের ঝড়ের পূর্বাভাস প্রদান করতে এবং জনগণকে সতর্ক করতে সাহায্য করে।
3. সামরিক:
শত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনী সনাক্ত করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। সামরিক বাহিনী রাডার ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করতে পারে। এটি তাদের যুদ্ধে সুবিধা অর্জন করতে এবং তাদের সৈন্যদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।
4. সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণ:
জাহাজ এবং নৌকা ট্র্যাক করতে এবং নৌ দুর্ঘটনা রোধ করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। উপকূল রক্ষী এবং সমুদ্রপথ কর্তৃপক্ষ রাডার ব্যবহার করে সমুদ্রে যানবাহনের চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এটি তাদের জাহাজের সংঘর্ষ এড়াতে এবং নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
5. পুলিশ নজরদারি:
অতিরিক্ত গতির যানবাহন এবং অপরাধীদের সনাক্ত করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। রাডার ব্যবহার করে গাড়ির গতি পরিমাপ করতে এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।রাডার অপরাধীদের ধরতে এবং রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
6. ট্রাফিক পরিচালনা:
যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যানবাহনের প্রবাহ পরিচালনা করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। ট্রাফিক কর্মকর্তারা রাডার ব্যবহার করে রাস্তায় যানবাহনের চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে পারে। রাডার যানজট কমাতে এবং যানবাহনের প্রবাহকে আরও সুশৃঙ্খল করে তুলতে সাহায্য করে।
7. ভূমি জরিপ:
ভূখণ্ডের মানচিত্র তৈরি করতে রাডার ব্যবহৃত হয়। জরিপকারীরা রাডার ব্যবহার করে ভূমির উচ্চতা, গঠন এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে পারে। এটি তাদের আরও নির্ভুল মানচিত্র তৈরি করতে এবং ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
8. খনিজ অনুসন্ধান:
ভূগর্ভস্থ খনিজ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অবস্থান নির্ধারণ করতে রাডার ব্যবহার করা হয়।
9. বৈজ্ঞানিক গবেষণা:
গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে রাডার ব্যবহার করা হয়।
রাডারের সুবিধা ও অসুবিধাঃ
রাডারের সুবিধা:
- রাডার দূরবর্তী বস্তু সনাক্ত করতে পারে। রাডার দূর থেকে বস্তু সনাক্ত করতে পারে, যা বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং নৌপথ নিয়ন্ত্রণের মতো ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী।
- রাডার তরঙ্গগুলি ধূসর, বৃষ্টি বা তুষারের মতো খারাপ আবহাওয়ার মধ্য দিয়েও যেতে পারে, যা এটিকে অন্যান্য সেন্সরের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য করে তোলে। অর্থাৎ যেকোনো আবহাওয়ায় রাডার কাজ করতে পারে।
- রাডার তরঙ্গগুলির আলোর প্রয়োজন হয় না, তাই এটি অন্ধকারেও কাজ করতে পারে।
- ডপলার প্রভাব ব্যবহার করে, রাডার বস্তুর গতি এবং দিক নির্ধারণ করতে পারে।
- রাডার বিভিন্ন ধরণের বস্তু সনাক্ত করতে পারে, যেমন বিমান, জাহাজ, যানবাহন এবং এমনকি বৃষ্টির ফোঁটা।
- রাডার বাস্তব সময়ে তথ্য প্রদান করে।
রাডারের অসুবিধা:
- রাডার সিস্টেমগুলি বড় এবং ব্যয়বহুল, বিশেষ করে শক্তিশালী রাডার সিস্টেমগুলি।
- রাডার তরঙ্গগুলি ধাতব বস্তু দ্বারা প্রতিফলিত হতে পারে, যা ভুয়া লক্ষ্য তৈরি করতে পারে এবং বস্তু সনাক্তকরণকে জটিল করে তুলতে পারে।
- রাডার তরঙ্গগুলি নির্দিষ্ট পরিবেশগত কারণ, যেমন ভারী বৃষ্টিপাত বা ঘন কুয়াশা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
- রাডার ব্যক্তিদের অজান্তে তাদের ট্র্যাক করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা গোপনীয়তা উদ্বেগ তৈরি করে।
- শক্তিশালী রাডার তরঙ্গগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- অনেক সময় রাডার ছোট বস্তু সনাক্ত করতে পারে না।
রাডার একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন দূরত্ব থেকে বস্তু সনাক্ত করার ক্ষমতা এবং খারাপ আবহাওয়ায় কাজ করার ক্ষমতা। যাইহোক, এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন বড় আকার, উচ্চ খরচ এবং গোপনীয়তা উদ্বেগ। রাডার ব্যবহার করার সময় এই সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ এবার নিজেই তৈরি করুন একটি ওয়াকি-টকি
রাডার কত প্রকার ও কি কি?
প্রাথমিক রাডার: বস্তুর উপস্থিতি সনাক্ত করে, তবে দূরত্ব, উচ্চতা, দিক বা গতি নির্ধারণ করে না। সহজতম এবং সবচেয়ে সাধারণ ধরণের রাডার। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং সামরিক ব্যবহারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
সেকেন্ডারি রাডার: বস্তুর দূরত্ব, উচ্চতা, দিক বা গতি নির্ধারণ করে। একটি ট্রান্সমিটার এবং একটি রিসিভার নিয়ে গঠিত। প্রাথমিক রাডার থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে কাজ করে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক ব্যবহারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
পালস ডপলার রাডার: বস্তুর গতি নির্ধারণ করে। ডপলার প্রভাব নামে একটি পদার্থবিদ্যা নীতি ব্যবহার করে কাজ করে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক ব্যবহারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ রাডার (ASR): বিমানবন্দর এলাকায় বিমানের অবস্থান এবং গতি ট্র্যাক করে। বিমান সংঘর্ষ রোধ করতে সাহায্য করে।
সারভেইলেন্স রাডার: বৃহৎ এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
আবহাওয়া বা ওয়েদার রাডার: আবহাওয়ার ঘটনা সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। বৃষ্টি, তুষার, ঝড় এবং অন্যান্য আবহাওয়ার ঘটনা সনাক্ত করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ট্রাফিক রাডার: অতিরিক্ত গতির যানবাহন সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যানবাহনের প্রবাহ পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা রাডার: গ্রহ, নক্ষত্র এবং ছায়াপথ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়।
ভূমি জরিপ রাডার: ভূখণ্ডের মানচিত্র তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
খনিজ অনুসন্ধান রাডার: খনিজ সম্পদের অবস্থান সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
সামরিক রাডার: শত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনী সনাক্ত করে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। রাডার বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি রাডারের একটি সম্পূর্ণ তালিকা নয়। বিভিন্ন ধরণের রাডার রয়েছে যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য তৈরি করা হয়েছে। রাডার প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং নতুন ধরণের রাডার নিয়মিত তৈরি করা হচ্ছে।
রাডার এর কাজ কি?
রাডার (RADAR - Radio Detection and Ranging) হল একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে আবহাওয়া, বায়ুদূষণ, অস্ত্র ট্র্যাকিং, বিমান ও জাহাজ নিরীক্ষণ এবং ম্যাপিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
রাডারের মূল কাজগুলি নিম্নরূপ:
1. ঠিকানা শনাক্তকরণ: রাডার সিস্টেম বিশিষ্ট অবস্থানের কোনো জিনিস বা বস্তুকে শনাক্ত করে এবং তার দূরত্ব, দিক ও গতি নির্ধারণ করে।
2. মৌসুমী পর্যবেক্ষণ: আবহাওয়া পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত, ঝড়ো বায়ু ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে রাডার ব্যবহৃত হয়।
3. সামরিক ট্র্যাকিং: বিমান, যানবাহন, নৌযান এবং অস্ত্র সম্পর্কিত অবস্থান ও গতি নির্ধারণে রাডার ব্যবহৃত হয়।
4. নেভিগেশন: জাহাজের অবস্থান, দূরত্ব এবং তার গতি নির্ধারণে রাডার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
5. মৎস্য সন্ধান: বেশ কিছু মৎস্য প্রজাতির অবস্থান, গতি এবং সংখ্যা নির্ধারণে রাডার ব্যবহার করা হয়।
রাডার প্রযুক্তি কেবল সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং নাগরিক প্রযুক্তিতেও বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচিতি
রাডার আবিষ্কার করেন কে?
রাডারের আবিষ্কারের কৃতিত্ব একক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাডার প্রযুক্তির বিকাশে অবদান রেখেছিলেন।
কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি:
ক্রিস্টিয়ান হুলসমায়ার (১৮৮১-১৯৫৮): জার্মান পদার্থবিদ যিনি ১৯০৪ সালে "টেলিমেট্রি" নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করতে পারে।
জ্যাকব ডেনিসেন (১৮৭৮-১৯৪৫): আমেরিকান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যিনি ১৯০৬ সালে "রেডিও ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং" (RDR) নামক একটি ধারণার প্রস্তাব করেন।
নিকোলা টেসলা (১৮৫৬-১৯৪৩): সার্বিয়ান-আমেরিকান আবিষ্কারক যিনি ১৮৯৭ সালে "রেডিও ইকো" পর্যবেক্ষণ করেন, যা রাডারের একটি মৌলিক নীতি।
রবার্ট ওয়াটসন-ওয়াট (১৮৯০-১৯৭১): ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী যিনি ১৯৩৫ সালে প্রথম কার্যকর রাডার সিস্টেম তৈরি করেন, যা "ট্রাস্টি" নামে পরিচিত।
লিওন দীগ (১৯০৮-১৯৯৮): ফরাসি বিজ্ঞানী যিনি ১৯৩৯ সালে "মেগাসেকন্ড" নামক একটি উন্নত রাডার সিস্টেম তৈরি করেন।
এই ব্যক্তিদের পাশাপাশি, অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী রাডার প্রযুক্তির বিকাশে অবদান রেখেছিলেন।
রাডারের আবিষ্কার এবং উন্নয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হয়েছিল, কারণ বিভিন্ন দেশ যুদ্ধের সময় ব্যবহারের জন্য আরও উন্নত রাডার সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল।
রাডার প্রযুক্তি বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়া পূর্বাভাস, নৌ চলাচল, সামরিক প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
রাডারে কি ধরনের অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়?
রাডারে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়, প্রতিটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে।
কিছু সাধারণ ধরণের রাডার অ্যান্টেনা:
1. ডাইপোল অ্যান্টেনা:
- সহজতম এবং সবচেয়ে সাধারণ ধরণের রাডার অ্যান্টেনা।
- দুটি সমান্তরাল বাহু নিয়ে গঠিত যা একটি তড়িৎ ক্ষেত্র তৈরি করে।
- দিকনির্দেশক নয়, অর্থাৎ এটি একটি নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ নির্গত করে না।
- ছোট পরিসরের রাডারে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা: ছোট আকার, হালকা ওজন, সহজে স্থাপন করা যায়।
অসুবিধা: কম প্যারাবোলিক অ্যান্টেনার তুলনায় কম পরিসীমা এবং নির্ভুলতা।
2. প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা:
- দিকনির্দেশক এবং একটি নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ ফোকাস করতে পারে।
- একটি গোলাকার বাটির আকারের রিফ্লেক্টর থাকে যা তরঙ্গগুলিকে ফোকাস করে।
- দীর্ঘ পরিসরের রাডারে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
- বিভিন্ন আকার এবং আকৃতিতে পাওয়া যায়।
সুবিধা: দীর্ঘ-পরিসীমা, উচ্চ নির্ভুলতা, নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ নির্দেশ করতে পারে।
অসুবিধা: বড় আকার, ভারী, স্থির।
3. অ্যারে অ্যান্টেনা:
- একাধিক ডিপোল অ্যান্টেনা নিয়ে গঠিত যা একসাথে কাজ করে।
- দিকনির্দেশক এবং একটি নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ ফোকাস করতে পারে।
- উচ্চ-শক্তি এবং উচ্চ-রেজোলিউশনের রাডারে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
- জটিল এবং ব্যয়বহুল।
সুবিধা: একাধিক অ্যান্টেনা একত্রিত করে দীর্ঘ পরিসীমা এবং উচ্চ নির্ভুলতা অর্জন করা যায়।
অসুবিধা: জটিল, ব্যয়বহুল।
4. ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা:
- অ্যারে অ্যান্টেনার একটি উন্নত সংস্করণ যেখানে প্রতিটি ডিপোল অ্যান্টেনার তরঙ্গের পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- ইলেকট্রনিকভাবে স্টিয়ারিং করা যেতে পারে, অর্থাৎ এটি তার দিক পরিবর্তন করতে পারে তরঙ্গ নির্গত না করে।
- খুব দিকনির্দেশক এবং উচ্চ-রেজোলিউশনের রাডারে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
- খুব জটিল এবং ব্যয়বহুল।
সুবিধা: ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, দিক নির্দেশ করতে এবং মাল্টি-বিম তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অসুবিধা: জটিল, ব্যয়বহুল।
রাডারে কোন ধরনের অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে:
- রাডারের প্রয়োজনীয় পরিসর।
- রাডারের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
- রাডারের প্রয়োজনীয় রেজোলিউশন।
- রাডারের খরচ।
কিছু অতিরিক্ত বিষয় যা বিবেচনা করা উচিত:
- ফ্রিকোয়েন্সি: রাডার বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্টেনা ছোট আকারের হতে পারে তবে কম পরিসীমা থাকে। কম ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্টেনা বড় আকারের হতে পারে তবে দীর্ঘ পরিসীমা থাকে।
- বীমওয়াইদথ: রাডার অ্যান্টেনা কতটা বিস্তৃত এলাকা স্ক্যান করতে পারে তা নির্ধারণ করে।
- গেইন: রাডার অ্যান্টেনা কতটা শক্তিশালী তা নির্ধারণ করে।
রাডারের জন্য কোন ধরনের অ্যান্টেনা সবচেয়ে ভালো তা নির্ভর করে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের উপর। উদাহরণস্বরূপ, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘ-পরিসীমা এবং উচ্চ নির্ভুলতা সহ একটি প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে, একটি ছোট ড্রোনে ব্যবহারের জন্য একটি ছোট এবং হালকা অ্যান্টেনা আরও উপযুক্ত হতে পারে।
রাডারে কোন তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়? বা রাডারে যে তড়িৎ চৌম্বক ব্যবহার করা হয় তার নাম কি?
রাডারে যে তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তার নাম মাইক্রোওয়েভ। মাইক্রোওয়েভ হলো তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের একটি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় এবং রেডিও তরঙ্গের চেয়ে ছোট পরিসর।
রাডারে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করার কারণ:
- দূরত্ব: মাইক্রোওয়েভ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং খারাপ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারে, যা রাডারকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কার্যকর করে তোলে।
- দিকনির্দেশনা: মাইক্রোওয়েভকে একটি নির্দিষ্ট দিকে নির্দেশিত করা যেতে পারে, যা রাডারকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলির উপর ফোকাস করতে দেয়।
- আকার: মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট, তাই রাডার অ্যান্টেনা ছোট এবং আরও পোর্টেবল হতে পারে।
- পেনেট্রেশন: কিছু ক্ষেত্রে, মাইক্রোওয়েভ বস্তু ভেদ করতে পারে, যা রাডারকে বরফ বা বৃষ্টির মতো বাধাগুলির পিছনে লক্ষ্যগুলি সনাক্ত করতে দেয়।
অন্যান্য তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ যা রাডারে ব্যবহার করা যেতে পারে:
- রেডিও তরঙ্গ: রেডিও তরঙ্গগুলি মাইক্রোওয়েভের চেয়ে দীর্ঘ পরিসর অতিক্রম করতে পারে, তবে সেগুলি খারাপ আবহাওয়ায় কম কার্যকর এবং দিকনির্দেশ করতে বেশি কঠিন।
- অবলোহিত রশ্মি: অবলোহিত রশ্মি তাপমাত্রা পরিমাপ করতে এবং লক্ষ্যগুলির চিত্র তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়, তবে সেগুলি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে না এবং খারাপ আবহাওয়ায় কার্যকর হয় না।
- দৃশ্যমান আলো: দৃশ্যমান আলো লক্ষ্যগুলির উচ্চ-মানের চিত্র তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে না এবং খারাপ আলোতে কার্যকর হয় না।
রাডারে কোন দর্পণ ব্যবহার করা হয়?
রাডারে কোন দর্পণ ব্যবহার করা হয় না। রাডার তরঙ্গ তৈরি এবং গ্রহণের জন্য অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।
কিছু লোক ভুল করে মনে করতে পারে যে রাডার দর্পণ ব্যবহার করে কারণ:
- রাডার অ্যান্টেনা প্রায়শই ঘূর্ণায়মান থাকে, যা একটি ঘূর্ণায়মান দর্পণের মতো দেখাতে পারে।
- রাডার তরঙ্গ দর্পণ থেকে প্রতিফলিত হতে পারে, যেমন একটি রেডিও তরঙ্গ একটি ধাতব পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হতে পারে।
তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে:
- রাডার অ্যান্টেনা তরঙ্গ তৈরি করে, দর্পণ প্রতিফলিত করে না।
- রাডার তরঙ্গ প্রতিফলিত হলেও, তারা একটি দর্পণের মতো কাজ করে না। প্রতিফলিত তরঙ্গটি রাডার অ্যান্টেনায় ফিরে আসে, যেখানে এটি বিশ্লেষণ করা হয়।
রাডার কি ধরনের সেন্সর?
রাডার একটি দূরবর্তী সেন্সর যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ, বিশেষ করে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে বস্তুর অবস্থান, দূরত্ব, উচ্চতা, দিক, এবং গতি নির্ধারণ করে।
রাডার স্টেশন কি?
রাডার স্টেশন হল এক ধরনের ছোট সাইজের বেতার কিংবা টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের মতো। এই কেন্দ্র থেকেই আকাশে বেতার তরঙ্গ নিক্ষেপ করা হয়। যখন এই বেতার তরঙ্গ আকাশে কোনো কঠিন বস্তুতে আঘাত করে ঠিক তখনই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এই প্রত্যাবর্তনকারী বা ফিরে আসা তরঙ্গই ধরা পড়ে রাডারের গ্রাহক যন্ত্রে। রাডারের গ্রাহক যন্ত্রের অংশটি প্রায় টেলিভিশনের মতো।
এখানে প্রত্যাবর্তনকারী বা ফিরে আসা তরঙ্গের আলোর সংকেতই পর্দায় ভেসে উঠে আলোর বিন্দু রূপে। রাডারের এই তরঙ্গ খুবই দ্রুত ছুটে যায় এবং দূরের বস্তুতে আঘাত করে আবার ফিরে আসে এবং আলোর বিন্দু হয়ে পর্দায় ভেসে উঠে আর এই প্রক্রিয়াটি চোখের পলকে ঘটে যায়।
বাংলাদেশের রাডার স্টেশন কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশে কতগুলি রাডার স্টেশন আছে এবং সেগুলি কোথায় অবস্থিত তা সরকারীভাবে প্রকাশ করা হয় না। তবে, বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় যে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রাডার স্টেশন রয়েছে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাডার স্টেশন:
- ঢাকা: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রামনা।
- চট্টগ্রাম: পতেঙ্গা, ফৌজদারহাট।
- সিলেট: ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
- রাজশাহী: শাহ মখদুম বিমানবন্দর।
- বরিশাল: বরিশাল বিমানবন্দর।
- খুলনা: খান জাহান আলি বিমানবন্দর (নির্মাণাধীন বিমানবন্দর)।
- সেন্টমার্টিন: সেন্টমার্টিন।
- কক্সবাজার: রাখাইন উপকূল।
এই রাডার স্টেশনগুলি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন:
- বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ: বিমানবন্দরে বিমানের অবস্থান ট্র্যাক করতে এবং বিমান সংঘর্ষ রোধ করতে।
- আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ: বৃষ্টি, তুষার, ঝড় এবং অন্যান্য আবহাওয়ার ঘটনা সনাক্ত করতে।
- সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণ: জাহাজ এবং নৌকা ট্র্যাক করতে এবং নৌ দুর্ঘটনা রোধ করতে।
- সীমান্ত নজরদারি: সীমান্ত অতিক্রমণ এবং পাচার রোধ করতে।
- বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা: বন্যা, ঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তথ্য সংগ্রহ করতে।
রাডার প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং নতুন রাডার স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে রাডার এর ব্যবহার:
বাংলাদেশে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, এবং নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে রাডার ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন