রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটর কি?

রেফ্রিজারেটর, যা ফ্রিজ নামেও পরিচিত, একটি বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র যা খাবার সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে। যা খাবার এবং পানীয় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করে। এটি খাদ্য নষ্ট হ্রাস এবং খাবার দীর্ঘ সময় ধরে তাজা রাখতে সাহায্য করে কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি ধীর করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটর হল এমন একটি যন্ত্র যা খাবার এবং পানীয়কে শীতল রাখে। এটি একটি কম্প্রেসর ব্যবহার করে রেফ্রিজারেটরের ভিতরের দিকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করাই, যা খাবারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাজা রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটর কত প্রকার ও কি কি?

রেফ্রিজারেটরের প্রকারভেদ:

বাজারে বিভিন্ন ধরণের রেফ্রিজারেটর পাওয়া যায়, প্রতিটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। আপনার জন্য সঠিক রেফ্রিজারেটর বেছে নেওয়ার সময়, আপনার চাহিদা, বাজেট এবং উপলব্ধ জায়গা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

রেফ্রিজারেটর মূলত দুই প্রকারের:

  • টপ-ফ্রিজার রেফ্রিজারেটর: এই ধরণের রেফ্রিজারেটরে, ফ্রিজার উপরে এবং রেফ্রিজারেটর নীচে অবস্থিত। এগুলি সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং কম জায়গা নেয়।
  • বটম-ফ্রিজার রেফ্রিজারেটর: এই ধরণের রেফ্রিজারেটরে, ফ্রিজার নীচে এবং রেফ্রিজারেটর উপরে অবস্থিত। এগুলি প্রায়শই টপ-ফ্রিজার মডেলের চেয়ে বেশি ক্ষমতা প্রদান করে এবং এটি আরও সুবিধাজনক কারণ ফ্রিজারের অংশটি মেঝের কাছাকাছি অবস্থিত। সাধারণত টপ-ফ্রিজ রেফ্রিজারেটরের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।

এছাড়াও, রেফ্রিজারেটরকে নিম্নলিখিত বিভাগেও শ্রেণীবদ্ধ করা যাই:

  • সাইড-বাই-সাইড রেফ্রিজারেটর: এই ধরণের রেফ্রিজারেটরে, ফ্রিজার এবং রেফ্রিজারেটর পাশাপাশি অবস্থিত। এই রেফ্রিজারেটরগুলিতে দুটি দরজা পাশাপাশি অবস্থিত, একটি রেফ্রিজারেটরের অংশের জন্য এবং একটি ফ্রিজারের অংশের জন্য। এগুলি প্রচুর পরিমাণে স্টোরেজ স্পেস অফার করে এবং বৃহৎ পরিবার বা যারা প্রচুর খাবার রান্না করে তাদের জন্য একটি ভাল বিকল্প।

  • ফ্রেঞ্চ-ডোর রেফ্রিজারেটর: এই ধরণের রেফ্রিজারেটরে, ফ্রিজারের দুটি দরজা রয়েছে যা পাশাপাশি বা মাঝখানে খোলে। এগুলি সাইড-বাই-সাইড মডেলের চেয়ে আরও বেশি অ্যাক্সেস স্পেস অফার করে এবং প্রায়শই আরও বিলাসবহুল বৈশিষ্ট্য সহ আসে। সাধারণত সাইড-বাই-সাইড রেফ্রিজারেটরের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।

  • মিনি-রেফ্রিজারেটর: এই ধরণের রেফ্রিজারেটরগুলি ছোট এবং স্ব-নিহিত, ছোট রান্নাঘর বা অফিসের জন্য উপযুক্ত। এগুলি সাধারণত প্রচুর স্টোরেজ স্পেস অফার করে না, তবে যারা কম খাবার রাখেন তাদের জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

  • ড্রয়ার-স্টাইল রেফ্রিজারেটর: এই রেফ্রিজারেটরগুলিতে ফ্রিজারের অংশের জন্য নিচে ড্রয়ার রয়েছে এবং রেফ্রিজারেটরের অংশের জন্য উপরে দরজা রয়েছে।

  • কাউন্টার-ডেপথ রেফ্রিজারেটর: কাউন্টার-ডেপথ রেফ্রিজারেটর হল এমন একটি ধরণের রেফ্রিজারেটর যা আপনার রান্নাঘরের কাউন্টারটপের সাথে সমতলভাবে বসে। এর মানে হল যে তারা গভীরতায় স্ট্যান্ডার্ড রেফ্রিজারেটরের চেয়ে ছোট। কাউন্টার-ডেপথ রেফ্রিজারেটর সাধারণত 24 থেকে 30 ইঞ্চি গভীর হয়, নিয়মিত রেফিজারেটরের 30 থেকে 36 ইঞ্চি গভীরতার তুলনায়। কাউন্টার-ডেপথ রেফ্রিজারেটরগুলি সাধারণত ছোট রান্নাঘরের জন্য ব্যবহৃত হয়।

রেফ্রিজারেটর এর কাজ কি?

রেফ্রিজারেটরের প্রাথমিক কাজ হলো খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য ঠান্ডা রাখা এবং সংরক্ষণ করা। রেফ্রিজারেটরের মূল কাজ হল তাপ সরিয়ে ফেলা এবং একটি শীতল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটি আমাদের খাদ্য দ্রব্যগুলিকে ঠাণ্ডা এবং তাজা রাখে, এর ফলে আমরা আমাদের খাবার সংরক্ষণ করতে পারি।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটর এর বিস্তারিত কার্যাবলী নিম্নরূপ:

1. থার্মাল ইনসুলেশন: রেফ্রিজারেটরের কাঠামো অত্যন্ত ভালো থার্মাল ইনসুলেটর দিয়ে নির্মিত যা বাইরের তাপ বা গরম প্রবেশ করতে দেয় না। ফলে ভিতরের ঠান্ডা অবস্থা বজায় থাকে।

2. তাপ অপসারণ: রেফ্রিজারেটরের ভেতরে একটি কমপ্রেসর থাকে যা রেফ্রিজারেন্ট নামক একটি বিশেষ তরলকে ঘনীভূত করে। এই ঘনীভূতকরণ প্রক্রিয়া তাপ অপসারণ করে এবং রেফ্রিজারেটরের ভেতরের অংশকে ঠান্ডা করে।

3. তাপ নিরোধন: রেফ্রিজারেটরের দেয়াল এবং দরজাগুলি তাপ নিরোধক উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় যা ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া এবং বাইরের উষ্ণ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করা রোধ করে।

4. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: রেফ্রিজারেটরের একটি থার্মোস্ট্যাট থাকে যা রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে উঠে যায়, তখন থার্মোস্ট্যাট কমপ্রেসর চালু করে যাতে এটি আরও তাপ অপসারণ করতে পারে।

5. আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ: ভাল রেফ্রিজারেটরগুলোতে একটি পৃথক ডিফ্রস্টার সিস্টেম থাকে যা আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। ফলে খাদ্য বস্তুগুলো শুকিয়ে না গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।

6. অন্যান্য ফাংশন: আধুনিক রেফ্রিজারেটরগুলোতে আইস কিউব তৈরি, পানীয় জল সরবরাহ এবং অন্যান্য বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য আলাদা কম্পার্টমেন্ট থাকে।

আরও পড়ুনঃ ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটরের কিছু অতিরিক্ত কাজ:

  • আইস তৈরি করা: কিছু রেফ্রিজারেটরের একটি আইস মেকার থাকে যা বরফ তৈরি করে।

  • পানি সরবরাহ করা: কিছু রেফ্রিজারেটরের একটি ওয়াটার ডিসপেন্সার থাকে যা ঠান্ডা পানি সরবরাহ করে।

  • খাবার সংরক্ষণ করা: রেফ্রিজারেটর খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে তাজা রাখতে সাহায্য করে।

রেফ্রিজারেটরের গুরুত্ব:

রেফ্রিজারেটর আমাদের জীবনে একটি অপরিহার্য যন্ত্র। এটি আমাদের খাবারকে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে এবং খাবারের অপচয় কমাতে সাহায্য করে। রেফ্রিজারেটর গুলি আমাদের বিভিন্ন ধরণের খাবার উপভোগ করতে দেয় যা অন্যথায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।

সুতরাং, রেফ্রিজারেটর ব্যবহৃত ভোজ্য দ্রব্যগুলোকে নিরাপদে ঠান্ডা রাখা এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে খাদ্য অপচয় রোধ করে।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

রেফ্রিজারেটর কিভাবে কাজ করে?

রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ নামেও পরিচিত, একটি বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র যা খাবার এবং পানীয় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করে। এটি খাদ্য নষ্ট হ্রাস এবং খাবার তাজা রাখতে সাহায্য করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটরের কার্যপ্রণালী:

  • কম্প্রেসর: রেফ্রিজারেটরের হৃদস্পন্দন হল কম্প্রেসর। এটি একটি বদ্ধ চক্রে রেফ্রিজারেন্ট নামক একটি বিশেষ তরলকে চাপ দেয় এবং ঘনীভূত করে।

  • কন্ডেন্সার: কম্প্রেসর থেকে সংকুচিত এবং উত্তপ্ত রেফ্রিজারেন্ট কন্ডেন্সারে প্রবেশ করে। এখানে, এটি বায়ুর সাথে তাপ বিনিময় করে এবং তরলে পরিণত হয়। এখানে, এটি বাইরের বাতাসে তাপ ছেড়ে তরলে পরিণত হয়।

  • এক্সপ্যানশন ভাল্ব: তরল রেফ্রিজারেন্ট এক্সপ্যানশন ভাল্ব নামক একটি সংকীর্ণ পথের মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে চাপ হ্রাস পায়।। এই ভাল্বটি রেফ্রিজারেন্টকে দ্রুত প্রসারিত করে, যা এটিকে আরও ঠান্ডা করে।

  • ইভাপোরেটর: ঠান্ডা এবং বাষ্পীভূত রেফ্রিজারেন্ট ইভাপোরেটর নামক কুণ্ডলীতে প্রবেশ করে। চাপ কমে যাওয়ার সাথে সাথে, রেফ্রিজারেন্ট বাষ্পীভূত হয়ে গ্যাসে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াটি তাপ শোষণ করে, যা রেফ্রিজারেটরের ভেতরের অংশকে ঠান্ডা করে। এখানে, এটি ফ্রিজের ভিতরে থেকে তাপ শোষণ করে এবং বাষ্পে পরিণত হয়।

  • চক্র পুনরাবৃত্তি: এই বাষ্পীভূত বা গ্যাসীয় রেফ্রিজারেন্ট আবার কম্প্রেসরের দিকে টানা হয় এবং চক্রটি পুনরাবৃত্তি হয়।

এই প্রক্রিয়াটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে এবং এভাবেই রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা কম রাখে।

রেফ্রিজারেটরের বিভিন্ন অংশ

রেফ্রিজারেটরের প্রধান অংশগুলো হলো:

1. কমপ্রেসর: এটি রেফ্রিজারেটরের "হৃদস্পন্দন"। কম্প্রেসর রেফ্রিজারেন্ট নামক একটি বিশেষ তরলকে চাপ দেয় এবং ঘনীভূত করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

2. কনডেন্সার: কনডেন্সার রেফ্রিজারেটরের বাইরে অবস্থিত, সাধারণত রেফ্রিজারেটরের পিছনে অবস্থিত। এটি কমপ্রেসর থেকে আসা গরম, গ্যাসীয় রেফ্রিজারেন্টকে তরলে পরিণত করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

3. এক্সপ্যানশন ভাল্ভ: এক্সপ্যানশন ভাল্ভ রেফ্রিজারেটরের ভেতরে অবস্থিত। এটি তরল রেফ্রিজারেন্টকে আবার গ্যাসে পরিণত করে, যা তাপ শোষণ করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

4. ইভাপোরেটর: ইভাপোরেটর রেফ্রিজারেটরের ভেতরে অবস্থিত। এটি গ্যাসীয় রেফ্রিজারেন্টকে তরলে পরিণত করে, যা তাপ শোষণ করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

5. থার্মোস্ট্যাট: থার্মোস্ট্যাট রেফ্রিজারেটরের ভিতরে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজন অনুসারে কম্প্রেসরকে চালু এবং বন্ধ করে। থার্মোস্ট্যাট রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

6. ইনসুলেশন: ইনসুলেশন রেফ্রিজারেটরের ভেতরের ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া এবং বাইরের উষ্ণ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করা রোধ করে।

7. ডোর সিল: ডোর সিল রেফ্রিজারেটরের দরজা এবং ফ্রেমের মধ্যে একটি আঁটসাঁট ফিট তৈরি করে, যা ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া রোধ করে।

8. লাইট: লাইট রেফ্রিজারেটরের ভেতরের অংশ দেখতে সাহায্য করে। লাইটটি সাধারণত দরজার উপরে অবস্থিত। কিছু রেফ্রিজারেটরে অভ্যন্তরীণ সেন্সর থাকে যা দরজা খোলার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইট চালু করে।

9. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ডায়াল: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ডায়াল আপনাকে রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা সেট করতে সাহায্য করে।

10. আইস মেকার: আইস মেকার বরফ তৈরি করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

11. ওয়াটার ডিসপেন্সার: ওয়াটার ডিসপেন্সার ঠান্ডা পানি সরবরাহ করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

12. শেল্ফ: শেল্ফ খাবার সংরক্ষণের জন্য জায়গা প্রদান করে।

13. ড্রয়ার: রেফ্রিজারেটরের নিচের অংশে সাধারণত বিভিন্ন ড্রয়ার থাকে, যেমন:

  • ক্রিস্পার ড্রয়ার: ফল এবং শাকসবজি রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি উচ্চ আর্দ্রতা স্তর বজায় রাখে যা ফল এবং শাকসবজিকে তাজা রাখতে সাহায্য করে।
  •  মিট ড্রয়ার: মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো খাবার রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত রেফ্রিজারেটরের অন্যান্য অংশের চেয়ে ঠান্ডা থাকে।
  • ডেলি ড্রয়ার: পনির, কাটা মাংস এবং অন্যান্য ঠান্ডা কাটের মতো খাবার রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত ক্রিস্পার ড্রয়ারের চেয়ে কম আর্দ্রতা স্তর বজায় রাখে। 

14. ডিফ্রস্টার (Defroster): এটি পাইপ লাইনগুলোতে জমে থাকা বরফ গলিয়ে দেয়।

15. ক্যাবিনেট: রেফ্রিজারেটরের বাইরের আবরণ। রেফ্রিজারেটরের বাইরের থার্মাল ইনসুলেটেড কাঠামো যা শীতলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ধাতু, প্লাস্টিক বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি হতে পারে। ক্যাবিনেটের ভেতরে ইনসুলেশন থাকে যা ঠান্ডা বাতাস ধরে রাখতে সাহায্য করে।

16. দরজা: ক্যাবিনেট খোলা এবং বন্ধ করার জন্য। দরজায় একটি ডোর সিল থাকে যা ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া রোধ করে। কিছু দরজায় ওয়াটার ডিসপেন্সার এবং আইস মেকার থাকে।

অতিরিক্ত উপাদান:

1. ডিজিটাল ডিসপ্লে: কিছু রেফ্রিজারেটরে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকে যা আপনাকে রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা, ফিল্টারের অবস্থা এবং অন্যান্য তথ্য দেখতে দেয়।

2. WiFi সংযোগ: কিছু উন্নত রেফ্রিজারেটরগুলিতে WiFi সংযোগ থাকে যা আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যম রিমোট কন্ট্রোল (Remote Control) দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবেন।

রেফ্রিজারেটরের বিভিন্ন ধরন এবং মডেল রয়েছে, তাই সুনির্দিষ্ট অংশগুলি রেফ্রিজারেটরের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

রেফ্রিজারেটর ব্যবহারের নিয়মাবলী

রেফ্রিজারেটর ব্যবহারের নিয়মাবলী: রেফ্রিজারেটর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য একটি যন্ত্র। খাবার টাটকা রাখা এবং দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য এটি অপরিহার্য। তবে, রেফ্রিজারেটর সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে খাবার নষ্ট হতে পারে এবং রেফ্রিজারেটরের কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে। 

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনার রেফ্রিজারেটর থেকে সর্বোচ্চ ব্যবহার পেতে এবং খাবারের অপচয় রোধ করতে, নীচের নিয়মাবলী অনুসরণ করুন:

1. রেফ্রিজারেটরের অবস্থান:
  • রেফ্রিজারেটর সমতল, শক্তিশালী পৃষ্ঠে রাখুন।
  • দরজা সহজে খোলা এবং বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখুন।
  • রেফ্রিজারেটরকে সরাসরি সূর্যের আলো, চুলা বা অন্যান্য তাপ উৎস থেকে দূরে রাখুন।
  • ভাল বায়ু চলাচলের জন্য রেফ্রিজারেটরের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন।
2. সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখুন:
  • রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা 40°F (4°C) এ সেট করুন বা তার নিচে সেট করা উচিত।
  • ফ্রিজারের তাপমাত্রা 0°F (-18°C) এ সেট করুন।
  • থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • বারবার দরজা খোলা বন্ধ করবেন না।
3. খাবার সংরক্ষণ:
  • শুধুমাত্র তাজা এবং পরিষ্কার খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখুন।
  • গরম খাবার ঠান্ডা করে তারপর রেফ্রিজারেটরে রাখুন।
  • খাবার ঢেকে রাখুন বা এয়ারটাইট পাত্রে রাখুন।
  • ফল এবং শাকসবজি ধুয়ে শুকিয়ে তারপর রেফ্রিজারেটরে রাখুন এতে অনেক দিন ভালো থাকবে।
  • মাংস, মাছ এবং ডিম আলাদা আলাদা রাখুন।
4. নিয়মিত পরিষ্কার করুন:
  • রেফ্রিজারেটরের ভেতর এবং বাইরের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • রেফ্রিজারেটরের ভেতরের অংশ নিয়মিত মুছুন।
  • কুঁচকানো বা ভাঙা শেল্ফ এবং ড্রোয়ার প্রতিস্থাপন করুন।
  • ডোর সিল পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
  • ছোট ছোট টুকরো খাবার রেফ্রিজারেটরের ভেতরে পড়লে দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন।
5. ফিল্টার পরিবর্তন করুন:
  • রেফ্রিজারেটরের ফিল্টার নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
  • ফিল্টার পরিষ্কার করার নির্দেশাবলীর জন্য আপনার রেফ্রিজারেটরের ম্যানুয়াল দেখুন।
6. দরজার রাবার সিল পরিষ্কার এবং মেরামত করুন:
  • দরজার রাবার সিল যদি নোংরা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে এটি পরিষ্কার বা প্রতিস্থাপন করুন।
  • একটি ভালোভাবে বন্ধ দরজা ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া রোধ করে।
7. ওভারলোড করবেন না:
  • রেফ্রিজারেটরের শেল্ফ এবং ড্রয়ারগুলোতে অতিরিক্ত খাবার রাখবেন না।
  • এটি বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
8. রেফ্রিজারেটর অতিরিক্ত ভরাট করবেন না:
  • রেফ্রিজারেটরের বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন।
  • খাবারের প্যাকেটগুলো একে অপরের উপর স্তরে স্তরে না রেখে কিছুটা ফাঁকা রেখে  রাখুন।
9. গরম খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখার আগে ঠান্ডা করুন:
  • গরম খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য খাবার নষ্ট হতে পারে।
10. রেফ্রিজারেটরের দরজা বন্ধ রাখুন:
  • দরজা খোলা থাকলে ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যায় এবং রেফ্রিজারেটরকে আরও বেশি কাজ করতে হয়।
11. পুরানো খাবার ফেলে দিন:
  • রেফ্রিজারেটরের ভেতরে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা খাবার রাখবেন না।
  • এটি দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্যান্য খাবার নষ্ট করতে পারে।
12. কাঁচা মাংস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন:
  • কাঁচা মাংস, মাছ, এবং মুরগিকে সিল করা পাত্রে বা প্লাস্টিকের রেপারে  মুড়িয়ে রাখুন।
  • এটি অন্যান্য খাবারে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে।
13. বিশেষ যত্ন:
  • যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি থেকে চলে যান তবে রেফ্রিজারেটরটি আনপ্লাগ করুন (যদি এটি খালি থাকে)।
  • দীর্ঘ সময় ধরে খাবার ছাড়া রেফ্রিজারেটর চালু রাখা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পক্ষে নয়।
  • রেফ্রিজারেটরের যত্ন নেওয়ার ফলে আপনি বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবেন এবং রেফ্রিজারেটরের আয়ু বাড়াতে পারবেন।
14. নির্দেশাবলী পড়ুন:
  • আপনার রেফ্রিজারেটরের সাথে আসা মালিকের ম্যানুয়ালটি পড়ুন।
  • এটিতে রেফ্রিজারেটরটি কীভাবে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করবেন এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি সমাধান করার নির্দেশাবলী থাকবে।
  • কোন সমস্যা হলে একজন যোগ্য টেকনিশিয়ানকে ডাকুন।

রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসারের কাজ কি?

রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ যা রেফ্রিজারেটরকে ঠান্ডা করে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

এটি চারটি প্রধান পদক্ষেপে কাজ করে:

১. সংকোচন:
  • কম্প্রেসার রেফ্রিজারেন্ট নামক একটি বিশেষ তরল গ্রহণ করে।
  • তারপর এটি রেফ্রিজারেন্টকে সংকুচিত করে, যার ফলে তাপমাত্রা এবং চাপ বৃদ্ধি পায়।
২. ঘনীভবন:
  • উচ্চ চাপের কারণে, গরম, গ্যাসীয় রেফ্রিজারেন্ট রেফ্রিজারেটরের কনডেন্সার নামক একটি অংশে প্রেরিত হয়।
  • কনডেন্সার রেফ্রিজারেটরের বাইরের অংশে অবস্থিত এবং এটি ঘরের বাতাস দ্বারা ঠান্ডা হয়।
  • ঠান্ডা হওয়ার সময়, গ্যাসীয় রেফ্রিজারেন্ট ঘনীভূত হয় এবং তরল আকারে পরিণত হয়।
৩. বাষ্পীভবন:
  • তরল রেফ্রিজারেন্ট রেফ্রিজারেটরের এক্সপ্যানশন ভেলাভ নামক একটি অংশে প্রেরিত হয়।
  • এক্সপ্যানশন ভেলাভ রেফ্রিজারেটরের ভেতরে অবস্থিত এবং এটি রেফ্রিজারেটরের ভেতরের বাতাস দ্বারা গরম হয়।
  • গরম হওয়ার সময়, তরল রেফ্রিজারেন্ট বাষ্পীভূত হয় এবং গ্যাসীয় আকারে পরিণত হয়।
৪. পুনর্ব্যবহার:
  • বাষ্পীভূত, ঠান্ডা রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস কম্প্রেসার-এ ফিরে আসে এবং চক্রটি পুনরায় শুরু হয়।
  • রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার ছাড়া, রেফ্রিজারেটর কাজ করবে না। এটি রেফ্রিজারেটরের ভেতরে তাপমাত্রা কম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করে।

রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসার সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত তথ্য:

  • কম্প্রেসার বিভিন্ন আকার এবং শক্তির পাওয়া যায়।
  • রেফ্রিজারেটরের আকার এবং ধরণের উপর নির্ভর করে কোন ধরণের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হবে।
  • কম্প্রেসার রেফ্রিজারেটরের সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচকারী অংশগুলির মধ্যে একটি।
  • নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসারকে দীর্ঘ সময় ধরে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
  • কম্প্রেসার ছাড়া, রেফ্রিজারেটর কাজ করবে না।

কম্প্রেসার সমস্যার কিছু লক্ষণ:

  • রেফ্রিজারেটর যথেষ্ট ঠান্ডা হচ্ছে না।
  • কম্প্রেসার থেকে অস্বাভাবিক শব্দ আসছে।
  • রেফ্রিজারেটর বেশি বিদ্যুৎ খরচ করছে।
  • যদি আপনি এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনটি লক্ষ্য করেন, তাহলে একজন যোগ্য টেকনিশিয়ানকে ডাকা উচিত।

রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা:

রেফ্রিজারেটরের সঠিক তাপমাত্রা খাবার নিরাপদ এবং তাজা রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রা খুব বেশি হলে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং খাবার নষ্ট হতে পারে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তাপমাত্রা খুব কম হলে খাবার জমাট বাঁধতে পারে।

সাধারণ নির্দেশিকা:
  • রেফ্রিজারেটরের মোট তাপমাত্রা 4°C (39°F) এর মধ্যে রাখা উচিত।
  • ফ্রিজারের তাপমাত্রা -18°C (0°F) এর নিচে রাখা উচিত।
বিভিন্ন খাবারের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা:
  • মাংস, মুরগি এবং মাছ: 0-2°C (32-36°F) বা তার কম।
  • ডিম: 4°C (39°F)
  • দুগ্ধজাত খাবার: 4°C (39°F)
  • ফল এবং শাকসবজি: 4-10°C (39-50°F)
  • সস এবং মেরিনেড: 4°C (39°F)
  • ঔষধ: 4°C (39°F) বা নির্মাতার নির্দেশনা অনুসারে।
  • আইসক্রিম: -18°C (0°F)
আপনি রেফ্রিজারেটরের থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে পারেন। থার্মোমিটার রেফ্রিজারেটরের মূল অংশে, শাকসবজি ড্রোয়ার থেকে দূরে রাখুন।
রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু টিপস:
  • থার্মোস্ট্যাট সেটিং পরীক্ষা করুন: নিশ্চিত করুন যে থার্মোস্ট্যাট সঠিক তাপমাত্রায় সেট করা আছে।
  • দরজা বন্ধ রাখুন: দরজা বেশিক্ষণ খোলা রাখলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • রেফ্রিজারেটর অতিরিক্ত ভরাট করবেন না: এটি বাতাসের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • গরম খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখার আগে ঠান্ডা করুন: গরম খাবার রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে।
  • নিয়মিত রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার করুন: এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করবে।
সঠিক তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটর রাখা আপনার খাবারকে নিরাপদ এবং তাজা রাখতে সাহায্য করবে।

তাপ ইঞ্জিন এবং রেফ্রিজারেটরের মধ্যে পার্থক্য:

তাপ ইঞ্জিন এবং রেফ্রিজারেটর দুটোই তাপগতিবিদ্যার নীতির উপর কাজ করে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য এবং কার্যপ্রণালী ভিন্ন।

তাপ ইঞ্জিন:

উদ্দেশ্য: তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক কাজে রূপান্তর করা।

কার্যপ্রণালী: 
  • উচ্চ তাপমাত্রার উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে।
  • তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক কাজে রূপান্তর করে (যেমন: গাড়ি চালানো, বিদ্যুৎ উৎপাদন)।
  • নিম্ন তাপমাত্রার উৎসে তাপ বের করে দেয়।
  • উদাহরণ: গাড়ির ইঞ্জিন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জেট ইঞ্জিন।

রেফ্রিজারেটর:

উদ্দেশ্য: একটি স্থানকে অন্য পরিবেশের চেয়ে ঠান্ডা রাখা।

কার্যপ্রণালী: 
  • ঠান্ডা স্থান থেকে তাপ শোষণ করে।
  • উচ্চ তাপমাত্রার উৎসে তাপ বের করে দেয়।
  • শোষিত তাপের চেয়ে কম পরিমাণে কাজ করে।
  • উদাহরণ: ঘরের রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার।

মূল পার্থক্য:

  • তাপ ইঞ্জিন তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক কাজে রূপান্তর করে, রেফ্রিজারেটর তাপ স্থানান্তর করে।
  • তাপ ইঞ্জিন উচ্চ তাপমাত্রার উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে, রেফ্রিজারেটর ঠান্ডা স্থান থেকে তাপ শোষণ করে।
  • তাপ ইঞ্জিনের কার্যকারিতা তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে, রেফ্রিজারেটরের কার্যকারিতা "কোয়েফিশিয়েন্ট অফ পারফরম্যান্স" (COP) দ্বারা নির্ধারিত হয়।
  • তাপ ইঞ্জিন সাধারণত পরিবেশে তাপ বের করে দেয়, রেফ্রিজারেটর উষ্ণ স্থানে তাপ বের করে দেয়।
  • তাপ ইঞ্জিনের নকশা এবং নির্মাণ সাধারণত রেফ্রিজারেটরের তুলনায় আরও জটিল।
তাপ ইঞ্জিন এবং রেফ্রিজারেটর উভয়ই তাপগতিবিদ্যার নীতি ব্যবহার করে কাজ করে, তবে তাদের কার্যপ্রণালী এবং উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাপ ইঞ্জিন তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক কাজে রূপান্তর করে, যেখানে রেফ্রিজারেটর একটি নির্দিষ্ট স্থানকে ঠান্ডা করে।

ফ্রিজ এবং রেফ্রিজারেটরের মধ্যে পার্থক্য:

সংক্ষেপে:

ফ্রিজ: 
  • খাবার ঠান্ডা রাখে, তবে হিমাঙ্কের নিচে নয়।
  • সাধারণত ছোট এবং কম ব্যয়বহুল।
  • সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য।
রেফ্রিজারেটর: 
  • খাবার ঠান্ডা রাখে এবং হিমাঙ্কের নিচেও জমাট বাঁধে।
  • সাধারণত বড় এবং বেশি ব্যয়বহুল।
  • সাধারণত বাড়ির জন্য।
বিস্তারিত:

তাপমাত্রা:
  • ফ্রিজ: খাবারকে 4°C (39°F) এর উপরে ঠান্ডা রাখে।
  • রেফ্রিজারেটর: খাবারকে 4°C (39°F) এর উপরে ঠান্ডা রাখে এবং -18°C (0°F) এর নিচে জমাট বাঁধে।
আকার এবং মূল্য:
  • ফ্রিজ: সাধারণত ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হয়।
  • রেফ্রিজারেটর: সাধারণত বড় এবং বেশি ব্যয়বহুল হয়।
ব্যবহার:
  • ফ্রিজ: সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, যেমন অফিস, ডর্মিটরি, বা ছোট রান্নাঘর।
  • রেফ্রিজারেটর: সাধারণত বাড়ির জন্য, যেখানে বেশি পরিমাণে খাবার সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:
  • ফ্রিজ: কিছু ফ্রিজে ছোট ফ্রিজার থাকতে পারে, যা আইসক্রিম বা অন্যান্য হিমায়িত খাবার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রেফ্রিজারেটর: রেফ্রিজারেটরে সাধারণত ফ্রিজার, আইস মেকার, ওয়াটার ডিসপেন্সার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে।

কোনটি আপনার জন্য সঠিক?

আপনার জন্য কোন ধরনের ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরটি সঠিক তা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং বাজেটের উপর। যদি আপনার কেবলমাত্র কিছু খাবার ঠান্ডা রাখার প্রয়োজন হয় এবং আপনার বাজেট কম থাকে, তাহলে একটি ফ্রিজ আপনার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। যদি আপনার বেশি পরিমাণে খাবার সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় এবং আপনি ফ্রিজার, আইস মেকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য চান, তাহলে একটি রেফ্রিজারেটর আপনার জন্য ভাল পছন্দ হতে পারে।

মনে রাখবেন: "ফ্রিজ" শব্দটি কখনও কখনও "রেফ্রিজারেটর" এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিছু লোক "ফ্রিজ" কে কেবলমাত্র ফ্রিজারকে নির্দেশ করতে ব্যবহার করে, যখন "রেফ্রিজারেটর" কে পুরো যন্ত্রটিকে নির্দেশ করতে ব্যবহার করে।

আশা করি এই তথ্য আপনাকে সাহায্য করবে!

রেফ্রিজারেটর কে আবিষ্কার করেন?

রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কারের কৃতিত্ব একক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। বরং, বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর দীর্ঘকালীন গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে রেফ্রিজারেটর আবিষ্কৃত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কিছু অবদানকারী:
  • অলিভার ইভান্স: ১৮০৫ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী অলিভার ইভান্স বরফ তৈরির একটি যন্ত্র তৈরি করেন যা কৃত্রিম ঠান্ডা তৈরির নীতি প্রদর্শন করে।
  • জ্যাকব পার্কিন্স: ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জ্যাকব পার্কিন্স এথার ব্যবহার করে বরফ তৈরির একটি যন্ত্র তৈরি করেন।
  • অলিভার ওয়েন্ডেলস হোলমস: ১৮৪২ সালে আমেরিকান চিকিৎসক এবং লেখক অলিভার ওয়েন্ডেলস হোলমস এথার ব্যবহার করে বরফ তৈরির একটি যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট লাভ করেন।
  • জন গোরি: ১৮৪২ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী জন গোরি বায়ু সংকুচনের নীতি ব্যবহার করে বরফ তৈরির একটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র তৈরি করেন।
  • বিলিম ম্যাককুল: ১৮৪৯ সালে আমেরিকান চিকিৎসক বিলিম ম্যাককুল কম্প্রেশন এবং তরলীকরণ চক্র ব্যবহার করে বরফ তৈরির একটি যন্ত্র তৈরি করেন।
  • থার্মাস কোম্পানি: ১৮৯৪ সালে জার্মান কোম্পানি থার্মাস বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত প্রথম গৃহস্থালীর রেফ্রিজারেটর তৈরি করে।
  • ফ্রেড ডব্লিউ উলফ: ১৯১৩ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী ফ্রেড ডব্লিউ উলফ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত প্রথম বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন।
রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কার ও উন্নয়নে অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর অবদান রয়েছে। আধুনিক রেফ্রিজারেটর গুলো বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।

রেফ্রিজারেটরে কত তাপমাত্রায় দুধ সংরক্ষণ করা হয়?

রেফ্রিজারেটরে দুধ সংরক্ষণের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস (39 ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এই তাপমাত্রায়, দুধে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং দুধ নষ্ট হওয়ার হার ধীর গতিতে থাকে।

রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কিছু টিপস:

দুধ কেনার পর: 

  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেফ্রিজারেটরে রাখুন।
  • যদি আপনি বাইরে থাকেন, তাহলে দুধকে একটি ঠান্ডা ব্যাগে রাখুন।

রেফ্রিজারেটরে: 

  • দুধকে সবচেয়ে ঠান্ডা অংশে রাখুন, সাধারণত নিচের দিকের শেল্ফে।

  • দুধের পাত্রের মুখ বন্ধ রাখুন।

  • অন্যান্য খাবারের সাথে দুধের পাত্র স্পর্শ করবেন না।

সাধারণ তথ্য: 

  • প্যাস্তুরাইজড দুধ সাধারণত 7-10 দিন পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে ভাল থাকে।

  • হোমোজেনাইজড দুধ সাধারণত 10-14 দিন পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে ভাল থাকে।

  • UHT দুধ সাধারণত 3-6 মাস পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে ভাল থাকে।

  • খোলা কাঁচা দুধ সাধারণত 2-3 দিন পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে ভাল থাকে।

দুধ নষ্ট হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার উপায়:

  • গন্ধ: নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধের একটি খারাপ গন্ধ থাকে।

  • স্বাদ: নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধের একটি টক বা তেঁতো স্বাদ থাকে।

  • দেখা: নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধে ফুটো, ঘনভাব বা রঙের পরিবর্তন হতে পারে।

রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হিমায়ক পদার্থের নাম কি?

রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হিমায়ক পদার্থকে রেফ্রিজারেন্ট বলা হয়। এটি একটি রাসায়নিক যৌগ যা তরল থেকে গ্যাসে পরিবর্তিত হওয়ার সময় তাপ শোষণ করে এবং গ্যাস থেকে তরলে পরিবর্তিত হওয়ার সময় তাপ নির্গত করে। এই প্রক্রিয়াটি রেফ্রিজারেটরকে শীতল করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আধুনিক রেফ্রিজারেটরে হিমায়ক পদার্থ হিসেবে হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (HFCs), বা হাইড্রোকার্বন (HCs) ব্যবহার করা হয়।
  • CFCs (chlorofluorocarbons): CFCs (যেমন R-12) একসময় সবচেয়ে সাধারণ রেফ্রিজারেন্ট ছিল, কিন্তু পরিবেশগত কারণে এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এগুলি এখন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয় এবং অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • HCFCs (hydrochlorofluorocarbons): HFCs (যেমন R-134a) CFCs-এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলিও কিছুটা পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ। CFCs এর চেয়ে কম ক্ষতিকারক, তবে এগুলি এখনও পরিবেশের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর।
  • HFCs (hydrofluorocarbons): CFCs এবং HCFCs এর তুলনায় পরিবেশের জন্য বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ।
  • হাইড্রোকার্বন (HCs): HCs (যেমন প্রোপেন, আইসোবিউটেন) HFCs-এর তুলনায় আরও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেন্ট: প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেন্ট, যেমন অ্যামোনিয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড, পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং CFCs, HCFCs এবং HFCs এর জন্য একটি ভাল বিকল্প।

বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটরের উপযুক্ত তাপমাত্রা কত?

বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটরের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল 3-4°C (37-39°F)।

বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটরের উপযুক্ত তাপমাত্রা সাধারণত 37 থেকে 39 ডিগ্রি ফারেনহাইট (3 থেকে 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত রাখা উচিত। এই তাপমাত্রায়, খাবার সংরক্ষণ করার এবং ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে, এটি মনে রাখবেন যে বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়।

রেফ্রিজারেটর থেকে কোন গ্যাস নির্গত হয়?

আধুনিক রেফ্রিজারেটর থেকে কোনও ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় না।

পুরানো রেফ্রিজারেটরে (যা ১৯৯০-এর দশকের আগে তৈরি করা হয়েছিল) ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFCs) নামক একটি গ্যাস ব্যবহার করা হত। CFCs ওজোন স্তর ক্ষয় এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অবদান রাখে। এই কারণে, CFCs ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আধুনিক রেফ্রিজারেটরে আর এটি ব্যবহার করা হয় না।

আধুনিক রেফ্রিজারেটরে নিম্নলিখিত পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার করা হয়:
  • হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (HFCs): CFCs-এর তুলনায় কম ক্ষতিকর, তবে এখনও কিছু পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ।
  • হাইড্রোকার্বন (HCs): HFCs-এর তুলনায় আরও পরিবেশবান্ধব, তবে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে।
আপনার রেফ্রিজারেটর কোন ধরণের হিমায়ক পদার্থ ব্যবহার করে তা নির্ধারণ করার সর্বোত্তম উপায় হল ম্যানুয়াল পরীক্ষা করা।

রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তরলের নাম কোনটি?

আধুনিক রেফ্রিজারেটরে তরল নয়, গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এই গ্যাসগুলিকে হিমায়ক বলা হয় এবং এগুলি রেফ্রিজারেটরের শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিভিন্ন ধরণের হিমায়ক ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
  • হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (HFCs): CFCs-এর তুলনায় কম ক্ষতিকর, তবে এখনও কিছু পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ।
  • হাইড্রোকার্বন (HCs): HFCs-এর তুলনায় আরও পরিবেশবান্ধব, তবে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে।

রেফ্রিজারেটর দাম

বাংলাদেশে রেফ্রিজারেটরের দাম:
রেফ্রিজারেটর কি? কত প্রকার ও কি কি? রেফ্রিজারেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রেফ্রিজারেটরের দাম নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন:
  • আকার: ছোট রেফ্রিজারেটরগুলি সাধারণত বড় রেফ্রিজারেটরের চেয়ে কম ব্যয়বহুল।
  • বৈশিষ্ট্য: ফ্রিজার, আইস মেকার, ওয়াটার ডিসপেন্সার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সহ রেফ্রিজারেটরগুলি সাধারণত বৈশিষ্ট্যহীন রেফ্রিজারেটরের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
  • ব্র্যান্ড: জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটরগুলি সাধারণত কম পরিচিত ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটরের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
কিছু সাধারণ দামের পরিসর:
  • ছোট রেফ্রিজারেটর (মিনি ফ্রিজ): ৳ 8,000 থেকে ৳ 20,000
  • মাঝারি আকারের রেফ্রিজারেটর (সিঙ্গল ডোর): ৳ 20,000 থেকে ৳ 50,000
  • বড় রেফ্রিজারেটর (ডাবল ডোর): ৳ 50,000 থেকে ৳ 2,00,000
জনপ্রিয় রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ড এবং তাদের দামের কিছু উদাহরণ:
  • Singer: ৳ 15,000 থেকে ৳ 1,00,000
  • LG: ৳ 25,000 থেকে ৳ 2,00,000
  • Samsung: ৳ 30,000 থেকে ৳ 2,50,000
  • Marcel: ৳ 18,000 থেকে ৳ 80,000
  • Contempo: ৳ 20,000 থেকে ৳ 1,00,000
মনে রাখবেন এই দামগুলি কেবলমাত্র অনুমান করা এবং সময়ের ব্যবধানে দাম গুলো পরবর্তীতে পরিবর্তিত হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url