অল্টারনেটর কি?
অল্টারনেটর হল এক ধরনের জেনারেটর যা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
এটি হলো একটি বিদ্যুৎ জেনারেটর যা যানবাহনের ব্যাটারিতে AC (Alternative Current) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এটি ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং যানবাহন চলমান থাকাকালীন ব্যাটারি চার্জ করে এবং যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সচল রাখে। অল্টারনেটর গাড়ির ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অল্টারনেটরের মূল অংশ হল স্টেটর এবং রোটর। স্টেটর হল স্থির অংশ যেখানে ওয়াইন্ডিং বসানো থাকে, এবং রোটর হল ঘূর্ণনশীল অংশ যা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। যখন রোটর ঘোরে, তখন এর চৌম্বক ক্ষেত্র স্টেটরের ওয়াইন্ডিংকে ছেদ করে, যার ফলে তড়িৎ-চৌম্বকীয় আবেশের নিয়ম অনুযায়ী এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। এটি পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন করে এবং সাধারণত গাড়ির ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুনঃ ডায়নামো কি? ডায়নামো কিভাবে কাজ করে? ডায়নামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
অল্টারনেটর কত প্রকার ও কি কি?
অল্টারনেটর মূলত পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে:
1. অটোমোটিভ অল্টারনেটর: আধুনিক গাড়িতে ব্যবহৃত হয়।
2. ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ অল্টারনেটর: ডিজেল-ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিটে ব্যবহৃত হয়।
3. মেরিন অল্টারনেটর: জাহাজ ও নৌবাহিনীর জন্য ব্যবহৃত হয়।
4. ব্রাশলেস অল্টারনেটর: বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
5. রেডিও অল্টারনেটর: নিম্ন ব্যান্ড রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই অল্টারনেটরগুলি ডিজাইনের ভিত্তিতে দুই প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে:
1. স্যালিয়েন্ট পোল টাইপ।
2. স্মুথ সিলিন্ড্রিকাল টাইপ।
এই অল্টারনেটরগুলি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, জাহাজ, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুনঃ স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে? স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
অল্টারনেটর এর কাজ কি?
অল্টারনেটর হল এক ধরনের জেনারেটর, যা পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন করে। এর মূল কাজ হল মেকানিক্যাল শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করা, যা বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়। এটি যন্ত্র যা যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে। এটি ব্যাটারি চার্জ করে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করে।
অল্টারনেটর হলো একটি যানবাহনের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ যন্ত্রাংশ যা নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পাদন করে:
1. ব্যাটারি চার্জ করা: যখন ইঞ্জিন চলমান থাকে, তখন অল্টারনেটর ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত চার্জ থাকে যাতে এটি যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চালিত করতে পারে।
2. বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চালানো: যখন ইঞ্জিন চলমান থাকে, তখন অল্টারনেটর যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চালিত করে। এর মধ্যে রয়েছে হেডলাইট, রেডিও, এয়ার কন্ডিশনিং, ওয়াইপার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
3. ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ: অল্টারনেটর যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ভোল্টেজের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে সঠিক ভোল্টেজ পায়।
অল্টারনেটর কিভাবে কাজ করে?
অল্টারনেটর হলো একটি যন্ত্র যা গাড়ির ইঞ্জিন থেকে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে।
এটি ব্যাটারি চার্জ করে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করে।
1. যান্ত্রিক শক্তি: যখন ইঞ্জিন চলে, তখন এটি একটি বেল্টের মাধ্যমে অল্টারনেটরের একটি ঘূর্ণায়মান শ্যাফটকে ঘোরায়।
2. চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি: অল্টারনেটরের ভেতরে একটি চৌম্বক থাকে যা ঘূর্ণায়মান শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ঘূর্ণন একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
3. বিদ্যুৎ উৎপাদন: চৌম্বক ক্ষেত্রটি অল্টারনেটরের কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ (AC) তৈরি করে।
4. রেকটিফিকেশন: AC বিদ্যুৎ ব্যাটারি চার্জ করতে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করার জন্য DC বিদ্যুতে রূপান্তর করতে হয়। অল্টারনেটরের ভেতরে ডায়োড ব্যবহার করে এটি করা হয়।
5. ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ: অল্টারনেটর একটি ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে আউটপুট ভোল্টেজকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে (সাধারণত 12 বা 24 ভোল্ট) নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাটারি ওভারচার্জ না হয় এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অল্টারনেটর কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে?
অল্টারনেটর হলো একটি যন্ত্র যা যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে। এটি ব্যাটারি চার্জ করে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করে।
অল্টারনেটর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া:
1. যান্ত্রিক শক্তি: যখন ইঞ্জিন চালু হয়, তখন এটি অল্টারনেটরের রোটর নামক একটি ঘূর্ণায়মান শ্যাফটকে ঘোরায়। এই রোটরটি বেল্ট দ্বারা ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত থাকে।
2. চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি: অল্টারনেটরের রোটর ঘোরে, যা এর ভেতরে থাকা চৌম্বকগুলিকেও ঘোরায়। এই ঘূর্ণায়মান চৌম্বকগুলি স্টেটরের চারপাশে একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
3. বিদ্যুৎ উৎপাদন: অল্টারনেটরের স্টেটর নামক অংশে তামার তারের কয়েল থাকে। এই কয়েলগুলি রোটরের চারপাশে স্থাপন করা হয়। যখন রোটর ঘোরে, তখন এর পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র স্টেটর কয়েলগুলিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করে। স্টেটরের কুণ্ডলীতে পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র বিদ্যুৎ প্রবাহ (AC) তৈরি করে। এই AC বিদ্যুৎ হলো অল্টারনেটরের প্রাথমিক আউটপুট।
4. রেকটিফিকেশন: যানবাহনের ব্যাটারি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চালানোর জন্য DC (Direct Current) বিদ্যুতের প্রয়োজন। তাই AC বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করতে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করার জন্য DC বিদ্যুতে রূপান্তর করতে হয়।
AC বিদ্যুৎকে DC তে রূপান্তর করার জন্য, অল্টারনেটরে ডায়োড নামক ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। ডায়োডগুলি বিদ্যুৎ প্রবাহের কেবলমাত্র একটি দিক প্রবেশ করতে দেয়, যা এটিকে DC তে রূপান্তর করে। অল্টারনেটরের ভেতরে ডায়োড ব্যবহার করে এটি করা হয়। ডায়োডগুলি AC বিদ্যুতের একদিক ("পজিটিভ") কে ব্লক করে, অন্যদিক ("নেগেটিভ") কে প্রবাহিত করে, যার ফলে DC বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
5. ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ: ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করে আউটপুট ভোল্টেজকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে (সাধারণত 12 বা 24 ভোল্ট) নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাটারি ওভারচার্জ হয় না এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
6. ব্যাটারি চার্জ করা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ করা: রেক্টিফাই করা DC বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে প্রেরিত হয়, যেখানে এটি সংরক্ষণ করা হয়। এটি যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়ও সরবরাহ করা হয়, যা হেডলাইট, রেডিও, এয়ার কন্ডিশনিং এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে।
সংক্ষেপে:
1. যান্ত্রিক শক্তি ঘূর্ণায়মান শ্যাফটে রূপান্তরিত হয়।
2. ঘূর্ণায়মান শ্যাফট চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
3. চৌম্বক ক্ষেত্র কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।
4. ডায়োড AC বিদ্যুৎকে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে।
5. ভোল্টেজ রেগুলেটর আউটপুট ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে।
অল্টারনেটরের বিভিন্ন অংশ
অল্টারনেটরের বিভিন্ন অংশ হল:
1. ঘূর্ণায়মান শ্যাফট: এটি ইঞ্জিন থেকে একটি বেল্ট দ্বারা চালিত হয়। এটি রোটর এবং পুলি সংযুক্ত করে।
2. রোটর: রোটর হল অল্টারনেটরের ঘূর্ণায়মান অংশ। এটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। রোটর সাধারণত ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত একটি বেল্ট দ্বারা চালিত হয়।
3. স্টেটর: এটি স্থির এবং এতে তামার তারের কুণ্ডলী থাকে। ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্র স্টেটরের কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে। স্টেটর হল অল্টারনেটরের স্থির অংশ। এতে তামার তারের কয়েল থাকে যা রোটরের চারপাশে স্থাপন করা হয়। যখন রোটর ঘোরে, তখন এর পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র স্টেটর কয়েলগুলিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করে।
4. ডায়োড: ডায়োড হল ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ যা AC বিদ্যুৎকে DC তে রূপান্তর করে। DC বিদ্যুৎ ব্যাটারি চার্জ করতে এবং যানবাহনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চালানোর জন্য প্রয়োজন। অর্থাৎ এটি গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়।
5. ভোল্টেজ রেগুলেটর: ভোল্টেজ রেগুলেটর হল একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ যা অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাটারি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে সঠিক ভোল্টেজ পায়। এটি আউটপুট ভোল্টেজকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে (সাধারণত 12 বা 24 ভোল্ট) নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি নিশ্চিত করে যে ব্যাটারি ওভারচার্জ না হয়।
6. পুলি: পুলি হল একটি চাকা যা বেল্ট দ্বারা ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট থেকে রোটরে শক্তি স্থানান্তর করে। এটি ঘূর্ণায়মান বেল্টকে রোটরের সাথে সংযুক্ত করে। এটি বেল্টের টান নিয়ন্ত্রণ করে।
7. ফ্যান: এটি অল্টারনেটরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি ইঞ্জিনের শীতলকারী তরল দ্বারা চালিত হয়।
8. ব্রাশ (ব্রাশযুক্ত অল্টারনেটরের জন্য): ব্রাশ হল কার্বন বা ধাতুর সংযুক্ত থেকে যা রোটর এবং স্টেটরের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিবহন করে। এগুলি রোটরের চৌম্বক ক্ষেত্রকে স্টেটরের কুণ্ডলীতে স্থানান্তর করতে সাহায্য করে। সময়ের সাথে সাথে ব্রাশগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন হতে পারে।
9. স্লিপ রিং (ব্রাশলেস অল্টারনেটরের জন্য): স্লিপ রিং হল ধাতুর রিং যা রোটর এবং স্টেটরের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিবহন করে। ব্রাশলেস অল্টারনেটরগুলিতে ব্রাশের পরিবর্তে স্লিপ রিং ব্যবহার করা হয়।
10. রেকটিফায়ার: এটি AC বিদ্যুৎকে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে। ডায়োড রেকটিফায়ারের একটি সাধারণ উপাদান। রেক্টিফায়ার হল ডায়োডের একটি গ্রুপ যা একসাথে এসে AC বিদ্যুৎকে DC তে রূপান্তর করে।
11. কন্ট্রোল ইউনিট: এটি অল্টারনেটরের আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ভোল্টেজ রেগুলেটর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
12. কেসিং: কেসিং হল অল্টারনেটরের সমস্ত অংশকে একত্রিত করে রাখে।
অল্টারনেটরের নির্দিষ্ট ডিজাইন এবং উপাদানগুলি ও বিভিন্ন অংশ নির্মাতা এবং মডেলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
অল্টারনেটর প্যারালাল অপারেশনের শর্ত কি কি?
অল্টারনেটর প্যারালাল অপারেশনের শর্তাবলী:
যখন দুটি বা ততোধিক অল্টারনেটর একই বাস বারে সংযুক্ত থাকে এবং একই লোড সরবরাহ করে তখন এটিকে প্যারালাল অপারেশন বলা হয়।
অল্টারনেটরের প্যারালাল অপারেশনের জন্য চারটি মৌলিক শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন:
1. সমান ভোল্টেজ: সমস্ত অল্টারনেটর অবশ্যই একই ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে হবে। এই জন্য সমস্ত অল্টারনেটর একই ভোল্টেজের জন্য সেট করা উচিত। যদি ভোল্টেজে পার্থক্য থাকে, তাহলে উচ্চ ভোল্টেজের অল্টারনেটর থেকে কম ভোল্টেজের অল্টারনেটরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে, যার ফলে ক্ষতি হতে পারে। তাই দুইটি অল্টারনেটরের টার্মিনালের ভোল্টেজ অবশ্যই সমান হতে হবে।
2. সমান ফ্রিকোয়েন্সি: অল্টারনেটরের স্পিড এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে ফ্রিকুয়েন্সি সমান থাকে। সমস্ত অল্টারনেটর অবশ্যই একই ফ্রিকোয়েন্সিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে হবে। সাধারণত 60 Hz এ পরিচালিত হতে হবে। যদি ফ্রিকোয়েন্সিতে পার্থক্য থাকে, তাহলে অল্টারনেটর গুলিতে ভাইব্রেশন এবং গরমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যাবে এবং ক্ষতি হতে পারে।
3. সমান ফেজ সিকোয়েন্স: তিন-ফেজ অল্টারনেটরের ক্ষেত্রে, সমস্ত অল্টারনেটরের ফেজ সিকোয়েন্স একই হতে হবে। সমস্ত অল্টারনেটর অবশ্যই একই ফেজ সিকোয়েন্স উৎপন্ন করতে হবে। যদি ফেজ সিকোয়েন্সে পার্থক্য থাকে, তাহলে তীব্র বিদ্যুৎ স্পার্ক ও উচ্চ তড়িৎ প্রবাহ তৈরি হবে যার ফলে, যন্ত্রাংশের ক্ষতি হতে পারে। অর্থাৎ ফেজ সিকুয়েন্স অবশ্যই এক হতে হবে।
4. পোলারিটি সমানতা: অল্টারনেটরের পোলারিটি এক হতে হবে।
এই শর্তগুলো পূরণ করা হলে, অল্টারনেটরগুলো সঠিকভাবে প্যারালাল অপারেশন করতে পারবে এবং সিস্টেমের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে।
এছাড়াও এই অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য, অবশ্যই নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
1. পর্যাপ্ত ক্ষমতা: সমস্ত অল্টারনেটর অবশ্যই লোডের চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে। যদি কোন অল্টারনেটরের ক্ষমতা অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে এটি অতিরিক্ত চাপের অধীনে থাকবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
2. সঠিক সিঙ্ক্রোনাইজেশন: অল্টারনেটরগুলিকে প্যারালাল অপারেশনে সংযুক্ত করার আগে, সেগুলি সঠিকভাবে সিঙ্ক্রোনাইজ করতে হবে। এর মানে হল যে তাদের ভোল্টেজ, ফ্রিকোয়েন্সি এবং ফেজ সিকোয়েন্স অবশ্যই একই হতে হবে। অল্টারনেটরগুলিকে সিঙ্ক্রোনাইজ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ম্যানুয়াল সিঙ্ক্রোনাইজার বা স্বয়ংক্রিয় সিঙ্ক্রোনাইজার।
3. সুরক্ষা প্রয়োজনীয়তা: প্যারালাল অপারেশনের সময়, অল্টারনেটর এবং লোডকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করা উচিত। এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার এবং ওভারভোল্টেজ রক্ষাকারী।
4. নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সামঞ্জস্য: সমস্ত অল্টারনেটরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একইভাবে কাজ করতে হবে। যদি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পার্থক্য থাকে, তবে অল্টারনেটরগুলি সঠিকভাবে সমন্বয় করতে পারবে না, যার ফলে ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সিতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
যদি প্যারালাল অপারেশন সঠিকভাবে সেটআপ না করা হয় বা পরিচালনা না করা হয়, তাহলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
- বিদ্যুৎ স্পার্ক: যদি অল্টারনেটরগুলি সঠিকভাবে সিঙ্ক্রোনাইজ না করা হয়, তাহলে সংযোগের সময় বিদ্যুৎ স্পার্ক হতে পারে। এটি যন্ত্রাংশের ক্ষতি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
- ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সি: যদি অল্টারনেটরগুলির মধ্যে ভোল্টেজ বা ফ্রিকোয়েন্সিতে তারতম্য থাকে, তাহলে এটি বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সংযুক্ত যন্ত্রপাতিতে ক্ষতি বা ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে।
অল্টারনেটর প্যারালাল অপারেশন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি। তবে, সফল অপারেশনের জন্য সঠিক সেটআপ, সিঙ্ক্রোনাইজেশন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি অপরিহার্য।
আশা করি এই তথ্য আপনাদেরকে অল্টারনেটর প্যারালাল অপারেশনের শর্তাবলী সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করেছে!
অল্টারনেটর প্রটেকশন কি কি?
অল্টারনেটর প্রটেকশন: অল্টারনেটর হল একটি গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন যন্ত্র যা ব্যাটারি চার্জ করে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে অল্টারনেটরকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
অল্টারনেটর প্রটেকশনের কিছু সাধারণ ধরণ:
1. ফিউজ: ফিউজগুলি অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহ থেকে অল্টারনেটরকে রক্ষা করে। যদি অল্টারনেটরে খুব বেশি তড়িৎ প্রবাহ প্রবাহিত হয়, তবে ফিউজ গলে যাবে এবং সার্কিটটি বন্ধ করে দেবে। এটি অল্টারনেটরকে আরও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
2. সার্কিট ব্রেকার: সার্কিট ব্রেকারগুলি ফিউজের মতো কাজ করে, তবে এগুলি পুনরায় সেট করা যায়। যদি অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহ বয়ে যায়, তবে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ হয়ে যাবে এবং সার্কিটটি বন্ধ করে দেবে। সার্কিট ব্রেকার ঠান্ডা হয়ে গেলে এটি পুনরায় সেট করা যেতে পারে।
3. ওভার-ভোল্টেজ প্রোটেকশন (Over-Voltage Protection): OVP সিস্টেমগুলি অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজকে খুব বেশি হওয়া থেকে রোধ করে। যখন ভোল্টেজ একটি নির্দিষ্ট স্তর অতিক্রম করে, তখন OVP ডিভাইস অল্টারনেটর থেকে আউটপুট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যদি ভোল্টেজ খুব বেশি হয়, তবে OVP সিস্টেম অল্টারনেটর বন্ধ করে দেবে। এটি ব্যাটারি এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক উপাদানকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ওভারভোল্টেজ প্রোটেকশন ডিভাইস (OVP) অত্যধিক ভোল্টেজ থেকে অল্টারনেটরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
অত্যধিক ভোল্টেজ অল্টারনেটরের ডায়োড, রেক্টিফায়ার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে।
4. ওভার-কারেন্ট প্রোটেকশন (Over Current Protection): OCP সিস্টেমগুলি অল্টারনেটরের মাধ্যমে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহকে খুব বেশি হওয়া থেকে রোধ করে। ওভারকারেন্ট প্রোটেকশন ডিভাইস (OCP) অত্যধিক বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে অল্টারনেটরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ একটি নির্দিষ্ট স্তর অতিক্রম করে, তখন OCP ডিভাইস অল্টারনেটর থেকে আউটপুট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যদি তড়িৎ প্রবাহ খুব বেশি হয়, তবে OCP সিস্টেম অল্টারনেটর বন্ধ করে দেবে। এটি অল্টারনেটর এবং তারগুলির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
অত্যধিক বিদ্যুৎ প্রবাহ অল্টারনেটরের তার, কয়েল এবং অন্যান্য উপাদানকে ক্ষতি করতে পারে।
5. রিভার্স পোলারিটি প্রোটেকশন (Reverse Polarity Protection): RPP সিস্টেমগুলি অল্টারনেটরে ভুল পোলারিটিতে ব্যাটারি সংযুক্ত করা থেকে রোধ করে। যদি ব্যাটারি ভুলভাবে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে এটি অল্টারনেটরকে ক্ষতি করতে পারে। যদি ব্যাটারি ভুলভাবে সংযুক্ত থাকে, তবে RPP সিস্টেম অল্টারনেটর বন্ধ করে দেবে। এটি অল্টারনেটর এবং ব্যাটারি উভয়কেই ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
6. ওভারহিটিং প্রটেকশন: তাপ প্রোটেকশন সিস্টেমগুলি অল্টারনেটরকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রোধ করে। অধিক লোডের কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি অল্টারনেটর খুব বেশি গরম হয়, তবে তাপ প্রোটেকশন সিস্টেম এটি বন্ধ করে দেবে। এটি অল্টারনেটরের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
7. ওভারলোড প্রটেকশন: এটি অল্টারনেটরকে অত্যধিক চাপ বা ওভারলোড থেকে রক্ষা করে। যখন অল্টারনেটরের উপর অত্যধিক লোড পড়ে, তখন এই প্রটেকশন সিস্টেম অপারেশনকে বন্ধ করে দেয় যাতে অল্টারনেটর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
8. ওভারস্পিড প্রটেকশন: যদি কোন কারণে অল্টারনেটরের রোটর অত্যধিক গতিতে ঘুরতে থাকে, তাহলে এই সিস্টেম অপারেশনকে বন্ধ করে দেয়।
9. ভোল্টেজ রেগুলেটর: এটি অল্টারনেটর থেকে আউটপুট ভোল্টেজকে নিয়ন্ত্রিত করে। যদি ভোল্টেজ বেশি হয়, তাহলে রেগুলেটর ভোল্টেজ কমিয়ে দেয়।
10. ফ্রিকোয়েন্সি রেগুলেশন: অনেক অল্টারনেটরেই ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে যা আউটপুট ফ্রিকোয়েন্সিকে নির্দিষ্ট মানের মধ্যে রাখে।
11. স্ট্রেন রিলিফ: অল্টারনেটরের তার/কেবলগুলোর জন্য স্ট্রেন রিলিফ ব্যবস্থা থাকে যাতে লোড বা টানের কারণে তারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অল্টারনেটরের প্যারালাল অপারেশন এর সুবিধা কি?
অল্টারনেটরের প্যারালাল অপারেশন বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. লোড শেয়ারিং: লোড প্যারালেলভাবে বণ্টন করা যায়, যার ফলে একক অল্টারনেটরের উপর বেশি চাপ পড়ে না। এটি দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায়।
2. বর্ধিত ক্ষমতা: একাধিক অল্টারনেটর একসাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে, আপনি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন। এটি বিশেষ করে বড় লোড সহ যানবাহন বা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপকারী যেখানে একটি একক অল্টারনেটর যথেষ্ট ক্ষমতা সরবরাহ করতে পারে না।
3. সার্ভিসিং সুবিধা: একটি প্যারালেল সিস্টেমে অল্টারনেটরগুলোকে একটি একটি করে সার্ভিস করা সম্ভব, যার ফলে সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকে বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না।
4. উন্নত নির্ভরযোগ্যতা: যদি একটি অল্টারনেটর ব্যর্থ হয়, তবে অন্যগুলি এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এটি যানবাহন বা অ্যাপ্লিকেশনটিকে বিদ্যুৎ ছাড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
5. লোড বিতরণ: একাধিক অল্টারনেটর ব্যবহার করে, লোড সমানভাবে বিতরণ করা সম্ভব। এটি প্রতিটি অল্টারনেটরের উপর চাপ কমিয়ে তাদের আয়ুষ্ক বাড়াতে সাহায্য করে।
6. আরও দক্ষতা: কিছু ক্ষেত্রে, প্যারালাল অপারেশন ব্যবহার করে অল্টারনেটরগুলি আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। এর কারণ হল তারা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কাছাকাছি কাজ করতে পারে, যা কম দক্ষতার অঞ্চলে কাজ করার চেয়ে কম বিদ্যুৎ নষ্ট করে।
7. আরও সহজ রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক ছোট অল্টারনেটর ব্যবহার করা একটি বড় অল্টারনেটরের চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। এর কারণ হল ছোট অল্টারনেটরগুলি সরানো এবং মেরামত করা সহজ।
8. অপারেশনের নমনীয়তা: যদি একটি অল্টারনেটর বিকল হয়ে যায়, তাহলে অন্যগুলি অব্যাহতভাবে কাজ করতে থাকে। এটি সিস্টেমের নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়।
9. কম খরচ: কিছু ক্ষেত্রে, একাধিক ছোট অল্টারনেটর কেনা এবং প্যারালালভাবে সংযুক্ত করা একটি বড়, আরও ব্যয়বহুল অল্টারনেটর কেনার চেয়ে কম ব্যয়বহুল হতে পারে।
10. ঝুঁকি হ্রাস: একটি বড় অল্টারনেটরের পরিবর্তে একাধিক ছোট অল্টারনেটর ব্যবহার করলে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস পায়।
অল্টারনেটর হান্টিং কি?
অল্টারনেটর হান্টিং হল একটি সমস্যা যেখানে গাড়ির ইঞ্জিন চলমান থাকাকালীন অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ দ্রুত ওঠানামা করে।
এটি বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- খারাপ বেল্ট: যদি অল্টারনেটর বেল্টটি ঢিলে বা পুরোনো হয়, তাহলে এটি অল্টারনেটরকে সঠিকভাবে ঘুরতে বাধা দিতে পারে, যার ফলে আউটপুট ভোল্টেজে ওঠানামা করতে পারে।অল্টারনেটর বেল্ট অল্টারনেটরকে ইঞ্জিন থেকে শক্তি সরবরাহ করে। যদি বেল্টটি ঢিলা হয়ে যায়, টান হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এটি অল্টারনেটর হান্টিংয়ের কারণ হতে পারে।
- ক্ষতিগ্রস্ত পুলি: অল্টারনেটর বা ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের পুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- দূর্বল ব্যাটারি: যদি ব্যাটারি দূর্বল হয়, তাহলে এটি অল্টারনেটরকে ভারসাম্যহীনভাবে চার্জিং করতে পারে, যার ফলে ভোল্টেজে ওঠানামা করতে পারে।
- ক্ষতিগ্রস্ত ডায়োড: অল্টারনেটরের ভেতরের ডায়োডগুলি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি AC বিদ্যুৎকে সঠিকভাবে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করতে বাধা দিতে পারে, যার ফলে ভোল্টেজে ওঠানামা করতে পারে।
- ক্ষতিগ্রস্ত ভোল্টেজ রেগুলেটর: ভোল্টেজ রেগুলেটর হল একটি ইলেকট্রনিক উপাদান যা অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে। যদি এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি ভোল্টেজ ওঠানামা করতে পারে।
- ক্ষয়িষ্ণু ব্রাশ এবং কম্যুটেটর: ব্রাশ এবং কম্যুটেটর হল অল্টারনেটরের ভিতরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। যদি এগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে এটি অল্টারনেটর হান্টিংয়ের কারণ হতে পারে।
- রোটর পজিশন ইমব্যালেন্স (Rotor Position Imbalance): যদি রোটরটি ভারসাম্য রাখতে না পারে তাহলে এই অবস্থা দেখা যেতে পারে। রোটর অস্থির ও নড়াচড়া করতে থাকবে।
- রোটর শাফট মিসএলাইনমেন্ট (Rotor Shaft Misalignment): রোটর শাফটটি যদি সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে রোটরটি ঝুঁকি নিয়ে ঘুরতে থাকবে এবং হান্টিং অবস্থা দেখা দেবে।
- বিয়ারিং ক্ষতি (Bearing Damage): যদি রোটর শাফটের বিয়ারিংগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে রোটর অস্থির হয়ে পড়বে।
- রোটর এক্সাইটেশন প্রবলেম (Rotor Excitation Problem): রোটরটি যদি অসমভাবে এক্সাইটেড হয়ে থাকে তাহলে তা এলোমেলো ভাবে ঘুরবে।
- ম্যাগনেটিক পুল ইমব্যালেন্স (Magnetic Pull Imbalance): রোটর ও স্টেটরের মধ্যে ম্যাগনেটিক আকর্ষণের যদি ভারসাম্য না থাকে তাহলে হান্টিং ঘটতে পারে।
- অন্যান্য বৈদ্যুতিক সমস্যা: ব্যাটারি, তারের সংযোগ এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক উপাদানের সাথে সমস্যাও অল্টারনেটর হান্টিংয়ের কারণ হতে পারে।
হান্টিং অবস্থাটি রোটরের শাফট, বিয়ারিং এবং অন্যান্য অংশগুলোর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি যদি অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে তাহলে অল্টারনেটরটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই হান্টিং রোধ করার জন্য সঠিক মেইনটেনেন্স এবং বিয়ারিং, শাফট ইত্যাদির মেরামত এবং পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অল্টারনেটর হান্টিংয়ের লক্ষণগুলি কি কি?
অল্টারনেটর হান্টিংয়ের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- হেডলাইটের আলোর তীব্রতা ওঠানামা করা: যখন অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ পরিবর্তনশীল থাকে, তখন হেডলাইটের আলোর তীব্রতাও ওঠানামা করতে পারে। হেডলাইটের আলো ফিকে হয়ে যায় বা উজ্জ্বল হয়ে ওঠা। এটি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায় যখন ইঞ্জিনের RPM পরিবর্তিত হয়।
- রেডিওতে গোলমাল শব্দ: রেডিওতে স্ট্যাটিক বা অন্যান্য গোলমাল শব্দ শোনা যেতে পারে।
- ইঞ্জিনের RPM ওঠানামা করা: কিছু ক্ষেত্রে, অল্টারনেটর হান্টিং ইঞ্জিনের RPM ওঠানামা করতে পারে। এটি বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায় যখন ইঞ্জিনে লোড বৃদ্ধি পায়।
- ব্যাটারি চার্জ না হওয়া: যদি অল্টারনেটর সঠিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন না করে, তাহলে ব্যাটারি চার্জ হবে না। এর ফলে ব্যাটারি দ্রুত ফাঁকা হয়ে যাবে এবং যানবাহন চালু করতে সমস্যা হবে।
- বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি: অল্টারনেটর হান্টিংয়ের ফলে অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেমন পাওয়ার উইন্ডো, ওয়াইপার এবং ইলেকট্রনিক লক।
- অল্টারনেটর থেকে গরম বা পোড়া গন্ধ: অল্টারনেটর হান্টিংয়ের ফলে অল্টারনেটর অতিরিক্ত গরম হতে পারে। এর ফলে অল্টারনেটর থেকে পোড়া গন্ধ আসতে পারে।
- বিদ্যুৎ সরঞ্জামে ত্রুটি: বিদ্যুৎ চালিত উইন্ডো, সিট হিটার এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ সরঞ্জামগুলি সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
- ইঞ্জিনের স্টল: চরম ক্ষেত্রে, অল্টারনেটর হান্টিং ইঞ্জিনকে স্টল করতে পারে।
- অতিরিক্ত শব্দ ও কম্পন: অল্টারনেটর হান্টিং হলে রোটরের অস্থিরতার কারণে বেশি শব্দ ও কম্পন লক্ষ্য করা যায়। এই শব্দটি একটি ঘর্ষণজনিত বা গরগর শব্দ হতে পারে।
- অল্টারনেটর লাইট জ্বলে থাকা: কিছু যানবাহনে অল্টারনেটর লাইট থাকে যা অল্টারনেটরের সাথে সমস্যা থাকলে জ্বলে ওঠে। অল্টারনেটর হান্টিং হলে এই লাইট জ্বলে থাকতে পারে।
অল্টারনেটর হান্টিং একটি গুরুতর সমস্যা যা অন্যান্য যানবাহনের বৈদ্যুতিক উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি আপনি এই সমস্যার লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন যোগ্য মেকানিকের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
জেনারেটর এবং অল্টারনেটরের মধ্যে পার্থক্য:
জেনারেটর এবং অল্টারনেটর উভয়ই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তবে তারা এটি বিভিন্ন উপায়ে করে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
প্রধান পার্থক্যগুলি নিচে দেওয়া হলো:
1. বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধরণ:
- জেনারেটর: যান্ত্রিক শক্তিকে (যেমন ইঞ্জিন, টারবাইন, জল প্রবাহ) বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে।
- অল্টারনেটর: যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে ঘূর্ণায়মান শক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে।
2. বিদ্যুতের ধরণ:
- জেনারেটর: AC এবং DC উভয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
- অল্টারনেটর: শুধুমাত্র AC বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা পরে DC তে রূপান্তরিত হয়।
3. কাজের নীতি:
- জেনারেটর: জেনারেটর বিদ্যুৎচৌম্বকীয় আবেশ নীতির উপর কাজ করে। যখন একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে একটি পরিবাহী তার ঘোরে, তখন তারের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটরও বিদ্যুৎচৌম্বকীয় আবেশ নীতির উপর কাজ করে, তবে এটি ঘূর্ণায়মান আর্মেচার ব্যবহার করে যা স্থির স্টেটর এর মধ্যে থাকে।
4. ব্যবহার:
- জেনারেটর: বিদ্যুৎ গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে, ব্যাকআপ বিদ্যুৎ তৈরি করতে, বা দূরবর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।
- অল্টারনেটর: গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করতে এবং গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।
5. আকার এবং ওজন:
- জেনারেটর: জেনারেটর সাধারণত অল্টারনেটরের চেয়ে বড় এবং ভারী হয়। কারণ এতে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য বড় কয়েল এবং চৌম্বক থাকে।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটর সাধারণত ছোট এবং হালকা হয়। কারণ এতে ছোট কয়েল এবং চৌম্বক থাকে।
6. দাম:
- জেনারেটর: জেনারেটর সাধারণত অল্টারনেটরের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়। কারণ এতে আরও জটিল নকশা এবং উপাদান থাকে।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটর সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল হয়।
7. তরঙ্গের ধরন:
- জেনারেটর: জেনারেটর একমুখী বৈদ্যুতিক তরঙ্গ উৎপাদন করে।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটর দ্বিমুখী বা বৈপরীত্যমূলক তরঙ্গ উৎপাদন করে।
8. আকার ও গঠন:
- জেনারেটর: জেনারেটরগুলি সাধারণত ছোট আকারের হয়।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটরগুলি বৃহদাকারের ও জটিল গঠনের হয়ে থাকে।
9. নির্ভরযোগ্যতা:
- জেনারেটর: জেনারেটরগুলি তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরযোগ্য।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটরগুলি অধিক নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী।
10. রোটরের গঠন:
- জেনারেটর: জেনারেটরের রোটরে ব্রাশ এবং কম্যুটেটর থাকে যা বৈদ্যুতিক প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে।
- অল্টারনেটর: অল্টারনেটরের রোটরে ব্রাশ বা কম্যুটেটর থাকে না। (তবে ব্যাতিক্রম থাকতে পারে)
অল্টারনেটরের কোনটি স্থির থাকে?
অল্টারনেটরের স্টেটর অংশটি স্থির থাকে।
স্টেটর হল একটি বৈদ্যুতিক চৌম্বক যা অল্টারনেটরের ভেতরে থাকে। এটি তামার তারের কুণ্ডলী দিয়ে তৈরি যা একটি লোহার কোরের চারপাশে পেঁচানো থাকে। যখন অল্টারনেটরের রোটর ঘোরে, তখন এটি স্টেটরের চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিবর্তন তৈরি করে। এই পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র স্টেটরের কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে।
অল্টারনেটরের অন্যান্য অংশগুলি, যেমন রোটর, ডায়োড, রেকটিফায়ার, ভোল্টেজ রেগুলেটর, ইত্যাদি ঘোরে।
সংক্ষেপে:
- স্টেটর: স্থির, তামার তারের কুণ্ডলী দিয়ে তৈরি, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
- রোটর: ঘূর্ণায়মান, এটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।
স্টেটরে আর্মেচার ওয়াইন্ডিং এর সুবিধা কি?
স্টেটরে আর্মেচার ওয়াইন্ডিং এর সুবিধা:
স্টেটরে আর্মেচার ওয়াইন্ডিং ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. উচ্চ দক্ষতা: স্টেটর ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরকে আরও দক্ষভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। কারণ এটি স্টেটরের চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে আর্মেচারের চৌম্বক ক্ষেত্রকে আরও ভালভাবে সংযুক্ত করে। এর ফলে কম বিদ্যুৎ নষ্ট হয় এবং আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
2. উচ্চ আউটপুট: স্টেটরের আর্মেচার ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরের আউটপুট ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ এটি স্টেটরের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করে।
3. উন্নত তাপ বিতরণ: স্টেটরের আর্মেচার ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটর থেকে তাপ আরও কার্যকরভাবে বিতরণ করতে সাহায্য করে। কারণ এটি ওয়াইন্ডিংয়ের মধ্যে আরও বেশি বায়ু প্রবাহের অনুমতি দেয়, যা অল্টারনেটরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
4. উন্নত শীতলীকরণ: স্টেটর ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরকে আরও ভালভাবে শীতল করতে সাহায্য করে। কারণ এটি স্টেটরের কাঠামোর মধ্যে তাপ বিতরণ করে। এর ফলে অল্টারনেটর ঠান্ডা থাকে এবং ওভারহিট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
5. কম শব্দ: স্টেটর ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটর থেকে শব্দ কমায়। কারণ এটি আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ের তুলনায় কম কম্পন তৈরি করে। স্টেটর ওয়াইন্ডিং স্থির থাকে, তাই এটি শব্দ তৈরি করার সম্ভাবনা কম।
6. টেকসই: স্টেটরের আর্মেচার ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরকে আরও টেকসই করে তুলতে পারে। কারণ এটি ওয়াইন্ডিংকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
7. কম রক্ষণাবেক্ষণ: স্টেটর ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরের রক্ষণাবেক্ষণ কমিয়ে দেয়। কারণ এটি আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। স্টেটর ওয়াইন্ডিং স্থির থাকে, তাই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
8. ছোট আকার: স্টেটর ওয়াইন্ডিং অল্টারনেটরের আকার ছোট করতে সাহায্য করে। কারণ এটি আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ের তুলনায় কম জায়গা নেয়। স্টেটর ওয়াইন্ডিং স্থির থাকে, তাই এটি অল্টারনেটরের ভেতরে আরও সহজে সাজানো যেতে পারে।
অসুবিধা:
স্টেটর ওয়াইন্ডিং ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. জটিলতা: স্টেটর ওয়াইন্ডিং আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ের চেয়ে বেশি জটিল হতে পারে। কারণ এটি স্টেটরের কাঠামোর মধ্যে কয়েলগুলি সাবধানে স্থাপন করার প্রয়োজন।
2. ব্যয়: স্টেটর ওয়াইন্ডিং আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। কারণ এটি তৈরি করতে আরও জটিল উপাদান এবং প্রক্রিয়া প্রয়োজন।
ব্যাটারি ও অল্টারনেটর একসাথে কিভাবে কাজ করে?
ব্যাটারি এবং অল্টারনেটর গাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা একসাথে কাজ করে যানবাহনকে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
কাজের প্রক্রিয়া:
1. ইঞ্জিন চালু: যখন গাড়ির ইঞ্জিন চালু হয়, তখন অল্টারনেটর ঘুরতে থাকে।
2. বিদ্যুৎ উৎপাদন: ঘূর্ণায়মান অল্টারনেটর AC বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
3. রেকটিফায়ার: রেকটিফায়ার AC বিদ্যুৎকে DC বিদ্যুতে রূপান্তর করে যা গাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করতে পারে।
4. ব্যাটারি চার্জিং: রেকটিফাইড DC বিদ্যুৎ ব্যাটারি চার্জ করে।
5. বিদ্যুৎ সরবরাহ: চার্জ করা ব্যাটারি গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ থাকাকালীন DC বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
ব্যাটারির ভূমিকা:
- ইঞ্জিন চালু করার জন্য শক্তি সরবরাহ করে: যখন ইঞ্জিন চালু করা হয়, তখন ব্যাটারি স্টার্টার মোটরকে শক্তি সরবরাহ করে যা ইঞ্জিন ঘুরিয়ে দেয়।
- ব্যাকআপ: যখন ইঞ্জিন চলমান না থাকে, তখন ব্যাটারি হেডলাইট, রেডিও, ইন্টেরিয়র লাইট এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে।
- অল্টারনেটরকে কাজ করার জন্য শক্তি সরবরাহ করে: যখন ইঞ্জিন চালু হয় না, তখন ব্যাটারি অল্টারনেটরকে শক্তি সরবরাহ করে যাতে এটি ঘুরা শুরু করতে পারে।
- বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যখন অল্টারনেটর ব্যর্থ হয়: যদি অল্টারনেটর ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাটারি গাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে শক্তি সরবরাহ করতে থাকে।
- শক্তি সঞ্চয়: যখন অল্টারনেটর বেশি শক্তি উৎপন্ন করে, তখন ব্যাটারি অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করে।
অল্টারনেটরের ভূমিকা:
- গাড়ি চলমান থাকাকালীন ব্যাটারি চার্জ করে: অল্টারনেটর গাড়ি চলমান থাকাকালীন ব্যাটারি চার্জ করে যাতে এটি স্টার্টার মোটর এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
- গাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে: অল্টারনেটর গাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিকে, যেমন হেডলাইট, রেডিও, এবং উইন্ডশীল্ড ওয়াইপারগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে।
ব্যাটারি ও অল্টারনেটর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- ব্যাটারি এবং অল্টারনেটর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
- যদি ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অল্টারনেটর ইঞ্জিন চালু করতে পারবে না।
- যদি অল্টারনেটর ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাটারির চার্জ শেষ পর্যন্ত শূন্য হয়ে যাবে এবং শেষ পযন্ত ইঞ্জিন স্টার্ট নেওয়া বন্দ হয়ে যাবে।
- নিয়মিত ব্যাটারি এবং অল্টারনেটর পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা সঠিকভাবে কাজ করছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ কত?
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ নির্দিষ্ট গাড়ির উপর নির্ভর করে এবং সাধারণত 12 ভোল্ট বা 24 ভোল্ট হতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখবেন:
- 12 ভোল্ট অল্টারনেটর: বেশিরভাগ আধুনিক যাত্রীবাহন এবং হালকা ট্রাকগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের অল্টারনেটর এবং এটি বেশিরভাগ গাড়িতে ব্যবহৃত হয়। একটি 12-ভোল্ট অল্টারনেটর সাধারণত 13.5 থেকে 14.5 ভোল্টের মধ্যে ভোল্টেজ উৎপন্ন করে। প্রচলিত পিকআপ ট্রাক, ভ্যান এবং অনেক সাধারণ গাড়ীতে এই 12 ভোল্ট অল্টারনেটর ব্যবহৃত হয়। এগুলি 12 ভোল্ট ব্যাটারি সিস্টেম রিচার্জ করে।
- 24 ভোল্ট অল্টারনেটর: এগুলি বড় ট্রাক, বাস এবং অন্যান্য ভারী যানবাহন এবং কিছু ভারী যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। একটি 24-ভোল্ট অল্টারনেটর সাধারণত 27 থেকে 29 ভোল্টের মধ্যে ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
- 36 ভোল্ট অল্টারনেটর: কিছু শক্তিশালী বাণিজ্যিক ট্রাক এবং বড় কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্টে 36 ভোল্ট অল্টারনেটর ব্যবহৃত হয়।
- 42 ভোল্ট অল্টারনেটর: কিছু নতুন হাইব্রিড গাড়ীতে 42 ভোল্ট অল্টারনেটর থাকে যা 12V লিড অ্যাসিড ব্যাটারি সিস্টেমকে রিচার্জ করে।
- লোড: অল্টারনেটর কতটা লোডের অধীনে তা তার ভোল্টেজের উপর প্রভাব ফেলে। যখন অল্টারনেটর বেশি লোডের অধীনে থাকে, তখন এটি বেশি ভোল্টেজ উৎপন্ন করে। এর বিপরীতে, যখন অল্টারনেটর কম লোডের অধীনে থাকে, তখন এটি কম ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
- তাপমাত্রা: তাপমাত্রাও অল্টারনেটরের ভোল্টেজকে প্রভাবিত করে। ঠান্ডা আবহাওয়ায়, অল্টারনেটর বেশি ভোল্টেজ উৎপন্ন করে। গরম আবহাওয়ায়, অল্টারনেটর কম ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।
- নিয়ন্ত্রক: অল্টারনেটরে একটি নিয়ন্ত্রক থাকে যা ভোল্টেজের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। নিয়ন্ত্রক ব্যাটারির ভোল্টেজ পর্যবেক্ষণ করে এবং অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ সেই অনুযায়ী সামঞ্জস্য করে।
- নির্দিষ্ট ভোল্টেজ: আপনার গাড়ির জন্য সঠিক অল্টারনেটর ভোল্টেজ জানতে, আপনার গাড়ির মালিকের ম্যানুয়াল পরীক্ষা করুন বা একজন যোগ্য মেকানিকের সাথে পরামর্শ করুন।
- ভোল্টেজ পরিমাপ: আপনি একটি ভোল্টমিটার ব্যবহার করে আপনার অল্টারনেটরের আউটপুট ভোল্টেজ পরিমাপ করতে পারেন।
একটি অল্টারনেটরের ভোল্টেজ নির্ধারণ করা কঠিন কারণ এটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ সমস্যা:
- খুব কম ভোল্টেজ: ব্যাটারি চার্জ না হওয়া, বিদ্যুৎ সরঞ্জামগুলি দুর্বলভাবে কাজ করা, ইঞ্জিন স্টল হওয়া ইত্যাদির কারণ হতে পারে।
- বেশি ভোল্টেজ: বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলির ক্ষতি, ব্যাটারি ওভারচার্জিং ইত্যাদির কারণ হতে পারে।
অল্টারনেটর কে আবিষ্কার করেন?
অল্টারনেটরের আবিষ্কারের জন্য একক ব্যক্তিকে কৃতিত্ব দেওয়া সম্ভব নয় কারণ এটি বিভিন্ন উদ্ভাবক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল। অল্টারনেটরের বিকাশে অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর অবদান রয়েছে। অল্টারনেটর আধুনিক যানবাহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যা গাড়ি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারীদের মধ্যে রয়েছে:
- মাইকেল ফ্যারাডে (Michael Faraday): 1831 সালে, ইংরেজ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশ নীতি আবিষ্কার করেন, যা অল্টারনেটরের মূল নীতি। এটি অল্টারনেটর তৈরির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
- হিপোলাইট পিক্সি (Hippolyte Pixii): 1832 সালে, হিপোলাইট পিক্সি প্রথম AC জেনারেটর তৈরি করেন, যা অল্টারনেটরের পূর্বসূরি ছিল। ফরাসি ইলেকট্রিশিয়ান হিপোলিট পিক্সি প্রথম যান্ত্রিক অল্টারনেটর তৈরি করেন যাতে একটি চুম্বক ঘূর্ণিত হত এবং তার ফলে বিদ্যুতপ্রবাহ উৎপন্ন হত। 1832 সালে, পিক্সি প্রথম কার্যকরী AC জেনারেটর তৈরি করেন, যা "পিক্সি মেশিন" নামে পরিচিত।
- উইলিয়াম স্টার্জেন (William Sturgeon): 1832 সালে, স্টার্জেন প্রথম ইলেক্ট্রোম্যাগনেট তৈরি করেন, যা অল্টারনেটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- ওয়ালিয়াম স্টার্লি: 1845 সালে, ওয়ালিয়াম স্টার্লি প্রথম ব্যবহারিক AC জেনারেটর তৈরি করেন।
- ফ্রেডরিক বেচটোল্ড: 1883 সালে, ফ্রেডরিক বেচটোল্ড প্রথম আধুনিক অল্টারনেটর তৈরি করেন।
- আলবার্ট মারিও (Albert Marius): মারিও 1900-এর দশকে অল্টারনেটরের নকশায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছিলেন।
- চার্লস ফ্র্যাঙ্কলিন পারকিনস (Charles Francis Perkins): পারকিনস 1890-এর দশকে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল অল্টারনেটর তৈরি করেছিলেন।
- জোসেফ স্পেঞ্জার (Joseph Spencer): 1891 সালে, স্পেঞ্জার প্রথম বিকল্প-বর্তমান (AC) মোটর তৈরি করেন, যা অল্টারনেটরের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নিকোলা টেসলা (1856-1943): ক্রোয়েশিয়ান মূল বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা পলিফেস বিদ্যুতপ্রবাহ এবং আধুনিক অল্টারনেটরের ডিজাইন উন্নত করেন। টেসলা AC বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
- চার্লস পার্কিনস কেটারিং (1896-1986): জেনারেল ইলেকট্রিক কর্মী চার্লস কেটারিং 1923 সালে গাড়ীতে ব্যবহারযোগ্য প্রথম অল্টারনেটর আবিষ্কার করেন।
এই বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের অবদানের ফলেই আধুনিক অল্টারনেটর আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে অল্টারনেটর সমস্ত গাড়ি, জেনারেটর এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে।
অল্টারনেটর আজও বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, এবং এটি বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।
অল্টারনেটর পুলির প্রকারভেদ:
অল্টারনেটর পুলি হল একটি চাকা যা অল্টারনেটরকে ইঞ্জিন বেল্টের সাথে সংযুক্ত করে। এটি অল্টারনেটরকে ঘুরিয়ে তোলে যাতে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
অল্টারনেটর পুলি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ তিনটি হল:
1. V-বেল্ট পুলি:
- V-বেল্ট পুলিগুলি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের অল্টারনেটর পুলি।
- এগুলি একটি V-আকৃতির খাঁজযুক্ত যা V-বেল্টের সাথে মিলে যায়।
- V-বেল্ট পুলিগুলি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং প্রতিস্থাপন করা সহজ।
- এই ধরণের পুলি V-আকৃতির বেল্ট ব্যবহার করে। অল্টারনেটরকে ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
- V-belt পুলি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের অল্টারনেটর পুলি এবং এটি বিভিন্ন ধরণের যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।
2. সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলি:
- এই ধরণের পুলি একটি সার্পেন্টাইন বেল্ট ব্যবহার করে অল্টারনেটরকে ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত করে।
- সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলিগুলির একটি মসৃণ পৃষ্ঠতল রয়েছে যা একটি সার্পেন্টাইন বেল্টের সাথে মিলে যায়।
- সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলি V-বেল্ট পুলির চেয়ে বেশি দক্ষ এবং কম শব্দ তৈরি করে।
- তবে, সেগুলি V-বেল্ট পুলির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল এবং প্রতিস্থাপন করা কঠিন।
- সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলি V-belt পুলির চেয়ে পাতলা এবং আরও নমনীয়, এবং এগুলি একাধিক অ্যাক্সেসরিকে চালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
3. ডেকোপুলিয়ার পুলি:
- ডেকোপুলিয়ার পুলিগুলি দুটি পৃথক পুলির সমন্বয়ে গঠিত যা একটি একক শ্যাফ্টে মাউন্ট করা হয়।
- তারা V-বেল্ট বা সার্পেন্টাইন বেল্টের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ডেকোপুলিয়ার পুলিগুলি অল্টারনেটরকে আরও নমনীয়ভাবে ঘুরতে দেয়, যা কম কম্পন এবং শব্দ তৈরি করে।
- তবে, সেগুলি V-বেল্ট পুলি বা সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল এবং প্রতিস্থাপন করা কঠিন হতে পারে।
এগুলো ছাড়াও আরও অনেক ধরনের পুলি রয়েছে। যেমন:
1. রিভ পুলি (Ribbed Pulley): এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের পুলি। এটির বাইরের প্রান্তে একগুচ্ছ খাঁজ থাকে যা বেল্টকে আটকে রাখতে সাহায্য করে।
2. সরপোয়ার পুলি (Serpentine Pulley): এটি একাধিক বেল্ট চালিত একাধিক পুলির সঙ্গে সমন্বিত। এটি জায়গা সাশ্রয় করে এবং বেশি কার্যকর।
3. আন্ডারড্রাইভ পুলি (Underdrive Pulley): এটি অল্টারনেটরের ড্রাইভ শাফ্টের নিচে অবস্থিত থাকে। এটি হ্যারমনিক বেলেন্সার থেকে চালিত হয়।
4. ওভারড্রাইভ পুলি (Overdrive Pulley): এটি অল্টারনেটরের ড্রাইভ শাফ্টের উপরে অবস্থিত থাকে এবং ক্র্যাংকশাফ্ট পুলি থেকে চালিত হয়।
5. সিঙ্গেল গ্রুভ পুলি (Single Groove Pulley): এটিতে একটি মাত্র খাঁজ থাকে বেল্টের জন্য।
6. ডাবল গ্রুভ পুলি (Double Groove Pulley): এটিতে দুটি খাঁজ থাকে এবং দুটি বেল্ট ব্যবহার করা যায়।
7. কগড বেল্ট পুলি: এই ধরণের পুলি একটি কগড বেল্ট ব্যবহার করে অল্টারনেটরকে ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত করে। কগড বেল্ট পুলি V-belt বা সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলির চেয়ে বেশি টেকসই এবং এগুলি উচ্চ লোডের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহার করা হয়।
8. ডিকাইভ পুলি: এই ধরণের পুলি একটি ডিকাইভ বেল্ট ব্যবহার করে অল্টারনেটরকে ইঞ্জিনের ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত করে। ডিকাইভ বেল্ট পুলি V-belt বা সার্পেন্টাইন বেল্ট পুলির চেয়ে শান্ত এবং আরও দক্ষ, এবং এগুলি উচ্চ-পারফরম্যান্স যানবাহনে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও কিছু বিশেষ ধরণের পুলিও রয়েছে যেমন - ডামপড টর্শনাল পুলি, ডিকাপলার পুলি ইত্যাদি। পুলির আকার, খাঁজের সংখ্যা ও অবস্থান গাড়ীর মডেল এবং অল্টারনেটরের ধরণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
অল্টারনেটর পুলি নির্বাচন করার সময়, গাড়ির ধরণ, ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেম সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুলি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে অল্টারনেটর সঠিকভাবে কাজ করে।
অল্টারনেটরের লস সমুহের তালিকা
অল্টারনেটরের বিভিন্ন লস এর তালিকা নিম্নে দেওয়া হল:-
রোটেশনাল লস সমুহঃ
১. ফ্রিকশনাল লস।
২. ব্রাশ ফ্রিকশন লস।
৩. মেশিন ঠান্ডা করণ জনিত লস।
৪. স্টেটরের হিসটেরিসিস ও এডি কারেন্ট লস বা কোর লস।
ইলেট্রিক্যাল লস সমুহঃ
১. ফিল্ড ওয়াইন্ডিং কপার লস।
২. আর্মচার ওয়াইন্ডিং কপার লস।
৩. ফিল্ড এক্সাইটর সার্কিটের লস।
৪. স্ট্রে-লোড লস।
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন সার্কিটঃ
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন ইনস্ট্রুমেন্টসঃ
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশনের সমীকরণ
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন V.Rএর নো-লোড ভোল্টেজ সাধারনত তিনটি বিষয় এর উপর নির্ভর করে:-
ইউনিট পাওয়ার ফ্যাকটর (Unite power factor):
ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাকটর (Lagging Power Factor):
লিডিং পাওয়ার ফ্যাকটর (Leading Power Factor):
অল্টারনেটর এর কিছু অংশ নিয়ে আলোচনাঃ
স্টেটর বা আর্মেচার: অল্টরনেটরের যে অংশ স্থির থাকে, তাকে স্টেটর বা আর্মেচার বলে।
এর দুটি অংশ স্টেটর ফ্রেম, স্টেটর কোর।
স্টেটর ফ্রেম: ইহা ঢালাই লোহার বা নরম ইস্পাতের প্লেট ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা হয়।
কয়েল পিচ: একটি কয়েলের দুই কয়েল সাইডের মধ্যে যতগুলো আর্মেচার স্লট বা আর্মেচার কন্ডাক্টর থাকে, তাকে কয়েল স্প্যান বা কয়েল পিচ বলে।
ফুল পিচ: কয়েল স্প্যান পোল পিচের সমান হলে তাকে ফুল পিচ বলে।
স্টেটর কোর: স্টেটর কোর তৈরি করার জন্য ইনসুলেশন যুক্ত ল্যামিনেটেড স্টীল প্লেটকে সাইহ মত কেটে নিয়ে তৈরি করা হয়।
রোটর বা ফিল্ড: অল্টারনেটরের ঘূর্ণায়মান অংশকে রোটর বা ফিল্ড বলে।
ইহা দুই প্রকার যথাঃ-
- স্যালিয়েন্ট পোল।
- নন- স্যালিয়েন্ট পোল।
ডাম্পার ওয়ান্ডিং:
স্যালিয়েন্ট পোল রোটরেরপোল-স্যু এর অগ্রভাগে কিছু সংখ্যক মোটা কপার বার ঢুকিয়ে উভয় পার্শ্বে দুটো কপার রিং শর্ট সার্কিট করা হয়। এটি দেখতে স্কুইরেল কেজ রোটরের এন্ড- কানেকশনের মোতই, এ ওয়ান্ডিংকে ডাম্পার ওয়ান্ডিং বলে।
ডাম্পার ওয়ান্ডিং (Damper Winding) এর কাজঃ
- ডাম্পার ওয়ান্ডিং রোটরের হান্টিংকে প্রশমিত করে।
- ডাম্পার ওয়ান্ডিং সিনক্রোনাস মোটরকে চালুকরতে প্রয়োজনীয় স্টার্টিং টর্ক প্রদান করে।
- আনব্যালেন্সড লোড কন্ডিশনে ৩-ফেজ ভোল্টেজকে ব্যালান্স করে।
পোল পিচ: পাশাপাশি দুই পোলের কেন্দ্রীয় দূরত্বকে পোল পিচ বলে।
ফ্রাকশনাল পিচ: কয়েল স্প্যান পোল পিচের সমান না হলে তাকে ফ্রাকশনাল পিচ বা শর্ট পিচ বলে।
ফ্রাকশনাল পিচ ওয়ান্ডিং এর সুবিধা অসুবিধা সমুহঃ
১. কয়েল স্প্যান কমে যাবার দরুন তামার সাশ্রয় বেশি হয়।
২. কয়েল সাইডের পারস্পারিক দুরত্ব কমে যায় বলে সেল্ফ ও মিউচুয়্যাল ইন্ডাকট্যান্সের পরিমান কমে যায়।
৩. এ ধরনের ওয়ান্ডিং এর উৎপন্ন ভোল্টেজের সাইন তরঙ্গ তুলনামূলকভাবে উন্নত।
৪. সৃষ্ট ভোল্টেজ ওয়েভের হারমোনিক্স এর বিকৃতি অনেকটা কমে যায়।
৫. এডি কারেন্ট ও হিসটেরেসিস লস কম হয় এবং অল্টারনেটরের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
অসুবিধা:
১. যেহেতু দুই কয়েলের মধ্যে ফেজ পার্থক্য অল্প, ফলে কয়েলে উৎপন্ন ভোল্টেজের প্রকৃত মান কম হয়।
এক স্তর ওয়ান্ডিং: এক স্তর ওয়ান্ডিং-এ কোরের প্রতি খাঁজে একটি করে কয়েল সাইড বসে অর্থাৎ প্রতি কয়েলের জন্য দুটি স্লট প্রয়োজন হয়।
এক স্তর ওয়ান্ডিং আবার দুই প্রকার যথা:-
১. ওয়েভ ওয়ান্ডিং।
২. চেইন ওয়ান্ডিং।
দ্বি-স্তর ওয়ান্ডিং: দ্বি স্তর ওয়ান্ডিং প্রধানত দুই প্রকার। যথা:-
১. ওয়েভ ইন্ড টাইপ।
২. ল্যাপ ইন্ড টাইপ।
২. ল্যাপ ইন্ড টাইপ: উচ্চ গতিবেগ সম্পন্ন টারবো জেনারেটরের আর্মেচার ওয়ান্ডিং করার পক্ষে ল্যাপ ওয়ান্ডিং বিশেষ উপযোগী। এই ওয়ান্ডিং খুব সহজেই করা যায় বলে প্রাই সকল মোটর ওয়ান্ডিং এ সমান ভাবে উপযোগী।
হাফ কয়েল ওয়ান্ডিং: হাফ কয়েল ব্যবস্থায় আর্মেচার কয়েল সংখ্যা হোল কয়েল ব্যবস্থার অর্ধেক হবে। প্রতি ফেজে একই ভোল্টেজ পেতে হলে, হাফ কয়েল ব্যবস্থায় প্রতি কয়েলের তারের প্যাঁচ সংখ্যা, হোল কয়েল ব্যবস্থার দ্বিগুণ হতে হবে। প্রতি স্লটে একটি করে কয়েল সাইড বসিয়ে হাফ কয়েল ওয়ান্ডিং করা হয়।
পিচ ফ্যাক্টর: ফ্র্যাকশনাল পিড্ড কয়েলে উৎপন্ন ভোল্টেজ এবং ফুল পিচ কয়েলে উৎপন্ন ভোল্টেজের অনুপাতকে পিচ ফ্যাক্টর বলে। একে Kc দ্বারা প্রাকাশ করা হয়।
সিনক্রোনাইজিং কারেন্টঃ
প্যারালেলে চালিত দুটো অল্টানেটরের মধ্যে যে কোণ কারণে Unit-২ এর গতিবেগ কিছুটা কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে এর তড়িৎ চাপ Unit-১ এর তড়িৎ চাপের সঙ্গে ঠিক বিপরীতমুখী না থেকে পরস্পরের সঙ্গে একটি কৌণিক ব্যাবধানে অবস্থান করে।
ফলে একটি সংহত তড়িৎ চাপ সৃষ্টি হয়। এ সংহত তড়িৎ চাপের প্রভাবে Unit-১ লোড কারেন্ট পাঠানো ছাড়াও অতিরক্ত কিছু কারেন্ট লোকাল বাসের মাধ্যমে আর্মেচারে পাঠায়। অতিরিক্ত এ কারেন্টকে সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট বলে।
অল্টানেটর চালু করার ধাপ সমূহঃ
১। জেনারেটর সার্কিট ব্রেকার খোলা আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।
২। আইসোলেটরকে বন্ধ করতে হবে।
৩। ভোল্টেজ রেগুলেটরকে Automatic পজিশন দিতে হবে।
৪। প্রাইম মুভার চালু করে রেটেড স্পিডে নিতে হবে।
৫। গভর্নর Control সুইচ ব্যাবহার করে ফ্রিকোয়েন্সিকে রেটেড Nameplate ফ্রিকোয়েন্সিতে নিতে হবে।
৬। Automatic Voltage রেগুলেটরকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে রেটেড ভোল্টেজ পাওয়া যায়।
৭। Circuit Breaker সাধারণ নিয়মে Close করতে হবে।
সিনক্রোনাইজিং
দুই বা ততোধিক অল্টানেটরকে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে প্যারালেলে অপারেশন করবার পদ্ধতিকেই সিনক্রোনাইজিং বলে।
অল্টানেটর সিনক্রোনাইজিং এর উদ্দেশ্যঃ
১। সর্বোচ্চ দক্ষতা পাওয়া।
২। সর্বক্ষণিক চালু রাখা।
৩। মেরামত ও ওভার হোলিং।
৪। ভবিষ্যতের বর্ধিত লোড বহন ইত্যাদি।
সিনক্রোনাইজিং এর শর্তসমূহঃ
১। এদের টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান হতে হবে।
২। এদের ফ্রিকোয়েন্সি সমান হবে।
৩। এদের ভোল্টেজ গুলো একই ফেজে থাকবে।
৪। এদের ফেজ সিকোয়েন্স একই হতে হবে।
সিনক্রোসকোপের সাহয্যে অল্টানেটরকে প্যারালেলে পরিচালনা পদ্ধতি বাতির সাহায্যে সিনক্রোনাইজিং এর সঠিক মুহূর্ত নির্ধারণ করা খুব দূরহ ব্যাপার। কারন প্ল্যান্টে কর্মরত অপারেটরদের ব্যাক্তিগত বিচার্য্য বিষয়। তাদের দৃষ্টি ভ্রমের কারনে ভুল ভ্রান্তি বিচিত্র নয়।
সম্ভান্ধ্য এ ভুল ভ্রান্তি এড়িয়ে সঠিক সময়ে সিনক্রোনাইজিং করার জন্য অধিকাংশ সিনক্রোনাইজিং প্যানেলে বাতির সাথে একটি করে অধিক সংবেদনশীল যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটির নাম সিনক্রোসকোপ। সিনক্রোসকোপের মধ্যে তিনটি স্থির কয়েল ও একটি ঘুরন্ত (Spindle) থাকে।
অল্টারনেটরে লোড শূন্য অবস্থা:
অল্টারনেটরকে যদি কোন লোডের সাথে যুক্ত না করেই সিনক্রোনাস গতিবেগে চালানো হয় তবে অল্টারনেটরটি লোড শুণ্য অবস্থা বলা হয়। এঅবস্থায় উভয় পার্শ্বর ভোল্টেজ সমান থাকে। কিন্তু লোড সংযোগ করার সাথে সাথে ভোল্টেজ এর পরিবর্তন হয়। লোড শুন্য অবস্থায় অল্টারনেটরে তিন ধরনের লস হয়। যথাঃ
কার্যকরী রেজিস্ট্যান্সঃ
ম্যাগনেটিক, হিস্টেরিসিস, এবং স্কিন ইফেক্ট জনিত সামগ্রীক পাওয়ার লস কে ইফেক্টিভ কারেন্টের বর্গ দ্বরা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে আর্মচারের কার্যকরী বা ইফেক্টিভ রেজিস্ট্যান্স বলে।
লিকেজ রিয়াক্টেন্স:
যখন আর্মেচার দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন সে কারেন্টের প্রবাহে প্রচুর স্থানীয় চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এ সব চুম্বক বলরেখা আর্মচার কয়েলের সাথে সংশ্লষ্ট হলেও ফিল্ড কয়েলের সাথে হয় না। একেই লিকেজ ফ্লাক্স বলে। এই লিকেজ ফ্লাক্স এর কারণে লিকেজ রিয়্যাক্ট্যান্স এর উৎপন্ন হয় যা কারেন্ট প্রবাহে বাধা প্রদান করে। ফলে লিকৈজ রিয়্যাক্ট্যান্স ড্রপ হয়।
অল্টারনেটরের উপর আর্মেচার রিয়্যাকশনের প্রভাব:
অল্টারনেটরের মেইন ফিল্ড ফ্লাক্স এর উপর আর্মচার বা স্টেটর কারেন্ট এর দ্বারা সৃষ্ট ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স এর যে প্রতিক্রিয়া, তাকে আর্মেচার রিয়্যাকশন বলে।
অল্টারনেটরে আর্মচার রিয়্যাকশনের প্রভাব কতটুকু তা নির্ভর করে লোড কারেন্ট এবং লোড পাওয়ার ফ্যাকন্টর এর উপর আর্মেচার রিয়্যাকশনের প্রভাব সংক্ষেপে বর্ণনা:-
- জিরো পাওয়ার ফ্যাক্টরে: এক্ষেত্রে আর্মেচার ফ্লাক্স ও মেইন ফ্লাক্স পরস্পর বিপরীত অভিমুখে ক্রিয়া করে। ফলে আর্মেচার রিয়্যাকশন মেইন ফিল্ডকে বাধা প্রদান করে এবং মেইন ফ্লাক্স দূর্বল হয়ে পড়ে।
- জিরো পাওয়ার ফ্যাক্টর লিডিংঃ এক্ষেত্রে আর্মেচার ফ্লাক্স এবং মেইন ফ্লাক্স উভয় একই অভিমুখে অবস্থান করে বলে মেইন ফিল্ড ফ্লাক্স এর শক্তি বেড়ে যায়। ফলে অল্টারনেটরে উৎপন্ন ই এম এফ বৃদ্ধি পায়।
- একক পাওয়ার ফ্যাক্টরেঃ এক্ষেত্রে ক্রশ-ম্যানেটাইজিং প্রকৃতির। পোলের অগ্রভাগে হ্রাস পায় এবং পশ্চাৎ ভাগে ফ্লাক্স বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আর্মেচার রিয়্যাকশনে সামান্য কিছু বিকৃতি ঘটে।
সিনক্রোনাস রিয়াক্ট্যান্স ও সিনক্রোনাস ইম্পিডেন্স
- সিনক্রোনাস রিয়াক্ট্যান্স: অল্টারনেটর পূর্ন লোড নিয়ে সিনক্রোনাস গতিবেগে চলার সময় আর্মেচার লিকেজ রিয়্যাক্ট্যান্স এবং আর্মেচার রিয়্যাকশন সমবেত ভাবে কারেন্ট এর প্রবাহ পথে যে বাধা প্রদান করে, তাকে সিনক্রোনাস রিয়্যাক্ট্যান্স বলে।
- সিনক্রোনাস ইম্পিডেন্স: আর্মেচারের কার্যকরী রোধ এবং সিনক্রোনাস রিয়্যাক্ট্যান্স এর সম্মিলিত বাধাকে একত্রে সিনক্রোনাস ইম্পিডেন্স বলে।
অল্টারনেটরের রেজিস্ট্যান্স টেস্ট (ওপেন সার্কিট টেস্ট ও শর্ট সার্কিট টেস্ট)
- অল্টারনেটরের নো-লোড টেস্ট: এ অবস্থায় সার্কিট খোলা রাখা হয়। যে কোন দুই ফেজের মধ্যে একটি এসি ভোল্ট মিটার সংযোগ করে মেশিনকে প্রাইমুভারের সাহায্যে সিনক্রোনাস গতিবেগে ঘুরানা হয়। ফিল্ড সার্কিটে ডিসি ভোল্টজ প্রয়োগ করে রিওস্ট্যাটের মাধ্যমে ফিল্ড কারেন্টকে শূন্য থেকে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়, যতক্ষণ না মেশিন পূর্ণ ভোল্টেজ পায়। ভোল্ট মিটার পাঠ থেকে এ পাঠ পাওয়া যায়।
- অল্টারনেটরের শর্ট সার্কিট টেস্ট: এ টেস্টের জন্য অল্টানেটর আর্মেচারের তিনটি লাইন এর সাথে তিনটি হাই রেঞ্জ এ্যমিটার সংযোগ পূর্বক লইন শর্ট করে প্রাইমুভারের সাহায্যে মেশিনকে সিনক্রোনাস গতিতে ঘুরানো হয়। ফিল্ড সার্কিট রিওস্ট্যাটের সাহায্যে কারেন্টকে নিয়ন্ত্রন করা হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়, যতক্ষণ রেটেড ফুল লোড কারেন্ট প্রবাহিত হয়। প্রাপ্ত ফিল্ড কারেন্ট এবং স্টেটর কারেন্ট এর মান নিয়ে যে কার্ড অংকন করা হয় তাকে শর্ট সার্কিট বৈশিষ্ট রেখা বলে। শর্ট সার্কিট অবস্থায় মেশিন যে কারেন্ট গ্রহণ করে তার বেশির ভাগই আর্মেচার রেজিস্ট্যান্স জনিত লস। এই লসকে আর্মেচার কপার লস বলে।
সমস্যা-০১ঃ
একটি ২০০ কেভিএ ২৩০০ ভোল্ট, ৩ ফেজ অল্টারনেটরের প্রতি দুই লাইনের ডিসি রেজিস্ট্যান্স ০.৮ ওহম। এর পাওয়ার ফ্যাক্টর ০.৮ ল্যাগিং এবং শর্ট সার্কিট কারেন্ট ২০৪ অ্যাম্পিয়ার। এ সি রেজিস্ট্যান্স ডিসি রেজিস্ট্যান্স ১.৫ গুণ হলে সিনক্রোনাস ইম্পিডেন্স এবং সিনক্রোনাস রিয়্যাক্ট্যান্স বের কর।
সমাধানঃ
এখানে,
- তিন ফেজ অল্টারনেটরের রেটেড কেভিএ পাওয়ার = ২০০ কেভিএ
- রেটেড ভোল্টেজ = ২৩০০ পাওয়ার ফ্যাক্টর =০.৮ ল্যাগিং।
- শর্ট সার্কিট কারেন্ট = ২০৪
- ডিসি রেজিস্ট্যান্স (সিঙ্গেল) = ০.৪
অল্টারনেটরের কার্যনীতি:
মূলত ডিসি জেনারেটর এবং অল্টানেটর একই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এসি জেনারেটর এ আর্মেচার এবং ফিল্ড থাকে। এ ক্ষেত্রে ফিল্ড ঘুরানো হয় এবং আর্মেচার স্থির রাখা হয়।
চিত্রে দেখা যায় আর্মেচার অর্থাৎ স্টেটর স্থির এবং রোটর অর্থাৎ ফিল্ড ওয়ান্ডিং ঘূর্ণনশীল। রোটর স্টেটরের ভিতরে থাকে। কোরের ভিতরে পরিধি বরাবর সুবিন্যাস্ত খাঁজের মধ্যে আর্মেচার ওয়ান্ডিং স্থাপন করা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডি.সি সরবরাহের জন্য রোটর শ্যাফটের সাথে একটি ছোট শান্ট জেনারেটর সংযুক্ত করা হয়। একে এক্সাইটার বলে। এর মাধ্যমে কারেন্ট ব্রাশ এবং স্লিপ রিং এর মাধ্যমে ফিল্ড কয়েলে প্রবেশ করে।
প্রাইমমুভারঃ এই প্রাইমুভারের মাধ্যমে রোটরকে ঘুরানো হলে রোটর ফিল্ডে চৌম্বক বলরেখার সৃষ্টি হয় যা আর্মেচার কন্ডাক্টরকে কর্তন করে ফলে এতে ভোল্টেজ আবিষ্ট হয়।
এই আবিষ্ট ভোল্টেজ ফ্লেমিং এর দক্ষিণ হস্থ বিধি অনুযায়ী নির্ণয় করা যায়।
এক্সাইটার
রোটর ফিল্ডকে তড়িৎ চুম্বকে পরিনত করতে একটি ছোট ডিসি শান্ট জেনারেটর ব্যবহার করা হয় একেই এক্সাইটর বলে। ইহার রেটিং (১২০-৫০০) ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে।
ব্রাশ এক্সাইটেশন:
বড় বড় এক্সাইটারকে উত্তেজিত করতে ছোট এক্সাইটার ব্যবহার করা হয়। একে পাইলট এক্সাইটার বলে। এটি স্বয়ং উত্তেজিত ডি.সি শান্ট জেনারেটর যা মূল এক্সাইটর শ্যাফটের সাথে যুক্ত থাকে।
ব্রাশ বিহীন এক্সাইটেশন:
এই ব্যবস্থায় বাইরে থেকে কোন ডি.সি ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় না। ৩-ফেজ অল্টারনেটরের মতই এক্ষেত্রে রোটরে সৃষ্ট ই এম এফ দ্বারা এক্সাইটেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। মোটর ওয়ান্ডিং এর টার্মিনাল গুলো রেকটিফায়ারসহ সংযোগ করে দেয়ার ফলে ওয়ান্ডিং এর মধ্যে অভ্যান্তরিন ভাবে কারেন্ট প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ চম্বুক সৃষ্টি করে যা দ্বরা ফিল্ড এক্সাইটেশনের কাজ সম্পন্নহয়। ফলে এতে ব্রাশ এর প্রয়োজন হয় না।
এক্সাইটারের কাজ:
- এক্সাইটারের রোটর উত্তেজিত করা ছাড়াও নিম্নের কাজ করে।
- রোটর ফিল্ডকে উত্তেজিত করা।
- টার্মিনাল ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা।
- রিয়াক্টভ পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা।
অল্টারনেটরকে সিনক্রোনাস জেনারেটর বলা হয় কেন?
অল্টারনেটরে সার্বক্ষনিক সিনক্রোনাস গতিবেগে ঘুরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করে বলে একে সিনক্রোনাস জেনারেটর বলা হয়।
অল্টারনেটর এর ই.এম.এফ সমীকরণ নির্ণয়
জেনারেটরের মূলনীতি হচ্ছে, যদি এক প্যাঁচ বিশিষ্ট তারের কয়েল প্রতি সেকেন্ডে 10⁸ Maxwell ফ্লাক্স কর্তন করে, তাহলে 1 ভোল্ট ই.এম এফ উৎপন্ন করবে।
এভারেজ মানকে ইফেকটিভ মানে নেয়ার জন্য ফরমফ্যাকটর দ্বারা গুণ করতে হয়।
Eeff = 1.11×4Nføm × 10⁻⁸ Volt
E = 4.44ømfN Volt web
E = 4.44ømfNp Volt web
E = 4.44 f Ns Øm Volt web
আবার অল্টারনেটরের আর্মেচারে ফ্রাকশনাল ও ডিস্ট্রিবিউটেড ওয়ান্ডিং এর কারণে উৎপন্ন ভোল্টেজের প্রকৃত মান সর্বদা কিছু কম হয় সেক্ষেত্রে, আর্মেচার ওয়ান্ডিং এর প্রতি ফেজে উৎপন্ন কার্যকরী ভোল্টেজঃ-
E = 4.44 f Ns Kd KpØm Volt web
এখানে,
পিচ ফ্যাক্টর = Kp
ডিস্ট্রিবিউশন ফ্যাক্টর = Kd
অল্টারনেটরের দক্ষতা
একটি অল্টারনেটরের কিলওয়াট ইনপুট এবং কিলওয়াট আউটপুট এর অনুপাতকে ঐ মেশিনের দক্ষতা বলে।
এসি জেনারেটর কি?
যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে পরিবর্তী বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়, তাকে অল্টারনেটিং কারেন্ট জেনারেটর সংক্ষেপে এসি জেনারেটর বলে।