ভারী ধাতু কাকে বলে? সবচেয়ে ভারী ধাতু কোনটি? ভারী ধাতু কি কি? ভারী ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ভারী ধাতু কাকে বলে?
ভারী ধাতু বলতে সাধারণত উচ্চ ঘনত্ব সম্পন্ন ধাতুগুলোকে বোঝায় অর্থাৎ যাদের ঘনত্ব খুব বেশি। সাধারণভাবে যে ধাতুগুলির ঘনত্ব 5 গ্রাম/সে.মি³ এর বেশি, সেগুলিকে ভারী ধাতু হিসাবে গণ্য করা হয়।
ঘনত্ব হলো একক আয়তনের (যেমন, ঘন সেন্টিমিটার) পদার্থের ভর। ভারী ধাতু হলো এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ।
সবচেয়ে ভারী ধাতু কোনটি?
সবচেয়ে ভারী ধাতু হলো অসমিয়াম (Osmium)। এর প্রতীক Os এবং অসমিয়াম এর ঘনত্ব 22.59 g/cm³, যা পানির ঘনত্বের প্রায় 22.6 গুণ। এটি একটি নীলচে-সাদা রঙের সংক্রমণ ধাতু যা প্ল্যাটিনাম গ্রুপের অন্তর্গত। অসমিয়াম খুব কঠিন এবং ভঙ্গুর, এবং এটি প্রকৃতিতে খুব বিরল।
অসমিয়াম প্রাকৃতিকভাবে খনিজ পদার্থে পাওয়া যায় এবং এটি পৃথিবীর ভূত্বকে গঠনকারী সবচেয়ে ঘন পদার্থগুলির মধ্যে একটি। এটি খুবই শক্ত, টেকসই এবং উচ্চ গলনাংক বিশিষ্ট। সাধারণত 3000°C তাপমাত্রায় গলে যায়। ওসমিয়াম খনন এবং পরিশোধন করা খুবই কঠিন এবং ব্যয়বহুল, তাই এটি একটি দামি ধাতু।
ভারী ধাতু কি কি?
- Titanium
- Vanadium
- Chromium
- Manganese
- Iron
- Cobalt
- Nickel
- Copper
- Zinc
- Gallium
- Germanium
- Arsenic
- Zirconium
- Niobium
- Molybdenum
- Technetium
- Ruthenium
- Rhodium
- Palladium
- Silver
- Cadmium
- Indium
- Tin
- Tellurium
- Lutetium
- Hafnium
- Tantalum
- Tungsten
- Rhenium
- Osmium
- Iridium
- Platinum
- Gold
- Mercury
- Thallium
- Lead
- Bismuth
- Polonium
- Astatine
- Lanthanum
- Cerium
- Praseodymium
- Neodymium
- Promethium
- Samarium
- Europium
- Gadolinium
- Terbium
- Dysprosium
- Holmium
- Erbium
- Thulium
- Ytterbium
- Actinium
- Thorium
- Protactinium
- Uranium
- Neptunium
- Plutonium
- Americium
- Curium
- Berkelium
- Californium
- Einsteinium
- Fermium
- Nobelium
- Radium
- Lawrencium
- Rutherfordium
- Dubnium
- Seaborgium
- Bohrium
- Hassium
- Meitnerium
- Darmstadtium
- Roentgenium
- Copernicium
- Nihonium
- Flerovium
- Moscovium
- Livermorium.
পর্যায় সারণির সবচেয়ে ভারী ধাতু কোনটি?
পর্যায় সারণির সবচেয়ে ভারী ধাতু নির্ধারণের দুটি উপায় রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
1. পারমাণবিক ভর অনুসারে:
পারমাণবিক ভর অনুযায়ী, সবচেয়ে ভারী ধাতু হল প্লুটোনিয়াম (Pu) যার পারমাণবিক সংখ্যা 94 এবং পারমাণবিক ভর 244 গ্রাম/মোল (Pu-244 এর জন্য)।
2. ঘনত্ব অনুসারে:
ঘনত্ব অনুযায়ী, সবচেয়ে ভারী ধাতু হল অসমিয়াম (Os) যার ঘনত্ব 22.59 গ্রাম/সেমি^3।
তবে, প্লুটোনিয়াম কৃত্রিমভাবে তৈরি মৌল, প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। অসমিয়াম একটি খুব বিরল প্রাকৃতিক ধাতু।
অতএব, প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সবচেয়ে ভারী ধাতু হল ইউরেনিয়াম (U) যার পারমাণবিক সংখ্যা 92 এবং পারমাণবিক ভর 238 গ্রাম/মোল (U-238 এর জন্য)। সবচেয়ে ঘন ধাতু, যা প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উভয় উৎসেই পাওয়া যায়, হল অসমিয়াম (Os)।
আরও পড়ুনঃ ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি কি? ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ভারী ধাতুর বৈশিষ্ট্য:
- উচ্চ ঘনত্ব: ভারী ধাতুর ঘনত্ব 5 g/cm³ এর বেশি হয়ে থাকে। ভারী ধাতুগুলির ঘনত্ব অন্যান্য ধাতুর তুলনায় অনেক বেশি থাকে। যেমন স্বর্ণের ঘনত্ব 19.32 গ্রাম/সেমি³, প্লাটিনামের 21.45 গ্রাম/সেমি³ ইত্যাদি।
- বেশি গলনাঙ্ক ও দ্রাবণাঙ্ক: এদের উচ্চ ঘনত্বের কারণে গলনাঙ্ক ও দ্রাবণাঙ্কও অনেক বেশি হয়। যেমন টাংস্টেনের দ্রাবণাঙ্ক 3422°C।
- ক্ষয়প্রতিরোধক: অনেক ভারী ধাতুই ক্ষয়প্রতিরোধক বা অ্যান্টিকোরোসিভ। উদাহরণস্বরূপ টাইটানিয়াম ও জাইরকোনিয়াম।
- টেকসই: ভারী ধাতু গুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়, এতে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
- উচ্চ শক্তি: ভারী ধাতুগুলি খুব শক্তিশালী এবং কঠিন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ টাংস্টেন ও টাইটানিয়ামের শক্তি অতুলনীয়।
- ভালো পরিবাহী: তাপ এবং বিদ্যুৎ উভয়ই ভালোভাবে পরিবহন করে।
- বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়: সোনালী, রূপালী, বাদামী, কালো ইত্যাদি।
- দুর্লভতা: প্রকৃতিতে ভারী ধাতুগুলি দুর্লভ ও সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়।
- মজবুত পারমাণবিক বন্ধন: এদের পারমাণবিক বন্ধন শক্তিশালী হয়ে থাকে।
- নমনীয়তা: বেশিরভাগ ভারী ধাতু নমনীয় হয়, যার ফলে তাদের বিভিন্ন আকারে তৈরি করা সম্ভব।
- চৌম্বকীয়তা: কিছু ভারী ধাতু, যেমন লোহা, চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
- বিষাক্ততা: অনেক ভারী ধাতু বিষাক্ত হতে পারে এবং পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে আসলে, ভারী ধাতুগুলি স্নায়বিক সমস্যা, কিডনি বিকল, এমনকি ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে।
পর্যায় সারণির সবচেয়ে ভারী তরল ধাতু কোনটি?
পর্যায় সারণিতে পারদ (Hg) সবচেয়ে ভারী তরল ধাতু। পর্যায় সারণির একমাত্র প্রাকৃতিক তরল ধাতু হল পারদ (Hg), যার পারমাণবিক সংখ্যা 80 এবং পারমাণবিক ভর 200.59 g/mol । আদর্শ তাপমাত্রা এবং চাপে এটি তরল অবস্থায় থাকে, যা এটিকে অনন্য করে তোলে। এর ঘনত্ব অন্যান্য তরল ধাতুগুলোর চেয়ে বেশি। এটি একটি মৌলিক পদার্থ।
কক্ষ তাপমাত্রায় এবং আদর্শ চাপে, পারদ তরল অবস্থায় থাকে। অন্যান্য ধাতু, যেমন সোডিয়াম (Na) এবং পটাশিয়াম (K), তরল হতে পারে কিন্তু কেবলমাত্র উচ্চ তাপমাত্রায়। কিছু কৃত্রিম ধাতু, যেমন ফ্রান্সিয়াম (Fr), পারদ থেকে ভারী হতে পারে, কিন্তু তারা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। তাই, পর্যায় সারণির সবচেয়ে ভারী তরল ধাতু হল পারদ।
পারদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
- ঘনত্ব: 13.534 g/cm³, যা এটিকে পানির চেয়ে প্রায় 13.5 গুণ ভারী করে তোলে।
- গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক: -38.8°C এবং 356.7°C, যার মানে হল এটি কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে।
- বিষাক্ততা: পারদ অত্যন্ত বিষাক্ত এবং এর সংস্পর্শে আসা এড়ানো উচিত। ভারী ধাতু ব্যবহারের সময় সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যবহার: পারদ থার্মোমিটার, বারোমিটার, এবং কিছু ধরণের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয়।
- বিদ্যুৎ পরিবাহিতা: মার্কারি ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী।
অন্যান্য তরল ধাতুগুলির মধ্যে রয়েছে সিজিয়াম (Cs) এবং গ্যালিয়াম (Ga), কিন্তু সেগুলি পারদের চেয়ে হালকা।
আরও পড়ুনঃ ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য
ভারী ধাতুর ব্যবহারঃ
ভারী ধাতুগুলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার নিম্নরূপ:
1. নির্মাণ শিল্প: লোহা, ক্রোম, নিকেল সেতু, ভবন, রাস্তাঘাট, গাড়ি, মেশিন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, রেল নির্মাণে ও অন্যান্য নির্মাণ কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। লোহা ও ক্রোমের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি ইস্পাত অত্যন্ত শক্তিশালী নির্মাণ সামগ্রী।
- ইস্পাত: ভবন, সেতু, যানবাহন, ইত্যাদির কাঠামোগত উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম: জানালা, দরজা, ছাদ, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
- সীসা: ছাদ, পাইপ, ব্যাটারি, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় (বর্তমানে সীমাবদ্ধ ব্যবহার)।
- জিঙ্ক: ছাদ, জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং গাড়ির অংশে ব্যবহৃত হয়।
2. যানবাহন শিল্প: প্ল্যাটিনাম, লোহা ইত্যাদি গাড়ি, বিমান, জাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। টাংস্টেন বিমান ইঞ্জিনের তাপ সহনশীল অংশে ব্যবহৃত হয়।
- লিথিয়াম: ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয়।
- নিকেল: ব্যাটারি এবং ইলেকট্রিক মোটরের জন্য ধাতব মিশ্রণে ব্যবহৃত হয়।
- ক্যাডমিয়াম: রিচার্জেবল ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয় (বর্তমানে সীমাবদ্ধ ব্যবহার)।
3. ইলেকট্রনিক্স শিল্প: কপার বৈদ্যুতিক তার, লেবেল ও ছবি তৈরিতে সিলভার ব্যবহৃত হয়। রুথেনিয়াম হার্ডডিস্ক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভারী ধাতু, যেমন তামা এবং সোনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- তামা: বিদ্যুৎ তার, মোড়ক, মাইক্রোচিপ, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
- সোনা: সংযোগকারী এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের কোটিংয়ে ব্যবহৃত হয়।
- রূপা: সুইচ এবং সংযোগকারীতে ব্যবহৃত হয়।
- প্ল্যাটিনাম: ক্যাটালাইস্ট এবং সেন্সরে ব্যবহৃত হয়।
4. বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম:
- তামা: তার, সুইচ, সকেট, ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম: বিদ্যুৎ লাইন এবং তার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
5. রান্নাঘরের সরঞ্জাম: তামা, অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, ইত্যাদি ধাতু রান্নাঘরের সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- স্টেইনলেস স্টিল (লোহা, ক্রোমিয়াম, নিকেল): পাত্র, কড়াই তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- তামা: পাত্র, কড়াই তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম: পাত্র, কড়াই, ফয়েল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
6. গয়না:
- সোনা, রূপা, প্লাটিনাম: আংটি, লকেট, কানের দুল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- তামা, ব্রোঞ্জ: আংটি, লকেট, ব্রেসলেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
7. অস্ত্র:
- ইস্পাত: বন্দুক, ছুরি, তলোয়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- সীসা: বন্দুকের গুলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
8. মুদ্রা:
- তামা, নিকেল: বিভিন্ন দেশের দেশীয় মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
9. যন্ত্রপাতি নির্মাণ: ভারী ধাতু যেমন ইস্পাত, ব্রোঞ্জ, নিকেল প্রভৃতি দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
10. গাড়ি শিল্প: গাড়ির বডি, ইঞ্জিন ও অন্যান্য অংশ তৈরিতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং টাইটানিয়ামের ব্যবহার হয়ে থাকে।
11. বিমান শিল্প: বিমানের বডি ও ইঞ্জিন নির্মাণে টাইটানিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ইস্পাতের ব্যবহার অপরিহার্য।
12. যুদ্ধ শিল্প: অস্ত্র-শস্ত্র ও গোলাবারুদ নির্মাণে ভারী ধাতু ব্যবহৃত হয়।
13. নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ভারী ধাতু দিয়ে নির্মিত ফায়ার প্রুফ দরজা, জানালা, লকার ইত্যাদি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
14. মৌলিক গবেষণা: ভারী ধাতুগুলির উপর নানা গবেষণা চলমান থাকে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে।
15. রসায়ন শিল্প: প্ল্যাটিনাম ও রডিয়াম ক্যাটালাইজার হিসেবে কাজ করে। মাঙ্গানিজ ও ক্রোমিয়াম রাসায়নিক দ্রবণ তৈরিতে সহায়তা করে। ভারী ধাতু দিয়ে নির্মিত ট্যাংক, পাইপ প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহৃত হয়
16. চিকিৎসা শিল্প: টাংস্টেন রেন্টগেন মেশিনে ব্যবহৃত হয়। প্ল্যাটিনাম সার্জারির সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে লাগে। পারদ থার্মোমিটার, প্লাটিনাম ক্যান্সার চিকিৎসায়, চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম) হাড়ের ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
17. চুম্বক: ভারী ধাতু যেমন নিকেল, কোবাল্ট এবং নিওডিমিয়াম শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
18. পারমাণবিক শক্তি: ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম মতো ভারী ধাতুগুলো পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরগুলিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডিপ্লরেনিয়াম পরমাণু রিয়েক্টরে ব্যবহৃত হয়।
19. মেটালার্জি ও অ্যালোয়িং: লোহা, ক্রোমিয়াম এবং নিকেলের মতো ভারী ধাতুগুলো বিভিন্ন ধরনের ইস্পাত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
20. ব্যাটারি: ভারী ধাতু, যেমন লিড এবং সীসা, কিছু ধরণের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয়।
21. ক্যাটালিস্ট: প্লাটিনাম গ্রুপের ধাতুগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্যাটালিস্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
22. রকেট: ওসমিয়াম রকেটের নজল ও অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্টগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
23. অন্যান্য:
- লোহা, ইস্পাত, তামা, অ্যালুমিনিয়াম: ভবন, সেতু, রাস্তাঘাট, গাড়ি, মেশিন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- পারদ: থার্মোমিটার, ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব এবং দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- আর্সেনিক: কীটনাশক, কাঠের সংরক্ষণকারী এবং অ্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- ক্রোমিয়াম: স্টেইনলেস স্টিল, প্লেটিং এবং রঞ্জক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- জিঙ্ক: গ্যালভানাইজিং, ব্যাটারি এবং অ্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ভারী ধাতুগুলোর বিষাক্ততা নিয়েও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এগুলি বিষাক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। যেমন, ক্যাডমিয়াম, মার্কারি এবং সীসার মতো ধাতুগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই ধাতুগুলো খাদ্যে বা পানিতে মিশে গেলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ক্যান্সার এবং নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। তাই, এই ধাতুগুলোর ব্যবহার এবং নিষ্কাশনে সতর্কতা এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুনঃ ইস্পাত কি? ইস্পাত কত প্রকার ও কি কি? ইস্পাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ভারী ধাতুর সুবিধা ও অসুবিধাঃ
ভারী ধাতুগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিম্নরুপ:
সুবিধাসমূহ:
- শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক: ভারী ধাতুগুলি খুব শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক। এগুলি ব্যবহার করা হয় স্থাপনা নির্মাণ, ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি তৈরিতে।
- শক্ত ও টেকসই: ভারী ধাতুগুলো অন্যান্য ধাতুগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্ত ও শক্তিশালী এবং টেকসই হয় যা তাদের বিভিন্ন ধরণের স্থায়ী কাঠামো এবং যন্ত্রপাতিতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। এজন্য দীর্ঘস্থায়ী পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
- ঘনত্ব: ভারী ধাতুগুলি ঘন হয়, যার ফলে এগুলি ব্যালাস্ট, রক্ষাকারী শিল্ড এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়।
- বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবাহী: ভারী ধাতুগুলির তাপ ও বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বেশি হয়। কিছু ভারী ধাতু, যেমন তামা এবং অ্যালুমিনিয়ামের বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবাহীতা বেশি। এজন্য এগুলো ইলেকট্রনিক্স এবং বিদ্যুৎ সরঞ্জামগুলিতে ব্যবহারের করা হয়।
- ক্ষয়প্রতিরোধক: কিছু ভারী ধাতু যেমন ক্রোমিয়াম ও নিকেল, ক্ষয়প্রতিরোধক হওয়ায় বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবেশে ব্যবহৃত হয়।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার: কিছু ভারী ধাতু, যেমন প্লাটিনাম এবং গোল্ড, চিকিৎসা প্রক্রিয়া এবং ইমপ্ল্যান্টগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
- সৌন্দর্য: কিছু ভারী ধাতু, যেমন সোনা এবং রূপা এদের আকর্ষণীয় রঙের জন্য গয়না এবং শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- চৌম্বকীয় গুণাবলী: কিছু ভারী ধাতুর চৌম্বকীয় গুণাবলী থাকে, যার ফলে মোটর এবং অন্যান্য চৌম্বকীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে সেগুলি ব্যবহার করা যায়। যেমন লোহা, চৌম্বকীয় গুণাবলী ধারণ করে।
- বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ: কিছু ভারী ধাতু, যেমন জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
- জৈবিক গুরুত্ব: কিছু ভারী ধাতু মানুষের শরীরে জরুরি ভূমিকা পালন করে। যেমন, আয়রন রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে এবং জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অসুবিধাসমূহ:
- ওজন বেশি: ভারী ধাতুগুলির ওজন বেশি থাকে, যা পরিবহন ও স্থানান্তর করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- উচ্চ গলনাঙ্ক: অনেক ভারী ধাতুর গলনাঙ্ক খুব বেশি থাকে। এতে গলানো ও ঢালাইয়ের প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
- মূল্যবান: ভারী ধাতুগুলি সাধারণত দামি এবং সংগ্রহ ও আহরণ প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল।
- পরিবেশগত দূষণ: কিছু ভারী ধাতু যেমন সীসা,খুব বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ভারী ধাতু খনন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জল ও মাটি দূষিত হতে পারে। এগুলি খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে এবং মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- বিষাক্ততা: কিছু ভারী ধাতু, যেমন সীসা এবং পারদ, বিষাক্ত হতে পারে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে আসলে এগুলি মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- উচ্চ উত্তোলন খরচ: কিছু ভারী ধাতু উত্তোলন করা ব্যয়বহুল।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা: কিছু ভারী ধাতু পুনর্ব্যবহার করা জটিল, যার ফলে পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়: ভারী ধাতুগুলি প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন খনিজ পদার্থ, যা সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়।
সুতরাং, ভারী ধাতুগুলির ব্যবহার পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে কখনও সুবিধাজনক হতে পারে আবার কখনও বা অসুবিধাজনক।
আরও পড়ুনঃ কিউপোলা চুল্লি কি? কিউপোলা চুল্লি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
সবচেয়ে ভারী ধাতুর ইলেকট্রন বিন্যাস
ঘনত্ব অনুযায়ী, সবচেয়ে ভারী ধাতু হল অসমিয়াম (Os) যার ঘনত্ব 22.59 g/cm³
অসমিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস হল:
[Xe]₅₄→4f¹⁴ 5d⁶ 6s²