ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য কি?

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? 

ধাতু এবং অধাতু উভয়ই মৌলিক পদার্থের দুটি প্রধান শ্রেণি।

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

ধাতু এবং অধাতু সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ধাতুঃ সাধারনত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যেসব মৌল ইলেকট্রন দান করে তারা ধাতু। ধাতু ইলেকট্রন দান করে ধাতব আয়ন/ধনাত্বক আয়নে পরিনত হয়। যেমন Na ইলেকট্রন দান করে Na⁺ আয়নে পরিনত হয়। Na⁺ মানে হল একটি ইলেকট্রন (e⁻) ঘাটতি আছে অথবা একটি প্রোটন বেশী আছে। আরো উদাহরন- Ca, Mg, K, Ti ইত্যাদি ব্যতিক্রম হল (H)

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

ধাতু হচ্ছে এমন সব মৌল বা যৌগ বা সংকর যারা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। ধাতু দেখতে উজ্জ্বল রংয়ের এবং আলো প্রতিফলন করে, আঘাত করলে শব্দ হয়। ধাতু সাধারনত কঠিন অবস্থায় থাকে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ধাতু ইলেকট্রন ত্যাগ করে পজিটিভ আয়ন (ক্যাটায়ন) উৎপন্ন করে।

সহজ ভাষায় বলা যাই, যে সকল পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথে ১,২,৩ টি ইলেকট্রন থাকে, তাদের কে ধাতু বলে।

ধাতু বলতে সেই সকল মৌলিক পদার্থকে বোঝায় যা সাধারণ অবস্থায় কঠিন, দৃঢ়, উজ্জ্বল বা চকচকে, ওজনে ভারী, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়। যেমন– লোহা, তামা, সোনা ইত্যাদি।

অধাতুঃ সাধারনত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যেসব মৌল ইলেকট্রন গ্রহন করে তারা অধাতু। অধাতু ইলেকট্রন গ্রহন করে অধাতব আয়ন/ঋনাত্মক আয়নে পরিনত হয়। যেমনঃ-CI, যা ইলেকট্রন (e⁻) গ্রহন করে ঋনাত্বক আয়নে পরিনত হয়। Cl⁻ মানে হলো একটি ইলেকট্রন (e⁻) বেশী আছে।

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

সহজ ভাষায় বলা যাই, যে সকল পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথে ৫, ৬, ৭ টি ইলেকট্রন থাকে, তাদের কে অধাতু বলে।

অধাতু বলতে সেই সকল মৌলিক পদার্থকে বোঝায় যা চকচকে নয়, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে না এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। যেমন– হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, অক্সিজেন, সালফার ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ ইস্পাত কি? ইস্পাত কত প্রকার ও কি কি? ইস্পাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য হলো, ধাতু সাধারণত বিজারক পদার্থ এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম, অন্যদিকে অধাতু সাধারণত জারক পদার্থ এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনে অক্ষম।

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য
ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

ধাতু অধাতু
যে সকল পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথে ১,২,৩ টি ইলেকট্রন থাকে, তাদের কে ধাতু বলে। যে সকল পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথে ৫, ৬, ৭ টি ইলেকট্রন থাকে, তাদের কে অধাতু বলে।
ধাতুগুলো সাধারণত চকচকে এবং উজ্জ্বল হয়। অধাতুগুলো সাধারণত চকচকে এবং উজ্জ্বল হয় না।
ধাতুগুলি আলো প্রতিফলিত করে, তাই এগুলি চকচকে দেখায়। অধাতু আলো প্রতিফলিত করে না, তাই এগুলি চকচকে দেখায় না।
ধাতুগুলো তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। অধাতুগুলো তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তুলনামূলকভাবে অস্থিতিশীল।
ধাতুগুলো বিদ্যুৎ এবং তাপ সুপরিবাহি হয়। অধাতু বিদ্যুৎ এবং তাপ কুপরিবাহি হয়।
ধাতুগুলো সাধারণত অন্যান্য পদার্থের তুলনায় বেশি ভারী হয়। অধাতুগুলো সাধারণত ধাতুর তুলনায় হালকা হয়।
ধাতুগুলোকে আঘাত করলে সহজে ভাঙে না। অধাতুগুলো শক্ত নয় এবং সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
ধাতু চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা আকৃষ্ট হয়। অধাতু চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা আকৃষ্ট হয় না।
ধাতুগুলো শক্ত এবং টেকসই হয়। অধাতুগুলো শক্ত এবং টেকসই হয় না।
ধাতুগুলোকে সহজে নমনীয় করা যায়। অধাতুগুলো সহজে নমনীয় করা যায় না।
ধাতুগুলি সাধারণত অধাতুগুলির তুলনায় বেশি ঘন। অধাতুগুলি সাধারণত ধাতুগুলির তুলনায় বেশি পাতলা।
ধাতুগুলো সাধারণত অধাতুগুলোর তুলনায় বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। অধাতুগুলো সাধারণত ধাতুগুলোর তুলনায় বেশি কম প্রতিক্রিয়াশীল।
ধাতু সাধারণত অধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে লবণ তৈরি করে। অধাতু সাধারণত ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে অক্সাইড, হাইড্রাইড বা হ্যালাইড তৈরি করে।
ধাতুর সাধারণত অধাতুর চেয়ে কম আয়নাইজেশন শক্তি থাকে। অধাতুর সাধারণত ধাতুর চেয়ে বেশি আয়নাইজেশন শক্তি থাকে।
ধাতুগুলির সাধারণত অধাতুর চেয়ে কম বৈদ্যুতিক ঋণাত্মকতা থাকে। অধাতুগুলির সাধারণত ধাতুগুলির চেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক ঋণাত্মকতা থাকে।
ধাতুর তাপ পরিবাহিতা বেশি। অধাতুর তাপ পরিবাহিতা কম।
ধাতুতে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়। অধাতুতে আঘাত করলে কোন শব্দ হয় না।
ধাতুগুলি নমনীয় এবং আকৃতি পরিবর্তন করা যায়। অধাতুগুলি ভঙ্গুর এবং আকৃতি পরিবর্তন করা যায় না।
ধাতুগুলি বাতাসে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে জারিত হয়। অধাতুগুলি তেমন করে না।
ধাতুগুলি সাধারণত ক্ষারীয় প্রকৃতির হয়। অধাতুগুলি অম্লীয় বা উভয় প্রকৃতির হতে পারে।
ধাতুগুলো বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, যানবাহন এবং ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অধাতুগুলো খাদ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক, কাচ, পোশাক এবং রাসায়নিক পদার্থ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ধাতুগুলিকে চাপ দিয়ে পাতলা শীটে পরিণত করা যায়। অধাতুগুলিকে চাপ দিয়ে পাতলা শীটে পরিণত করা যায় না।
ধাতুগুলিকে সরু তারে টানা যায়। উদাহরণ: সোনা, রূপা, তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত ইত্যাদি। অধাতুগুলিকে সরু তারে টানা যায় না। উদাহরণ: কাঠ, কাগজ, প্লাস্টিক, কাচ, রাবার, ইত্যাদি।
ধাতুগুলিতে ধাতব বন্ধন থাকে যা পরমাণুদের আংশিক আয়নায়ন এবং ইলেকট্রনগুলির শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ঘটে। অধাতুগুলিতে আয়নিক বা ভৌত বন্ধন থাকে।
ধাতুগুলি সাধারণত উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট। অধাতুগুলি সাধারণত নিম্ন গলনাঙ্ক এবং দ্রাবণাঙ্ক বিশিষ্ট।
ধাতুগুলি তাপ এবং বিদ্যুতের উত্তম পরিবাহী কারণ এদের মুক্ত ইলেকট্রনগুলি সহজেই চলাচল করতে পারে। অধাতুগুলি তাপ এবং বিদ্যুতের নিম্ন পরিবাহী।
ইলেকট্রন বিন্যাসে ধাতুগুলির সাধারণত কম ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে। ইলেকট্রন বিন্যাসে অধাতুগুলির সাধারণত বেশি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে।
ধাতু গুলো জোড়া লাগানো যায়। অধাতু গুলো সাধারণ জোড়া লাগানো যায় না।
ধাতু ইলেকট্রন দান করে। অধাতু ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
ধাতু থেকে ধাতব দ্যুতি ছড়াই। কারণ ধাতু আলোক বিচ্ছুরণে সক্ষম। অধাতু থেকে কোন ধাতব দ্যুতি ছড়াই না। কারণ অধাতু আলোক বিচ্ছুরণে অক্ষম।
কিছু ব্যতিক্রম:

কিছু পদার্থ আছে যাদের কিছু ধাতুর এবং কিছু অধাতুর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মেনিয়াম এবং সিলিকন অর্ধ-ধাতু হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, কারণ এগুলো কিছুটা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ হার্ডেনিং কি? হার্ডেনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ধাতু ও অধাতুর বৈশিষ্ট্য

নিচে ধাতু ও অধাতুর বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:
ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

ধাতুর বৈশিষ্ট্য:

  • চকচকে: ধাতুগুলি আলোকে প্রতিফলিত করে, যা তাদের চকচকে চেহারা দেয়।
  • তড়িৎ পরিবাহী: ধাতুগুলি তড়িৎ সহজেই প্রবাহিত করে, যা তাদের তার, ব্যাটারি এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক উপাদানে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
  • তাপ পরিবাহী: ধাতুগুলি তাপও সহজেই প্রবাহিত করে, যা তাদের রান্নার পাত্র, রেডিয়েটার এবং তাপ এক্সচেঞ্জারে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
  • ঝনঝন শব্দ: ধাতুকে আঘাত করলে এক ধরনের ঝনঝনে শব্দ হয়।
  • চকচকে পৃষ্ঠ: ধাতু ঘষলে চকচক করে এবং এটি ধাতব উজ্জ্বলতা প্রদান করে।

  • শক্ত: ধাতুগুলো শক্ত এবং টেকসই হয়।
  • ঘাতযোগ্য: ধাতুগুলোকে আঘাত করলে সহজে ভাঙে না।

  • ভারী: অধাতুর তুলনায় ধাতু বেশি ভারী বলে মনে হয়।

  • পিটিয়ে পাত করা যায়: ধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাত করা সম্ভব।

  • নমনীয়তা: বেশিরভাগ ধাতুকে তাপ ছাড়াই বাঁকানো বা আকৃতি দেওয়া যেতে পারে। ধাতুর নমনীয়তা গুণের জন্য একে টেনে তার বানানো যায়।
  • ঘন: ধাতুগুলি সাধারণত ঘন পদার্থ, যা তাদের কঠিন এবং টেকসই করে তোলে।
  • দৃঢ়: ধাতুগুলি সাধারণত দৃঢ় পদার্থ, যা তাদের ভার বহন করতে এবং চাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম করে তোলে।
  • অন্যান্য ধাতুর সাথে মিশ্রিত হতে পারে: ধাতুগুলি সাধারণত অন্যান্য ধাতুর সাথে মিশ্রিত হতে পারে, যা তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এবং নতুন উপকরণ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি ধাতুগুলিকে বিভিন্ন প্রয়োগের জন্য মূল্যবান করে তোলে, যেমন:

  • নির্মাণ।
  • পরিবহন।
  • বৈদ্যুতিক।
  • ইলেকট্রনিক্স।
  • যন্ত্রপাতি।

অধাতুর বৈশিষ্ট্য:

  • সাধারণত কুৎসিত: অধাতুগুলি সাধারণত চকচকে হয় না এবং তাদের নিস্তেজ চেহারা থাকে।

  • তড়িৎ অন্তরক: অধাতুগুলি তড়িৎ ভালভাবে প্রবাহিত করে না, যা তাদের ইনসুলেটর হিসাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।

  • ধাতব দীপ্তি নেই: অধাতুর কোনো ধাতব দ্যুতি নেই, অর্থাৎ এগুলো চকচকে নয়।

  • ওজনে হালকা: অধাতু সাধারণত ধাতুর তুলনায় হালকা।

  • তাপ অন্তরক: অধাতুগুলি তাপও ভালভাবে প্রবাহিত করে না, যা তাদের তাপ নিরোধক হিসাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।

  • ভঙ্গুর: বেশিরভাগ অধাতু ভঙ্গুর এবং সহজেই ভেঙে যায় ও আঘাত করলে শব্দ হয় না।

  • কম ঘন: অধাতুগুলি সাধারণত কম ঘন পদার্থ, যা তাদের হালকা করে তোলে।

  • নরম: অধাতুগুলি সাধারণত নরম পদার্থ, যা তাদের সহজেই আঁকা বা কাটা যায়।

  • সহজে ইলেকট্রন লাভ: বেশিরভাগ অধাতুর সহজে ইলেকট্রন লাভ করার ক্ষমতা থাকে।

  • উচ্চ আয়নকরণ শক্তি ও বৈদ্যুতিক ঋণাত্মকতা: অধাতুতে উচ্চ আয়নকরণ শক্তি এবং বৈদ্যুতিক ঋণাত্মকতা থাকে।

  • অন্যান্য অধাতুর সাথে মিশ্রিত হতে পারে: অধাতুগুলি সাধারণত অন্যান্য অধাতুর সাথে মিশ্রিত হতে পারে, যা তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এবং নতুন উপকরণ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি অধাতুগুলিকে বিভিন্ন প্রয়োগের জন্য মূল্যবান করে তোলে, যেমন:

  • ইনসুলেশন।
  • তাপ নিরোধক।
  • প্লাস্টিক।
  • রাসায়নিক।
  • কাচ।

ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় কি?

ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় নিচে দেওয়া হলো:-
  1. ধাতু ও অধাতু চিনতে হলে মৌলের পারমানবিক সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাস জানতে হবে।
  2. যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ কক্ষপথে (1, 2 ও 3 টি) ইলেকট্রন থাকে যেসব মৌল হল ধাতু। যেমন- Na(11) = 2,8,1 এর শেষ কক্ষপথে 1 টি ইলেকট্রন আছে তাই এটি ধাতু।
  3. আর শেষ কক্ষপথে যদি (5,6,7 টি) ইলেকট্রন থাকে তবে সেগুলো অধাতু যেমন Cl(17) = 2,8,7 এর শেষ কক্ষপথে 7 টি ইলেকট্রন আছে তাই এটি অধাতু।
  4. যেসকল মৌল খুব সহজে ইলেকট্রন (e¯) ত্যাগ করে তা হল ধাতু।
  5. যে সকল মৌল খুব সহজে ইলেকট্রন (e¯) গ্রহন করে তা হল অধাতু।
Note: পর্যায় সারনীর বামদিকের মৌল গুলো ধাতু এবং পর্যায় সারনীর ডানদিকের মৌল গুলো অধাতু।

ধাতু ও অধাতুর ব্যবহারঃ

ধাতু এবং অধাতু দুটি ভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ যাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার রয়েছে।

ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য

ধাতুর ব্যবহার:

  • নির্মাণ: ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং তামার মতো ধাতুগুলি ভবন, সেতু, রাস্তাঘাট, গাড়ি, রেললাইন, মেশিন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি তৈরিতে এবং অন্যান্য কাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

  • পরিবহন: অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত এবং টাইটানিয়ামের মতো ধাতুগুলি গাড়ি, বিমান এবং জাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

  • বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম: তামা, অ্যালুমিনিয়াম এবং সোনার মতো ধাতুগুলি তার, সুইচ, সকেট, তারের মোড়ক, ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

  • রান্নাঘরের সরঞ্জাম: পাত্র, কড়াই, ছুরি, কাঁটা, চামচ, থালা-বাসন, ইত্যাদি রান্নাঘরের সরঞ্জাম তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • গয়না বা অলংকার: আংটি, লকেট, কানের দুল ইত্যাদি তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়। সোনার গয়না, রুপোর গয়না, পিতলের গয়না, ইত্যাদি অলংকার তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • ইলেকট্রনিক্স: সোনা, রূপা এবং প্ল্যাটিনামের মতো ধাতুগুলি কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

  • যন্ত্রপাতি: ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং টাইটানিয়ামের মতো ধাতুগুলি গাড়ি, যন্ত্রপাতি, মোটরসাইকেল, বিমান, ট্রেন, জাহাজ, ইত্যাদি যানবাহন তৈরিতে ও অন্যান্য শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত হয়।

  • অস্ত্র: বন্দুক, ছুরি, তলোয়ার ইত্যাদি তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • মুদ্রা: তামা, অ্যালুমিনিয়াম, ইত্যাদি ধাতু দিয়ে মুদ্রা তৈরি করা হয়।

  • সরঞ্জামপত্র: হাতুড়ি, কাঁচি, ছুরি, ইত্যাদি সরঞ্জাম তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • খেলাধুলার সরঞ্জাম: টেনিস র‍্যাকেট, হকি স্টিক, ইত্যাদি খেলাধুলার সরঞ্জাম তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • চিকিৎসা সরঞ্জাম: স্কেলপেল, স্টেথোস্কোপ, ইনজেকশনের সুই, ইত্যাদি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • স্থাপত্যশিল্প: ভবনের দরজা, জানালা, রেলিং, ইত্যাদি তৈরিতে ধাতু ব্যবহৃত হয়।
  • জ্বালানি সেল: প্ল্যাটিনাম জ্বালানি সেলের ক্যাটালাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অধাতুর ব্যবহার:

  • প্লাস্টিক: প্লাস্টিক দিয়ে বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র তৈরি করা হয়, যেমন: প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, পানির পাইপ, আসবাবপত্র, খেলনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির খোল ইত্যাদি তৈরিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মতো অধাতুগুলি প্লাস্টিক তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

  • রাসায়নিক: হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের মতো অধাতুগুলি বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা শিল্প, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • কাচ: সিলিকন এবং অক্সিজেনের মতো অধাতুগুলি কাচ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা জানালা, দরজা, বোতল, আয়না, লেন্স, রঙিন কাচ ইত্যাদি তৈরি এবং অন্যান্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়।

  • ইনসুলেশন: ফাইবারগ্লাস এবং পলিস্টেরিনের মতো অধাতুগুলি ভবন এবং অন্যান্য কাঠামোকে উত্তাপ এবং শীতল করার জন্য ইনসুলেশন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

  • তাপ নিরোধক: সিরামিক এবং অ্যাসবেস্টসের মতো অধাতুগুলি তাপ নিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

  • রাবার: টায়ার, জুতা, হোজ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির বিচ্ছিন্নকারী, খেলনা ইত্যাদি তৈরিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • কাঠ: কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র, ঘরের দরজা-জানালা, নৌকা, ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

  • কাগজ: বই, খাতা, পত্রিকা, কার্ডবোর্ড, টিস্যু ইত্যাদি তৈরিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়। কাগজ দিয়ে বই, খাতা, পত্রিকা, ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

  • রাসায়নিক পদার্থ: ওষুধ, সার, রং, পেইন্ট, পরিষ্কারক, ইত্যাদি তৈরিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়। হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের মতো অধাতুগুলি বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা শিল্প, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • কাপড়: পোশাক, চাদর, তোয়ালে, বিছানার চাদর ইত্যাদি তৈরিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়।

  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: সিলিকন সেমি-কন্ডাক্টর, চীপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে অধাতু ব্যবহৃত হয়, যেমন:  ট্রানজিস্টর, ডায়োড, ইত্যাদি।

  • চিকিৎসা: কিছু অধাতু চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন: অস্থি মেরামতের জন্য টাইটানিয়াম।
  • ওষুধ শিল্প: ক্লোরিন, আয়োডিন, ব্রোমিন জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • আয়নায়ন: সিলভার, জার্মেনিয়াম ফটোগ্রাফি, সৌরশক্তি প্যানেলে ব্যবহৃত হয়।

ধাতু এবং অধাতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url