ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় কী?
ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় কী?
ধাতু এবং অধাতু রসায়নের দুই প্রধান শ্রেণীর মৌলিক পদার্থ। আধুনিক যুগে এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন, এক্স-রে ফ্লুরেসসেন্স ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে ধাতু ও অধাতু সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়।
ধাতু ও অধাতু চেনার কিছু সাধারণ উপায় এখানে দেওয়া হলো:
1. চেহারা:
- ধাতু: ধাতু সাধারণত চকচকে এবং ধূসর বা রুপালি রঙের হয়। ধাতুগুলি দেখতে উজ্জ্বল, চকচকে এবং ঝকঝকে হয়।
- অধাতু: অধাতু বিভিন্ন রঙের হতে পারে, যেমন হলুদ (গন্ধক), লাল (ফসফরাস), বা কালো (কার্বন)। অধাতুগুলি সাধারণত মসৃণ, ম্যাট বা পাথুরে হয়।
2. রঙ:
- ধাতু: ধাতুগুলি সাধারণত ধূসর, রুপালি বা সোনালি রঙের হয়।
- অধাতু: অধাতুগুলি বিভিন্ন রঙের হতে পারে, যেমন কালো, সাদা, লাল, নীল, ইত্যাদি।
3. স্পর্শ:
- ধাতু: ধাতুগুলি সাধারণত স্পর্শে ঠান্ডা অনুভূত হয়, বিশেষ করে যখন কক্ষ তাপমাত্রায় থাকে। ধাতুগুলি সাধারণত ঠান্ডা এবং মসৃণ হয়।
- অধাতু: অধাতুগুলি স্পর্শে ঠান্ডা বা উষ্ণ মনে হতে পারে, তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
4. ঘনত্ব:
- ধাতু: ধাতুগুলি সাধারণত অধাতুগুলির চেয়ে ভারী হয়।
- অধাতু: অধাতুগুলি সাধারণত ধাতুর চেয়ে কম ঘনত্ব বিশিষ্ট হয়।
5. চৌম্বকতা:
- ধাতু: বেশিরভাগ ধাতু চৌম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়। যেমন লোহা, নিকেল এবং কোবাল্ট, চৌম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়।
- অধাতু: অধাতুগুলি সাধারণত চৌম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় না।
6. শব্দ করে:
- ধাতু: ধাতুগুলি ঝনঝন করে শব্দ করে যখন একে অপরের সাথে আঘাত করা হয়।
- অধাতু: অধাতুগুলি বিভিন্ন শব্দ করতে পারে, তাদের গঠন এবং ঘনত্বের উপর নির্ভর করে।
7. রাসায়নিক বিক্রিয়া:
- ধাতু: ধাতুগুলি কিছু অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
- অধাতু: অধাতুগুলি সাধারণত অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে না।
8. বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা:
- ধাতু: ধাতু সাধারণত ভালো বৈদ্যুতিক পরিবাহী।
- অধাতু: অধাতু সাধারণত খারাপ বৈদ্যুতিক পরিবাহী।
9. তাপ পরিবাহিতা:
- ধাতু: ধাতু সাধারণত ভালো তাপ পরিবাহী। ধাতুগুলি তাপ দ্রুত পরিচালনা করে, যখন আপনি যদি একটি ধাতুর রড এবং একটি কাঠের রডের একই প্রান্তে তাপ প্রয়োগ করেন, তাহলে ধাতুর রডটি দ্রুত উত্তপ্ত হবে।
- অধাতু: অধাতু সাধারণত খারাপ তাপ পরিবাহী। অধাতুগুলি তাপ ধীরে পরিচালনা করে।
10. আলোক প্রতিফলন:
- ধাতু: ধাতু সাধারণত আলো প্রতিফলিত করে, যা তাদের চকচকে চেহারা দেয়।
- অধাতু: অধাতু সাধারণত আলো প্রতিফলিত করে না।
11. গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক:
- ধাতু: ধাতুর সাধারণত উচ্চ গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক থাকে।
- অধাতু: অধাতুর সাধারণত নিম্ন গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক থাকে।
12. ইলেকট্রন সংখ্যা:
- ধাতু: ধাতুগুলির সর্বশেষ কক্ষপথে কম সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে।
- অধাতু: অধাতুগুলির শেষ কক্ষপথে অনেক ইলেকট্রন থাকে।
13. ওজন পরিমাপ:
- ধাতু: ধাতুগুলি সাধারণত অধাতুগুলির তুলনায় ভারী হয়।
- অধাতু: বেশিরভাগ অধাতু ওজনে হালকা হয়।
14. ভঙ্গুরতা (Brittleness):
- ধাতু: ধাতুগুলির সাধারণত ভঙ্গুরতা কম হয়।
- অধাতু: অধিকাংশ অধাতুগুলি ভঙ্গুর হয়।
15. নমনীয়তা (Malleability):
- ধাতু: ধাতুগুলি সাধারণত নমনীয় হয় এবং হাতুড়ি দিয়ে পেটানো যায়।
- অধাতু: অধাতুগুলি সাধারণত খুব কম নমনীয় হয়ে থাকে।
16. টানা শক্তি (Tensile Strength):
- ধাতু: অধিকাংশ ধাতু সরু তারে বা লম্বা ভাবে অনেক টানা যায়। অধিকাংশ ধাতু তার নিজের থেকে অনেক বেশি বা লম্বা করে টানা যায়।
- অধাতু: অধাতু সরু তারে টানা যায় না। অধাতুগুলি সাধারণত খুব বেশি টানা যায় না।
17. তরল অবস্থায় আচরণ:
- ধাতু: গলিত ধাতু বিদ্যুৎ এবং তাপ পরিবাহন করতে পারে।
- অধাতু: গলিত অধাতু বিদ্যুৎ এবং তাপ পরিবাহন করতে পারে না।
ধাতু ও অধাতু চেনার সবথেকে সহজ উপায় কি?
ধাতু ও অধাতু চেনার সহজ উপায় নিম্নরূপ:
ধাতু:
- সাধারণত শক্ত, চকচকে, অস্বচ্ছ এবং ঘন।
- অধিকাংশ ধাতুর ক্ষেত্রে মৌলের নামের শেষে "আম" যুক্ত থাকে। যেমন: সোডিয়াম(Na), ক্যালসিয়াম(Ca)।
- তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।
- আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
- ঘষলে চকচক করে।
- ঘাত সহনশীল ও নমনীয়।
- বিশেষ দ্যুতি আছে।
- সহজেই জোড়া লাগানো যায়।
- ওজনে ভারী।
- পিটিয়ে পাত করা যায়।
- সাধারণত বিজারক পদার্থ।
- অপেক্ষাকৃত উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট।
- ধাতব অক্সাইডসমূহ ক্ষারকীয় এবং পানিতে দ্রবণীয় হলে ক্ষার উৎপন্ন হয়।
- ধাতুসমূহ এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করে।
অধাতু:
- সাধারণত নরম, অ-চকচকে, স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর।
- তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়।
- আঘাত করলে শব্দ হয় না।
- ঘাত সহনশীল ও নমনীয় নয়।
- ঘষলে চকচক করে না।
- অধাতু সমূহের দ্যুতি নেই।
- ওজনে হালকা হয়।
- সহজে জোড়া লাগানো যায় না।
- পিটিয়ে পাত করা যায় না।
- কার্বন ব্যতীত অন্যান্য অধাতুগুলো জারক পদার্থ।
- অপেক্ষাকৃত নিম্ন গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট।
- অধাতুসমূহ এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করে না।
- চুম্বক দ্বারা বিকর্ষিত হয় অর্থাৎ ডায়াম্যাগনেটিক প্রকৃতির।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে ধাতু ও অধাতু চেনা যায়।
কিছু ব্যতিক্রম:
- কিছু অধাতু, যেমন গ্রাফাইট, বিদ্যুৎ পরিচালনা করে।
- কিছু ধাতু, যেমন পারদ, তরল অবস্থায় থাকে।
উপরের বিষয়গুলি বিবেচনা করে আপনি ধাতু ও অধাতু চিনতে পারবেন। স্পষ্ট ধারণা পেতে আপনি বিভিন্ন ধাতু ও অধাতুর সাথে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
উপরের পদ্ধতিগুলি ছাড়াও, ধাতু ও অধাতু চেনার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু ধাতু তাপে গলে যায় এবং তারপর ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে কিছু অধাতু তাপে ভেঙে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে, ধাতু ও অধাতু চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে, রাসায়নিক বিশ্লেষণের মতো আরও জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ধাতু ও অধাতু কাকে বলে? ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য কি?