পিস্টন কি? পিস্টন কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জানুন

পিস্টন কি?

পিস্টন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক অংশ যা বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত একটি সিলিন্ডারের মধ্যে উপর-নিচ বা সামনে-পিছনে চলাচল করে।

পিস্টন কি? পিস্টন কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জানুন

পিস্টন কত প্রকার ও কি কি?

পিস্টন বিভিন্ন ধরনের হয়। এগুলোকে সাধারণত তাদের ডিজাইন, আকার, এবং ব্যবহার অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। প্রধানত পিস্টনগুলোকে তিনটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারে:

1. ডিজাইনের ভিত্তিতে পিস্টনের প্রকারভেদ:
  • ফ্ল্যাট টপ পিস্টন (Flat Top Piston): এই পিস্টনগুলোর উপরের পৃষ্ঠটি সমতল। সাধারণত স্বাভাবিক গাড়ির ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কম্প্রেশন রেশিও প্রদান করে এবং দহন চেম্বারে সহজ মিশ্রণ তৈরি করতে সহায়ক।
  • ডোমড পিস্টন (Domed Piston): ডোমড পিস্টনগুলোর উপরের অংশটি উত্তল বা গম্বুজাকৃতির। এটি দহন চেম্বারের ভলিউম কমিয়ে দেয় এবং কম্প্রেশন রেশিও বাড়ায়। এটি বেশি পারফরম্যান্স ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়।
  • ডিশড পিস্টন (Dished Piston): এই ধরনের পিস্টনের উপরের অংশটি অবতল বা বাটির মতো। এটি সাধারণত ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয় যেখানে কম কম্প্রেশন রেশিও প্রয়োজন এবং মিশ্রণকে আরও ভালোভাবে দহন চেম্বারে আনতে সাহায্য করে।
2. ব্যবহারের ভিত্তিতে পিস্টনের প্রকারভেদ:
  • অর্ডিনারি পিস্টন (Ordinary Piston): সাধারণ ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত ফ্ল্যাট টপ বা ডিশড ডিজাইন থাকে।
  • রেসিং পিস্টন (Racing Piston): উচ্চ পারফরম্যান্স ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়, যেমন রেসিং গাড়িতে। এগুলোর জন্য হালকা ওজন এবং শক্তিশালী উপাদান ব্যবহৃত হয়।
  • মারিন পিস্টন (Marine Piston): সামুদ্রিক ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়, যেখানে বেশি শক্তি এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ক্ষমতা প্রয়োজন।
3. উপাদানের ভিত্তিতে পিস্টনের প্রকারভেদ:
  • কাস্ট আয়রন পিস্টন (Cast Iron Piston): এই পিস্টনগুলো লোহা দিয়ে তৈরি হয় এবং সাধারণত পুরানো ইঞ্জিন বা ভারী যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।
  • ফর্জড অ্যালুমিনিয়াম পিস্টন (Forged Aluminum Piston): অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় দিয়ে তৈরি, যা হালকা এবং উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। এটি আধুনিক এবং পারফরম্যান্স-ভিত্তিক ইঞ্জিনে বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • হাইব্রিড পিস্টন (Hybrid Piston): বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি, যেখানে কোটিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় উচ্চ কার্যক্ষমতা অর্জনের জন্য। 
4. আকার এবং ফিচারের ভিত্তিতে পিস্টনের প্রকারভেদ:
  • শর্ট স্কার্ট পিস্টন (Short Skirt Piston): এটি শর্টার এবং হালকা, যা ইঞ্জিনের গতি বাড়ায় এবং ঘর্ষণ কমায়।
  • লং স্কার্ট পিস্টন (Long Skirt Piston): এটি লম্বা এবং ভারী, যা বেশি স্থিতিশীল এবং কম শব্দে কাজ করে, কিন্তু ঘর্ষণ বেশি হয়।
  • স্টেপড পিস্টন (Stepped Piston): এতে বিভিন্ন ধাপ বা স্টেপ থাকে, যা কম্প্রেশন রেশিওকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
এই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পিস্টন ইঞ্জিনের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে ডিজাইন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত পিস্টন নির্বাচন ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা এবং দীর্ঘস্থায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

পিস্টনের কাজ কি?

পিস্টনের প্রধান কাজ হলো ইঞ্জিন বা অন্যান্য যান্ত্রিক সিস্টেমের ভেতরে চাপ বা বল প্রয়োগ করা এবং সেই বলকে ঘূর্ণন শক্তিতে রূপান্তরিত করা।
পিস্টন কি? পিস্টন কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জানুন

পিস্টনের কাজকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনে এর ভূমিকা তুলে ধরা যেতে পারে:

1. শক্তি উৎপাদন:
  • দহন প্রক্রিয়া: অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনে, পিস্টন সিলিন্ডারের মধ্যে উপরে-নিচে চলাচল করে। সিলিন্ডারে জ্বালানি এবং বাতাসের মিশ্রণ প্রবেশ করে, যা কম্প্রেশন স্ট্রোকের সময় পিস্টনের দ্বারা সংকুচিত হয়। এরপর ইগনিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিশ্রণটি জ্বলে ওঠে এবং বিস্ফোরণ ঘটে।
  • বিস্ফোরণের চাপ: এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন গ্যাসের চাপ পিস্টনকে দ্রুত নিচের দিকে ঠেলে দেয়, যা ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সাথে সংযুক্ত পিস্টন রডের মাধ্যমে সরলরৈখিক গতিকে ঘূর্ণন গতিতে রূপান্তরিত করে। এই ঘূর্ণন শক্তি গাড়ির চাকাগুলোকে ঘোরাতে এবং ইঞ্জিনকে চালাতে ব্যবহৃত হয়।
2. গ্যাসের সীলমোহর রক্ষা করা:
  • পিস্টন এবং সিলিন্ডারের মধ্যে থাকা পিস্টন রিংগুলো ইঞ্জিনের দহন চেম্বারের গ্যাসের সীলমোহর রক্ষা করে। এটি গ্যাসের চাপ সঠিকভাবে ধরে রাখে এবং পিস্টনকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
3. তাপ অপসারণ:
  • পিস্টন ইঞ্জিনের দহন চেম্বার থেকে তাপ অপসারণে সাহায্য করে। দহন প্রক্রিয়ার সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, যা পিস্টনের মাধ্যমে সিলিন্ডারের দেওয়ালে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখান থেকে ইঞ্জিনের কুলিং সিস্টেম দ্বারা অপসারণ করা হয়।
4. তরল বা গ্যাসের স্থানান্তর:
  • কিছু পাম্প বা কম্প্রেসারে, পিস্টন তরল বা গ্যাসকে স্থানান্তর করতে বা সংকুচিত করতে ব্যবহৃত হয়। পিস্টন উপরে-নিচে চলাচল করে সিলিন্ডারের ভেতরে তরল বা গ্যাসকে টেনে নেয় এবং নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছে দেয়।
5. ঘর্ষণ এবং পরিধান নিয়ন্ত্রণ:
  • পিস্টনটি ঘর্ষণ এবং পরিধান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পিস্টন রিংগুলো পিস্টন এবং সিলিন্ডারের দেওয়ালের মধ্যে সঠিক সীলমোহর তৈরি করে, যা ঘর্ষণ কমায় এবং ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ায়।
সংক্ষেপে, পিস্টনের প্রধান কাজ হলো ইঞ্জিনে শক্তি উৎপাদন করা এবং তা কার্যকরভাবে স্থানান্তরিত করা, যা ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতার মূল ভিত্তি।

কিভাবে পিস্টন কাজ করে?

1. সিলিন্ডার: পিস্টন একটি সিলিন্ডারের ভিতরে চলে। সিলিন্ডার এবং পিস্টনের মধ্যে খুব কম ফাঁকা জায়গা থাকে যাতে কোনো গ্যাস বা তরল বের হয়ে যেতে না পারে।

2. রেসিপ্রোকেটিং মোশন: পিস্টন একটি রৈখিক গতিতে সিলিন্ডারের ভিতরে উপরে নিচে যায়। এই গতিকে রেসিপ্রোকেটিং মোশন বলে। 

3. কানেক্টিং রড: পিস্টনকে ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের সাথে সংযুক্ত করে। ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট পিস্টনের রৈখিক গতিকে ঘূর্ণন গতিতে রূপান্তর করে।

পিস্টনের কাজ করার প্রক্রিয়াঃ

পিস্টন একটি মেকানিক্যাল  ডিভাইস যা অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়। 
পিস্টন কি? পিস্টন কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জানুন

পিস্টন একটি সিলিন্ডারের মধ্যে চলাচল করে এবং ইঞ্জিনের মধ্যে জ্বালানি মিশ্রণের দহন থেকে শক্তি তৈরি করে।
পিস্টনের কাজ করার প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো:

1. ইনটেক স্ট্রোক (Intake Stroke): পিস্টন সিলিন্ডারের নিচের দিকে নেমে আসে এবং ইনটেক ভাল্ব খুলে যায়, ফলে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের মধ্যে তাজা এয়ার এবং জ্বালানি মিশ্রণ প্রবেশ করে।

2. কম্প্রেশন স্ট্রোক (Compression Stroke): পিস্টন উপরের দিকে ওঠে এবং ইনটেক ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। পিস্টন উপরের দিকে উঠলে সিলিন্ডারের ভিতরে থাকা এয়ার-ফুয়েল মিশ্রণ সংকুচিত (compress) হয়, যার ফলে চাপ এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

3. পাওয়ার স্ট্রোক (Power Stroke): যখন সংকুচিত মিশ্রণে স্পার্ক প্লাগ থেকে আগুন লাগে, তখন একটি বিস্ফোরণ ঘটে যা পিস্টনকে দ্রুত নিচে ঠেলে দেয়। এই ধাক্কাটি ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টে ঘূর্ণনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা ইঞ্জিনের শক্তির প্রধান উৎস।

4. এক্সস্ট স্ট্রোক (Exhaust Stroke): পিস্টন আবার উপরের দিকে উঠে আসে এবং এক্সস্ট ভাল্ব খুলে যায়। এর ফলে পিস্টন সিলিন্ডার থেকে জ্বালানি পোড়ানোর পর উৎপন্ন ধোঁয়া বা গ্যাস বের করে দেয়।

এই চক্রটি অবিরত চলতে থাকে, যার মাধ্যমে ইঞ্জিন চলমান থাকে এবং গাড়ি বা যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হয়।

পিস্টনের প্রধান  অংশগুলি কী কী?

পিস্টনের প্রধান অংশগুলি নিম্নরূপ:

1. পিস্টন হেড (Piston Head):
  •  পিস্টনের উপরের অংশ।
  • সরাসরি দহন চেম্বারের সাথে মুখোমুখি থাকে।
  • দহন চাপের প্রভাব সরাসরি এই অংশে পড়ে।
  • সাধারণত গোলাকার বা অভিবৃত্ত আকারের হয়।
  • উচ্চ তাপ ও চাপ সহ্য করে।
2. পিস্টন রিং:
  •  পিস্টনের চারপাশে থাকা ধাতব রিং।
  •  সিলিন্ডার ওয়ালের সাথে সিল তৈরি করে।
  • পিস্টন স্কার্টের উপরের অংশে অবস্থিত রিংগুলি।
সাধারণত দুই প্রকার পিস্টন রিং: কম্প্রেশন রিং ও অয়েল রিং।
  • কম্প্রেশন রিং (Compression Ring): দহন চাপকে সিলিন্ডারের ভিতরে বজায় রাখে।
  • অয়েল রিং (Oil Ring): সিলিন্ডারের দেয়ালে তেল সরবরাহ করে এবং অতিরিক্ত তেলকে নিষ্কাশন করে।
3. পিস্টন স্কার্ট (Piston Skirt):
  •  পিস্টনের নিচের অংশ।
  • সিলিন্ডারের দেয়ালের সাথে ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
  • সাধারণত সিলিন্ডারের আকার অনুসারে তৈরি হয়।
  • পিস্টনকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে।
4. পিস্টন পিন(Piston Pin):
  •  পিস্টনকে কানেক্টিং রডের সাথে যুক্ত করে অর্থাৎ পিস্টন হেড এবং কানেকটিং রডের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
  •  পিস্টনের মধ্য দিয়ে যায়।
  • পিস্টনের গতি কানেক্টিং রডে স্থানান্তর করে।
  • সাধারণত স্টিল বা ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি হয়।
5. পিস্টন গ্রুভ (Piston Grooves):
  • পিস্টন স্কার্টে থাকা খাঁচা যা পিস্টন রিংগুলিকে ধরে রাখে।
6. পিন বস:
  •  পিস্টন পিনের জন্য পিস্টনের মধ্যে থাকা ছিদ্র।
  • পিস্টন পিনকে ধরে রাখে।
7. পিস্টন ল্যান্ড:
  •  পিস্টন রিংয়ের মধ্যবর্তী অংশ।
  •  রিংগুলিকে সমর্থন করে।
8. অয়েল ড্রেন হোল:
  •  পিস্টনের নিচের দিকে থাকা ছোট ছিদ্র।
  •  অতিরিক্ত তেল নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
এই অংশগুলি একত্রে কাজ করে পিস্টনকে কার্যকরভাবে চালায় এবং ইঞ্জিনের দক্ষতা নিশ্চিত করে। প্রতিটি অংশের একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে যা পিস্টনের সামগ্রিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পিস্টনের ব্যবহার

পিস্টনের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক। এখানে কয়েকটি প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করছি:

1. অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি: 
  • ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন (পেট্রল ও ডিজেল)।
  • ব্রেক সিস্টেম (হাইড্রলিক ব্রেক)।
  • সাসপেনশন সিস্টেম।
2. এয়ারক্রাফট:
  • এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন।
  • হাইড্রলিক সিস্টেম (ল্যান্ডিং গিয়ার, ফ্ল্যাপ কন্ট্রোল)
3. শিল্প ক্ষেত্র:
  • হাইড্রলিক প্রেস।
  • নিউম্যাটিক টুলস।
  • কম্প্রেসর।
4. কৃষি যন্ত্রপাতি:
  • ট্র্যাক্টর ইঞ্জিন।
  • ইরিগেশন পাম্প।
5. মেরিন অ্যাপ্লিকেশন:
  • শিপ ইঞ্জিন।
  • হাইড্রলিক স্টিয়ারিং সিস্টেম।
6. নির্মাণ যন্ত্রপাতি:
  • হাইড্রলিক এক্সকাভেটর।
  • ডাম্প ট্রাক।
7. পাওয়ার জেনারেশন:
  •  স্টিম টারবাইন।
  •  ডিজেল জেনারেটর।
8. মেডিকেল ইকুইপমেন্ট:
  • সিরিঞ্জ পাম্প।
  • ভেন্টিলেটর।
9. ঘরোয়া যন্ত্রপাতি:
  • রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর।
  • ওয়াশিং মেশিন।
10. হাইড্রলিক ও নিউম্যাটিক সিস্টেম:
  • লিফট ও এলিভেটর।
  • রোবোটিক আর্ম।
এছাড়াও পিস্টন বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

অন্তর্দহন ইঞ্জিন(Internal Combustion Engines):

পিস্টন প্রধানত অন্তর্দহন ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়, যেমন গাড়ির ইঞ্জিন, মোটরসাইকেল ইঞ্জিন, ট্রাক ইঞ্জিন জাহাজের ইঞ্জিন ইত্যাদি। এখানে পিস্টন দহন প্রক্রিয়া থেকে শক্তি উৎপন্ন করতে ব্যবহৃত হয় এবং সেই শক্তিকে ঘূর্ণনশক্তিতে রূপান্তরিত করে গাড়ি বা যন্ত্রচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

বাষ্প ইঞ্জিন(Steam Engines): পুরানো যুগের ট্রেন এবং জাহাজে ব্যবহৃত হত।
বাষ্প ইঞ্জিনে পিস্টন বাষ্পের চাপ দ্বারা চালিত হয়। গরম বাষ্প পিস্টনের উপরে বা নিচে চাপ দিয়ে পিস্টনকে সরিয়ে দেয়, যা ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্টের মাধ্যমে ঘূর্ণনশক্তি তৈরি করে। এটি আগে ট্রেন ও বাষ্পচালিত নৌকাগুলির মতো বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহৃত হত।

হাইড্রোলিক সিস্টেম (Hydraulic Systems):
পিস্টন হাইড্রোলিক সিস্টেমেও ব্যবহৃত হয়, যেমন হাইড্রোলিক জ্যাক, ব্রেক সিস্টেম, এবং ভারী যন্ত্রপাতি। হাইড্রোলিক পিস্টন তরল চাপের মাধ্যমে শক্তি প্রেরণ করে এবং ভারী বোঝা তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এয়ার কমপ্রেসার (Air Compressors):
এয়ার কমপ্রেসারে পিস্টন বায়ু সংকুচিত করে উচ্চ চাপের বায়ু তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন শিল্পে বায়ু বা গ্যাসকে সংকুচিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি পেইন্ট স্প্রেয়ার, পায়ের টায়ার ফোলানোর পাম্প, এবং অন্যান্য বায়ুচালিত যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

পাম্প (Pumps):
পিস্টন টাইপ পাম্প তরল এবং গ্যাস স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। পিস্টন পাম্পগুলি তেল, পানি, এবং রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চালন এবং পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।

হাইড্রোলিক মেশিন: ভারী যন্ত্রপাতি চালাতে ব্যবহৃত হয়।

বিমান ইঞ্জিন (Aircraft Engines):
বিমান ইঞ্জিনেও পিস্টন ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ছোট বিমানের জন্য। পিস্টন ইঞ্জিনগুলো বিমানকে উচ্চ গতিতে চলতে সাহায্য করে।

এই ব্যবহারগুলি দেখায় যে পিস্টন শুধু যানবাহনেই নয়, বরং প্রযুক্তি ও শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পিস্টনের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র

পিস্টন সাধারণত গোলাকার হয়। তাই এর ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের জন্য আমরা বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্র ব্যবহার করব।
 সূত্র: A = πr²
 এখানে,
  • A = পিস্টনের ক্ষেত্রফল।
  • π (পাই) = একটি ধ্রুবক যার মান প্রায় 3.1416
  • r = পিস্টনের ব্যাসার্ধ।
উদাহরণ:
ধরি, একটি পিস্টনের ব্যাসার্ধ 5 সেমি।তাহলে, ক্ষেত্রফল A = 3.1416 × 5² = 78.54 বর্গ সেমি।
মনে রাখবেন:
  • পিস্টনের ব্যাস দেওয়া থাকলে, ব্যাসার্ধকে ব্যাস ÷ 2 করে বের করতে হবে।
  • ক্ষেত্রফলের একক বর্গ এককে (যেমন বর্গ সেমি, বর্গ মিটার) হবে।
এই সূত্র ব্যবহার করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:

1. পিস্টনের ব্যাস মাপুন।
2. ব্যাসকে 2 দিয়ে ভাগ করে ব্যাসার্ধ (r) পান।
3. ব্যাসার্ধকে বর্গ করুন (r²)।
4. সেই মানকে π দিয়ে গুণ করুন।

উদাহরণস্বরূপ:

যদি একটি পিস্টনের ব্যাস 10 সেন্টিমিটার হয়:
1. ব্যাসার্ধ (r) = 10 ÷ 2 = 5 সেন্টিমিটার
2. r² = 5² = 25 বর্গ সেন্টিমিটার
3. A = π × 25 = 3.1416 × 25 ≈ 78.54 বর্গ সেন্টিমিটার।

পিস্টন ব্যবহার করা হয় কোন ইঞ্জিনে?

পিস্টন বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়। পিস্টন ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা দহন চক্রের মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে।
পিস্টন কি? পিস্টন কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জানুন

নিচে কিছু সাধারণ ইঞ্জিনের উল্লেখ করা হলো যেখানে পিস্টন ব্যবহার করা হয়:

1. পেট্রোল ইঞ্জিন (Petrol Engines):
গাড়ি, মোটরসাইকেল, এবং ছোট যানবাহনে ব্যবহৃত ইঞ্জিনগুলো সাধারণত পেট্রোল ইঞ্জিন হয়। এই ইঞ্জিনগুলোতে পিস্টন ব্যবহার করে পেট্রোল দহন করে শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

2. ডিজেল ইঞ্জিন (Diesel Engines):
ডিজেল ইঞ্জিন ট্রাক, বাস, ভারী যানবাহন, এবং কিছু ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহৃত হয়। ডিজেল ইঞ্জিনে পিস্টন সংকোচন এবং উচ্চ তাপমাত্রায় ডিজেল জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।

3. গ্যাস ইঞ্জিন (Gas Engines):
প্রাকৃতিক গ্যাস বা অন্যান্য গ্যাসীয় জ্বালানিতে চলা ইঞ্জিনগুলোতে পিস্টন ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত জেনারেটর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল যন্ত্রপাতি, এবং কিছু যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।

4. বাষ্প ইঞ্জিন (Steam Engines):
পুরনো দিনের ট্রেন এবং নৌকাগুলিতে ব্যবহৃত বাষ্প ইঞ্জিনগুলিতে পিস্টন বাষ্পের চাপ ব্যবহার করে কাজ করে। বাষ্প ইঞ্জিনে তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পিস্টন ব্যবহার করা হয়।

5. জেট ইঞ্জিনের কিছু অংশে (Components of Jet Engines):
জেট ইঞ্জিনের কমপ্রেসার সিস্টেমে পিস্টন বা পিস্টন-নিয়ন্ত্রিত উপাদান ব্যবহার হতে পারে, যদিও জেট ইঞ্জিনের মূল চালিকাশক্তি টারবাইন এবং কমপ্রেসার দিয়ে উৎপন্ন হয়।

6. হাইড্রোলিক এবং নিউম্যাটিক সিস্টেমে (Hydraulic and Pneumatic Systems):
যদিও এগুলি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন নয়, হাইড্রোলিক এবং নিউম্যাটিক পাম্প এবং মোটর সিস্টেমে পিস্টন ব্যবহৃত হয়।

7. জেনারেটর ইঞ্জিন (Generator Engines):
বিভিন্ন ধরণের জেনারেটর (যেমন ডিজেল বা পেট্রোল জেনারেটর) বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিস্টন ইঞ্জিন ব্যবহার করে।

8. বিমান ইঞ্জিন (Aircraft Engines):
ছোট ও হালকা ওজনের বিমানে পিস্টন ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত অ্যাভিয়েশন গ্যাসোলিন বা ডিজেল দ্বারা চালিত হয়।

এই সকল ইঞ্জিনে পিস্টন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে এটি জ্বালানির দহন থেকে যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url