ভঙ্গুরতা কাকে বলে? ভঙ্গুরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ভঙ্গুরতা কাকে বলে?
ভঙ্গুরতা বলতে কোনো পদার্থের উপর অল্প পরিমাণ বল প্রয়োগ করলেই সেটি ভেঙে যাওয়ার প্রবণতাকে বোঝায়। অর্থাৎ, এটি একটি পদার্থের একটি গুণাগুণ যার ফলে সেটি আঘাতে সহজেই ভেঙে যায় বা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।
আবার এভাবেও বলা যায়, ভঙ্গুরতা বলতে কোনো বস্তুকে খুব সহজে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতাকে বোঝায়। অর্থাৎ খুব কম বল প্রয়োগ করলেই যদি কোনো বস্তু ভেঙে যায়, তাহলে সেই বস্তুকে ভঙ্গুর বলে।
ভঙ্গুরতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- পদার্থ নির্বাচন: কোনো পণ্য তৈরির সময় ভঙ্গুরতার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, একটি মোবাইল ফোনের স্ক্রিন যদি খুব ভঙ্গুর হয়, তাহলে সেটি হাত থেকে পড়ে সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
- পদার্থের ব্যবহার: ভঙ্গুর পদার্থের ব্যবহার সীমিত। যেমন, ভঙ্গুর পদার্থ দিয়ে বড় আকারের কাঠামো তৈরি করা যায় না।
- দৈনন্দিন জীবন: আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক ভঙ্গুর বস্তু ব্যবহার করি। তাই ভঙ্গুরতার ধারণা জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- বিভিন্ন শিল্প: বিভিন্ন শিল্পে, যেমন সিরামিক শিল্প, কাচ শিল্প ইত্যাদিতে ভঙ্গুরতার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- সামগ্রী বিজ্ঞান: বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির সময় ভঙ্গুরতার ধারণা বিবেচনা করা হয়।
কেন কিছু বস্তু ভঙ্গুর হয়?
- আণবিক বিন্যাস: ভঙ্গুর বস্তুর অণুগুলি নির্দিষ্ট একটি নিদিষ্ট ক্রমে সাজানো থাকে। এই ক্রমে খুব সামান্য পরিবর্তন হলেই বস্তুটি ভেঙে যেতে পারে।
- আন্তরাণবিক বল: ভঙ্গুর বস্তুর অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল খুবই কম। ফলে সামান্য বল প্রয়োগে এই আকর্ষণ বল ভেঙে যায় এবং বস্তুটি ভেঙে যায়।
- ভঙ্গুরতার বিপরীত ধর্ম: নমনীয়তা। নমনীয় বস্তুকে বাঁকানো বা মোচড়ানো যায়।
কেন কোনো পদার্থ ভঙ্গুর হয়?
- পদার্থের আণবিক গঠন: পদার্থের অণু পরমাণুর বিন্যাস এবং আন্তঃআণবিক বল এর ভঙ্গুরতার উপর প্রভাব ফেলে।
- পদার্থের ত্রুটি: পদার্থের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকলে সেটি ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে।
- পরিবেশের তাপমাত্রা: কম তাপমাত্রায় অনেক পদার্থের ভঙ্গুরতা বেড়ে যায়।
ভঙ্গুরতা হল একটি পদার্থের গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ধর্ম। এটি পদার্থের শক্তি প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের সাথে সম্পর্কিত।
আসুন ভঙ্গুরতা সম্পর্কে প্রধান বিষয়গুলি দেখে নেই:
1. সংজ্ঞা:
- ভঙ্গুরতা হল একটি পদার্থের সেই বৈশিষ্ট্য যা দেখায় যে পদার্থটি কতটা সহজে ভেঙে যায় বা টুকরো হয়ে যায় যখন তার উপর বল প্রয়োগ করা হয়।
2. মূল বৈশিষ্ট্য:
- ভঙ্গুর পদার্থ সাধারণত কম নমনীয় হয়। এরা প্রায়শই কঠিন কিন্তু ভঙ্গুর প্রবণ হয়।
- বল প্রয়োগের সময় হঠাৎ ভেঙে যায়, বিকৃত হওয়ার আগেই।
3. ভঙ্গুরতার কারণ:
- পদার্থের আণবিক গঠন।
- ক্রিস্টাল কাঠামো।
- অসমতা বা ত্রুটি।
4. উদাহরণ:
- কাঁচ
- সিরামিক
- চিনি
- বরফ
5. বিপরীত ধর্ম:
- নমনীয়তা (ductility)
- টানযোগ্যতা (malleability)
6. প্রভাব:
- তাপমাত্রা (শীতল তাপমাত্রায় বেশি ভঙ্গুর)।
- রাসায়নিক গঠন।
- বাহ্যিক চাপ।
7. গুরুত্ব:
- পদার্থ বিজ্ঞানে গবেষণায়।
- শিল্প ও প্রকৌশলে উপযুক্ত উপাদান নির্বাচনে।
ভঙ্গুরতার উদাহরণ:
- কাস্ট আয়রন: কাস্ট আয়রন কম তাপমাত্রায় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
- সিরামিক: সিরামিক পাত্র, টাইলস ইত্যাদি ভঙ্গুর হয়ে থাকে।
- গ্লাসের তৈজসপত্র: গ্লাস, কাঁচের প্লেট, কাঁচের গ্লাস ইত্যাদি খুবই ভঙ্গুর। সামান্য আঘাত বা চাপেই এগুলো ভেঙে যেতে পারে।
1. কাঁচজাত পদার্থ:
- সাধারণ কাঁচ।
- বোরোসিলিকেট কাঁচ।
- কাঁচের বাসনপত্র।
2. সিরামিক:
- চীনামাটির বাসন।
- টাইলস।
- ইঁট।
3. ধাতব পদার্থ:
- ঢালাই লোহা (Cast iron)
- উচ্চ কার্বনযুক্ত ইস্পাত।
- বিসমাথ।
4. খনিজ পদার্থ:
- গ্রাফাইট।
- সালফার।
- কোয়ার্টজ।
5. রাসায়নিক যৌগ:
- চিনি (সুক্রোজ ক্রিস্টাল।
- লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড ক্রিস্টাল)।
- বোরিক এসিড ক্রিস্টাল।
6. প্রাকৃতিক পদার্থ:
- বরফ।
- কয়লা।
- মার্বেল পাথর।
7. নির্মাণ সামগ্রী:
- কংক্রিট (বিশেষ করে কম বয়সে)।
- মর্টার।
- প্লাস্টার।
8. পলিমার:
- পলিস্টাইরিন।
- অসংযোজিত থার্মোসেট প্লাস্টিক।
9. ইলেকট্রনিক উপাদান:
- সিলিকন ওয়েফার।
- সেমিকন্ডাক্টর ক্রিস্টাল।
10. বিশেষ মিশ্রধাতু:
- কিছু ম্যাগনেসিয়াম মিশ্রধাতু।
- কিছু অ্যালুমিনিয়াম মিশ্রধাতু (বিশেষ অবস্থায়)।
ভঙ্গুরতার বিপরীত:
ভঙ্গুরতার বিপরীত হলো নমনীয়তা। নমনীয় পদার্থকে বাঁকা করা যায় বা টানা যায় এবং এটি সহজে ভেঙে যায় না। যেমন, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় কী?