আর্থিং কি? আর্থিং এর প্রয়োজনীতা কি?
আর্থিং কি?
আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে একটি পরিবাহী পদার্থের সাথে সংযুক্ত করা হয়, যা সাধারণত মাটি। এই সংযোগটি নিশ্চিত করে যে কোনো অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক চার্জ মাটিতে নিরাপদে চলে যাবে এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারীকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রিক সার্কিটের মৌলিক ধারণা
আর্থিং কত প্রকার ও কি কি?
আর্থিং মূলত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে এবং আমাদেরকে নিরাপদ রাখে। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আর্থিং এর প্রকার নির্ভর করে ব্যবহৃত উপাদান এবং প্রয়োগের উপর।
আর্থিং এর প্রধান প্রকারগুলো হল:
1. পাইপ আর্থিং (Pipe Earthing): এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি, যেখানে একটি গ্যালভানাইজড লোহার পাইপ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। পাইপটি সাধারণত লোহা বা তামা দিয়ে তৈরি হয়। এতে অতিরিক্ত কারেন্ট সহজেই মাটিতে চলে যায়।
2. প্লেট আর্থিং (Plate Earthing): এই ধরনের আর্থিংয়ে, একটি বড় আয়তনের ধাতব প্লেট (ইস্পাত বা তামা) প্রায় ২ থেকে ৩ মিটার গভীরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। প্লেটের সাথে বৈদ্যুতিক তার সংযুক্ত করা হয়, যা সার্কিটের অতিরিক্ত কারেন্টকে মাটিতে প্রবাহিত করে। প্লেটটি সাধারণত তামা দিয়ে তৈরি হয়।
ব্যবহার: বড় বড় বৈদ্যুতিক স্থাপনায় যেমন সাবস্টেশন বা পাওয়ার স্টেশনে ব্যবহার করা হয় ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিল্ডিংয়ে ব্যবহৃত হয়।
3. স্ট্রিপ বা ওয়্যার আর্থিং (Strip or Wire Earthing): এই প্রকারের আর্থিংয়ে একটি ধাতব স্ট্রিপ বা তার মাটির ভেতরে স্থাপন করা হয়। এই তারটি মাটিতে বয়ে নিয়ে যায় অতিরিক্ত কারেন্ট। ইস্পাত বা তামার তার ব্যবহার করা হয়।
3. স্ট্রিপ বা ওয়্যার আর্থিং (Strip or Wire Earthing): এই প্রকারের আর্থিংয়ে একটি ধাতব স্ট্রিপ বা তার মাটির ভেতরে স্থাপন করা হয়। এই তারটি মাটিতে বয়ে নিয়ে যায় অতিরিক্ত কারেন্ট। ইস্পাত বা তামার তার ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার: সাধারণত লম্বা স্থাপনায় বা তড়িৎ প্রবাহের জন্য এই আর্থিং ব্যবহৃত হয়, যেখানে রড বা প্লেট আর্থিং কার্যকর নয়।
এছাড়াও আরও কিছু আর্থিং আছে। যেমন:
1. রড আর্থিং (Rod Earthing): এই ধরনের আর্থিংয়ে, একটি রড (ইস্পাত বা তামা) সরাসরি মাটির গভীরে পুঁতে রাখা হয়। রডের মাধ্যমে অতিরিক্ত কারেন্ট মাটিতে চলে যায়।
ব্যবহার: সাধারণত বাড়ি বা ছোটখাট স্থাপনায় এই ধরনের আর্থিং ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি সহজে করা যায় এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে স্থাপন করা যায়।
2. গ্রিড আর্থিং (Grid Earthing): এই পদ্ধতিতে একাধিক তারের জাল বা গ্রিড মাটিতে স্থাপন করা হয়, যা বড় বড় বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
3. রিং আর্থিং: কয়েকটি রড বা পাইপ বৃত্তাকারে স্থাপন করা হয়। বড় এলাকা জুড়ে সমান আর্থিং প্রদান করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হয়
4. মেশ আর্থিং: তারের জাল আকারে মাটির নিচে স্থাপন করা হয়। খুব বড় এলাকা জুড়ে সমান আর্থিং প্রদান করে। বড় শিল্প কারখানা ও ডেটা সেন্টারে ব্যবহৃত হয়।
5. কেমিক্যাল আর্থিং: বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মাটির প্রতিরোধ কমানো হয়। শুষ্ক বা উচ্চ প্রতিরোধী মাটিতে কার্যকর, যেখানে অন্যান্য পদ্ধতি কার্যকর নয় সেখানে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিটি প্রকারের আর্থিং এর নিজস্ব সুবিধা ও প্রয়োগ ক্ষেত্র রয়েছে। স্থানীয় মাটির অবস্থা, প্রয়োজনীয় সুরক্ষার মাত্রা, এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত আর্থিং পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়।
আর্থিং এর প্রয়োজনীয়তা কি?
আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং একটি বিদ্যুৎ নিরাপত্তার মৌলিক প্রক্রিয়া। এটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চার্জ থেকে রক্ষা করে।
বিদ্যুৎ শক থেকে রক্ষা: যদি কোনো যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিট হয় বা যন্ত্রটির কোনো অংশ বিদ্যুতায়িত হয়, তাহলে আর্থিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যায়। ফলে ব্যবহারকারী বিদ্যুৎ শক পাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
ব্যবহারকারীর সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের সময় যদি কোনও শর্ট সার্কিট তাহলে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক চার্জ সরাসরি মাটিতে প্রবাহিত হয়। এটি ব্যবহারকারীর জন্য বৈদ্যুতিক শক বা আঘাতের ঝুঁকি কমায়।
যন্ত্রপাতির সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোতে অতিরিক্ত ভোল্টেজ বা শর্ট সার্কিট হলে আর্থিং সিস্টেমের মাধ্যমে সেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যায়। এর ফলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতির অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আর্থিং এই ক্ষতি থেকে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে।
অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে তার ও যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। আর্থিং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরাসরি মাটিতে প্রবাহিত করে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতিকে উত্তপ্ত করে আগুনের সৃষ্টি করতে পারে। আর্থিং এই ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা: বজ্রপাতের সময় যে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তা আর্থিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মাটিতে প্রবাহিত হয়ে যায়। এর ফলে ঘরের বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং যন্ত্রপাতির ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়।
ভোল্টেজের স্থিতিশীলতা: আর্থিং একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজ রেফারেন্স প্রদান করে, যা বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ভোল্টেজের স্তরকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। এটি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা: আর্থিং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল করে।
সঠিক আর্থিং ব্যবস্থা বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। এটি একটি প্রাথমিক সুরক্ষা ব্যবস্থা যা বাড়ি, অফিস, শিল্প কারখানা সহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশনে অপরিহার্য।
আর্থিং এর কাজ কি?
আর্থিংয়ের কাজ হলো বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বৈদ্যুতিক সমস্যার ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করা।
এর কাজগুলো নিম্নরূপ:
1. অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে প্রবাহিত করা: বৈদ্যুতিক সার্কিটে কোনো অতিরিক্ত বা অবাঞ্ছিত বিদ্যুৎ (যেমন শর্ট সার্কিট, লিকেজ কারেন্ট) হলে আর্থিং সিস্টেম সেটিকে সরাসরি মাটিতে প্রবাহিত করে দেয়, যাতে বিদ্যুৎ মানবদেহ বা যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে না পারে।
2. বৈদ্যুতিক শক থেকে সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় শর্ট সার্কিট বা তার লিকেজ ঘটলে, আর্থিং এর মাধ্যমে সেই অতিরিক্ত চার্জ মাটিতে চলে যায়। এর ফলে ব্যবহারকারী বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা পান।
3. সার্কিটের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা: আর্থিং সার্কিটের ভোল্টেজকে স্থিতিশীল রাখে এবং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে যন্ত্রপাতি বা সার্কিটের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
4. বজ্রপাতের সময় সুরক্ষা: বজ্রপাতের সময় সৃষ্ট উচ্চ ভোল্টেজ আর্থিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিরাপদে মাটিতে চলে যায়, ফলে ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সিস্টেমের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।
5. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সুরক্ষা: বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো অতিরিক্ত ভোল্টেজের সংস্পর্শে এলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর্থিং এই অতিরিক্ত ভোল্টেজকে নিরাপদে নির্গত করে ডিভাইসের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
6. অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ: বৈদ্যুতিক সার্কিটে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বা শর্ট সার্কিটের ফলে সৃষ্ট তাপ থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। আর্থিং সেই বিদ্যুৎকে মাটিতে প্রবাহিত করে আগুন লাগার ঝুঁকি কমায়।
সুতরাং, আর্থিং বৈদ্যুতিক সিস্টেম ও যন্ত্রপাতির সুরক্ষা, স্থায়িত্ব, এবং ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান উপায়।
আর্থিং কেন করা হয়?
আর্থিং করা হয় বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সুরক্ষা, স্থায়িত্ব, এবং ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। এর কারণগুলো নিম্নরূপ: 1. মানুষকে বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা করা: শর্ট সার্কিট বা তারে লিকেজ হলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আর্থিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়, ফলে ব্যবহারকারীর শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে আঘাত লাগার ঝুঁকি কমে যায়। 2. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুরক্ষা: অতিরিক্ত ভোল্টেজ বা কারেন্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে প্রবেশ করলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর্থিং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে পাঠিয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। 3. অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ: অতিরিক্ত তাপের কারণে বৈদ্যুতিক তারে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর্থিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরিয়ে আগুন লাগার ঝুঁকি কমানো হয়। 4. ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখা: আর্থিং বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ভোল্টেজকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে বৈদ্যুতিক সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় থাকে এবং এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। 5. বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা: বজ্রপাতের সময় প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, যা সরাসরি বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিপজ্জনক হতে পারে। আর্থিং বজ্রপাতের বিদ্যুৎ মাটিতে সরিয়ে সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে। 6. সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা: আর্থিংয়ের মাধ্যমে শর্ট সার্কিটের সময় সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ সক্রিয় হয়, যা বৈদ্যুতিক প্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং সিস্টেমকে রক্ষা করে। আর্থিং করা হয় বৈদ্যুতিক শক, অগ্নিকাণ্ড, এবং যন্ত্রপাতির ক্ষতি রোধ করার জন্য, পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সিস্টেমের কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে।আর্থিং কীভাবে কাজ করে?
1. আর্থিংয়ের সংযোগ: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে একটি বিশেষ কন্ডাক্টর বা তার ব্যবহার করা হয়, যাকে আর্থিং তার বলা হয়। এই তার এক প্রান্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা মেটালিক অংশের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অন্য প্রান্তটি মাটিতে পুঁতে রাখা বিশেষ ধাতব প্লেট বা রডের সাথে যুক্ত থাকে। এই ধাতব প্লেট বা রডকে আর্থিং ইলেকট্রোড বলা হয়, যা মাটির সাথে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে।
2. অতিরিক্ত কারেন্ট মাটিতে প্রবাহিত করা: যখন বৈদ্যুতিক সার্কিটে কোনও শর্ট সার্কিট বা তারের লিকেজ ঘটে, তখন অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক চার্জ বা কারেন্ট বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ধাতব অংশে জমা হতে পারে। এই অতিরিক্ত কারেন্ট আর্থিং তারের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়, ফলে বৈদ্যুতিক শক বা যন্ত্রপাতির ক্ষতি এড়ানো যায়।
3. ভোল্টেজের সমতা বজায় রাখা: মাটির সাথে সংযোগ থাকার কারণে বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ভোল্টেজ একটি নির্দিষ্ট স্তরে থাকে, যা সার্কিটকে স্থিতিশীল করে। এটি ভোল্টেজের ওঠা-নামার (over-voltage) সমস্যা থেকে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে।
4. সার্কিট ব্রেকার সক্রিয় করা: শর্ট সার্কিটের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত কারেন্ট মাটিতে যাওয়ার সাথে সাথে সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সিস্টেমটি বন্ধ হয়ে যায়, যাতে ক্ষতি কমানো যায়।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
আর্থিং ও নিউট্রাল এর পার্থক্য
আর্থিং (Earthing) এবং নিউট্রাল (Neutral) উভয়ই বৈদ্যুতিক সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
এই পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ:
1. সংজ্ঞা:
- আর্থিং: বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে মাটির সাথে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া।
- নিউট্রাল: বৈদ্যুতিক সার্কিটের একটি অংশ যা সাধারণত শূন্য ভোল্টেজে থাকে।
2. উদ্দেশ্য:
- আর্থিং: মূলত নিরাপত্তার জন্য, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ নিষ্কাশন করে।
- নিউট্রাল: বিদ্যুৎ সরবরাহের সার্কিট সম্পূর্ণ করার জন্য।
3. বিদ্যুৎ প্রবাহ:
- আর্থিং: সাধারণ অবস্থায় কোনো বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে না।
- নিউট্রাল: স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে।
4. জোড়া:
- আর্থিং: ফেজ (Phase) এর সাথে জোড়া দেয় না।
- নিউট্রাল: ফেজের সাথে জোড়া দিয়ে সার্কিট সম্পূর্ণ করে।
5. রং কোড:
- আর্থিং: সাধারণত সবুজ বা সবুজ-হলুদ রঙের তার ব্যবহৃত হয়।
- নিউট্রাল: সাধারণত নীল রঙের তার ব্যবহৃত হয়।
6. সংযোগ:
- আর্থিং: যন্ত্রপাতির ধাতব অংশের সাথে সংযুক্ত থাকে।
- নিউট্রাল: সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেমের অংশ।
7. বিপদ অবস্থায় আচরণ:
- আর্থিং: বিপদজনক বিদ্যুৎ প্রবাহকে মাটিতে পরিচালিত করে।
- নিউট্রাল: বিপদ অবস্থায় উচ্চ ভোল্টেজযুক্ত হতে পারে।
8. প্রয়োজনীয়তা:
- আর্থিং: সব ধরনের বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশনে বাধ্যতামূলক।
- নিউট্রাল: বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেমের অপরিহার্য অংশ।
এই পার্থক্যগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয়ের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক।
বৈশিষ্ট্য | আর্থিং | নিউট্রাল |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | সুরক্ষা নিশ্চিত করা। | বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পন্ন করা। |
ভোল্টেজ | শূন্য ভোল্টেজ (মাটির সাথে সংযুক্ত)। | সোর্সের ভোল্টেজের সমান। |
প্রাথমিক ভূমিকা | অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে পাঠানো। | বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পূর্ণ করা। |
সংযোগ স্থান | সরঞ্জামের ধাতব অংশ থেকে মাটিতে। | পাওয়ার সরবরাহের অংশ, জেনারেটরের সাথে যুক্ত। |
সুরক্ষা | বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা। | সরাসরি সুরক্ষার সাথে যুক্ত নয়। |
উভয়ই বৈদ্যুতিক সিস্টেমের অপরিহার্য অংশ, তবে তাদের কাজ এবং উদ্দেশ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
আর্থিং এবং গ্রাউন্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
আর্থিং (Earthing) এবং গ্রাউন্ডিং (Grounding) শব্দ দুটি প্রায়শই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
এখানে তাদের মধ্যকার পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হলো:
1. ভৌগোলিক ব্যবহার:
- আর্থিং: মূলত ব্রিটিশ ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়।
- গ্রাউন্ডিং: আমেরিকান ইংরেজিতে বেশি প্রচলিত।
2. প্রয়োগ ক্ষেত্র:
- আর্থিং: সাধারণত বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়।
- গ্রাউন্ডিং: বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক সিগন্যাল প্রসেসিং এবং নয়েজ কমানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
3. সংযোগের ধরন:
- আর্থিং: সাধারণত মাটির সাথে সরাসরি সংযোগ বোঝায়।
- গ্রাউন্ডিং: মাটি ছাড়াও অন্য কোনো নির্দিষ্ট রেফারেন্স পয়েন্টের সাথে সংযোগ বোঝাতে পারে।
4. ব্যবহারের ক্ষেত্র:
- আর্থিং: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়ার সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
- গ্রাউন্ডিং: পাওয়ার সিস্টেমের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন, এবং অন্যান্য সিগন্যাল প্রসেসিং সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
5. উদ্দেশ্য:
- আর্থিং: মূলত নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
- গ্রাউন্ডিং: নিরাপত্তার পাশাপাশি সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স (EMI) কমানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়।
6. প্রযুক্তিগত পরিভাষা:
- আর্থিং: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক কৌশলে ব্যবহৃত হয়।
- গ্রাউন্ডিং: ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
আর্থিং ও গ্রাউন্ডিং মূলত একই ধারণা প্রকাশ করে, তবে প্রয়োগের ক্ষেত্র ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, দুটি শব্দই প্রায়শই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আর্থিং এবং গ্রাউন্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য নিচে টেবিল আকারে দেওয়া হলো:
বৈশিষ্ট্য | আর্থিং | গ্রাউন্ডিং |
---|---|---|
কাজ | অতিরিক্ত কারেন্টকে মাটিতে প্রেরণ করা। | সিস্টেমের নিরপেক্ষ পয়েন্ট মাটিতে সংযুক্ত। |
প্রধান উদ্দেশ্য | বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা করা। | সিস্টেমের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। |
প্রযুক্তিগত ব্যবহার | যন্ত্রপাতির ধাতব অংশে সংযুক্ত। | নিরপেক্ষ বা নিউট্রাল পয়েন্টে সংযুক্ত। |
আর্থিং রেজিস্ট্যান্স কত?
আর্থিং রেজিস্ট্যান্স (Earthing Resistance) হলো একটি বৈদ্যুতিক পরিমাপ, যা মাটির সাথে সংযুক্ত আর্থিং ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সিস্টেমের প্রতিরোধ নির্ধারণ করে। আদর্শভাবে, আর্থিং রেজিস্ট্যান্স যত কম হবে, তত ভালো। তবে এর মান বিভিন্ন অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
আদর্শ আর্থিং রেজিস্ট্যান্স:
বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্য: 1 ওহম (Ω) বা তার কম।
জেনারেটর বা সাবস্টেশনের জন্য: 1-5 Ω এর মধ্যে।
গৃহস্থালী বা ছোট বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য: 5 Ω এর নিচে হওয়া উচিত, তবে সাধারণত 1-2 Ω রেঞ্জে থাকা উত্তম।
আর্থিং রেজিস্ট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল বিষয়সমূহ:
1. মাটির ধরন: মাটির আর্দ্রতা, মাটির প্রতিরোধ ক্ষমতা, এবং এর অবস্থা (শুষ্ক বা ভেজা) রেজিস্ট্যান্সকে প্রভাবিত করে।
2. আর্থিং ইলেক্ট্রোডের গভীরতা: ইলেক্ট্রোড যত গভীরে মাটিতে পুঁতে রাখা হবে, রেজিস্ট্যান্স তত কম হবে।
3. ইলেক্ট্রোডের আকার এবং ধাতু: ইলেক্ট্রোডের আকার এবং উপকরণও রেজিস্ট্যান্সকে প্রভাবিত করে।
4. মাটির আর্দ্রতা: বেশি আর্দ্রতা হলে রেজিস্ট্যান্স কম থাকে, এবং শুষ্ক অবস্থায় রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত, বিদ্যুৎ সুরক্ষা ও সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আর্থিং রেজিস্ট্যান্সকে যত কম রাখা যায় তত ভালো।