সম্পূরক কোণ কাকে বলে? সম্পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য ও বিস্তারিত আলোচনা

সম্পূরক কোণ কাকে বলে?

সম্পূরক কোণ হল এমন দুটি কোণ, যাদের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হয়। অর্থাৎ, যদি দুটি কোণকে একসাথে রাখলে তারা মিলে একটা সরল রেখা তৈরি করে, তাহলে সেই দুটি কোণকে সম্পূরক কোণ বলে। 

সম্পূরক কোণ কাকে বলে? সম্পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য ও বিস্তারিত আলোচনা

সহজ কথায় যে দুটি কোণের যোগফল ১৮০° হয়, তাদেরকে পরস্পরের সম্পূরক কোণ বলা হয়। অর্থাৎ, দুটি কোণের সমষ্টি যদি ১৮০° হয়, তবে একে অপরের সম্পূরক কোণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

উদাহরণ:

  • ৬০ ডিগ্রি এবং ১২০ ডিগ্রি কোণ দুটি সম্পূরক কোণ, কারণ ৬০ + ১২০ = ১৮০।
  • ৯০ ডিগ্রি এবং ৯০ ডিগ্রি কোণও দুটি সম্পূরক কোণ।

সম্পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য

সম্পূরক কোণ সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জানি যে, এটি এমন দুটি কোণ যাদের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি। এবার আসুন এর আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য জেনে নিই:

1. যোগফল সর্বদা ১৮০ ডিগ্রি: এটি সম্পূরক কোণের সবচেয়ে মূল বৈশিষ্ট্য। কোন দুটি কোণকে যোগ করে যদি ১৮০ ডিগ্রি হয়, তাহলে তারা নিশ্চিতভাবে সম্পূরক কোণ।

2. সরল রেখা গঠন: সম্পূরক কোণের দুটি বাহু একত্রিত হয়ে একটি সরল রেখা গঠন করে।

3. একটি কোণ জানা থাকলে অন্যটি বের করা: যদি একটি সম্পূরক কোণের মান জানা থাকে, তাহলে ১৮০ ডিগ্রি থেকে সেই মান বিয়োগ করে অন্য কোণের মান বের করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কোণ ৭০ ডিগ্রি হয়, তাহলে তার সম্পূরক কোণ হবে ১৮০ - ৭০ = ১১০ ডিগ্রি।

4. সন্নিহিত হতে বাধ্য নয়: সম্পূরক কোণ দুটি অবশ্যই পরস্পর সন্নিহিত হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত হতে পারে।

5. ধনাত্মক কোণ: সম্পূরক কোণ সবসময় ধনাত্মক হতে হবে। অর্থাৎ, দুটি কোণের মানই ধনাত্মক হবে এবং তাদের যোগফল ১৮০° হবে।

6. সোজা রেখায় সম্পর্ক: সোজা রেখায় দুটি সংলগ্ন কোণ সম্পূরক হয়। অর্থাৎ, দুটি কোণ মিলে একটি সোজা রেখা গঠন করলে তারা পরস্পরের সম্পূরক কোণ।

7. ত্রিভুজে সম্পূরক কোণ: একটি ত্রিভুজে দুইটি বাহিরের কোণ পরস্পর সম্পূরক হতে পারে যদি তৃতীয় কোণ ৯০° হয়।

আরও পড়ুনঃ সম্পূরক কোণ কাকে বলে? সম্পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য ও বিস্তারিত আলোচনা

সম্পূরক কোণের ব্যবহার

সম্পূরক কোণ আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, গণিত, এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
সম্পূরক কোণের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সম্পূরক কোণের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

১. স্থাপত্য ও নির্মাণকাজে:
বিভিন্ন স্থাপত্য এবং নির্মাণ কাজে সম্পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করা হয়। সোজা এবং স্থিতিশীল কাঠামো তৈরিতে সম্পূরক কোণ প্রয়োগ করে সঠিক মাপ এবং আকৃতি নিশ্চিত করা হয়।

২. জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতিতে:
জ্যামিতি এবং ত্রিকোণমিতির সমস্যাগুলোতে সম্পূরক কোণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ত্রিভুজ ও বহুভুজের কোণ হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করা হয়।

৩. ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিজাইনিংয়ে:
যান্ত্রিক প্রকৌশল এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নকশা তৈরিতে সম্পূরক কোণ ব্যবহার করা হয় যাতে যন্ত্রগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। বিশেষত মেশিনের পার্টস বা গিয়ার ডিজাইনে কোণের সঠিক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

৪. খেলাধুলায়:
বিশেষ করে স্নুকার, বিলিয়ার্ড বা গলফে বলের সঠিক দিকনির্দেশনা ও কোণ নির্ধারণে সম্পূরক কোণ ব্যবহৃত হয়। এতে বলের প্রক্ষেপণ এবং লক্ষ্য নির্ধারণ সহজ হয়।

৫. পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তায়:
রাস্তা বা হাইওয়ে ডিজাইনে বিভিন্ন মোড় বা বাঁকে সম্পূরক কোণ ব্যবহার করা হয় যাতে গাড়ি সঠিকভাবে মোড় নিতে পারে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।

৬. নকশা ও চিত্রকলায়:
সম্পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করে চিত্রকলায় বিভিন্ন আকৃতি ও প্যাটার্ন তৈরি করা হয়, যা সঠিক অনুপাত ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৭. প্রতিফলন ও প্রতিসরণের ক্ষেত্রে:
পদার্থবিজ্ঞানে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ক্ষেত্রে কোণের হিসাব করতে সম্পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।

৮. ইলেকট্রনিক্সে:
বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সার্কিট ডিজাইনে সম্পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করে প্রবাহের দিক এবং কোণ নির্ধারণ করা হয়।

৯. ত্রিকোণমিতিক অনুপাত:
সম্পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের মধ্যে নির্দিষ্ট সম্পর্ক থাকে। উদাহরণস্বরূপ, sin(180° - θ) = sinθ। এই সম্পর্কগুলো বিভিন্ন ত্রিকোণমিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

সম্পূরক কোণ দৈনন্দিন জীবন এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়, যা সঠিকতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

৭০ ডিগ্রি কোণের সম্পূরক কোণ কত?

৭০ ডিগ্রি কোণের সম্পূরক কোণ হবে ১১০ ডিগ্রি।

আমরা জানি, দুটি কোণকে যোগ করলে যদি তাদের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হয়, তাহলে সেই দুটি কোণকে সম্পূরক কোণ বলে।

তাই, ৭০ ডিগ্রি কোণের সম্পূরক কোণ বের করতে আমরা ১৮০ ডিগ্রি থেকে ৭০ ডিগ্রি বিয়োগ করব।

১৮০ ডিগ্রি - ৭০ ডিগ্রি = ১১০ ডিগ্রি।

অর্থাৎ, ৭০ ডিগ্রি এবং ১১০ ডিগ্রি এই দুটি কোণ মিলে একটা সরল রেখা তৈরি করবে।

আরও পড়ুনঃ কোণ কাকে বলে? কোণ কত প্রকার ও কি কি? কোণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url