পূর্ণ সংখ্যা কাকে বলে? পূর্ণ সংখ্যা কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা
পূর্ণ সংখ্যা কাকে বলে?
পূর্ণ সংখ্যা হলো এমন সংখ্যা যেগুলোর কোন ভগ্নাংশ থাকে না। যে সকল সংখ্যা দশমিক বা ভগ্নাংশ ছাড়া পূর্ণ রূপে প্রকাশ করা যায় তাদের পূর্ণ সংখ্যা বলে।
পূর্ণ সংখ্যা মূলত ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা (যেমন, ১, ২, ৩,...), ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা (যেমন, -১, -২, -৩,...) এবং শূন্য (০) নিয়ে গঠিত।
উদাহরণ: 1, 2, 3, 4, 5, 0, -1, -2, -3 ইত্যাদি সবই পূর্ণ সংখ্যা।
পূর্ণ সংখ্যা কত প্রকার ও কি কি?
পূর্ণ সংখ্যা মূলত তিন প্রকার:
1. ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা (Positive Integers):
১, ২, ৩, ৪, ৫, ... এই ধরনের সংখ্যাগুলোকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। এগুলো হলো শূন্য থেকে বড় সংখ্যাগুলি, যেমন ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি। এদের ধনাত্মক চিহ্ন (+) ব্যবহার করা হয় না কারণ এগুলো ধনাত্মক হিসাবে ধরা হয়। এগুলোকে গণনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
2. ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা (Negative Integers):
-১, -২, -৩, -৪, -৫, ... এই ধরনের সংখ্যাগুলোকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। এগুলো হলো শূন্য থেকে ছোট সংখ্যাগুলি, যেমন -১, -২, -৩, -৪, -৫ ইত্যাদি। এদের সামনে ঋণাত্মক চিহ্ন (-) ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে কমতি বা ঋণ নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয়।
3. শূন্য:
শূন্য (০) ও একটি পূর্ণ সংখ্যা, তবে এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক নয়। এটি একটি নিরপেক্ষ সংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। ০ এই সংখ্যাটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক কোনোটিই নয়। এটি কোনো কিছুর অনুপস্থিতি বা শূন্য পরিমাণ নির্দেশ করে।
সুতরাং, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা, ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং শূন্য এই তিনটি মিলিয়ে পূর্ণসংখ্যা গঠিত হয়।
উদাহরণ: আপনার কাছে ৫টি কলম আছে। এখানে ৫ একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা। আপনি যদি কারো কাছ থেকে ৩ টাকা ধার করেন, তাহলে আপনার কাছে -৩ টাকা আছে। এখানে -৩ একটি ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা।আপনার কাছে কোনো কলম নেই। এখানে ০ একটি পূর্ণসংখ্যা।
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা কাকে বলে?
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হলো সেই সব সংখ্যা যা শূন্যের চেয়ে বড়। অর্থাৎ, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ... এই ধরনের সংখ্যাগুলোকে ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা বলে।
উদাহরণ: আপনার কাছে ৫টি কলম আছে। এখানে ৫ একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা। আপনি দোকান থেকে ৩টি কলম কিনলেন। এখানে ৩ একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা।
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার ব্যবহার:
- গণনা: কোনো বস্তুর সংখ্যা নির্দেশ করতে।
- ক্রম: কোনো তালিকায় বস্তুগুলোর স্থান নির্ধারণ করতে।
- পরিমাণ: কোনো পরিমাণকে নির্দেশ করতে।
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার কোনো সীমা নেই। অর্থাৎ, আপনি যে কোনো একটি ধনাত্মক সংখ্যা ধরুন, তার চেয়েও বড় একটি ধনাত্মক সংখ্যা সবসময়ই পাওয়া যাবে। ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যাগুলোকে সংখ্যারেখায় শূন্যের ডান দিকে সাজানো হয়।
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ ধরনের সংখ্যা। এটি আমাদেরকে বস্তু গণনা করতে, পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবং বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক কাজ করতে সাহায্য করে।
ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা কাকে বল?
ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলো এমন পূর্ণসংখ্যা যেগুলো শূন্যের চেয়ে ছোট। সহজ কথায়, শূন্যের বাম দিকে সংখ্যারেখায় যেসব পূর্ণসংখ্যা থাকে সেগুলোই ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা।
উদাহরণ: -১, -২, -৩, -৪, -৫ ইত্যাদি।
ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার ব্যবহার:
- ঋণ: যখন আমরা কারো কাছ থেকে কিছু ধার করি বা কোনো ক্ষতি হয়, তখন তা ঋণাত্মক সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
- তাপমাত্রা: শীতকালে যখন তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়, তখন তা ঋণাত্মক সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
- গভীরতা: সমুদ্রের গভীরতা, ভূমির নিচের কোনো বস্তুর অবস্থান ইত্যাদি ঋণাত্মক সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুরুত্ব:
- ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বীজগণিত ও পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত হয়।
- এটি আমাদেরকে ঋণ, ক্ষতি, অভাব ইত্যাদি ধারণাগুলোকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
- ঋণাত্মক সংখ্যা ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি।
সবচেয়ে বড় ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা কত?
সবচেয়ে ছোট ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা কত?
সবচেয়ে বড় ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা হল -1। সেখান থেকে সংখ্যাগুলো ঋণাত্মক অসীমের দিকে অগ্রসর হয়। ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার অসীম সংখ্যা রয়েছে যখন তারা ঋণাত্মক অসীমের কাছে যায়। তাই কোন ক্ষুদ্রতম ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা নেই ।
ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যার ক্ষেত্রে, সবচেয়ে ছোট সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় কারণ ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যাগুলি অনন্তের দিকে বিস্তৃত। তাই সংখ্যা রেখায় -১, -২, -৩, ... এভাবে ক্রমাগত ঋণাত্মক সংখ্যা ছোট থেকে ছোটতর হতে থাকে এবং কখনোই থামে না। অর্থাৎ, ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যার কোনো সর্বনিম্ন সীমা নেই।
শূন্য (০) কি পূর্ণ সংখ্যা?
হ্যাঁ, শূন্য (০) একটি পূর্ণ সংখ্যা। পূর্ণ সংখ্যা হলো সেই সব সংখ্যা যেগুলোর কোনো ভগ্নাংশ থাকে না। শূন্যের কোনো ভগ্নাংশ নেই, তাই এটি একটি পূর্ণ সংখ্যা। পূর্ণ সংখ্যা হলো ধনাত্মক সংখ্যা, ঋণাত্মক সংখ্যা, এবং শূন্যের সমন্বয়ে গঠিত। শূন্য পূর্ণ সংখ্যার একটি অংশ, তবে এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক নয়; এটি একটি নিরপেক্ষ সংখ্যা হিসেবে বিবেচিত।
পূর্ণ সংখ্যার গুরুত্ব:
- গণিতের ভিত্তি: পূর্ণ সংখ্যা গণিতের অন্যতম মৌলিক ধারণা।
- দৈনন্দিন জীবন: আমরা দৈনন্দিন জীবনে পূর্ণ সংখ্যা ব্যবহার করি, যেমন বয়স, তারিখ, টাকা ইত্যাদি গণনা করতে।
- অন্যান্য সংখ্যার ভিত্তি: ভগ্নাংশ, দশমিক সংখ্যা ইত্যাদি সংখ্যা পূর্ণ সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই গঠিত হয়।
পূর্ণ সংখ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
- পূর্ণ সংখ্যার যোগ, বিয়োগ, গুণ করা যায়।
- শূন্য ছাড়া সব পূর্ণ সংখ্যার একটি বিপরীত সংখ্যা থাকে।
- পূর্ণ সংখ্যার সেট অসীম।
পূর্ণসংখ্যার ব্যবহার:
- দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন পরিমাণ নির্দেশ করতে পূর্ণসংখ্যা ব্যবহার করি।
- গণিতের বিভিন্ন হিসাব করতে পূর্ণসংখ্যা ব্যবহৃত হয়।
- তাপমাত্রা, উচ্চতা, গভীরতা ইত্যাদি পরিমাপ করতে পূর্ণসংখ্যা ব্যবহৃত হয়।