কলঙ্কহীন ইস্পাত কাকে বলে? কলঙ্কহীন ইস্পাতের ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
কলঙ্কহীন ইস্পাত কাকে বলে?
কলঙ্কহীন ইস্পাত বা স্টেইনলেস স্টিল হল এমন এক ধরনের ইস্পাত যা অন্যান্য সাধারণ ইস্পাতের তুলনায় জং ধরে না। এর মধ্যে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি জং ধরা রোধ করে। এই কারণেই একে কলঙ্কহীন ইস্পাত বলা হয়।
কলঙ্কহীন ইস্পাত হলো একটি বিশেষ ধরনের ইস্পাত যা মরিচা ধরে না এবং জং প্রতিরোধী। এটি মূলত স্টেইনলেস স্টিল (Stainless Steel) নামে পরিচিত। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি দীর্ঘস্থায়ী, শক্তিশালী এবং বিভিন্ন ক্ষয়কারী পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম।
আরও পড়ুনঃ ধাতু ও অধাতু চেনার উপায় কী?
কলঙ্কহীন ইস্পাত এর ব্যবহার:
কলঙ্কহীন ইস্পাত, বা স্টেইনলেস স্টিল, তার জং প্রতিরোধ ক্ষমতা, শক্তি এবং টেকসইতার জন্য বিখ্যাত। এই বিশেষ ধরনের ইস্পাতের কারণে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
আসুন দেখি কী কী ক্ষেত্রে কলঙ্কহীন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়:
১. রান্নাঘরের সামগ্রী:
- পাত্র: কড়াই, প্যান, চামচ ইত্যাদি। কলঙ্কহীন ইস্পাতের পাত্র খাবারের স্বাদকে প্রভাবিত করে না এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়।
২. ফ্রিজ: ফ্রিজের ভেতরের অংশ, শেল্ফ ইত্যাদি কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয় কারণ এটি জং ধরে না এবং খাবারকে দূষিত করে না।
৩. সিঙ্ক ও ফিটিংস:
- সিঙ্ক: রান্নাঘরের সিঙ্ক কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হলে দাগ বা জং লাগার সম্ভাবনা কম থাকে।
৪. গৃহস্থালি সামগ্রী:
- দরজা এবং জানালা: কলঙ্কহীন ইস্পাতের দরজা এবং জানালা দীর্ঘস্থায়ী এবং আকর্ষণীয় দেখতে হয়। অন্যান্য যেমন টেবিল, চেয়ার, আলমারি ইত্যাদিও কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
- বাসনপত্র: হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, ছুরি, চামচ, এবং ফ্রাইপ্যান।
৫. হ্যান্ড্রেল: সিঁড়ি, বারান্দা ইত্যাদির হ্যান্ড্রেল কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হলে দৃঢ় এবং টেকসই হয়।
৬. পরিবহন ও স্টোরেজ:
- পানি ও গ্যাসের পাইপলাইন: কলঙ্কহীন ইস্পাতের টেকসই গুণ এর জন্য আদর্শ।
- খাদ্য ও পানীয় স্টোরেজ: জং না ধরার কারণে এটি খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়।
৭. শিল্প ও কারখানা:
- রাসায়নিক কারখানা: রাসায়নিক ট্যাংক এবং পাইপ, কারণ এটি জং ধরে না এবং রাসায়নিক প্রতিরোধী।
- তেল ও গ্যাস শিল্প: স্টোরেজ ট্যাংক, তেল পাইপলাইন এবং প্ল্যাটফর্ম নির্মাণে।
- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ: খাদ্য উৎপাদন যন্ত্রপাতি এবং স্টোরেজ ট্যাংক।
- যন্ত্রপাতি: বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র, রাসায়নিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। কলঙ্কহীন ইস্পাতের যন্ত্রপাতি দীর্ঘস্থায়ী এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়।
৮. নির্মাণ ও স্থাপত্য:
- ভবন নির্মাণ: রেলিং, দরজা, জানালার ফ্রেম এবং ছাদ নির্মাণে। বিল্ডিংয়ের ছাদ, দেয়াল, কলাম ইত্যাদি কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
- সেতু: মরিচা প্রতিরোধী হওয়ায় সেতু তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
- মূর্তি ও স্মৃতিস্তম্ভ: আকর্ষণীয় চেহারা ও টেকসই হওয়ায় এটি মূর্তি ও ভাস্কর্যে ব্যবহৃত হয়।
৯. মেডিকেল সরঞ্জাম:
- সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি: কলঙ্কহীন ইস্পাতের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
- ইমপ্লান্ট: কিছু ধরনের মেডিকেল ইমপ্লান্ট কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
১০. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যখাত:
- অস্ত্রোপচার যন্ত্র: অপারেশনের সময় ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যেমন কাঁচি, ব্লেড, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম।
- ডেন্টাল সরঞ্জাম: দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
- হাসপাতালের আসবাব: বেড, স্ট্রেচার, এবং ট্রলি।
১১. যানবাহন শিল্প:
- গাড়ি: যানবাহনের বডি, এক্সস্ট সিস্টেম এবং ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ।
- রেলপথ: রেলের বগি ও ট্রেনের ভিতরের অংশ।
- বিমান: এর বিভিন্ন কাঠামো ও যন্ত্রাংশ।
- এক্সহস্ট সিস্টেম: গাড়ির এক্সহস্ট সিস্টেমের কিছু অংশ কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয় কারণ এটি উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
- ট্যাঙ্ক: কিছু ধরনের গাড়ির ট্যাঙ্ক কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
১২. ফ্যাশন ও সৌন্দর্যপণ্য:
- গহনা: রিস্টওয়াচ, ব্রেসলেট, এবং অন্যান্য অলঙ্কারে।
- অভিজাত আসবাবপত্র: স্টেইনলেস স্টিলের চেয়ার, টেবিল, এবং শোকেস।
১৩. অন্যান্য:
- ঘড়ি: অনেক ধরনের ঘড়ির কেস কলঙ্কহীন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়।
- জহরাত: কলঙ্কহীন ইস্পাতকে জহরাতের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার তৈরি করা হয়।
- ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: রেফ্রিজারেটর, ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদিতে স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার হয়।
কলঙ্কহীন ইস্পাতের গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
কলঙ্কহীন ইস্পাত তৈরির উপাদান:
১. ক্রোমিয়াম (Chromium): সাধারণত ১০.৫% থেকে ৩০% পর্যন্ত থাকে। এটি মরিচা প্রতিরোধের জন্য দায়ী।
২. নিকেল (Nickel): এটি ইস্পাতের শক্তি বাড়ায় এবং মসৃণতা দেয়।
৩. কার্বন (Carbon): ইস্পাতের কাঠামোগত শক্তি বাড়ানোর জন্য যোগ করা হয়।
৪. মলিবডেনাম (Molybdenum): এটি ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কেন কলঙ্কহীন ইস্পাত এত জনপ্রিয়?
আরও পড়ুনঃ ইস্পাত কি? ইস্পাত কত প্রকার ও কি কি? ইস্পাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা